বিএনপির হাতে লাঠি কেন?



এরশাদুল আলম প্রিন্স, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
এরশাদুল আলম প্রিন্স, ছবি: বার্তা২৪.কম

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশ এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটও নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক ও আইনি এখতিয়ার প্রয়োগ করে তফসিল ঘোষণা করার দুই দিনের মাথায় বিরোধী জোট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিল।

গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান নিয়ামক নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করে যা সারা বছর এমনকি পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্তও দেখা যায় না। রাজনীতিতে জনগণের ভোটের মূল্য যে এখনও শেষ হয়ে যায়নি এটাই তার প্রমাণ।

সুষ্ঠু ভোটাভুটির জন্য নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জরুরি। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু আমাদের নির্বাচন কমিশন কেতাবে স্বাধীন। বাস্তবে আজ পর্যন্ত কোনো কমিশনের কাজেই তাদের স্বাধীন সত্তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দুটোই জরুরি। পরাধীন কমিশনের নিরপক্ষতা স্বাধীন কমিশনের অ-নিরপেক্ষতা থেকে উত্তম। কিন্তু স্বাধীন বাঙালি জাতির ভাগ্যে নিরপেক্ষ কমিশন দু’একবার জুটলেও স্বাধীন কমিশন জোটেনি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এ প্রশ্নটি আবার নতুন করে এসেছে। এটি তাদের জন্য পরীক্ষা। সরকারের জন্যও পরীক্ষা। কারণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বিরোধী জোটকে এ ব্যাপারে তার ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন। বিরোধী জোট তার ওপর আস্থা রাখবে কিনা সেটি তাদের ব্যাপার। কিন্তু, জনগণ তার ওপর আস্থা রাখতে চায়। এছাড়া জনগণের আর কিই-বা করার আছে। রাজনীতিবিদদের ওপরতো আস্থা রাখতেই হবে। মাননীয় প্রধনামন্ত্রীর আস্থা অর্জনের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি কমিশনের নিরপেক্ষক ও গ্রহণযোগ্য ভূমিকা। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকবারই বলেছেন। কমিশনকেও এখন তা চাইতে হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা জরুরি তা কমিশনকে সরকারের কাছে চাইতে হবে। সরকারের সহায়তা ছাড়া নির্বাচনই সম্ভব না সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সরকারের সহায়তা ছাড়া কীভাবে হবে? সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার গ্রীন সিগনাল দিয়ে দিয়েছে। সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে। এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য। তারা মূলত একটি সাংবিধানিক দায় মেটাতে চায়। এটি ভবিষ্যতেও একটি নজির হয়ে থাকবে। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তবে তা অনেক রাজনৈতিক সমস্যারই সমাধান নিয়ে আসবে। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা ভোটাভুটি নিয়ে আমাদের চিরস্থায়ী রাজনৈতিক বালা-মুছিবত দূর করতে সাহায্য করবে। বারবার সংবিধান কাটা-ছেড়া করা লাগবে না, জ্বালাও-পোড়াওও করতে হবে না।

সরকারের সদিচ্ছাপূরণে এখন কমিশনকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার চায় সুষ্ঠু নির্বাচন করতে। এই সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রচনা করা এখন কমিশনের কাজ। কমিশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবে। নির্বাচনে সবার জন্য সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখবে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির একটি বড় নিয়ামক ছিল সংসদ ভেঙে দেয়া। এটি সরকার ও সরকার বিরোধী দুই পক্ষের জন্যই জরুরি ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। এখন বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যেই যতোটুকু সম্ভব লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যায় তা করতে কমিশনকে এগিয় আসতে হবে। সরকার সংসদ ভেঙে না দিলেও কিছু কাজ করেছে যা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইঙ্গিতবাহী। সরকারের টেকনোক্রেট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলেছেন। যদিও আবার তাদের পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমপিদের বিশেষাধিকার বা প্রটোকল ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। মন্ত্রীদেরও রুটিন কাজের বাইরে অন্য কোনো কাজ না করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এর মাধ্যমে সরকার নির্বাচন কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। এখন কমিশনকে এর সুযোগটি গ্রহণ করতে হবে। বাকি কাজটুকু তাকে করতে হবে। সরকার সব কাজ করে দেবে না। কারণ, সরকারতো একটু বেশি সুবিধা নিতেই চাইবে। এখানেই নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনচেতার বিষয়টি জড়িত।

নির্বাচন নিয়ে যখন দেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল তখনই আজ নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। নির্বাচনের এমন মুহুর্তে এটি এক অশনিসংকেত। আমরা জনগণ এতে আবার হতাশ হয়ে পড়ি। জনগণ একদশক ধরে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ভোটটি দেয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। জনগণ জানে যে তারা কোনোদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। রাজনীতিকরাই ক্ষমতায় যাবেন।

