রিভিউ

‘মায়াবতী’ হোঁচট খেলো চিত্রনাট্য ও সংলাপে



রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, অতিথি লেখক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
রিভিউ ‘মায়াবতী’, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রিভিউ ‘মায়াবতী’, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিনেমা নাম: মায়াবতী
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: অরুণ চৌধুরী
অভিনয়: নুসরাত ইমরোজ তিশা, ইয়াশ রোহান, ফজলুর রহমান বাবু, আব্দুল্লাহ রানা, আবিদ রেহান, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আফরোজা বানু প্রমুখ।
প্রযোজনা: আনোয়ার আজাদ ফিল্মস
মুক্তির তারিখ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রেটিং: ৫.৫/১০

ঢালিউডে ভোলবদল প্রায়ই হয়। নতুন ভাবনার নতুন পরিচালক নতুন গল্পের সিনেমা নিয়ে হাজির হন। নতুন ভাবনার সিনেমা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়।

অরুণ চৌধুরী পরিচালিত সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘মায়াবতী’ সিনেমাটি সেরকম একটি সিনেমা। নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। আর সেই বিষয়টি হলো, নারীর ‘না’ বলার অধিকার। অর্থাৎ কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। তার ‘না’ মানেই ‘না’। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘নো মিনস নো’।

এই প্রতিপাদ্যে বলিউডে ‘পিঙ্ক’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। সেখানে মিনালকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি করতে গেলে আত্মরক্ষার তাগিদে আক্রমণকারীদের বোতল ছুঁড়ে মারেন তিনি।

তবে এখানে ‘মায়াবতী’কে সম্পূর্ণ মৌলিক সিনেমা হিসেবে ধরতে চাই। মৌলিক সিনেমা হিসেবেই সিনেমাটির ময়নাতদন্ত করা যাক।

 



‘মায়াবতী’র প্রেক্ষাপট
সিনেমাটির কাহিনী মায়াকে নিয়ে শাখা প্রশাখা গজিয়েছে। শিশু মায়াকে গ্রামের দুই স্ত্রীওয়ালা বয়স্ক লোক বিয়ে করতে চায়। তখন মায়ার মা রাজি হয় না। সেকারণে সে মায়াকে গ্রামের এক মামার সাথে শহরে পাঠিয়ে দেয়। মামা মায়াকে নিয়ে এসে দৌলতদিয়া যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দেয়।

তখন গানের শিক্ষক মাতাল খোদা বক্স মৃধা যৌন লালসা পূরণের জন্য মায়ার ঘরে যায়। মায়া তখন মায়ের শিখিয়ে দেয়া ‘ছেড়ে দে নৌকা যাব মদিনায়’ গানটি গাওয়া শুরু করে। কারণ, তার মা বলেছিল, বিপদ আসলে গানটি গাইতে। মায়া গান গাইলে তার গলা শুনে মুগ্ধ হয় খোদা বক্স মৃধা। সঙ্গে সঙ্গে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে যৌনপল্লীর রানিকে বলে, মায়াকে সে গান শেখাবে। কোনো পুরুষের মনোরঞ্জন যেন তাকে দিয়ে না করানো হয়।

 

এভাবে মায়া যৌন পল্লীতে বেড়ে ওঠে। বড় হয়ে সে যৌনপল্লীর বাইরের একটি গেরস্থ বাড়ির ছেলে ইকবালের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ইকবালের মাও মায়াকে তার ছেলের হবু স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়।

একদিন মায়া শহরে গান গাইতে গেলে সেখানে মায়া তার ওস্তাদ খোদা বক্স মৃধার খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ে। আকবর আলী জোর করে মায়াকে শ্লীলতাহানি করতে গেলে মায়া তাকে মোমদানি দিয়ে আঘাত করে। সেজন্য আকবর আলীর সহযোগী বাদশা আলম খোদা বক্স মৃধাকে খুন করে।

মূলত, খোদা বক্সকে খুন ও মায়াকে ধর্ষণের ইচ্ছা ছিল অনেক বছর আগে থেকে। মায়া যখন ছোট ছিল তখন তাকে ছুঁতে গেলে খোদা বক্স মৃধা রেগে গিয়ে বাদশা আলম ও আকবর আলীকে থাপ্পড় মারে। পরবর্তীতে আদালতে মায়া নির্দোষ প্রমাণিত হয়। যদিও মায়া সমর্থন পেয়েছে দেশের মিডিয়া ও সমাজকর্মীদের।

