সরলা দেবী চৌধুরানী : এক প্রাগ্রসর বাঙালি নারী



শেহজাদ আমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
সরলা দেবী চৌধুরানী

সরলা দেবী চৌধুরানী

  • Font increase
  • Font Decrease

ঊনিশ শতক ও বিশ শতকের প্রথমার্ধ্বে বাংলার নারীদের পথচলা ছিল না অতটা মসৃণ। তখন তাদেরকে কোনো কাজে এগিয়ে যেতে সাধারণত নির্ভর করতে হতো পুরুষদের ওপর। পুরুষের সাহচর্য ও পরিচয়ে তৈরি হয়েছিল তাদের পরিচয়। তাদের পরিচয় বলয় স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ, নাতনি ইত্যকার পারিবারিক পরিচয়ের উর্ধ্বে যেতে পারেনি। এই পারিবারিক নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই একটা সীমিত জায়গা তৈরি করে চলছিল তাদের জীবন। তার কারণ মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের পেশা নিয়ে নারী স্বাধীনতার আন্দোলনরত পুরুষেরাও সেই সময়ে চিন্তা করেনি। তবে, কিছু নারী নিজেরাই এগিয়ে এসে তৈরি করেছিলেন আত্মপরিচয়। নারীদের এই এগিয়ে আসায় অগ্রগণ্য উদাহরণ রেখেছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কিছু নারী। সেরকমই একজন ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানী।

অভিজাত ঠাকুর পরিবারে জন্মে, প্রতিপালিত হয়েও সেই পারিবারিক সীমারেখার বাইরে গিয়ে নিজের আলাদা পরিচিতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন তিনি। নিজেকে ভেঙেচুরে, গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। চেহারায়, পোশাকে, ব্যক্তিত্বে এবং নিজের কাজে বাকিদের চেয়ে ছিলেন আলাদা। স্বাধীন জীবিকা ও রাজনীতিতে নিজেকে তিনি ওতপ্রেতভাবে জড়িয়ে দিয়েছিলেন, যেসব ক্ষেত্রে নারীরা তখনও এগিয়ে আসার কথা ভাবেনি। আর সেসবের জন্য কারো স্ত্রী, ভগিনী বা অন্য পরিচয়ের বিশেষ প্রয়োজন তাঁর হয়নি।

বিখ্যাত একটি পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল প্রভাবশালী ও খ্যাতিমান সব পুরুষ। কিন্তু তাঁদের প্রভাবের মাঝেও কিন্তু সরলা নিজের নামটি ইতিহাসে তুলে ধরতে পেরেছেন সফলভাবে। সরলা দেবী ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের কালপর্বে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকা নিয়েছিলেন। সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা ও প্রচেষ্টা বেশ বৈপ্লবিক বললে ভুল হবে না।

জন্মেছিলেন মামাবাড়ি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আজকের দিনে অথচ আজ থেকে ঠিক ১৪৭ বছর আগে (৯ সেপ্টেম্বর ১৮৭২)। মা স্বর্ণকুমারী ছিলেন সে যুগের সফলতম লেখিকাদের একজন। বাবা জানকীনাথ ঘোষালও ছিলেন স্বাধীন ও মুক্তমনের মানুষ। কৃষ্ণনগরের জয়রামপুরের এক ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন জানকীনাথ। দেবেন্দ্রনাথ তাকে জামাতা হিসেবে পেতে ইচ্ছে প্রকাশ করলে তিনি বাড়ির সম্পূর্ণ অমতে রাজি হয়ে যান। নিজে ব্রাহ্মণ না হয়ে ব্রাহ্মণ বংশে বিয়ে করায় পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত হতে হয় তাকে। কিছুদিন ব্যবসা করে তিনি তখনকার বড়লোক শ্বশুরের জামাতার মতো বিলেতে গিয়ে ‘বার-অ্যাট-ল’ হয়ে ফেরেন। আইনি পেশায় পসার বাড়লেই, ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য জামাতাদের মতো শ্বশুরবাড়িতে না থেকে নিজে বাড়ি বানিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন। জানকীনাথ জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ‘মহাত্মা’ হবার অনেক আগে, তাঁর প্রাথমিক কলকাতা আবাস পর্বের ঠিকানা ছিল ঘোষাল বাড়ি।