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলে সে জন্য কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের ভূমিকা পালন করতে বলেছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। সে ভূমিকা পালন করতে গিয়েই নয়াপল্টনে আজকের সংঘর্ষ। বিএনপি কর্মীরা যেভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভোটের মাঠে এধরনের সংঘর্ষ বিএনপির জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে। সেই সাথে পুলিশও যদি আচরণবিধি প্রতিষ্ঠার জন্য মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে সেটিও কাম্য নয়। কারণ, কোনো একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি সামগ্রিক নির্বাচনে প্রভাব পড়ে তবে তা কোনো পক্ষের জন্যই শুভ হবে না। সরকারের জন্যও আগামী নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে করা একটি বড় এজেন্ডা ও চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে বিরোধী জোটের স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফেরার জন্যও আগামী নির্বাচনটি জরুরি। ক্ষমতায় কে আসবে সেটি বড় কথা নয়। কাজেই পুলিশ তাদের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে বা নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সামগ্রিক নির্বাচন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্যই কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ অবশ্যই সেখানে ব্যবস্থা নেবে। প্রশ্ন শুধু একটু কৌশলী হবার ও চেক এন্ড ব্যালেন্সের। বিএনপির এমন সংঘর্ষের ফলাফল কী হতে পারে তা গত একদশকে তাদের বোঝার কথা। বিএনপি প্রান্তিক হয়ে যাওয়ার আগেই তাদের উচিত সব ধরনের সহিংসতা ও সংঘর্ষের পথ পরিহার করা। জনগণ সবকিছুই দেখে, বোঝে। লাঠি দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যায়না, থাকাও যায়না। তাই সরকারি ও বেসরকারি লাঠির অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। লাঠির বদলে যদি বাঁশি দিয়ে কাজ হয় তবে তাই ভালো নয় কি?

এরশাদুল আলম প্রিন্স: কন্ট্রিবিউটিং এডিটর বার্তা২৪, আইনজীবী কলামিস্ট

   

একজন সাদি মহম্মদ এবং কিছু কথা



অঞ্জনা দত্ত
-শিল্পী সাদি মহম্মদ

-শিল্পী সাদি মহম্মদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন আজও শোক বিহ্বল সাদি মহম্মদের আত্মহননের ঘটনায়। যারা মানুষকে জীবনের জয়গাঁথা শুনিয়ে থাকেন, জীবনের অর্থ তুলে ধরেন, যাদের গান শুনে আমরা সাধারণ মানুষেরা লড়াই করার শক্তি খুঁজে পাই, অনুপ্রেরণা পাই ঘুরে দাঁড়াতে, তাঁদের একজন যদি আত্মহননের পথ বেছে নেন তখন সেটি মর্মে বাজে বৈকি।

আমাদের দেশে প্রতিদিন নানা কারণে বহুজন আত্মহত্যা করে থাকেন। কেউ দারিদ্রতার কারণে, কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কেউবা সম্ভ্রম হারিয়ে আর কেউ স্বামী বা স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। এই মৃত্যু সুখের নয়। যদিও মৃত্যু হলো জীবনের শেষ অঙ্ক। সবাই সেটি জানি। কিন্তু কোনো মৃত্যুই তার স্বজনরা মেনে নিতে পারেন না। তবে প্রথিতযশা রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী সাদি মহম্মদের আত্মহত্যা জাতির বৃহৎ এক অংশকে বিমুঢ় করে দিয়েছে।

সাদি কেন এই পথ বেছে নিয়েছেন, কেন তাঁর জীবনের প্রতি অনীহা জম্মালো এই নিয়ে সাদির পরিবার এবং তাঁর বন্ধু স্বজনরা নানারকমভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। আত্মহত্যা করার পরেও ইসলাম ধর্মের অনুসারী অনেকে স্রষ্টার কাছে তাঁর জান্নাতবাসের জন্য প্রার্থনা করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় সাদিকে তাঁরা কতটা ভালোবাসতেন।

সাদি মহম্মদ একজন শহিদের সন্তান। স্বচক্ষে দেখেছেন কীভাবে তাঁর বাবাকে হত্যা করেছে বিহারিরা। একই দিনে তাঁর এক খালাতো ভাইকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। সেই নৃশংস দৃশ্য সাদিকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাড়া করেছে, এটি আর কেউ না বুঝুক শহিদ পরিবারের সদস্যরা অনুভব করেন প্রতিনিয়ত। এই শহিদজায়াদের অবর্ণনীয় কষ্ট বা যুদ্ধের খবর কেউ রাখেনি। রাখেনি রাষ্ট্র। বিশেষ করে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। সাদিকে প্রতিনিয়ত সেই দৃশ্য এবং পরবর্তীতে ওঁর মায়ের যুদ্ধ কুড়ে কুড়ে খেত। তবে এটাও কী যথেষ্ট কারণ হতে পারে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে সাদি মহম্মদের মতো একজন পরিশীলিত রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পীর পক্ষে, যিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে।

বিভিন্নজনের লেখা পড়ে বা সাক্ষাৎকার দেখে আমার দু' একটা ব্যাপারে খটকা লাগল। তার একটা হলো একজন শিল্পী বলেছেন (অভিযোগ শব্দটা প্রয়োগ করা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না) সাদি মহম্মদকে অনেকে অপমান করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁদের ক্ষমা করে দিতেন সবসময়। তাহলে দাঁড়াচ্ছে রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চা করার পরেও সবার মন যে একই মানের থাকে তা নয়। আমার অবশ্য জানা নেই সাদি ঠিক কাদের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন? যিনি বলেছেন তিনি তো জানতেন বিষয়গুলো। প্রতিবাদ করেছিলেন? অন্যের কাছে অপ্রিয় হওয়ার ভয়ে আমরা অনেকসময় চোখের সামনে কেউ অন্যায় আচরণ করছেন বুঝেও চুপচাপ দেখে যাই।