প্রচারণায় নারী মুক্তির বিষয়টি বলা হচ্ছিল। কিন্তু নারী মুক্তি আসলে কিসে হয়? নিজ অথবা পুরুষের বন্দী দশা থেকে মুক্ত হওয়া। মায়া চরিত্রটি শুরু থেকেই বন্দী ছিল। শেষে যখন সে মামলা থেকে রেহাই পেলো, গানের প্রস্তাব নিয়ে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আইয়ুব মজুমদার আসল তার কাছে। সে গান রেকর্ডিং করল। এর মাধ্যমে মায়া রেড লাইট এলাকা থেকে রেহাই পেলো। কিন্তু এটাকে কি নারী মুক্তি বলা হবে? বেঁচে থাকতে তার ওস্তাদ তাকে কখনো মুক্তি দেয়নি। একবারও বলেনি, রেড লাইট এলাকা থেকে দূরে গিয়ে গানের চর্চা করতে। মায়াও কখনো চেষ্টা করেনি। তাহলে? এখানে কেবল একটি সমান্তরাল ঘটনা এগিয়ে গেছে।



অভিনয়
সিনেমার প্রথমার্ধে বেশ ভালো লেগেছে। সুন্দরভাবে একটি গল্প এগিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এই সিনেমায় সব জাঁদরেল অভিনয়শিল্পীর মেলা বসেছিল। কিন্তু সব অভিনেতা পর্যাপ্ত অভিনয় করার সুযোগ পাননি। পুরো ছবি জুড়ে তিশা, ইয়াশ, ফজলুর রহমান বাবু, আফরোজা বানু, আব্দুল্লাহ রানা ও আবিদ রেহানের উপস্থিতি বেশি ছিল।

এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার বড় পর্দায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। এর আগে তারা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজও করেছেন। কিন্তু বড় পর্দায় তিশার বিপরীতে ইয়াশ! এই অসমবয়সী জুটি অনেকের হজম না হবার কথা। বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশ-নেপাল ক্রিকেট ম্যাচের মতো। কিন্তু পৃথকভাবে তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বভাবসুলভ অভিনয় করেছেন। যদিও অজ্ঞাত কারণে তাদের রসায়নটা জমে ওঠেনি। তিশা যখন ইয়াশের গালে চুমু খেয়েছে, তখন মনে হয়েছে খালা তার ভাগ্নেকে স্নেহের চুমু দিয়েছে। ইয়াশের চরিত্রটি রোমিও টাইপ চরিত্র। পুরো ছবিতে তার শুধু লুতুপুতু প্রেম করে সময় কেটেছে। প্রেমিক হিসেবে ইয়াশ ঠিকঠাক ছিল।

 

ওদিকে ফজলুর রহমান বাবু মাতাল গানের শিক্ষকের চরিত্রে মানিয়ে গেছেন বেশ। খল চরিত্রে আব্দুল্লাহ রানা শুরু থেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ছবির শেষ দিকে তিনি কিছু একটা কাণ্ড ঘটাতে যাচ্ছেন। এই যে আগে থেকে দর্শক বুঝে যাচ্ছে, এটা অভিনেতার ব্যর্থতা। তবে রাইসুল ইসলাম আসাদ, মামুনুর রশীদকে ব্যবহার করতে পারেনি পরিচালক। এই দুই জাঁদরেল অভিনেতার উপস্থিতি ছিল বিরতির পর। তবে বিরতির আগে রাইসুল ইসলাম আসাদ কয়েকবার কিছু সময়ের জন্য দেখা দিয়েছেন।

রাইসুল ইসলাম আসাদকে হাজির করা হয়েছে বয়স্ক উকিল হিসেবে। তার ধীর গতির কথা বলা। প্রতিপক্ষের উকিলকে কাউন্টার করতে না পারা সত্যিই হতাশার। যদিও এ সবকিছুর অধিকাংশ দায়ভার বর্তায় চিত্রনাট্যের ওপর। গ্রামের মামা চরিত্রে অভিনয় করা কাজী রাজুর অভিনয় ভালো লেগেছে। পর্দায় তার স্বল্প উপস্থিতি হলেও অভিনয়, মুখের অভিব্যক্তি ছিল প্রশংনীয়।

