নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৯ ’।
নয় দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিকেলে জাতীয় যাদুঘরে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
তিনি বলেন, গোঁড়া যে কোনো কিছু থেকে পরিশীলিত করতে চলচ্চিত্রের বিকল্প নেই।
একটি ঘরে বসে বিশ্ব দর্শন একটি অর্জন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, একটি ভাল ছবি সমাজকে উন্নতির দিকে পরিবর্তন করতে পারে। আমরা এ উৎসবে বিশ্বের বিখ্যাত সব চলচ্চিত্র পরির্দশন করব। এতে প্রদর্শিত হবে ৭২টি দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র।
'ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব' আয়োজন করছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। বহু বছর ধরে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
আয়োজকরা জানান, এবারের উৎসবের মূল স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ।’ এবারের উৎসবে প্রদর্শনের জন্য ৭২টি দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র নির্বাচন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ছবিগুলো উৎসবে প্রদর্শের জন্য সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
নগরীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন ও প্রধান মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেস মিলনায়তন এবং ব্লকবাষ্টার সিনেমায় উৎসবে ছবিগুলো দেখানো হবে।
উৎসব উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও ১১ ও ১২ জানুয়ারি রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘উইমেন্স ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স ’। এতে আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন। ৬০টি দেশ থেকে উৎসবে যোগ দেবেন সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র সমালোচকরা। থাকবেন রেইবো ও অন্যান্যা চলচ্চিত্র সংসদের সদস্যরা।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়, সারাবিশ্বেই নারীদের অবস্থান পরিবর্তন ঘটছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও নারীদের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটছে। এসব বিষয়ে তথ্যাবলী উৎসবে উপস্থাপিত হবে। এই উদ্দেশ্য এবারের উৎসবে পঞ্চমবারের মতো নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা অংশ নিচ্ছেন।
শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার প্রায় ৯৮ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ভারতের আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)।
বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে অভিনেত্রীর জুহুর ফ্ল্যাটও রয়েছে। মুম্বাইয়ের জোনাল অফিসের তরফে রিপু সুদন কুন্দ্রা ওরফে রাজ কুন্দ্রার সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী।
ভারতের মহারাষ্ট্র পুলিশ ও দিল্লি পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হওয়া একাধিক এফআইআরের ভিত্তিতে ইডি তদন্ত শুরু করেছে।
রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিটকয়েনের আকারে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ রিটার্নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
২০১৮ সালে দুই হাজার কোটি রুপির বিটকয়েন কেলেঙ্কারি মামলায় রাজ কুন্দ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, মামলাটিতে শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার কোনো ভূমিকা আছে কি না বা তিনি এ ঘটনার শিকার কি না তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু এখন যেভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে ওই ঘটনায় রাজ কুন্দ্রার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
শিরোনামটা যথার্থই আছে! সত্যি শাকিব খান আর বুবলীর ‘কোয়ালিটি টাইম’-এ বাধা দিয়েছেন অপু বিশ্বাস। তবে অপুর দাবি এটি বাস্তবে ঘটেনি। বুবলী যে বারবার শাকিব খানের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানোর কথা বলেন, সেটি যে তিনি আদতে কাটাতে পারেননি কখনো, সে কথাই দেশের একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন অপু।