সরলার শৈশব কাটে জোড়াসাঁকোয় মামাবাড়িতে। আরো অনেক মামাত, মাসতুতো ভাই, বোনেদের সাথে মিলে এক উৎকৃষ্ট সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক পরিবেশে। সকলের প্রিয় ‘রবি মামা’ বাড়ির সব সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু। বাড়ি থেকে সম্পাদিত হচ্ছে গোটা তিন-চার পত্রিকা। সেসব সম্পাদনার দায়িত্ব তার দুই মামা, এক মামী ও মায়ের। মেজমামা প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ। বহির্জগতে মেয়েদের অবাধ বিচরণের স্বপ্ন দেখতেন। মেজমামী জ্ঞানদানন্দিনী সেই স্বপ্ন অনেকটা পূরণ করেছিলেন। মেয়েদের পোশাক ও সাজসজ্জা নিয়ে কাজ করতেন তিনি। চিন্তা করে দেখলে সেই সময়ে ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে সফল মহিলা সরলার জননী স্বর্ণকুমারী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত লেখিকা, সাহিত্যের প্রায় সবক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন, আত্মমগ্ন হয়ে অক্লান্তভাবে লেখালেখি করেতেন। তাই শিশু সন্তানদের দিকে ফিরে পর্যাপ্ত খেয়াল রাখার সময় ও ইচ্ছে কোনোটাই তাঁর ছিল না। বুক ভরা অভিমান নিয়ে কেটেছিল সরলার ছেলেবেলা। অন্য বাড়ি থেকে আসা তার মামীরা সন্তানদের স্নেহ ভালোবাসায় আঁকড়ে রাখত, কিন্তু তার মা সেসবের ধার দিয়েও যাননি। বাড়িতে দাসিদের দায়িত্বেই ছিল তারা চার ভাইবোন। ঠাকুরবাড়ির রূপের মাপকাঠিতে তিনি ছিলেন অনেকটা পিছিয়ে। একথা নিজেই বলে গিয়েছেন সরলা। তাই কারো নজরে পড়েননি তিনি। প্রথম নজরে পড়লেন তের বছর বয়সে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে যখন বেথুন কলেজে ঢুকলেন। ওই পরিবারে মেয়েদের এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রেও তিনি ব্যতিক্রম। এন্ট্রান্সে ইতিহাসে তিনি মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে মেকলের লেখা ‘লর্ড ক্লাইভ’ বইয়ের ওপর ক্লাইভের বাংলা বিজয় নিয়ে একটা প্রশ্ন এসেছিল। মেকলের বাঙালি চরিত্র বর্ণনায় যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল তা তুলে ধরে তীব্র প্রতিবাদ করে এ ব্যাপারে তার বিপরীত মতামত সুন্দর যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সাজিয়ে উত্তর লিখেছিলেন তিনি। এভাবে ওই বালিকা বয়েসেই স্বাধীন চিন্তার পরিচয় দিয়েছিলেন সরলা। এর পরে বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক নিয়ে বিএ পাশ করলেন মাত্র আঠার বছর বয়েসে। পেলেন পদ্মাবতী স্বর্ণপদক। মেয়েদের মধ্যে এই পদক তিনিই প্রথম পেয়েছিলেন।

এর পর থেকেই একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরলেন। আর্টস নিয়ে পড়লেন। কলেজে রেগুলার সায়েন্স কোর্সে মেয়েরা পড়ত না। সরলা রোজ ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনে সান্ধ্য ফিজিক্স ক্লাসে যাওয়া শুরু করলেন, সঙ্গে অগ্রজ জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল ও মামাত দাদা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সরলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব জীবিকা অর্জনের কথা ভাবা। এর আগে মেয়েরা যতই বিলেতে যান, গাড়ি চালান, লেখালেখি করুন আর কঠিন পরীক্ষায় বসার কথা ভাবুন, জীবিকা অর্জনের কথা তাদের চিন্তায় স্থান পেত না তেমনভাবে। ঠাকুরবাড়ির সর্বময় কর্তা দেবেন্দ্রনাথও সরলার স্বাধীন সত্তায় বাধা দিতে পারেননি। দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় সরলার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় মহীশূরের দেওয়ান নরসিংহ আয়েঙ্গারের। সরলার ব্যক্তিত্ব ও কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে মহীশূরের মহারানী গার্লস কলেজে সুপারিন্টেনডেন্টের পদে আহ্বান জানান। সরলা সাগ্রহে গ্রহণ করেন সেই চাকরি। অতদূরে চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ঠাকুরবাড়ির অনেকেই। গ্রাহ্য করেননি কিছু কোনোদিন। যেটা করতে চেয়েছেন, সেটাই করেছেন।