পরিচালনা ও চিত্রনাট্য
এই সিনেমা চিত্রনাট্য কোনো আহামরি গল্পের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়নি। যৌনপল্লীর সাধারণ একটি গল্পকে বাড়তি রঙ মিশিয়ে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার ফলে পুরো চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছে অযাচিত দৃশ্যের সমাহার।

নারীর বলা ‘না’কে যেন সবাই শ্রদ্ধা করে, সেটার আলোকে পুরো চিত্রনাট্য। তবে এই ছবিতে এই ‘না’কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ছবির একদম শেষ দিকে গিয়ে। শুরুর দিকে ‘না’ শব্দটিকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো মজবুত দৃশ্য চোখে পড়েনি। যদিও তিশা প্রথমে একবার ইয়াশকে বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তিনি এসব (শরীর বিক্রি) কাজ করেন না। ইয়াশও তাকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি এসব কাজ করেন না। নারীর ‘না’কে শ্রদ্ধা করেন। তবে এটা যথেষ্ট নয়। প্রতিপাদ্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শুরু থেকে ঘটনার অবতারণ করতে হয়, যেটার শেষ দেখতে গাঁটের টাকা খরচ করে টিকিট কেটে আসা দর্শক শেষ দৃশ্য অবধি বসে থাকবেন।

তিশা যখন প্রথম গান গাইতে ট্রাকে চড়ে বসেন তখন পথে যেতে যেতে তার ছোটবেলার ট্র্যাজেডির কথা মনে পড়ে। সেগুলো ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়। ওই সময়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়া, ফ্ল্যাশব্যাক দেখানোর কোনো যথার্থ কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিশা যখন গ্রামে যান। নিজ ভিটায় যান। তখন যদি এসব ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যের অবতারণা হতো তখন মানানসই হতো। কিংবা কোনো একদিন নিজের জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে ইয়াশকে বা তার মা আফরোজা বানুকে নিজের মর্মান্তিক অতীতের কথা বলতেন তাহলে সেটা বেমানান হতো না।

 

তাছাড়া কোনো কোনো গেরস্ত বাড়ির ছেলে অবাধে যৌন পল্লীতে ঘুরে বেড়ানো, মাকে যৌনপল্লীর মেয়েকে ভালোবাসার কথা বললে সহজে মেনে নেয়া- এসব বাস্তবের সাথে বড্ড বেমানান। পরিচালক বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন কিনা বলতে পারছি না। বিষয়ভিত্তিক সিনেমার ক্ষেত্রে এমন কাহিনী দেখানো চোখে লেগেছে।

আর হ্যাঁ, শুরুতে যৌন পল্লীতে শিশু মায়ার ঠোঁটে, মুখে ফজলুর রহমান বাবুর হাত বোলানো দৃষ্টিকটু লেগেছে। শিশুদের শরীরে এভাবে হাত বোলানো পর্দার এপারে কতিপয় মানুষদের উৎসাহিত করবে। কারণ, আজকাল শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসা বেড়ে চলেছে।
বিরতির পর সিংহভাগ অংশ জুড়ে ছিল আদালত। এই ছবিটি যে বলিউড ‘পিঙ্ক’ ছবির অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে সেই ছবিতে কোর্টের দৃশ্যের কথা একবার ভাবুন। সেখানে কোর্টে যে টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল তার ছিঁটেফোটাও ‘মায়াবতী’ ছবির কোর্টে পাওয়া যায়নি। বাদী পক্ষের উকিল তানভীর হোসেন প্রবাল যেভাবে কোর্টে কথা বলেছেন তাতে মনে হয়েছে তিনি বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিচ্ছেন। নতুবা কবিতা আবৃতি করছেন। আর রাইসুল ইসলাম আসাদ তো কথাই বলতে পারেন না। একটা কোর্টের দৃশ্য জমিয়ে রাখতে যেরকম যুক্তি, তর্ক উপস্থাপন করা উচিত তার পুরোটাই ছিল অনুপস্থিত।