আর একটি কথা আমার মনে খুব দাগ কেটেছে তাহলো সাদির অনুজ শিবলীর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে। ভাই কষ্ট পাবে দেখে শিবলী তার পুরষ্কার লুকিয়ে রাখতেন। এটা ঠিক কাজের স্বীকৃতি সবাই চায়। তবে আমার ধারণা ছিল সাদিদের মতো শিল্পীরা মনের আনন্দে গান করে থাকেন। তাঁরা কিছুর প্রত্যাশা করেন না। আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই সাদী সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতির অপেক্ষায় ছিলেন না। যদিও তাঁর পরিবার থেকে এই কথাও উচ্চারিত হয়েছে মানব পাচারকারী শিল্পী পদক পেতে পারেন ... কথাটি আমলে নিলে সাদি মহম্মদ হয়তো বা কখনও তাঁর আপনজনের কাছে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন।

এই জায়গায় আমি হোঁচট খেলাম। সাদি রবীন্দ্রনাথের গানের সুর তাঁর কন্ঠে ধারণ করেছিলেন। গুরুদেবের গানের বাণী মুখস্থ করে নিয়েছিলেন। অনেক বছর আগে পড়েছিলাম কোনো এক সাপ্তাহিকীতে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সাদি তাঁর শিক্ষকদের নজর কেড়েছিলেন তাঁর অসাধারণ মনে রাখার ক্ষমতা এবং খুব তাড়াতাড়ি সুর ধরে ফেলার প্রতিভায়। রবীন্দ্রনাথ যত শোক পেয়েছিলেন তাঁর প্রথম জীবনে, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি থেমে থাকেনি। দশটি বছর যখন তিনি শিলাইদহে ছিলেন, আমার দৃষ্টিতে ওটা ছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। তাঁর স্ত্রী মৃণালিনীর তো বটেই। রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলো শ্রেষ্ঠ রচনা রচিত হয়েছিল শিলাইদহে থাকাকালীন।

১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। দুর্ভাগ্যবশত ১৯০২ সালে মৃণালিনী দেবী মারা যান। তার মাস কয়েক পরে মারা যান রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় কন্যা রেনুকা। ১৯০৩ সালে। ১৯০৭ সালে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবির বন্ধুর বাড়ি মুঙ্গেরে বেড়াতে গিয়ে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন। দশ এগারো বছরের বালক শমীন্দ্রনাথের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ নিজের ছায়া দেখেছিলেন। শমীর মৃত্যুর পরে কবি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও তাঁর সৃষ্টি থেমে থাকেনি। তাঁর সাহিত্যচর্চা নিয়মিতই চলতে লাগলো। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করার আন্দোলনে কবি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অনেকগুলো বিখ্যাত গান রচনা করেছিলেন। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান। ভারতীয় উপমহাদেশ, যার একটা অংশ অবিভক্ত বাংলা, তখনও বৃটিশ সাম্রাজ্যের কলোনি।

রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টানলাম এইজন্য যে কবি এতগুলো শোক অন্তরে বয়ে নিয়ে চললেও তাঁর কোনো কাজে শিথিলতা আসেনি। মৃণালিনীর মৃত্যুর পরে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া পর্যন্ত শান্তিনিকেতন চালিয়ে নিতে কষ্ট হয়নি। সবই চলেছিল তার নিজস্ব তালে, ছন্দে। রবীন্দ্রনাথ বেঁচেছিলেন আশি বৎসর বয়স পর্যন্ত। এরমধ্যে তিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য চর্চা করে গেছেন।

নজরুলের কথা যদি বলি বুলবুলকে হারিয়ে নজরুল পাগলপ্রায়। বুলবুল মারা যাওয়ার নয় বছর পরে নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা দেবী পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। তারও তিন বছর পরে ১৯৪২ সালে নজরুল নিজে চিরদিনের তরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু বুলবুলের মৃত্যুর পরে (১৯৩০) কবির অসুস্থ হওয়ার সময় পর্যন্ত বারো বছর তাঁর কোনো সাহিত্যকর্ম কি আলোর মুখ দেখেনি? তাহলে সাদি মহম্মদের এমনকি সমস্যা থাকতে পারে, শান্তিনিকেতনে শিক্ষা নেয়ার পরেও নিজেকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিলেন?

সাদি মহম্মদের সমস্যা ছিল। তিনি ডিপ্রেশনে ভুগতেন। এবং সেটা কতদিন যাবত জানা নেই। তাঁর চিকিৎসা কি হয়েছিল সঠিকভাবে? পরিবার সেটার খোঁজ রেখেছিল? পত্রিকায় দেখলাম শিবলী একদিন ফোন করে শামীম আরা নীপাকে বাসায় আসতে বললেন। নীপার কথা সাদি শুনতেন। সেদিন তিনি কথা দিলেন আবার আগের মতো গাইবেন। নীপারা অনুষ্ঠান আয়োজনের কথাও বলেছিলেন। তিনি বারণ করলেন। এর প্রয়োজন নেই। তিনি নিজেই গাইবেন। ব্যস পরিবারের সদস্যরা এতে সন্তুষ্ট হয়ে রইলেন। আর এই উদ্যোগটা সাদি মহম্মদের আত্মহননের বেশিদিন আগে নয়।

সাদি কোন্ অভিমানে বা কার ওপর অভিমান করে চলে গেছেন সেটি কখনোই জানা যাবে না। কেননা জানামতে তিনি কোনো সুইসাইডাল নোট রেখে যাননি। বিভিন্নজন নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ রাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করছেন। তবে আমার মনে হয় এখানে কাছের মানুষদের দায়বদ্ধতাই বেশি। সাদির অভিমান থাকতে পারে, প্রত্যাশা থাকতে পারে রাষ্ট্রের কাছে। কিন্তু যখন সেটা রোগে পরিণত হয় তখন আপনজনদের পাশে দাঁড়াতে হয়। এক্ষেত্রে কেন যেন মনে হচ্ছে বিষয়টি অবহেলিত ছিল।

