ঐক্যফ্রন্ট গণশুনানির নামে ‘অডিটরিয়াম শুনানি’ করছে: আইনমন্ত্রী
জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়ে গণশুনানির নামে ঐক্যফ্রন্ট এখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে ‘অডিটরিয়াম শুনানি’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেছেন,‘জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তারা (ঐক্যফ্রন্ট) এখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে ‘অডিটরিয়াম শুনানি’ করছেন। তারা বলছেন, এখানে (গত ৩০ ডিসেম্বর) নাকি নির্বাচন হয়নি। তাদের ওই অনুষ্ঠানে একজনও জনগণ নেই। তারা ঘুমিয়েছেন এখানে বসে। তারপরও উনারা বলছেন, উনারা নাকি এখানে গণশুনানি করেছেন।’
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতি এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কর্তৃক অনুষ্ঠিত গণ শুনানি করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন করেছিলেন। ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল বলেই একমাসের আন্দোলনের মাথায় খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হয়েছিল। উনারা (বিএনপি) বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকারের দায়িত্বপালন করেছেন। সেই পাঁচ বছর জনগণ উপকৃত হয়েছে। তাই আন্দোলন হয়নি।’
তিনি বলেন ,‘কিন্তু ২০১৪ সালে খালেদা জিয়া আন্দোলনের চেষ্টা করে অগ্নি সন্ত্রাস করেছেন। জনগণ তার সঙ্গে সায় দেয়নি। আবার তারা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ তো শেখ হাসিনার সঙ্গে, উনাদের (ঐক্যফ্রন্ট) সঙ্গে নেই। উনাদের সঙ্গে জনগণ নেই বলেই তাদের অডিটরিয়ামে বসে শুনানি করতে হয়, সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে গণ শুনানি করেছিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আর এখানেই হলো শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের পার্থক্য।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত করেছেন। তিনি একটি ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে, সেই দ্বার প্রান্তে কিন্তু আমরা পৌঁছে গেছি। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে সারা দেশে পরিচিত হবে বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে খালেদা জিয়া এবং ড. কামাল হোসেনরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পেছনে রাখতে চায়। আর সেই বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাবিশ্বের সেরা পঞ্চাশটি দেশের মধ্যে একটা।’
তিনি বলেন, ‘২১০০ সালের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা কেউ দিয়েছিল? একমাত্র শেখ হাসিনা সেই পরিকল্পনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার সেই পরিকল্পনাকে সামনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আপনারা সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবেন। আর রাজাকার-আল বদর যদি বাধা দেয় তবে আন্দোলন করে সেই বাধা পিষ্ট করে দিবেন।’
ষড়যন্ত্র থেকে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আপনারা সতর্ক থাকবেন। ষড়যন্ত্র কিন্তু শেষ হয়নি। এই যে ঘুমানো চক্র (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) দেখছেন, তারা কিন্তু একটি জিনিসই পারেন। আর তা হলো ষড়যন্ত্র করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেরকম ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল এবং এটাও ঠিক যারা আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তারা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। যে দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় সেটিও যৌক্তিক দাবি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নেপথ্যে কারা ছিলেন তাদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন দরকার। আজকে তাদের চেহারা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা সেই কমিশনও জনগণকে উপহার দিব, যেন ইতিহাস ঠিকভাবে লিখিত হয়। আর বিকৃত ইতিহাস যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন না পড়তে হয়।’
আইনজীবীদের সহকারীদের জন্য পৃথক আইন প্রনয়ণের বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি মো. মোহাম্মদ নূর মিয়ার সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন- রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ঢাকা কোর্ট আইনজীবী সহকারি সমিতির সভাপতি মো. আবদুল হান্নান, সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম প্রমুখ।