নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জনগণ, আবারও সরকার গঠন করবে আ.লীগ
যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন স্বাধনীতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর পঁচাত্তরে দেশবিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করলেও ২০০৯ সালে শাসন ক্ষমতায় এসেছে টানা ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। ফলে আওয়ামী লীগকে দেশের রাজনীতিতে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাসীন করার উপলব্ধি এসেছে, দেশের জনগণ মাসনিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন ‘বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করার হয়; তখন আমাদের জিডিপি ছিল ৭ শতাংশের বেশি। যেটা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আর কখনই অর্জন করতে পারিনি। সেটা গত চার বছর যাবত দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছিল দেশবিরোধীরা। এমনকি তাদেরকে রাজনীতিতে পুর্নবাসন করা হয়েছিল, একাত্তুরের গণহত্যাকারীদেরও মন্ত্রী বানানো হয়েছিল; তেমনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হিসেবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা আজকে পরিষ্কার যে, আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় থাকলে উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ ১৮-১৯ বছর দেশ পরিচালনা করে যে উন্নয়ন করেছে, বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনায় যে অবদান রেখেছেন, আজ পর্যন্ত তা কেউ করতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধুর সেই ফাউন্ডেশনের উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
‘শেখ হাসিনা ছিয়ানব্বই থেকে ২০০১ সাল পরযন্ত যে সেবা দিয়েছেন। সেটাকে অতিক্রম করতে পারে নাই। তবে এর মাত্র পাঁচ বছর পরে আমরা একটা অন্ধকার যুগে চলে যাই। এবং ২০০৯ সালে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের মানুষকে যে সেবাটি দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দিয়েছে। অতীতের কোনো সরকার দেয়নি।’
‘আমরা (আওয়ামী লীগ) ধারাবাহিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারিনি; এটা আমাদের ব্যর্থতা নয়, এটা একটা ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগকে ক্ষতবিক্ষত করার মধ্যদিয়ে দেশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। আজকে দেশের জনগণের মধ্যে উপলব্ধি এসেছে। সেই কারণে নির্বাচন হওয়ার আগেই মানুষের মধ্যে মানসিক প্রস্তুতি তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করবে; দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হবে।’
১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে চাইলে তিনি জানান, অর্থনৈতিক বাজেট হাজার কোটি টাকা থেকে শুরু হয়েছিল, বর্তমানে বাজেট লক্ষ কোটি টাকায় ছাড়িয়ে গেছে। বাজেট পরিসংখ্যানেই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সেবাটাকে কোন জায়গায় নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের যেসব মৌলিক সমস্যা ছিল, এখন সেগুলো নেই। সমাধান হয়েছে গেছে। বাংলাদেশ মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল ছিল, সেটা এখন নাই, নদীভাঙনের কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে যেত অসহায় হয়ে যেত; এখন হয় না; সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়; রাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়ায়। এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, শিক্ষার মান বেড়েছে, স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার মান বেড়েছে।’
‘মনে করি, দেশের মানুষ এখন দু’বেলা শান্তিতে খেতে পারে, ঘুমাতে পারে, সন্তানকে স্কুলে নিতে পারে, চিকিৎসা সেবা পায়; এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত; সারা পৃথিবী তাদের হাতের মুঠো। এগুলোর মধ্য দিয়েই প্রতীয়মান হয়, যে আমরা জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে আরও উন্নত সেবা দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানালেও তিনি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। এজন্য আওয়ামী লীগ সর্তকতা অবলম্বনের পাশাপাশি তাদের পর্যবেক্ষণও করছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি জনগণকেও সর্তক থাকার আহ্বান জানান এ নেতা।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘জোটের নামে যদি দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হয়, দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাহলে আমরা ছেড়ে দিবো না। এই জোটে বঙ্গবন্ধুর খুনী ও আশ্রয়দাতারাও আছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপরাধীরাও আছে, গণতন্ত্রকে যারা হরণ করেছে যারা তারাও আছে, যারা সন্ত্রাস করে তারাও আছে। কাজেই এ ধরনের সম্মিলন যেখানে ঘটেছে, সেখানে আমাদের উদ্বিগ্নতা।’
আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী জোটের নেতৃত্বে দিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন, সুলতান মনসুর, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নারা। আওয়ামী লীগ থেকে এই ধরনের নেতৃত্ব বের হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতির অভ্যন্তর থেকে দলের ক্ষতি করা, দেশের ক্ষতি করা; এটা নতুন কিছু নয়। এরা এতদিন যাবৎ’ ঘাবপটি মেরেছিল; এখন চিহ্নিত হয়েছে। আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি, জাতির কাছে তুলে ধরতে পেরেছি, এইটা আমাদের সফলতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা পরিষ্কার এখন সুলতান মনসুর বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন, কিন্তু চা খায় বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে। ড. কামাল হোসেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন তবে সব থেকে বড় দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে বসে আলাপচারিতা করেন। বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন অথচ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে তিনি বসে মিটিং করছেন। এগুলো আমাদের মূল্যায়নের বিষয় না, জনগণ মূল্যায়ন করবে। জনগণের কাছে এদের চেহারা উন্মোচিত হয়ে গেছে। ‘
আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী কিন্তু বিএনপি আন্দোলনমুখী-এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দিব, বাংলাদেশে এরকম পরিস্থিতি নাই; দেশের মানুষ যেহেতু ভালো আছে, এজন্য দেশের রাজনীতিতে কোন টানাপোড়ন নাই। সাধারণ মানুষ কিন্তু ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কনসেপ্ট মানুষ এখন বিশ্বাস করে না। মানুষ চায় নির্বাচন, একটা অবাধ নিরপক্ষে নির্বাচন এবং দেশকে এগিয়ে নেয়ার।’
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনের ওপর বিশ্বাস এবং আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তখনই শক্তিশালী হবে যখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। সরকারের দিকে না তাকিয়ে; নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকাতে হবে।’