আজ যদি সাদির স্বাভাবিক মৃত্যু হতো, আমরা সাদির অনুরাগীরা একইরকম কষ্ট পেতাম। যেহেতু সাদি মহম্মদ নিজের জীবনের অবসান নিজের হাতে টানলেন বিরাট এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে তাই এত কথা হচ্ছে। কিছুদিন পর তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। সাদি ধীরে ধীরে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবেন। আবার বছরপূর্তি হলে আমরা তাঁকে স্মরণ করব। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যদিও কিছু প্রশ্নের মীমাংসা কোনদিনই হবে না। 

লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

পুতিন যুগের দীর্ঘসূত্রিতায় আধিপত্য হারাতে পারে পশ্চিম



আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনা মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও বিপর্যয় ডেকে এনেছিলো রাশিয়া- ইউক্রেন সংঘাত। দুই বছর পার হয়ে তৃতীয় বর্ষে পা দেওয়া এ সংকটের একদিকে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা, আরেকদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলা এই যুদ্ধ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা, সমালোচনা কোনো কিছুতেই কর্ণপাত না করা পুতিন ভূমিধস জয়ের মাধ্যমে পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার ক্ষমতায় এসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে পুতিন একাই পাল্টে দিতে পারেন বিশ্বের ভবিষ্যৎ।

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসীন ভ্লাদিমির পুতিনের বেশিরভাগ সমালোচকই কারাগারে বন্দি অথবা রহস্যজনক মৃত্যুর স্বীকার। শুধু নিজ দেশেরই নয়; এ নির্বাচনে জয়লাভ এবং রাশিয়ার শাসনে পুতিনের দীর্ঘসূত্রিতা মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বিশ্ব পরাশক্তিরও। এক্ষেত্রে পশ্চিমারা এবং তাদের সামরিক ও আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ ভুগতে পারে নানাবিধ নিরাপত্তা ঝুঁকি কিংবা আধিপত্যহীনতায়। অন্যদিকে চীন, উত্তর কোরিয়া, ইরান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কিছু দেশ এগিয়ে আসতে পারে ক্ষমতাযুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে।

পুতিনের হাতে যত সমীকরণ 

সারাবিশ্বের এমন সংঘাত উদ্বেগের মধ্যে ক্রমেই আরও পরাক্রমশালী হয়ে চলেছে পুতিন। বিশ্বের বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক পরিসরে বিরাট রকমের মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে-এমন অনেক সমীকরণই রয়েছে পুতিনের হাতে। পুতিন বিশ্ব ব্যবস্থায় যেসব মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্ষমতার রদবদল এবং প্রাচ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। 

পুতিন প্রভাব টিকিয়ে রাখতে যেসব কৌশল বেশি কার্যকরী ছিল তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মস্কো সফর, এবং নিরাপত্তা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং বাণিজ্য নিয়ে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে এক ডজন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা বাড়ে, পশ্চিমবিরোধী বলয় শক্তিশালী হতে শুরু করে। তাই পুতিনের আবারও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সুফল বেশি ভোগ করতে পারে চীন। শুধু পরাশক্তিধর দেশ নয়, পুতিন কৌশলে অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলোতেও বাড়ছে পুতিনের সমর্থন। সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে পারে পুতিন। পুতিনের দীর্ঘসময়ের ক্ষমতা যেসব ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে সেসব বিষয়গুলো হলো:

নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা বাড়বে পশ্চিমাদের

চলমান রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাতে ন্যাটোর মতো সংগঠনের দুর্বল ভূমিকা ক্রমান্বয়ে আরও দুর্বল হয়েছে। ইউক্রেনে গোলাবারুদ সরবরাহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন ও রাজনীতির জটিল সমীকরণে তিন-চার মাস ধরে ইউক্রেনে সহায়তা আসাও বন্ধ হয়ে গেছে। এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মতো অস্ত্র এবং অত্যাধুনিক এমজিএম-১৪০ আর্মি ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা (এডিএসিএমএস) এখনও হাতে পায়নি ইউক্রেন। জার্মানি টাউরুস ক্ষেপণাস্ত্র দেবে কি না, তাও অনিশ্চিত। ইউরোপীয় মিত্রদের মাঝেও আগের মতো দৃঢ় ঐক্য দেখা যচ্ছে না। ন্যাটো এবং ইইউ এর ব্যর্থতার সুযোগে আরও পরাক্রমশালী হয়ে উঠবে রাশিয়া।

এদিকে ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদানে অপারগতার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির দীর্ঘসূত্রিতা। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে বলছে ফিলিস্তিনের গণহত্যা বন্ধ করতে হবে, অন্যদিকে ইসরায়েলকে দিচ্ছে সামরিক ও কুটনৈতিক সাহায্য। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বারবার হুশিয়ারি দেওয়া ছাড়া আর তেমন জোরদার কিছু করতে পারছেনা বাইডেন প্রশাসন। ইসরায়েল-হামাস ইস্যুতে ক্রমেই শক্তি হারাচ্ছে পশ্চিমারা,বাড়ছে পশ্চিমাবিরোধী জনমত। আর্থিক সহায়তা প্রদানে পরাশক্তি দেশগুলোর অপারগতা, শক্তিবলয় কাজে লাগিয়েও কোনো সংঘাতের মীমাংসা করতে না পারার ব্যর্থতাসহ আরও অনেক পরাজয় যুক্ত হচ্ছে পশ্চিমাদের ঝুলিতে।