মায়ের সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকার সঙ্গে সরলা ও তাঁর বোন হিরন্ময়ী যুক্ত ছিলেন সেই বালিকা বয়েস থেকে। তারপর এলো পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব। ‘ভারতী’ যে শুধুই ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা হয়ে থাকেনি এই কৃতিত্ব সরলার। ‘ভারতী’তেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, তাঁর ‘বড়দিদি’ গল্পের মাধ্যমে। লেখকদের পারিশ্রমিক দেবার প্রচলনও তিনি শুরু করেছিলেন। ‘ভারতী’র জন্যে প্রায় জোর করে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ‘চিরকুমার সভা’। ‘ভারতী’ তাঁর এতটাই ভালোবাসার জায়গা ছিল যে পরে পাঞ্জাবে চলে গেলেও সম্পাদনা ও পরিচালনের জন্যে তিনি কলকাতায় ছুটে আসতেন।

বাড়ির সব মেয়েদের মতো সরলারও ছোটবেলায় পিয়ানো বাজাতে শিখেছিলেন। পিয়ানোয় তুলতেন চমৎকার সুর। সেইভাবেই মামা রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গানে সুর দেন সরলা। ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ গানটার পিয়ানোরূপ দিয়েছিলেন তিনি। খুঁতখুঁতে রবীন্দ্রনাথও খুশি হয়ে ভাগ্নীকে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’র পিয়ানোরূপ দিতে বলেন।

গান ও সুর সংগ্রহ একটা সময়ে নেশার মতো পেয়ে বসেছিল তাকে। বাংলার বাউল গান এবং মহীশূরে থাকতে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকী সুর একটা খাতায় লিখে তিনি রবীন্দ্রনাথকে উপহার দেন এবং তাঁর থেকে রবীন্দ্রনাথ অনেক গানে সুর দিয়েছিলেন। ‘বন্দেমাতরম’-এর সুরও মামা, ভাগ্নী দুজনে মিলে বসিয়েছিলেন। এছাড়াও নানা দেশাত্ববোধক গান সরলা লিখে সুর দিয়েছেন। ১৯০১’র কংগ্রেস অধিবেশনের অনুষ্ঠান তাঁর গান দিয়েই শুরু হয়েছিল। গানের প্রতিভা খুঁজে বেড়াতেন সরলা। অমিয়া ঠাকুর ও ঢাকার রানু সোমকে (প্রতিভা বসু) আবিষ্কার করে রবীন্দ্রনাথের কাছে হাজির করেন তিনিই।

স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশি কাপড় বিক্রির জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন সরলা। দুস্থ মহিলাদের কাজে লাগিয়ে এখানে তৈরি করা হতো দেশি তাঁতের কাপড়


সরলার কাজের ক্ষেত্র ছিল ব্যাপক, তাই স্বল্প পরিসরে তাকে নিয়ে আলোচনা করাও একটু কঠিন। শিল্প, সাহিত্যের নানা দিকে নারীরা তখন নিজেদের মেলে ধরলেও, সক্রিয় রাজনীতিতে তাদের দেখা যেত না। স্বদেশিয়ানায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সরলা। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি যুবকদের একত্রিত করে শুরু করলেন ‘বীরাষ্টমী’ ব্রত, পরের বছর ‘শিবাজী উৎসব’ ও ‘প্রতাপাদিত্য’ উৎসব। সাহসিকতা ও তেজস্বিতা ছিল তার খুব পছন্দের। স্বদেশি বস্ত্র বিক্রির জন্যে মানিকতলায় খুললেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। এই হস্তশিল্পের কাজে নিয়োগ করলেন দুস্থ বিধবাদের। পরবর্তীকালে দুস্থ বাঙালি নারীদের অর্থ রোজগারের জন্যে তিনি কৃষ্ণভামিনী দাসের প্রতিষ্ঠিত ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’-এর সঙ্গেও বিশেষভাবে যুক্ত হন। তবে, এই স্বদেশি কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় তাঁর। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম তীব্র সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন সরলা। গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন রবীন্দ্রনাথ যখন সমর্থন করেননি, সরলা তখন ছিলেন ওই আন্দোলনে গান্ধীর ডান হাত। তাই, এর কিছুদিন পরে, সরলার শান্তিনিকেতনে অতিথিরূপে আগমন রবীন্দ্রনাথকে উপহার দিয়েছিল অস্বস্তি।

