বিএনপির রাজনীতির কাপালিক পুরুষ!
রাজনীতিতে ‘সোনার পাথর বাটি’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। উদার, গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে আত্মগোপনকারী বাম-বিপ্লবীর মতো ফুল টাইম ক্যাডার হয়ে গেছেন তিনি। পেশা, নেশা, শয়ন ও জাগরণে পূর্ণকালীন রাজনীতি নিয়ে বিএনপির নয়া পল্টনের অফিসকে বাসা-বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
উত্তরবঙ্গের যে অঞ্চল থেকে এসেছেন তিনি, সেখানে ছিল বিভ্রান্ত লাল কমিউনিস্টদের গলা কাটার রাজনীতির রণক্ষেত্র। যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রাজনীতির উত্থান, সেখানেও ছিল রাজনীতির নামে উগ্রতার আস্ফালন। তার অতীতের মধ্যে এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাবের কথা অজানা নয়। তার বর্তমান অস্বাভাবিক আচরণে সশস্ত্র কমিউনিস্ট ক্যাডার সুলভ তৎপরতার মনস্তত্ত্ব খুঁজে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। যে ট্রেনিং তাকে স্বচ্ছ জাতীয়তাবাদী-গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অফিস দখল করে দখলদারি নেতৃত্ব বিস্তারে স্বৈরতান্ত্রিকতার পথে চালাচ্ছে।
এরশাদ পতনের পর মফস্বল রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকায় নবাগত রিজভী নিজ দল বিএনপির বদলে তোপখানার একটি বিশেষ ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অফিস ও নেতাদের সঙ্গেই বুদ্ধি-পরামর্শ করে চলেন। যে দলটি মাস্টার মাইন্ড হিসাবে নেপথ্যে থেকে বিএনপিতে রিজভীর প্রতিষ্ঠার কাজটি করে দেয়।
নীল নকশা অনুযায়ী নব্বই দশকে রিজভী শাহবাগের তৎকালীন পিজি হাসপাতালের নিচতলার সিলভানা ও মৌলী রেস্টুরেন্টে আবির্ভূত হন। ছাত্রদলের নীরু, অভি, ইলিয়াস উপদলের অস্ত্রবাজির সময়ে পাঞ্জাবি পরিহিত, দরিদ্র্য, ত্যাগী ইমেজ ধারণ করে রিজভী বাম পৃষ্ঠপোষকতার ছত্রছায়ায় পড়ুয়া ও তাত্ত্বিক হিসাবে জায়গা মহানগরে করে নেন। কারণ ক্ষমতা ও শক্তির রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি তথা ছাত্রদলে এই ক্ষেত্রটি ছিল শূন্য। রিজভী সুকৌশলে সেই পথ ধরে এগুতে থাকেন দলের মূল জায়গায় পৌঁছার পরিকল্পনায়।
এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিধা করতে না পেরে ঢাকা কলেজের ছাত্রদল নেতা আসাদুল করিম শাহিন এবং এমন কয়েক জনের সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়ে তিনি বহুধা গ্রুপিং-এ আকীর্ণ ছাত্রদলে আলাদা একটি উপদল গড়ে তুলেন। সময়ের টানে এবং উপদলীয় লড়াইয়ে নানা গ্রুপ হারিয়ে গেলেও রিজভীর গ্রুপটি তলে তলে টিকে থাকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস ও দপ্তর এখন এদের কব্জায়। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থাকলেও রিজভী তার সাঙ্গাতদের নিয়ে অফিসের প্রেস কনফারেন্স দখল করে রাখেন। কার পক্ষে বিবৃতি দিতে হবে, সেটাও তারা ঠিক করেন। এমন কি, দলের কারাবন্দী নেতাদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার জন্যও এই গ্রুপের মাধ্যমে লেনদেন করার বিষয়টি বিএনপির রাজনীতিতে ওপেন সিক্রেট।
দৃশ্যত বুদ্ধিজীবীর ভেক ধরে এগিয়ে এসে রিজভী স্বমূর্তি ধারণ করেছেন যথাসময়ে। হুমকি-ধমকির ভাষায় নেতা-কর্মীদের শাসানো ছাড়াও এখন তিনি মিডিয়াকে কঠোর ভাষায় নিয়ন্ত্রণ করেন। রিজভীকে হাত না করে বিএনপি করাই অসম্ভব। রিজভীকে খুশি করতে না পারলে বিএনপির নয়া পল্টন অফিসে পা ফেলাও সম্ভব নয়। এমনটিই ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
একদা বিএনপির মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমান যেভাবে দলের অফিস দখল করে বেগম জিয়া ও মূল দলকে কন্ট্রোল করতেন, রিজভীও এগুচ্ছেন সে পথেই। বিএনপির অফিস, সাইন বোর্ড, সিল দখল করার মাধ্যমে তার শক্তি সংহত করেছেন তিনি। সেই শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সময়ে সময়ে তার রণ হুঙ্কারের মাধ্যমে। জাসদের সিরাজুল আলম খানের মতো বিএনপির রাজনীতির কাপালিক পুরুষ এখন রুহুল কবির রিজভী।