ন্যাটোর ব্যর্থতায় এখন উল্টো দিকে ঘুরেছে পশ্চিমা পরিকল্পনা। বাল্টিক অঞ্চলসহ পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ড, রুমানিয়ার মতো দেশগুলো রুশ আক্রমণের ভয়ে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে পুতিনের জয় তাদের সেই ভীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পশ্চিমাদের আধিপত্য কমবে

পিউ ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ  অর্থনীতি ও নিরাপত্তার কারণে চীনকে হুমকি মনে করছেন, যেখানে রাশিয়ার প্রতি এমন মনোভাব রাখেন মাত্র ১৭ শতাংশ। কিন্তু সেই রাশিয়ার সাথেই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে চীনের। 

পশ্চিমারা যখন রাশিয়াকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, চীনের সাথে তখন থেকেই বাড়তে থাকে অর্থনৈতিক সংযোগ। চীনের সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত থাকার ফলে দুই দেশের সম্পর্কও অনেক মজবুত। তাই পুতিনপন্থি চীন ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আধিপত্য নিতে পশ্চিমাদের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবে। চীন ইতিমধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশগুলোকে বাণিজ্যিক সুবিধা এবং আর্থিক ঋণ সুবিধা দিয়ে বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক মজবুত করেছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং আঞ্চলিক সংগঠনের আওতায় অনেক দেশের অর্থনীতির চাকাই এখন চীনের নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়ার ক্ষমতায় পুতিন থাকা মানে ইউক্রেন ইস্যুতে ধরাশায়ী থাকবে পশ্চিমারা। এদিকে অর্থনীতি,বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে যাবে পুতিনপন্থিরা।

পশ্চিমা বিশ্বের তাত্ত্বিকরা চিন্তিত ইউক্রেনের পুতিনের জয়ের পরের সম্ভাব্য বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে। নিরাপত্তা, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ইস্যুতে তারা মনে করছেন, ইউক্রেনে পুতিনের জয়ের অর্থ হলো ভারত প্রশান্ত মহাসাগীয় এলাকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা, দক্ষিণ চীন সাগরসহ বিস্তীর্ণ জলসীমায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধির ঘটনা আরও জোরালো হবে।

তাইওয়ান ইস্যুতেও ধাক্কা খেতে পারে পশ্চিমারা

সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদল ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী লাই চিং-তে। ডিপিপির সাথে সাথে  যুক্তরাষ্ট্রও  তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে আসছে, করছে বাণিজ্যিক ও সামরিক সহায়তাও। 

অন্যদিকে পুতিনপন্থি চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখন্ডের অংশ মনে করে অনেক আগ থেকেই। তাইওয়ান বিষয়ে চীনের এ দাবি নতুন কিছু নয়। বরং শি জিনপিং এই একত্রীকরণের বিষয়টিকে বর্তমানে একটি লক্ষ্যে পরিণত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র  চায় তাইওয়ানের স্বাধীনতা আর চীন চায় তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ড করতে। তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্ত রাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না তা থাকলেও দেশটিকে লাগাতার সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর একটি নথিতে বলা হয়, ২০২৭ সালে তাইওয়ানকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে একত্রীকরণ করতে পারে চীন। এই ধারণা মিলে গেলে ইউক্রেনের মতো পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে তাইওয়ানকেও। সেক্ষেত্রে তাইওয়ানেও যুক্তরাষ্ট্র অপারগতা প্রকাশ পেতে পারে।

এমনিতেই করোনাকালীন সংকট নিয়ে ক্ষোভ এবং সন্দেহ, বাণিজ্য যুদ্ধ, হুয়াওয়ে নিয়ে তদন্ত, পরস্পরের কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়া, সাংবাদিক বহিষ্কারসহ নানাবিধ ঘটনা নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন হস্তক্ষেপ সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়াবে। তাই তাইওয়ান ইস্যুতে ক্ষমতা প্রদর্শন ও মিত্রদের নিরাপত্তা রক্ষায় আবারও চীন-রাশিয়ার কাছে ধাক্কা খেতে পারে পশ্চিমারা। 

এশিয়া ও আফ্রিকার ছোট দেশগুলোতেও পুতিন সমর্থন তুঙ্গে

যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাক চ্যাথাম হাউজের ‘আফ্রিকা কর্মসূচি’র পরিচালক ড. অ্যালেক্স ভিনেস মনে করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের মধ্যে গোটা বিশ্বের শক্তির পুনর্বিন্যাস ঘটে গেছে। তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তন আফ্রিকা জুড়ে বেশি দেখা গেছে। ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়ার নিন্দা করে জাতিসংঘে আনা প্রস্তুাবগুলোয় অংশ নেয়নি মহাদেশটির ৫১ শতাংশ দেশ; অথচ স্নায়ুযুদ্ধের আগে এর বিপরীত প্রবণতা দেখা যেত অঞ্চলটিতে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট মোকাবিলায় এশিয়া ও আফ্রিকার ছোট দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছিল রাশিয়া। ২০২৩ সালের রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের সেই রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলন পুতিনকে সুবিধাজনক অবস্থান দিয়েছিল। এ সম্মেলন ঘিরে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা চাপে থাকা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আফ্রিকার দেশগুলোর সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। আফ্রিকার ছয়টি দরিদ্র দেশকে বিনা মূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুতিন। বুরকিনা ফাসো, জিম্বাবুয়ে, মালি, সোমালিয়া, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ও ইরিত্রিয়ায় ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করে রাশিয়া। এভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করে দেশটি। বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি এড়াতে ছোট দেশগুলোর সমর্থনও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে পুতিনের জন্য। 