সরলার কাজে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দও। কিছুকাল বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে উঠেছিলেন সরলা। এর আগে ঠাকুর পরিবারের কেউ দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়ের পথ মাড়াননি। কিন্তু, সরলা ছিলেন সব কিছুতেই ব্যতিক্রমী। যা তাকে আকর্ষণ করবে, তিনি তাকেই গ্রহণ করবেন। আবার উৎসাহ হারালেই বর্জন করতে সময় লাগত না। বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার বিদেশ সফরে, তাকে আমন্ত্রণ জানান নিবেদিতা। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে পরিহাসচ্ছলে একটা উক্তি সমাপ্তি ঘটায় এই সম্পর্কের। সরলাও ফিরে তাকাননি।

যে যুগে মেয়েদের ষোল বছর পূর্ণ হবার আগেই বিয়ে হয়ে যেত, সেই সময়ে সরলা বিয়ে করেন তেত্রিশ বছর বয়েসে। তার পাণিপ্রার্থী সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। গোপালকৃষ্ণ গোখলে নামের একজন অনুরাগী ছিল তাঁর। লেখক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরলার বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েও প্রভাতকুমারের মায়ের আপত্তিতে সেই সম্মন্ধ আর হয়নি। অবশেষে সরলার সঙ্গে বিয়ে হয় পাঞ্জাবের ‘হিন্দুস্থান’ পত্রিকার সম্পাদক ও সমাজকর্মী রামভজ দত্ত চৌধুরীর। এ ছিল আন্তঃপ্রাদেশিক বিবাহ। রামভজকে বর্ণনা করা হয় ‘Ultra Indian nationalist’ হিসেবে। বিয়ের পর, লাহোরে গিয়ে সরলা নিজেকে স্বদেশি আন্দোলনে আরো মেলে ধরেন।

১৯২১-এ অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে গান্ধী পাঞ্জাবে এলে সরলা ছিলেন তার পাঞ্জাব-সফরসঙ্গী। শুধু সফরসঙ্গীই নয়, দুজনেই ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং এই সম্পর্ক গান্ধী পরিবার ও আশ্রমে সৃষ্টি করে তীব্র বিতর্ক। এই দাবি স্বয়ং গান্ধীর পৌত্র রাজমোহন গান্ধীর। সরলাদেবীর রূপ, সুরেলা কণ্ঠস্বর, গান বাজনা ও সাহিত্যের প্রতি অসীম জ্ঞান দেখে শুনে গান্ধীজীও তাঁর প্রেমে পড়তে বাধ্য হোন। গান্ধী দাবি করেছিলেন সরলার সঙ্গে তার ‘আধ্যাত্মিক বিয়ে’ হয়ে গেছে।

১৯২৩-এ মুসৌরীতে স্বামীর মৃত্যুর পরে সরলা সপুত্রক কিছুদিন আহমেদাবাদে গান্ধী আশ্রমে বসবাসও করেন। পরে চলে আসেন কলকাতায়। স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ না পেলে কোথাও মন বসাতে পারতেন না সরলা। রাজনৈতিকভাবে প্রথম পর্বে সশস্ত্র আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থক সরলা পরে গান্ধীর অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তবে, একসময় আস্থা হারিয়ে ফেলেন অহিংস নীতিতে। রাজনীতিতেই উৎসাহ হারান। মনোযোগ চলে যায় ধর্মচর্চা ও অধ্যাত্ম সাধনার দিকে। বিজয়কৃষ্ণ দেববর্মা নামক এক গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা নেন। হয়তো ক্লান্তি, একাকিত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের টানাপোড়েন তাঁর মধ্যে সৃষ্টি করেছিল নৈরাজ্য।

প্রবল প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে সবকাজে মেতে ওঠা সরলাকে তাঁর শেষের আট বছর আর মেলানো যায় না।

সারাজীবন অক্লান্তভাবে লেখালেখিও করেছেন তিনি। নিজের পত্রিকা ‘ভারতী’, ‘মাসিক বসুমতী’, ‘প্রবাসী’, ‘মডার্ন রিভিউ’, ‘হিন্দুস্তান’ এবং ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল তার আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’। ‘জীবনের ঝরাপাতা’ সাহিত্যিক মহলেও সমাদৃত হয়েছিল।

নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের জোরে সমাজে নারীদের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে, ইন্দিরা গান্ধী থেকে জয়ললিতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মায়াবতী পর্যন্ত যারাই রাজনীতি ও সমাজকর্মে সফল হয়েছিলেন, তাদের জন্য প্রেরণাদায়ক নাম হয়ে ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানীর মতো নারীরা।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;