বাদী পক্ষের উকিল তানভীর হোসেন প্রবাল তিশার ‘নূন্যতম’ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ‘সর্বোচ্চ’ শাস্তি, নূন্যতম নয়। আর মামলা রায় হয়ে যাওয়ার পর জজ কিভাবে মামলা ‘বাতিল’ করে দেন সেটা বোধগম্য নয়। যেখানে রায় হয়ে যায়, সেখানে মামলা বাতিল হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।



আবার এই ছবিতে মায়ার পক্ষে যখন সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলো তখন ঢাকার কিছু আন্দোলনের স্থিরচিত্র ব্যবহার করা হয়। অথচ আলাদা করে দৃশ্য ধারণ করলে আরও বাস্তবিক হতে পারত। টিভিতে যখন নীরব উপস্থাপন করছেন তখন তিনি নিজেকে পরিচয় দিলেন ‘আর জে নীরব’ বলে।

এক কথায় বলা যায়, পরিচালক ছবিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে গুবলেট পাকিয়ে ফেলছেন। একজন সিনিয়র চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অরুণ চৌধুরীর এই বিষয়গুলো খেয়াল করার উচিত ছিল।

সঙ্গীত ও আবহ, ক্যামেরা ও সম্পাদনা
সিনেমাটির আবহ সঙ্গীত হতাশ করেছে। দৃশ্য উপযোগী আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার হয়নি। সম্পাদনাও যাচ্ছেতাই। চিরকুটের গাওয়া গানটি অর্থবহ ছিল। সুরও বুকে লেগেছে। কিন্তু তিশার লিপ সিং মেলেনি । অন্যান্য গানেও তিশার লিপ সিং মেকি মনে হয়েছে। যার ফলে, গানের দৃশ্য বিরক্ত বাড়িয়েছে। ক্যামেরার কাজ ছিল ড্রোন কেন্দ্রিক । অপ্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। সাসপেন্স দৃশ্যের সময় যেভাবে ক্যামেরা ওয়ার্ক ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কম্বিনেশন দরকার, তা ছিল না। সবমিলিয়ে তথৈবচ একটি অবস্থা।

 

 

শেষের কথা
মুক্তির আগে ‘মায়াবতী’ ছবির প্রচারণা উদাহরণ হয়ে থাকবে। শুধ সিনেমা নির্মাণ নয়, প্রচারণাও ফ্যাক্ট; বিষয়টি অনুধাবন করতে শেখাবে। একথা স্বীকার করতেই হবে, ‘মায়াবতী’ একটি ভিন্ন ধারার সিনেমা। ভালো নির্মাণের চেষ্টা করেছেন পরিচালক। তবে এধরনের সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে চোখ কান খোলা রাখতে হয়। দায়সারা কাজ গ্রহণযোগ্য নয়। একটু সচেতন হলে ছবিটি বাংলাদেশের মাইলফলক হতে পারত। আশাকরি গুণী নির্মাতা অরুণ চৌধুরী তার আগামী সিনেমাগুলোতে এসব ভুল ত্রুটি শুধরে নিবেন। চলচ্চিত্রের দুর্দিনে তার মতো পরিচালকের প্রয়োজন।


লেখক: রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, সাংবাদিক, সারাবাংলা ডট নেট

   

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে চলছে ভোট গণনা, আসেননি অনেক তারকা



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ফেরদৌস আহমেদ, মৌসুমী, শাকিব খান ও পপি

ফেরদৌস আহমেদ, মৌসুমী, শাকিব খান ও পপি

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ১৯ এপ্রিল সকাল থেকে বিএফডিসি প্রাঙ্গণে চলছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বি-বার্ষিক (২০২৪-২৬) নির্বাচন। সকাল সাড়ে ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতি ছিল, ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বিকেল সাড়ে ৫টায়। এখন চলছে ভোট গণনা। 

ভোট দিতে সকালে তেমন কোন ভোটার উপস্থিত না থাকলেও জুমার নামাযের পর কিছু তারকা এফডিসি প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। ভোট গ্রহণের সময় শেষ দিকে চলে এলেও দেখা যায়নি চলচ্চিত্রের অনেক জনপ্রিয় তারকাদের। জানা গেছে, তাদের অনেকেই ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যার কারণে ভোট দিতে পারছেন না।

এরমধ্যে রয়েছেন ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। তিনি বর্তমান নতুন সিনেমার শুটিংয়ে ভারতের হায়দরাবাদে অবস্থান করছেন।