ঢাকাই সিনেমার দুই জনপ্রিয় নায়িকা শবনম বুবলী ও অপু বিশ্বাসর মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি এখন নিত্যদিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে। এবারের ঘটনার সূত্রপাত চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর একটি সাক্ষাৎকার ঘিরে। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে টিভি অনুষ্ঠানে গিয়ে বুবলী বলেছেন, তিনি এখনো শাকিব খানের স্ত্রী। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়নি, তবে আলাদা থাকছেন। বীরের কথা ভেবে সময় নিচ্ছেন শাকিব খান এবং বুবলী। এমনকি শাকিবের বাসায় গেলে অপু-জয়ের সঙ্গে দেখা হয় বুবলী ও বীরের।
এবার বুবলীর মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ অপু বিশ্বাস পুরো বিষয়টি খোলাসা করেছেন গণমাধ্যমে। অপু বিশ্বাসের দাবি, ‘তার সঙ্গে দেখা হওয়ার দিন ছিল প্রথম রমজান। আর সেদিন আগে থেকেই জয়কে নিয়ে ওই বাসায় ছিলাম আমি। সেদিন শাকিবের বাসায় না, অফিসে গিয়েছিলেন বুবলী।’
শুধু তা–ই নয়, বীর ও শাকিব খানের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় রুমে প্রবেশ করেন অপু ও জয়। বুবলীর এমন মন্তব্য প্রকাশের পর থেকে শুরু হয়েছে নতুন করে জল্পনা। এমনকি গণমাধ্যমের খবর, এসব শুনে নাকি বিরক্ত শাকিব ও অপু।
পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অপু বলেন, ‘আসলে এসবের ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো রুচি আমার নেই। সব মানুষেরই একটা ব্যক্তিত্ব থাকে। সেদিন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ এবং শাকিবের সঙ্গে আমাদের ইফতার করার কথা ছিল। যত দূর মনে পড়ে, সন্ধ্যা সাতটার দিকে খাবার খাবে বলে শাকিব তার অফিস থেকে ফোনকলে আমাকে জানায়। আমি এর ৩০-৪০ মিনিট পর যখন শাকিবের বাসা থেকে খাবার নিয়ে অফিসের দিকে যাই, তখন বুঝতে পারি শেহজাদ হয়তো বাবার কাছে এসেছে। কারণ, দরজা খুলতেই দেখি বুবলীর মেকআপম্যান, কেয়ারটেকারকে। যে সব সময় শেহজাদকে দেখাশোনা করে। তো শাকিবের অফিসে গিয়ে দেখি শেহজাদের সঙ্গে আছেন। এ সময় আমার ও জয়ের সঙ্গে আমার ননদের মেয়েও ছিল। কিন্তু এটাকেই ভিন্নভাবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন তিনি।’
অপু আরও বলেন, ‘ভেতরে গিয়ে দেখি টিভিতে কার্টুন দেখছে শেহজাদ। আর একটি চেয়ারে বসে আছেন তিনি। শাকিব ঘুমিয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে ওই অফিসে তখন শাকিবের দুজন ব্যক্তিগত সহকারীও ছিলেন। এরপরও এটাকে কেন তিনি কোয়ালিটি টাইম বলেছেন জানি না। বিষয়টি হচ্ছে উনি এসব বলে নিজে ছোট হচ্ছেন, না অন্যকে ছোট করার চেষ্টা করছেন, সেটাও আমি জানি না।
শেহজাদের উপস্থিতিতে তার এই বারবার কোয়ালিটি টাইমের কথা সামনে আনার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। তিনি কীভাবে বলতে পারেন? শেহজাদ তাদের স্পেস দেয়। কি অদ্ভুত! সেই ছোট্ট বাচ্চা কীভাবে বুঝে নেয় তার বাবা-মা একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছে? আমি শুধু এটুকুই বলব, আল্লাহ যেন উনাকে হেদায়েত দান করেন। আমি খুবই লজ্জিত ও দুঃখিত যে এই সময়ে এসেও এসব নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।’
এখন দেখা যাক, অপু বিশ্বাসের এই মন্তব্যে কী প্রতিক্রিয়া দেখান ‘দেয়ালের দেশ’-এর নায়িকা শবনম বুবলী।
জনপ্রিয় তারকা তাহসান খান আর রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ছিলেন এ দেশের দর্শকের কাছে আদর্শ জুটি। তাদের দীর্ঘ বছরের সংসার যখন ভেঙে যায়, তখন সেই খবর মেনেই নিতে পারছিল না ভক্তরা। এই জুটির সম্পর্ক যাতে ঠিক হয়ে যায় এ নিয়ে সে সময় দাবী পর্যন্ত জানানো হয়।
কিন্তু দুজনের ভেতরে যে ঘুনপোকা ধরেছিল সে কথা তো আর বাইরের কেউ জানতো না। ফলে তাদের বিচ্ছেদটা হয়েই যায়। এরপর থেকেই দর্শকের ভীষণ প্রিয় মিথিলা বার বার কটাক্ষের শিকার হতে থাকেন।
