বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় মানুষের ভূত দেখার কারণ



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
যারা স্বচক্ষে ভূত দেখার দাবি করেন তারা কেন এমন দাবি করেন?

যারা স্বচক্ষে ভূত দেখার দাবি করেন তারা কেন এমন দাবি করেন?

  • Font increase
  • Font Decrease

এই তো গেল বছরের কথা। ত্রিশ বছর বয়সী অ্যামেথিস্ট রিয়েলম নামে এক তরুণী The Sun এবং ITV-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি ভূতের সঙ্গে সহবাস করেছি!” শুনেই নড়েচড়ে বসেন সকলে। ভূতের সঙ্গে সহবাস, এও কী সম্ভব? শুধু তাই নয়, মেয়েটি দাবি করে সে এক বা দুজন নয়, প্রায় বিশজন ভূতের সাথে একান্তে সময় কাটিয়েছে। এর মধ্যে আবার একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে বিমানের টয়লেটে। যার সঙ্গে তিনি এখন সত্যি সত্যি প্রেম করছেন!

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রায়সময় দাবি করেন তারা ভূত দেখেছেন। কেউ স্বপ্নে তো কেউ আবার বাস্তবে। কিন্তু অ্যামেথিস্ট রিয়েলমের এই ঘটনা শোনার পর প্রায় সারা পৃথিবীতেই আলোড়ন পড়ে যায়। পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই অনেক কিছু বলতে শুরু করেন। কেউ কেউ এটাকে সত্য বলেই মনে করেন আবার কেউ কেউ এটাকে পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে করেন।

https://imaginary.barta24.com/resize?width=700&quality=75&path=uploads/news/2019/Sep/01/1567299450123.jpg
ভূতের সঙ্গে সহবাস করেছেন বলে দাবি এ তরুণীর


এই ঘটনা সত্য না বা মিথ্যা, সেটা আজকের আলোচনার বিষয় নয়। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়—ভূত দেখা বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলে

ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জীবনে একবার হলেও ভূত দেখার অভিজ্ঞতার শিকার। যেহেতু ব্যক্তিগত জীবনে আমি কখনো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি তাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখাও গেল না। সত্যি বলতে, আমাদের প্রায় অধিকাংশেরই ভূতসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা এভাবেই আসে, অর্থাৎ আমরা নিজেরা যতটা না এ ব্যাপারে বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত হই, তারচেয়ে বেশি হই অন্যের থেকে শুনে। অমুককে অমুক জায়গায় ভূতে ধরেছে বা অমুক ওখানে ভূত দেখেছে এমন হাজারও গল্পে ভরে আছে আমাদের শৈশব-কৈশোর এমনকি যৌবনও। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কৌতূহলী মন জানতে চায় আসলেই কি ভূত বলে কিছু আছে? 

এ ব্যাপারে জানতে গেলে ভূতে বিশ্বাসীরা শুরুতেই একটা ধাক্কা খাবেন। বিজ্ঞানীরা বহুদিন আগে ভূতের অস্তিত্ব নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু তবুও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই বিতর্ক। ভবিষ্যতেও চলবে বলেই ধারণা করা হয়। যার কারণ এক গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর ৩০% মানুষ এখনো ভূত ও অতিপ্রাকৃতিক ঘটনায় বিশ্বাস করেন। আর এই বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিতে প্রায়ই উড়ে আসে বেশ কিছু ভিডিও। অনলাইনে প্রায়সময় কিছু ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটছে এবং দাবি করা হয় এসব সত্য। সেসব ঘটনা আবার ব্যাপক সাড়াও ফেলে। লাইক, শেয়ার আর পক্ষ-বিপক্ষের নানান মন্তব্যে হাউজফুল হয়ে থাকে ভিডিওগুলো। আর এরও একটাই কারণ, এখনো অনেকে মনে করেন ভূত বলতে আসলেই কিছু আছে।

