ওহে জাপা, তুমি কি কাক হয়ে গেলে!
কাক নিজের চোখ বন্ধ করে রেখে বাসায় খাবার লুকিয়ে রাখার সময় ভাবে—আমি যখন দেখি নাই তখন অন্য কেউও দেখে নাই। জাতীয় পার্টিও কি সেই কাকের মতো হয়ে গেল!
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাজধানীর এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা নিয়ে এমন হাস্যকর মন্তব্য করেছেন অনেকে।
‘ক্লোজ ডোর’ ওই সভায় অডিটরিয়ামের ভেতরে সাউন্ড সিস্টেম, বাইরেও বেশ কয়েকটি লাউড স্পিকার দেওয়া। এতে বাইরে থেকে বক্তব্য শুনতে কোন বেগ পেতে হচ্ছে না। মাইকের শব্দ মাঠ ছাড়িয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের প্রধান সড়ক থেকে বেশ স্পষ্টই শোনা যাচ্ছিল। অথচ ওই সভাটি ‘ক্লোজ ডোর’ সভা। গেটে কড়া পাহারা বসানো। পরিচয়পত্র নিশ্চিত হয়ে তবেই আগতদের প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টায় উদ্বোধন শেষে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক ভিপি গোলাম মোহম্মদ রাজু বলেন, এবার আমাদের পার্টির অভ্যন্তরীণ আলোচনা সভা হবে। পার্টির নেতাকর্মীরা আলোচনা করবেন। সাংবাদিক ভাই-বোনদের হলরুমের বাইরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি। মাই টিভির ক্যামেরাপার্সন একজনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে বিরত থাকতে বাধ্য করেন। এক সাংবাদিক তো বলেই বসলেন—বাইরে লাউড স্পিকার দিয়ে ক্লোজ ডোর হয়, এখানে না এলে জানা হতো না!
এ বিষয়ে গোলাম মোহাম্মদ রাজু বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাংবাদিকদের বাইরে যেতে বলার বিষয়টি আসলে কথার কথা। বলতে হয় সে কারণে বলেছি। আজকাল কি আর কোনো জিনিস ঢাকা থাকে! এটা বাচনভঙ্গি, আপনি কিভাবে নেবেন সেটাই বিষয়।
সাংগঠনিক সভা উপলক্ষে হলরুম ও প্রধান সড়ক জাতীয় পার্টির দলীয় পতাকা ও রংবেরঙের ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। সকাল থেকেই রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতারা মতিঝিল এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান নেন। তারা স্লোগানে স্রোগানে আশপাশের এলাকা মুখর করে তোলেন।
সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াতের পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে মোনাজাত করা হয়। জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সাংগঠনিক সভার শুরুতে জিএম কাদের বলেন, আমরা সবার কথা শুনতে চাই, সে কারণে প্রত্যেকে তিন মিনিটের মধ্যে বক্তব্য শেষ করতে পারলে ভালো। আপনারা যতক্ষণ কথা বলতে চান, আমি ততক্ষণ আছি। প্রয়োজন হলে বিকেল পর্যন্ত চলবে।
জিএম কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিফলন পাওয়া যায় কাজেও। সবার বক্তব্য মনযোগ সহকারে শোনেন তিনি। কিছু কিছু নোটও করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনই এতো দীর্ঘ সময় ধরে পার্টির নেতাদের বক্তব্য শোনেননি। যে কারণে নেতাকর্মীরা বেশ উৎফুল্ল তাদের আক্ষেপ ঝাড়তে পেরে। বুধ, বৃহস্পতিবারও একই স্থানে পৃথক ৪ বিভাগের সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, আলমগীর সিকদার লোটন, মো. এমরান হোসেন মিয়া ও জাফর ইকবাল সিদ্দিকী প্রমুখ।
চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মেজর (অব.) আশরাফ উদ দৌলা, ড. নুরুল আজহার শামীম, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, শওকত চৌধুরী, সরদার শাহজাহান, জহিরুল আলম রুবেল, নিগার সুলতানা রানী, শফিকুল ইসলাম শফিক, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, অ্যাডভোকেট তোফাজ্জেল হোসেন প্রমুখ।
চার দিনব্যাপী এই সাংগঠনিক সভা ২৪ জুন শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের নেতারা অংশ নেন। দ্বিতীয় দিনে রংপুর ও রাজশাহী, তৃতীয় দিন ২৬ জুন সিলেট চট্টগ্রাম বিভাগ, শেষ দিন ২৭ জুন অংশ নেবেন খুলনা-বরিশাল বিভাগের নেতারা।