গত নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে জয়ী হলেও এবার ভোটের মাঠ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন অরুণা বিশ্বাস। দেশে না থাকার কারণে এবার ভোট দিতে আসতে পারছেন না।

৮ বছর পর এফডিসিতে ভোট দিতে এলেন কাজী মারুফ

এছাড়াও এদিন ভোট দিতে পারছেন না এমন তালিকায় রয়েছেন সুপারস্টার শাবনূও, চিত্রনায়ক ও সাংসদ ফেরদৌস আহমেদ, প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমা, শাহরিয়ার নাজিম জয়, আজিজুল হাকিম, আনিসুর রহমান মিলন, রেসি, বিপাশা কবির, সোহানা সাবাসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী।

২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এই নির্বাচনে ছয়জন স্বতন্ত্রসহ দুইটি প্যানেল থেকে ৪৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একটি মিশা-ডিপজল পরিষদ, অন্যটি কলি-নিপুণ পরিষদ।

এর মধ্যে সভাপতি পদে লড়ছেন একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক মাহমুদ কলি ও দাপুটে খল-অভিনেতা মিশা সওদাগর। আর সাধারণ সম্পাদক পদে গেল আসরের মতো এবারও প্রার্থী হয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। তার বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৭০ জন। নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন খোরশেদ আলম খসরু।

;

নতজানু হয়েও কোন পক্ষের সমর্থন পেলেন না জোভান



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ভিডিও বার্তায় জোভান ও ‘রূপান্তর’ নাটকের দৃশ্য

ভিডিও বার্তায় জোভান ও ‘রূপান্তর’ নাটকের দৃশ্য

  • Font increase
  • Font Decrease

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান পড়েছেন দারুণ ঝামেলায়। তার একটি নাটককে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একপক্ষের সমালোচনায় অবশেষে নতজানু হয়ে ভিডিও বার্তা দিলেন তিনি। তাতেও সেই পক্ষের মন গলাতে পারলেন না। উল্টো তারা জোভানের বাকী নাটকগুলোকেও বয়কটের সুর তুলছে!

ঝামেলা এখানেই শেষ নয়। জোভান নতজানু হয়ে দুঃখ প্রকাশ করায় আরেকপক্ষ তাকে দারুণভাবে করছেন সমালোচনা। এই পক্ষে আবার রয়েছেন তারই সহকর্মীরা। তারা জোভানের সাহস ও শিনদাঁড়ার শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত গেল ঈদুল ফিতরে প্রচারিত জোভানের নাটক ‘রূপান্তর’ নিয়ে। রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত এই নাটক প্রচারের পরই এটি নিয়ে অন্তর্জালে ফুঁসে ওঠে একাংশ দর্শক। নিরুপায় হয়ে নাটকটি ইউটিউব থেকেও নামিয়ে ফেলা হয়।

 ‘রূপান্তর’ নাটকের দৃশ্যে সামিরা খান মাহি ও জোভান

কিন্তু রেহাই মেলেনি তাতেও। অগত্যা অভিনেতা জোভান নিজেই গা ঢাকা দেন, বন্ধ করে রাখেন নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেল। অবশেষে আজ ১৯ এপ্রিল ভোর রাতে দেখা দিয়েছেন তিনি। একটি ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হলেন। যেখানে আকুতিভরা কণ্ঠে ক্ষমা চেয়েছেন দর্শকের কাছে।

আতঙ্ক আর অসহায়ত্বে ভরা চাহনিতে জোভান বলেন, ‘এই ঈদে আমার বেশ কিছু নাটক এসেছে। প্রথম দিন থেকেই ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। এই ঈদটা আমার খুব সুন্দর ঈদ হতে পারতো আপনাদের ভালোবাসায়, সাপোর্টে। কিন্তু সেটা হয়নি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে আপনারা যেমন কষ্ট পেয়েছেন, আমিও কষ্ট পাচ্ছি। আমি কিন্তু একদমই ভালো নেই।’