আমরা প্রত্যেকেই এমন কিছু লোককে চিনি বা জানি বা তাদের গল্প শুনেছি, যারা ভূত দেখেছেন। অনেকে আবার এমনও আছেন যারা ভূত পালেন বলেও দাবি করেন। হোক সেটা কল্পনায় বা বাস্তবে। যারা স্বচক্ষে ভূত দেখার দাবি করেন তারা কেন এমন দাবি করেন? এ ব্যাপারে জ্ঞান তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। এগুলোর কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়

এই প্রবাদটি আমাদের দেশে খুব প্রচলিত। আর ভূতে বিশ্বাস বা ভূত দেখার ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা এই কথাটিকেই মনে করেন সবচেয়ে বড় একটি কারণ। ভূত বিশ্বাসীদের মনে গেঁথে থাকে ভূত। আর আমাদের মনে এই ভূতের অস্তিত্ব সবার আগে ঢুকিয়ে দেন আমাদেরই মা, বাবা, দাদা, দাদি কিংবা এমনি কাছের মানুষেরা। যারা প্রায়সময় ঘুম পাড়ানোর জন্য কিংবা কান্না থামানোর জন্য আমাদেরকে ভূতের ভয় দেখান। আর আমাদের অবচেতন মনও এসবকে ধীরে ধীরে সত্য বলে মেনে নিতে শুরু করে। আমাদের মানসিক কাঠামোতেও ভূত তার পাকাপাকি একটা জায়গা করে নেয়।

এ ব্যাপারে The Houran and Lange model মতবাদটি বলছে, একজন মানুষই অপর একজনকে ভূত দেখতে উদ্বুদ্ধ করেন। যদি একজন মানুষ কোথাও ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেন, তাহলে ভূতে বিশ্বাসী মানুষেরা সে কথার শোনার পর সেই নির্দিষ্ট জায়গায় ভূত দেখবেনই। এটা বাস্তবের থেকেও বড়, অবচেতন মনের ক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষের আচরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এমনি একটি পরীক্ষা করা হয় ১৯৯৭ সালে। প্রাচীন ও পরিত্যক্ত এক থিয়েটারে ২২ জন মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের মতিগতি তথা মনোভাব দেখার জন্য। বিজ্ঞানীরা তাদের যাচাই বাছাই করার জন্য দুটি আলাদা ভাগে ভাগ করেন। এদের মধ্যে ১১ জনকে বলা হয়েছিল থিয়েটারটির পুনর্নির্মাণ হবে। বাকি ১১ জনকে বলা হয়েছিল, সাবধানে থাকতে, কারণ এই পোড়ো থিয়েটারে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না।

যেই ভাবা সেই কাজ। গভীর রাতে থিয়েটারের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নজন ঘণ্টা চারেক কাটিয়েছিলেন। দুই দলের অভিজ্ঞতায় প্রথম ১১ জন জায়গাটকে বড্ড নোংরা, সাপখোপ থাকতে পারে, পুনর্নির্মাণ না করে নতুন বানানো উচিত, থিয়েটার পুনর্নির্মাণ করতে খরচ অনেক বেশি হবে, এখন এই নকশা চলে না ইত্যাদি ইত্যাদি অভিমত ব্যক্ত করেন। আর অপর ১১ জন কী বলেছেন জানেন? তারা সেখানে বিভিন্ন লোকের পায়ের আওয়াজ শুনেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কিছু একটা উড়ে যেতেও নাকি দেখেছেন!

বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা যতটা না বাস্তবিক, তার চেয়ে বেশি কাল্পনিক। সাধারণভাবে, ভূতে বিশ্বাস আছে এমন লোকেরাই এখানে সেখানে ভূত দেখে বেড়ান। কোনো পুরনো বাড়ি, বাঁশঝাড় কিংবা গভীর কোনো জঙ্গল দেখলে তারা নিজেরাই নিজের মনের মধ্যে ভূতের একটা ছবি আঁকা শুরু করেন এবং একটা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন।

