বিএনপির ঘাঁটিতে ঐক্যফ্রন্টের হানা!
সারাদেশে প্রায় অর্ধশত আসনে বিএনপির অবস্থান বেশ শক্তিশালী। এ সব আসনে রয়েছে তাদের হেভিওয়েট প্রার্থী। বিএনপির শতভাগ বিজয় নিশ্চিত এমন আসনগুলোতে হানা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। আসন হারানোর আশঙ্কায় সঙ্গত কারণেই দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করে যাওয়া নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে। যদি ঐক্যের স্বার্থে বিএনপিকে আসন ছাড়তেই হয়, তাহলে বিএনপি এসব নেতাদের কিভাবে মূল্যায়ন করবে সেটাই এই মুহূর্তের বড় প্রশ্ন।
দলের একটি সূত্র বলছে, যে সব আসনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত ওই সব আসনগুলোতেও মাহমুদুর রহমান মান্না, আসম আব্দুর রব ও কাদের সিদ্দিকীদের দাবি রয়েছে এবং তা খুবই শক্তভাবে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ঐক্যের শক্তিকে ধরে রাখতে তারেক জিয়ার নির্দেশে ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। এ ছাড়া বঞ্চিত হেভিওয়েট নেতাদের অন্য মাধ্যমে মূল্যায়ন করার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্র থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিএনপির শক্তিশালী প্রায় অর্ধশত আসন ছাড়তে হচ্ছে। যেমন- টাঙ্গাইল-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের আসন থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করবেন।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের পরিবর্তে মনোনয়ন পাচ্ছেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। জেএসডিরসহ সভাপতি তানিয়া রব পাচ্ছেন আজিজুল বারী হেলালের ঢাকা ১৮ আসন। কুমিল্লা-৪ আসনে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন মনোনয়ন পাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির সাবেক সাংসদ নাজিমউদ্দিন আহমেদের পরিবর্তে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, হবিগঞ্জ-১ আসনে শেখ সুজাত মিয়ার পরিবর্তে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে গণফোরামে সদ্য যোগদানকারী শাহ রেজা কিবরিয়া, মৌলভীবাজার-২ আসনে অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার বদলে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর মনোনয়ন পাচ্ছেন।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে ঢাকা-৬ আসন দেওয়া হচ্ছে এতে করে বঞ্চিত হবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। একই আসনে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। তিনিও বঞ্চিত হচ্ছেন।
এভাবে আসন ছাড়ার ধারাবাহিকতায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যকে ছেড়ে দিতে হবে বগুড়া-২ ও ঢাকা-১৭, নারায়ণগঞ্জ-২, জামালপুর-৩ আসন। এসব আসনে শতভাগ বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী রয়েছে দাবি বিএনপির।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের আসনগুলো ছেড়ে দিলে বিএনপির এসব হেভিওয়েট নেতাদের কি মূল্যায়ন করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে, তারেক রহমান নির্বাসনে, গণতন্ত্র অরক্ষিত, হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলহাজতে এমন অবস্থায় এটা একটা লড়াই। তাই আসন ভাগাভাগির চিন্তা না করে আমাদের নির্দেশনা হলো- যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে সবাই মিলে মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করবে। এমনকি যারা দলের বিপদকালীন সময়ে হামলা-মামলা সহ্য করে দলের সঙ্গে আছে দল তাদের মূল্যায়ন করবে, এইটুকু অন্তত লিখতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এ জন্য প্রার্থীতা নিয়ে কোনো অসুবিধা হবে না বলে মনে করছি। দলের কিংবা ঐক্যের প্রার্থী হোক না কেন যিনি বিজয়ী হতে পারবেন তাকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নিজ নিজ আসনে মনোনয়ন তুলেছেন। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আসন বন্টনের চাইতে দেখার বিষয় কোন প্রার্থী জয়ী হতে পারবেন।