‘রূপান্তর’ নাটকের প্রসঙ্গে জোভানের জবাবদিহি এরকম, “রূপান্তর’ নাটককে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা একদমই অপ্রত্যাশিত। এই নাটকের মাধ্যমে কারও ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। আমি নিজেও একটা মুসলিম পরিবারের ছেলে। আমি জানি, ধর্মকে কতটা বিশ্বাস করি, আল্লাহকে শ্রদ্ধা করি। এই নাটকের মাধ্যমে আমরা কোনও কিছুকে নরমালাইজ করা বা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করিনি। কেবল একটি চরিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটার মাধ্যমে এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়েছি, এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সবার কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

ফারহান আহমেদ জোভান

সবশেষে অনুরোধের সুরে জোভান বলেছেন, ‘দীর্ঘ এগারো বছর যাবত নাটক করছি। আজকে আমার যে অবস্থান, এর পেছনে আমার একার নয়, অবশ্যই দর্শকের ভালোবাসা ও সাপোর্ট ছিল। আমার কাজ করার মূল উদ্দেশ্য হলো দর্শককে একটু বিনোদন দেওয়া, সেজন্যই এত কষ্ট। এরপর থেকে আরেকটু বেশি সচেতন থাকবো চরিত্র বাছাই করতে। যাতে তাদের মনঃক্ষুণ্ণ না হয়, কষ্ট না পায়। আমার যে কাজগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে, তার চেয়েও ভালো কাজ উপহার দেবো। শুধু একটাই অনুরোধ, আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

যদিও জোভানের ভিডিও বার্তার কমেন্ট বক্স দেখলে আঁচ করা যায়, তার এই আর্তনাদ গলাতে পারছে না নেটিজেনদের মন। গণহারে তার নাটক বয়কটের ঘোষণা দিচ্ছে তারা। বিপরীতে অনেকেই জোভানের এই পরাজিত কণ্ঠ ও মুখ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বলছেন, প্রকৃত শিল্পী কখনোই এতোটা নতজানু হয় না।

উল্লেখ্য, নীহার আহমেদের চিত্রনাট্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটি নির্মিত হয়েছে। এর গল্পটি মূলত একজন তরুণ চিত্রশিল্পীকে ঘিরে। যিনি শৈশবে ট্রেন দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। যার ফলে তিনি জানতেই পারেননি তার বাবা-মা কে কিংবা কোন ধর্মের মানুষ। বড় হয়েছেন শিশু আশ্রমে। বড় হয়ে হয়েছেন চিত্রকর। পেয়েছেন খ্যাতিও। এর মধ্যে একজন ধনীর দুলালী তার আঁকায় মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েন। বিয়ের জন্য পারিবারিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয় চিত্রকরকে। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তাকে দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। এরপর তার চিকিৎসকের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি আসলে একটি হরমোন জনিত বিরল জটিলতায় ভুগছেন। তিনি দেখতে পুরুষের মতো হলেও মানসিকভাবে তিনি একজন নারী।

ফারহান আহমেদ জোভান

গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় ‘রূপান্তর’ নাটকটি উন্মুক্ত করা হয় ইউটিউবে। রাতে বেশ কিছু দর্শকের পক্ষ থেকে আপত্তি পেয়ে সেটি ১৬ এপ্রিল সকালে তুলেও নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি। একই নাটক ডাউনলোড করে অসংখ্য ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করছে সমালোচনাকারীদের একটা বড় অংশ। তারাই আবার এমন নাটক নির্মাণ ও প্রচারণার প্রতিবাদ করছেন! এমনকি নির্মাতা-শিল্পীদের হুমকিও দিচ্ছে অনেকে। যা নিয়ে আতঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।

;

আগামী মাসেই সোহেল-নীলা জুটির ‘শ্যামাকাব্য’



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
‘শ্যামাকাব্য’র জুটি সোহেল মণ্ডল ও নীলাঞ্জনা নীলা। ছবি : নূর এ আলম

‘শ্যামাকাব্য’র জুটি সোহেল মণ্ডল ও নীলাঞ্জনা নীলা। ছবি : নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

গুণী নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমা ‘শ্যামাকাব্য’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ রয়েছে। এই ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধেছেন সদ্য ভারতের ফিল্মফেয়ার পুরস্কারজয়ী অভিনেতা সোহেল মণ্ডল ও জনপ্রিয় লাক্স তারকা নীলাঞ্জনা নীলা। তারা ছাড়াও এক ঝাক তারকা শিল্পীকে নিয়ে নির্মিত সরকারি অনুদানের এই সিনেমাটি গত ২৪ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির কথা ছিল।