ভূত দেখা বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক

বিজ্ঞান বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছে, যারা প্রচণ্ড ভূতে বিশ্বাসী, ভূতের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিঃসন্দেহ, এমনকি নিজেরাও ভূত দেখে টেখে থাকেন, তাদের ওপর কাজ করে এক বিশেষ বৈদ্যুতিক তরঙ্গ। ডি পিজ্জাগালি নামে এক বিজ্ঞানী ২০০০ সালে একটি পরীক্ষা করে এই বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। পরীক্ষায় তিনি দেখিয়েছিলেন, ভূতে বিশ্বাসীরা তাদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে নিজের ওপর অতিরিক্ত আস্থা পোষণ করেন। অর্থাৎ ভূতে অবিশ্বাসীদের তুলনায় ভূতে বিশ্বাসীদের মস্তিষ্কের ডান দিকে বৈদ্যুতিক ক্রিয়া বেশি সক্রিয়। আর যার ফলে নিজের ভূত দেখার অদম্য আগ্রহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সামনের দেখা স্বাভাবিক জিনিসকে ভূতুড়ে করে তোলে মস্তিস্কের ডান গোলার্ধের এই অতি সক্রিয় তরঙ্গগুলি।

একা থাকলেই মানুষ ভূত দেখে

খেয়াল করলে দেখা যাবে যারাই বলেন যে তারা ভূত দেখেছেন, বেশিরভাগই কিন্তু ভূত দেখার সময় একা থাকেন। সমবেত বা দলবদ্ধ অবস্থায় ভূত দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে এমনটা খুব বেশি শোনা যায় না। আপনি নিজেও হয়তো জীবনে দুয়েকবার ভূত দেখেছেন। মনে করে দেখুন তো, তখন কি দুপুর তিনটা বাজছিল নাকি রাত তিনটা? বুঝতেই পারছেন যখন মানুষ নির্জন, অচেনা জায়গায় থাকে, সাধারণত তখন তারা ভূত দেখেন।

রাতের আঁধারে আমাদের একাকিত্ব ও একাকিত্বের ভয় মনে অন্য কারো উপস্থিতি জানান দেয়। ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস, পার্কের গাছটার নড়ে ওঠা, ছাদে কারো পায়ের আওয়াজ টের পাই। এভাবেই তৈরি করে নিই আমাদের মনগড়া ভূতুড়ে পরিবেশ, আমরা নিজেরাই।

তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র (Electromagnetic Fields)

ইনফ্রাসাউন্ড নামে একটি তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে যা আমাদের ভূত দেখায় বা ভৌতিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করায়। কানাডার নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. পারসিঙ্গার এবং তার লরেনটিয়ান ইউনিভার্সিটির টিম ইনফ্রাসাউন্ডের সঙ্গে ভূতের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা করেছেন। যেখানে তারা গড হেলমেট নামক একটি যন্ত্র তৈরি করেন। এই হেলমেট মাথায় পরলে এটি তাঁদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি অংশকে চৌম্বকীয় সিগনাল ছুড়ে উদ্দীপ্ত করে। ভূতে বিশ্বাসীদের এটা পরতে দিলে তারা অবাস্তব অকল্পনীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। দেখা গেছে, নির্জন জায়গায় যতক্ষণ ভূত বিশ্বাসীরা হেলমেটটি পরে ছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে তাদের অনেকে ভূত দেখেছেন বা ভূতের ছায়া দেখেছেন। কেউ কেউ তো যিশুকে দেখেছেন বলেও দাবি করেন! যদিও আদতে তা ছিল ইনফ্রাসাউন্ডের এফেক্ট।

ইনফ্রাসাউন্ডের এফেক্টে ভূতে বিশ্বাসীরা ভূত দেখে


ভূত আছে কি নেই এই বিতর্ক একদিনের না, এবং এক দিনে শেষও হবার নয়। তবে এটুক বলে দেওয়া যায়, যদি ভূত বলে কিছু থেকে থাকে তবে সেটা আছে মানুষের চিন্তায়, মানুষের মস্তিষ্কে, কোনো পুরনো দালান, নির্জন রাস্তা কিংবা রাতের অন্ধকারে নয়।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;