এছাড়াও ইসরায়েল-হামাস ইস্যুতেও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার মামলা করতে দেখা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতের বিপক্ষে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। পশ্চিমারা এশিয়া এবং আফ্রিকার ছোট দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ যে হারিয়েছে এবং তা যে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও শক্তিশালী হবে উত্তর কোরিয়া

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সাথে অধিকাংশ দেশের বিচ্ছিন্নতা বাড়লেও উত্তর কোরিয়ার কাছে দেশটির মূল্য ক্রমশ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।  রাশিয়া-ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর উত্তর কোরিয়া প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে মস্কোকে। ‘কৌশলগত সহযোগিতার' মাধ্যমে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার সম্পর্ক।

ভ্লাদিভোস্তকের ফার ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আর্তিওম লুকিন সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন, 'ইউক্রেনে মস্কোর বিশেষ সামরিক অভিযান একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা করেছে, যেখানে ক্রেমলিন এবং উত্তর কোরিয়া ক্রমবর্ধমানভাবে ঘনিষ্ঠ হতে পারে।’

রাশিয়ায় গতবছর জুলাই থেকে ৬ হাজার ৭০০ কন্টেইনার ভর্তি লাখ লাখ গোলা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। 'যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ ও হুমকির' বিরুদ্ধে পুতিনের পাশে থেকে নিজেও সমৃদ্ধ হচ্ছে কিম। ফলে শক্তিমত্তা বাড়া এবং পশ্চিমাবিরোধী আরও আগ্রাসী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কোরীয় উপদ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো এশীয় মিত্ররাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে; কারণ উত্তর কোরিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর সেখানে লাগাতার অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে; অর্থাৎ ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বাস্তবিক অর্থে পশ্চিমাদের অবস্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় যাবে।

ভারতের সাথে পশ্চিমা সম্পর্কের মোড় ঘুরতে পারে

ভারত ইতিমধ্যেই কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় কানাডার সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। তার কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রও তাদের নাগরিক অপর এক শিখ নেতা হত্যার অভিযোগ তোলে ভারতের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় পশ্চিমাদের দাপট ভেঙে ভারতকে দেখা গিয়েছে খুবই আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। এসব সংকটে  ভারতকে একরকম সমীহ করতেই দেখা গেছে পশ্চিমাদের। সরাসরি কানাডাকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত ছিল কানাডার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে। অন্যদিকে কানাডার যেকোনো পদক্ষেপকে ভেস্তে দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে ভারত।

এছাড়াও এই বছরই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানায় ভারত। ভারতের সাম্প্রতিক বিভিন্ন আচরণ এবং রুশ বাণিজ্যের নতুন গন্তব্য হওয়ার ঘটনা পাল্টে দিতে পারে ভারত-পশ্চিমা সম্পর্কও। এক্ষেত্রে বাণিজ্য, কুটনীতি, আধিপত্যের প্রতিযোগিতায় রাশিয়া এবং চীনের সাথে সম্পৃক্ততা আরও বাড়তে পারে দেশটির। 

;

জনগণের শেখ মুজিব!



মাহবুব আলম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

একাত্তর সাল। চারদিকে বিক্ষুব্ধ ও আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে তখন। ১৭ মার্চ কয়েকজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, 'আমি জন্মদিন পালন করি না। আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালাই না, কেকও কাটি না। এদেশে সাধারণ মানুষের জীবনেরই নিরাপত্তা নাই। আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্মদিনই কী আর মৃত্যুদিনই কী! আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু।'

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোটা জীবনটাই ছিল সংগ্রামমুখর। স্বাধীনতার আগে তার বহু জন্মদিনই কেটেছে কারাগারের নির্জন কক্ষে, যেখানে ছিল না স্বজনের সাহচর্য, না ছিল জন্মদিনে ভালো-মন্দ খাবারের আয়োজন। বঙ্গবন্ধু কোনোবারই নিজের জন্মদিন আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করতেন না।

নিজের ৪৭তম জন্মবার্ষিকী কেটেছে কারাগারের প্রকোষ্ঠে। সেখানে বসে তাঁর লেখা 'কারাগারের রোজনামচা'য় তিনি লিখেছেন, 'আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্টপল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই- বেশি হলে আমার স্ত্রী দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মদিন পালন করছে। বোধহয়, আমি জেলে বন্দী আছি বলেই।'

''আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস'— দেখে হাসলাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি নূরে আলম- আমার সঙ্গে ২০ সেলে থাকে, কয়েকটা ফুল নিয়ে ঘরে এসে উপস্থিত। আমাকে বলল, এই আমার উপহার, আপনার জন্মদিনে। আমি ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করলাম। তারপর বাবু চিত্তরঞ্জন সুতার একটা রক্তগোলাপ এবং বাবু সুধাংশু বিমল দত্তও একটি শাদা গোলাপ এবং ডিপিআর বন্দি এমদাদুল্লা সাহেব একটা লাল ডালিয়া আমাকে উপহার দিলেন,'' লিখেছেন বঙ্গবন্ধু। (সূত্র: কারাগারের রোজনামচা)।

বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের ৪ হাজার ৬শ ৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। সময়ের হিসাবে তা প্রায় ১৩ বছর। বঙ্গবন্ধুর ঠিক কতগুলো জন্মদিন কারাগারে কাটিয়েছিলেন, তা জানা নেই। তবে ১৯৬৭ সালের জন্মদিনটি যে তিনি কারাগারে কাটিয়েছিলেন, তা তার ডায়েরির পাতাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন কেমনভাবে কাটতো তার বর্ণনা পাওয়া যায় 'কারাগারের রোজনামচায়'।

১৯৬৭ সালে জন্মদিনে কারাগারে বসে লেখা ডায়েরির শেষাংশে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, 'তখন বেলা সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছে, বুঝলাম আজ বোধ হয় রেণু ও ছেলে-মেয়েরা দেখা করার অনুমতি পায় নাই। পাঁচটাও বেজে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে জমাদার সাহেব বললেন, চলুন আপনার বেগম সাহেবা ও ছেলে-মেয়েরা এসেছে। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওয়ানা করলাম জেলগেটের দিকে। ছোট মেয়েটা আর আড়াই বৎসরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাঁড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। সে কিছুতেই পরবে না, আমার গলায় দিয়ে দিল। ওকে নিয়ে আমি ঢুকলাম রুমে। ছেলে-মেয়েদের চুমা দিলাম। দেখি সিটি আওয়ামী লীগ একটা বিরাট কেক পাঠাইয়া দিয়াছে। রাসেলকে দিয়েই কাটালাম, আমিও হাত দিলাম। জেল গেটের সকলকে কিছু কিছু দেওয়া হলো।'

' …ছয়টা বেজে গিয়াছে, তাড়াতাড়ি রেণুকে ও ছেলে-মেয়েদের বিদায় দিতে হলো। রাসেলও বুঝতে আরম্ভ করেছে, এখন আর আমাকে নিয়ে যেতে চায় না। আমার ছোট্ট মেয়েটা খুব ব্যথা পায় আমাকে ছেড়ে যেতে, ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি। ব্যথা আমিও পাই, কিন্তু উপায় নাই। রেণুও বড় চাপা, মুখে কিছুই প্রকাশ করে না। ফিরে এলাম আমার আস্তানায়। ঘরে ঢুকলাম, তালা বন্ধ হয়ে গেল বাইরে থেকে। ভোর বেলা খুলবে।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির কাছে একটা চেতনার নাম। একটা আদর্শের নাম। একটা শক্তির নাম। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া ‘খোকা’ একাত্তরের ৭ মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দেন।

তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেই শক্তি-আদর্শ ধারণ করে মরণপণ যুদ্ধে যায় আপামর বাঙালি। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেও আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার কাছে শক্তিরূপে অবতীর্ণ হন তিনি। তাঁর দেশপ্রেমের সুমহান চেতনায় মুক্ত করে বাংলাদেশকে। আর এখন তাঁরই চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাঙলা গড়ে প্রত্যয় নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তাঁরই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমিকে সমৃদ্ধ 'সোনার বাংলা'য় রূপান্তরের উদ্যোগ নেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে। কিন্তু তিনি তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি কতিপয় নিকৃষ্ট মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। সত্যি-ই শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। তারই মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ দেশে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। তিনি শিশুদের প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ওইদিনটিতে তিনি আনুষ্ঠানিক জন্মদিন হিসেবে উদযাপন না করে শিশুদের নিয়ে আনন্দঘন সময় কাটাতেন। বাংলাদেশে শিশুর কল্যাণ ও উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট চারটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

এক, শিশু কল্যাণের জন্য মায়েদের সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মা ও শিশুকল্যাণ অধিদপ্তর’। দুই, শিশুর সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শিশু একাডেমি’। উল্লেখ্য, এ দুটো প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ভাবনা-পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধুর সব সময়ই ছিল। তিন, শিশুর শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। বাংলাদেশের সে সময়ের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্তটি ছিল সাহসী ও যুগান্তকারী। চার, ১৯৭৪-এর ২২ জুন শিশু আইন জারি করা হয়। এ আইন শিশু অধিকারের রক্ষাকবচ।

বিশাল হৃদয়ের অধিকারী বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুর মতো সরল। তার এই সারল্যকে কাজে লাগিয়েছে ঘাতকচক্র। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ এমপি জেমস ল্যামন্ড-এর খেদোক্তি ছিল এমন- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী একজন মহান সন্তানকে হারিয়েছে!’

বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই! তাঁর আদর্শ রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় চেতনা ও আদর্শে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাঙালিকে আর ‘দাবায়া’ রাখতে পারবে না কেউ-ই!

