ঈদেও খরা কাটে নি সিনেমা হলের
কিশোরগঞ্জ: খা খা করছে সিনেমা হলগুলো। দর্শকের দেখা নেই। ঈদের ছুটিতেও খরা কাটে নি শহরের প্রেক্ষাগৃহগুলোর।
‘কয়েক বছর আগেও ঈদের নতুন ছবি মুক্তি পেলে তিন-চার সপ্তাহ হাউসফুল হতো। ব্ল্যাকে টিকেট কেটে স্রোতের মতো মানুষ ছবি দেখতে আসতো ঈদের দিন এবং পরবর্তী দিনগুলোতে। এখন সিনেমা হলের প্রতি কারো কোনও আগ্রহই নেই।’ বললেন রঙমহল সিনেমা হলের পুরনো কর্মী ইসমাঈল মিয়া।
কথাটি যে কত সত্য, সে প্রমাণ হলগুলোর সামনে গেলেই দেখা যায়। ব্যাপক মাইকিং ও পোস্টারিং করেও লোকজনকে হলমুখো করা সম্ভব হচ্ছে না। বিরাণ হয়ে আছে সিনেমা হলের চারপাশ।
‘কেন সিনেমা হলে মানুষ আসতে চাইছে না?’ প্রশ্ন করলে মানসী সিনেমা হলের গেটম্যান পরিতোষ দে উত্তর দিতে বিলম্ব করেন না, ‘বিশ্বকাপের এতো জমজমাট আসর ফেলে কে আর হলে আসবে!’ তার গলায় হতাশা, ‘সবার ঘরে টিভি, হাতে হাতে মোবাইল আছে। সিনেমা বলেন, নাটক বা খেলা বলেন, সবই তো হাতের মুঠোয় দেখা যাচ্ছে। কষ্ট করে কে আর হলে আসবে!’
তথ্য প্রযুক্তি মানুষের প্রচলিত বিনোদন ধারায় বিরাট পরিবর্তন এনেছে। আগে ঈদে বা ছুটির দিনে সিনেমা দেখার বিনোদনের দিকে কেউ যাচ্ছেন না। জম্পেস করে নিজের ঘরের ড্রয়িং রুমে আয়েশে টিভির বড় পর্দায় চলচ্চিত্র, নাটক, খেলা দেখে নিচ্ছেন লোকজন। টিভিও দিনে দিনে পর্দা বড় করছে।
হাতের স্মার্ট ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে বিনোদনের যাবতীয় উপাদান। খবর, সিনেমা, নাটক, খেলা, কি নেই হাতে-ধরা মোবাইলে। অতএব কে আর কষ্ট করে ভিড় ঠেলে সিনেমা হলে ছুটবেন!
‘মাঝে মাঝে জনপ্রিয় উপন্যাস বা মুক্তিযুদ্ধের সারা জাগানো ছবি মুক্তি পেলে শহরের মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত মানুষ সিনেমা হলে দলবদ্ধ হয়ে আসেন। কিন্তু তেমন ছবি তো আর সব সময় আসে না। কালে-ভদ্রে একটি দু’টি দেখা সম্ভব হয়।’ ক্ষোভের সঙ্গে বললেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী অনামিকা অরাত্রিকা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে সিনেমা হলের করুণ দশা নিয়ে যখন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন পাশে দাঁড়ানো সাহিত্যকর্মী স্বাধীন প্রত্যাশা জানালেন ভিন্নমত, ‘শুধু ভালো ছবির অভাবই একমাত্র কারণ নয়। হল মালিকদের পশ্চাৎপদ মানসিকতাও এজন্য দায়ী। প্রযুক্তির রমরমায় সিনেপ্লেক্স ও অত্যাধুনিক ব্যবস্থা চলে এলেও স্থানীয় হল মালিকরা রয়েছেন মান্ধাতার আমলে। পুরনো প্রজেক্টরের খটখট শব্দে দমবন্ধ হলঘরের গরমে ভাঙা চেয়ারে বসে ছারপোকার কামড় খেয়ে কে সিনেমা দেখতে যাবে?’
নানা বাস্তব কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার হার কমছে। দিনে দিনে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ক্ষেত্রটি। মালিকরাও হার মেনে গুটিয়ে আসছেন যেন। কিশোরগঞ্জে তিনটি সিনেমা হল ছিল। এখন ইউনিভার্সাল টকিজ নামের পুরনো হলটি বন্ধ হয়ে গেছে। রঙমহল আর মানসী নামের বাকী দু’টি হল খুঁড়িয়ে চলছে। হলগুলোর সামনের জমজমাট আড্ডা, লোক-সমাগমও আর নেই। দূর থেকে দেখলে পরিত্যাক্ত হানা বাড়ি বলে মনে হয় রঙচটা-পলেস্তারা-খসা অবহেলিত সিনেমাহলগুলোকে।
শুধু কিশোরগঞ্জেই নয়, দেশের অনেক জায়গাতেই প্রযুক্তির আগ্রসনে মার খাচ্ছে সিনেমা প্রদর্শনী। মালিকরাও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছেন না। চট্টগামে হল ভেঙে মার্কেট হয়েছে। ঢাকাতেও বন্ধ হয়েছে বহু প্রাচীন সিনেমা হল। ক্রমে ক্রমে সিনেমা হল নামক একদার জমজমাট বিনোদন কেন্দ্রগুলো যেন অবক্ষয়ের হাত ধরে বিলীন হওয়ার পথে চলেছে!