সোহেল মণ্ডল ও নীলাঞ্জনা নীলা। ছবি : নূর এ আলম

কিন্তু সে সময় ছবিটি আর মুক্তি পায়নি। তখন নির্মাতা সৌদ জানিয়েছিলেন, ‘‘দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্যই এই সিদ্ধান্ত। চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম, এমন পরিস্থিতিতে দর্শক সিনেমা হলে এসে ছবি দেখতে চাইবেন না। দর্শকের জন্যই তো আমাদের সিনেমা। তাদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করা জরুরী। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘শ্যামাকাব্য’ জাতীয় নির্বাচনের পরেই মুক্তি দেব।’’

নীলাঞ্জনা নীলা ও সোহেল মণ্ডল। ছবি : নূর এ আলম

অবশেষে ছবিটি মুক্তির নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ছবিটির নায়ক সোহেল মণ্ডল জানান, ‘‘আসছে ৩ মে আপনার নিকটস্ত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘শ্যামাকাব্য’।’’

সোহেল মণ্ডল ও নীলাঞ্জনা নীলা। ছবি : নূর এ আলম

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ধাচের ছবিটিতে প্রেমের বিষয়টিও বেশ স্পষ্ট। এতে নীলাকে দেখা যাবে শ্যামা’র চরিত্রে। আর সোহেল মণ্ডল রয়েছেন আজাদ নামের একটি চরিত্রটি।

নীলাঞ্জনা নীলা ও সোহেল মণ্ডল। ছবি : নূর এ আলম

নায়ক-নায়িকা দুজনই বললেন, তাদের চরিত্র দুটি একেবারেই নতুন। তাদের রসায়নও দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদী। নীলার ভাষায়, শ্যামা মেয়েটি খুব শান্ত। দেখলে চোখে আরাম দেবে। আর সোহেল এখনই তার চরিত্রের কোন গোমর ফাঁস করতে চান না।

সোহেল মণ্ডল ও নীলাঞ্জনা নীলা। ছবি : নূর এ আলম

ছবিতে একটি মাত্র গান রয়েছে। নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদের লেখা ‘পাখি যাও যাও’ শিরোনামের সেই গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ইমন সাহা। চমকপ্রদ বিষয় হলো সেই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের বিখ্যাত দুজন শিল্পী। একজন হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের কিংবদন্তি পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, অন্যজন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ইমন চক্রবর্তী।

;

ধর্মকর্মে মন দিয়েছেন অশ্লিল যুগের নায়ক মেহেদি



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চিত্রনায়ক মেহেদির একাল-সেকাল

চিত্রনায়ক মেহেদির একাল-সেকাল

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢালিউডে যে সময়টা অশ্লিলতায় ছেয়ে গিয়েছিল, সে সময়ের অন্যতম ব্যস্ত নায়ক ছিলেন মেহেদি। ‘পাগল মন’ চলচ্চিত্র দিয়ে সিনেমা জগতে জায়গা করে নেওয়ার পর অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে অশ্লিল ছবির সংখ্যাই বেশি। এখনো ইউটিউবে তার অশ্লিল নাচ গানের ভিডিও’র দেখা মেলে।

কিন্তু মানুষ মাত্রই বদলায়। বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, কিন্তু বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।’

তেমনি বদল ঘটেছে চিত্রনায়ক মেহেদির জীবনেও। অনেক দিন থেকেই চলচ্চিত্র আঙিনায় তাকে দেখা যায় না। আজ তাকে দেখা গেল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে। সেখানেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মেহেদি।

চিত্রনায়ক মেহেদি

জানালেন, তিনি এখন ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করেছেন। বললেন, নিয়মিত তবলিগ জামাত চিল্লায় যেতে হচ্ছে। যেহেতু আমি মুসলিম, তাই আমাকে নিয়মিত নামাজ রোজা করতে হবে। এখন সেটা খুব মনোযোগের সঙ্গে করতে হচ্ছে।

চলচ্চিত্র থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হননি তিনি, সামনে তার চলচ্চিত্র আসছে বলেও জানালেন। বললেন, আমি চলচ্চিত্র থেকে একেবারেই হারিয়ে যাইনি। সামনে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে আমার চারটি চলচ্চিত্র।

;