তবে কেন বিচ্ছেদ হয়েছে এ নিয়ে এই দুই তারকা কখনোই মুখ খোলেননি। এমনকি অন্য তারকারা যখন বিয়ে ভেঙে গেলে পার্টনারের দোষ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, তখন তাহসান-মিথিলা ছিলেন একেবারেই ভিন্ন। তারা কখনোই একে অপরের নামে কোন কটু কথা বলেননি। বরং এই দম্পতির একমাত্র কন্যা আইরা যাতে সুন্দর একটি পরিবেশে বড় হয় সেজন্য বিচ্ছেদের পরও তারা ফোনে কথা বলা কিংবা কখনো দেখাও করেছেন হাসিমুখে।
বিচ্ছেদের প্রায় ৭ বছর হতে চলেছে। কিন্তু ক্যামেরার সামনে তাদের একসঙ্গে পাওয়া যায়নি। মাঝে শুধু একবার একটি ই-কমার্স সাইটের লাইভ সেশনে এসেছিলেন দুজন। তবে এবার ভক্তদের জন্য সুখবর নিয়ে হাজির হয়েছেন তাহসান-মিথিলা।
নতুন একটি ওয়েব সিরিজে তাদের একসাথে দেখা যাবে। জানা গেছে, ৭ পর্বের সিরিজটির নাম ‘বাজি’। নির্মাণ করছেন ‘মাটির প্রজার দেশ’ খ্যাত নির্মাতা আরিফুর রহমান। একটি হোটেলে মাস দুয়েক আগে ওয়েব সিরিজটির একটা ধাপের শুটিং হয়েছে। যদিও এ বিষয় নিয়ে নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী কেউই মুখ খোলেননি।
‘বাজি’ সিরিজ সম্পর্কে আরও জানা গেছে, এতে তাহসান একজন ক্রিকেটরের চরিত্রে অভিনয় করছেন। বিপরীতে মিথিলাকে দেখা যাবে সাংবাদিকের চরিত্রে। ওয়েব সিরিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে দেশিয় একটি ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য। এ বছরই মুক্তি পেতে পারে সিরিজটি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট প্রেম করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তাহসান ও মিথিলা। সাবেক এই দম্পতির সংসারে আইরা তেহরীম খান নামের এক মেয়ে রয়েছে। তারা জুটি বেধে ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম’, ‘মধুরেন সমাপয়েত’সহ দারুণসব নাটকে অভিনয় করেছেন। এ জুটি একসঙ্গে গানও গেয়েছেন। তবে ২০১৭ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পরে ভক্তদের মন ভেঙে যায়।
এরপর মিথিলা ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জিকে বিয়ে করেন। তবে তাহসানের আর কোন বিয়ের খবর পাওয়া যায়নি এতোদিনে।
‘বাস্তব চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে কবরী ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী’
বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিনোদন
ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে’খ্যাত নায়িকা কবরী। রোমান্টিক থেকে সামাজিক, বানিজ্যিক থেকে জীবনঘনিষ্ট সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে কিংবদন্তীর কাতারে সামিল করেছিলেন।
‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি এই ছবির পরিচালক এবং প্রযোজকও তিনি। এই ছবিকে ঘিরে ছিল তার অনেক স্বপ্ন। ছবির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল মারা যান বাংলার অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় ৭১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
চট্টগ্রামের মীনা পাল চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে কবরী হয়ে ওঠেন। মিষ্টি হাসি ও অনবদ্য অভিনয় প্রতিভা দিয়ে জায়গা করে নেন দেশের কোটি মানুষের অন্তরে। এ দেশের সিনেমাকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের মধ্য তিনি অন্যতম।
কবরীর পুরো পরিবারই ছিল ভীষণ সংস্কৃতিমনা। বড় বোনদের মধ্যে দুই বোন নাচতেন। ছোট ভাই তবলা বাজাতেন। কবরী নাচ-গান একসঙ্গে করতেন। ৭০ বছরের জীবনে তিনি ৫৬ বছর কাটিয়ে দেন চলচ্চিত্রে। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করা কবরী এক সময় নিজেকেই নিজের তুলনা করে তোলেন। এমন কথা শোনা যায়, তার সমসাময়িক এবং অগ্রজ অভিনয়শিল্পীদের কণ্ঠে।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক সারাহ বেগম কবরীর। পরের বছর তিনি অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়। ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরী’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো। কবরী অভিনীত ‘ময়নামতি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সারেং বৌ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘সুজন সখী’র মতো ছবির মাধ্যমে দর্শক অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন কবরীর অসামান্য এক অভিনেত্রী হয়ে ওঠা। অভিনয়ে, প্রযোজনায়, পরিচালনায় সাত দশকের জীবনটা এক আশ্চর্য সফলতার গল্প।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। তারপর টেলিভিশন ও সব শেষে সিনেমায়। শুরুর জীবনে কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্কচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তার সঙ্গেও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী ছিলেন পাঁচ সন্তানের মা।
কবরীকে নিয়ে বলতে গিয়ে চলচ্চিত্রের গুণী শিল্পী উজ্জ্বল বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের একজন বাঙালি নায়িকা কেমন হবে, কবরী ছিলেন তার সংজ্ঞা। চেহারা, চলন, কথাবার্তা, ব্যক্তিত্ব-সব দিক থেকে কবরী ছিলেন আদর্শ। কবরী ছিলেন একেবারে স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক। আমরা তাকে দেখে মুগ্ধ ছিলাম। আমি যখন কাজ শুরু করি, কবরী তখন দেশের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা। তখনকার নারীর যে ইমেজ ছিল—যেমন লজ্জাবতী, আকর্ষণীয়, প্রেমিকা, সব দিক দিয়ে কবরী ছিলেন সেরা।’
বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সুজাতা একবার গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে কবরী ছিলেন একজন পাওয়ারফুল অভিনেত্রী। আর ব্যক্তিগতভাবে তিনি স্পষ্টবাদী ছিলেন। যে কারণে হয়তো অনেকেই তাকে ভুল বুঝতেন। ভালো-খারাপ দুটিই তিনি সরাসরি বলে দিতেন। এটা আমার খুব ভালো লাগত। বাস্তব চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি সহজেই যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে যেতেন। যে কারণে তিনি ছিলেন সফল অভিনেত্রীর নাম।’
অভিনয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া কবরী নিজেকে শুধু অভিনয়ে আবদ্ধ রাখেননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ পায় বেশ জনপ্রিয়তা। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী।
তার সমসাময়িক এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে চলচ্চিত্রে তিনি পর্দা ভাগাভাগি করেননি। কিন্তু মনে মনে একজনের সঙ্গে অভিনয়ের স্বপ্নটা দেখতেন, যা পূরণ হয়নি। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার খুব আগ্রহ ছিল তার। বিগবির অভিনয় ও কথাবার্তা মুগ্ধ করত কবরীকে।
২০০৫ সালে এসে ‘আয়না’ নামের একটি ছবি নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। এরপর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে।
কবরীর বর্ণাঢ্য জীবনকে কাছ থেকে দেখেছেন গুণী অভিনয়শিল্পী, প্রযোজক এবং পরিচালক সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘‘কবরীকে ‘মিষ্টি মেয়ে’ নামটা এ দেশের সাধারণ মানুষেরাই দিয়েছেন। সাধারণ লোকের দেওয়া নামটাই বোধ হয় একজন শিল্পীর বড় প্রাপ্য। একজন শিল্পী হিসেবে তার বড় সার্থকতা। এরপর শিল্পী হিসেবে তাকে নিয়ে আর দ্বিতীয় কথা বলার নেই। সি ওয়াজ জাস্ট আন প্যারালাল। ওই মিষ্টি মুখ বা ওই মিষ্টি হাসি বা ওই মিষ্টি অভিনয়—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আসেনি এর আগে এক কবরী ছাড়া। আগামী ৫০ বছরে আসবে বলেও আমার ধারণা নেই। আমি বিশ্বাস করি, শত বছরে কবরী একটাই জন্মায়।’
বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমী অনেকের প্রিয় কবরী। আর তার প্রিয় তালিকায় ছিলেন সোফিয়া লরেন, এলিজাবেথ টেলর, অড্রে হেপবার্ন, গ্রেগরি পেক, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায় ও ছবি বিশ্বাস। তার সবচেয়ে প্রিয় সংগীতশিল্পীর তালিকায় দেশের বাইরে মান্না দে, হেমন্ত ও শ্রীকান্ত আচার্য। দেশের মধ্যে সুবীর নন্দী ও সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠ তার খুব প্রিয়।