লেখক: সংবাদকর্মী। ই-মেইল: [email protected]

;

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: বাংলার আলোকবর্তিকা



ড. মতিউর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসের পথ ধরে, বিরল ব্যক্তিদের আবির্ভাব ঘটে যাদের উত্তরাধিকার সময়ের পরিক্রমা ছাড়িয়ে, জাতির সম্মিলিত চেতনায় অমলিন ছাপ রেখে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনই এক আলোকবর্তিকা। জাতির প্রতিষ্ঠাতা নেতা হিসেবে, তাঁর জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতা ও স্থিতিস্থাপকতার চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে যা বাঙালির চিরন্তন বৈশিষ্ট্য।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, ব্রিটিশ শাসিত বাংলার টুঙ্গিপাড়া নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পরবর্তীতে তার জনগণের জন্য আশা ও মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছিল ভূমি, জনগণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রামের পরিবেশে। ছাত্রজীবনেই তার রাজনৈতিক জাগরণ ঘটে এবং তিনি অবিভক্ত ভারতের অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন।

বাংলাদেশ যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন শেখ মুজিবুর রহমান একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়বিচারের সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলার গরীব, দুঃখী, কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকারের জন্য তার লড়াই, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি অঙ্গীকার, বাঙালির ভাগ্যকে গঠন করবে এমন একটি রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ উপমহাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। এই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম এবং পরাধীনতা মেনে নেওয়ার অস্বীকৃতি এক উত্তাল সময়ের সূচনা করে, যেখানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা প্রত্যাশী জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হন।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক যুগান্তকারী সন্ধিক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত। তীব্র উত্তেজনার সেই মুহূর্তে, লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে তিনি তাঁর কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির আত্মার অভিব্যক্তি।

তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এই ভাষণে স্পষ্টভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা না দেওয়া হলেও, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম" এই বাক্যটি ব্যবহার করেছিলেন। এটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিত্তি স্থাপন করে। তার আবেগপ্রবণ আবেদন, ঐক্য ও প্রতিরোধের আহ্বান, এবং স্বাধীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করে তাদের ভাগ্য নিজেদের হাতে তুলে নিতে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে "ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুধু একটি ভাষণ ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির মুক্তিকামনার প্রতীক। এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর নির্মম হামলা চালিয়ে গণহত্যার সূচনা করে। এই হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।

কারাগারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। তাঁর অদম্য সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাস বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা যোগায়। মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস ধরে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অদম্য সাহস, দৃঢ় বিশ্বাস ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ত্রিশ লক্ষ শহিদের জীবন উতসর্গ, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীনই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, জাতি গঠন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কঠিন কাজের সূচনা করে এই প্রত্যাবর্তন।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। অবকাঠামো ধ্বংস, অর্থনীতি বিধ্বস্ত, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত। দেশে ছিল আইনশৃঙ্খলার অভাব, সামাজিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। খাদ্য, পানি, বস্ত্র, ওষুধ - প্রাথমিক চাহিদা পূরণের জন্যও লড়াই করতে হচ্ছিল।

প্রতিকূলতার মুখেও বঙ্গবন্ধু হতাশ হননি। তিনি দৃঢ় সংকল্পের সাথে দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন।

বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হিসেবে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির উপর গুরুত্বারোপ করেন। দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার প্রসার, কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল ও স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ”সোনার বাংলা ” গঠনে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

১৯৭২ সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধান কেবল একটি আইনি নথি নয়, এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের প্রতিফলন। একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তিনি এই সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ ও অধিকার থাকা উচিত। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর ভিত্তি করে তিনি এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যেখানে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যই এর শক্তি। তিনি সব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেন।

বাংলাদেশের সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক নীতির উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্র সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করবে বলে সংবিধানে ঘোষণা করা হয়েছে।

স্বাধীনতার পরবর্তী বছরগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলি দারিদ্র্য বিমোচন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা বৃদ্ধির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ১৯৭৩ সালের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দীর্ঘ যুদ্ধের ক্ষত মেরামতের জন্য নীতি গ্রহণ ও ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সামাজিক সেবার প্রসারের মাধ্যমে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

স্বাধীনতার পরবর্তী বছরগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলি দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। নীতির প্রভাবে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছিল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল।

তা সত্ত্বেও, দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের অর্থনীতিকে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করে। দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

দুর্ভাগ্যজনক, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক ঘটনায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জাতির জনকের এই হত্যাকান্ড বাংলাদেশের হৃদয়ে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করে এবং তরুণ জাতির গতিপথে কালো ছায়া ফেলে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা। স্বাধীনতার পর, দীর্ঘ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন এবং একটি নতুন জাতি গঠনের কঠিন দায়িত্ব তিনি বহন করেছিলেন। তার অকাল মৃত্যু কেবল তার পরিবারের জন্যই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্য এক বেদনাদায়ক ক্ষতি ছিল।

বঙ্গবন্ধু যে নীতি ও আদর্শের জন্য লড়াই করেছিলেন, তা কেবল তার জীবদ্দশায়ই নয়, তার মৃত্যুর পরও অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকে। তার ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আত্মনির্ভরতার নীতি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক অধ্যায়। তবুও, তার আদর্শ এবং জাতি গঠনের স্বপ্ন আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার কেবল রাজনীতির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। তার জীবন ও কর্ম আমাদের স্থিতিস্থাপকতা, ত্যাগ এবং জনগণের কল্যাণে নিরন্তর উত্সর্গের মতো মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।

বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ ছিল সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন এবং সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার নীতি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার নীতি। সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার নীতি। বাইরের সাহায্যের উপর নির্ভর না করে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর নীতি।

বঙ্গবন্ধু সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও ভেদাভেদ ভুলে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন অদম্য সাহসী, দূরদর্শী এবং কর্মঠ নেতা। তিনি শুধু একজন রাষ্ট্রনায়কই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী।

স্বাধীন বাংলাদেশের নবনির্মাণে তিনি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।

বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে আমরা সকলে মিলে তাঁর স্বপ্নের “সোনার বাংলা” গড়ে তুলব এই দৃঢ় অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করি। সর্বকালের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

;