সিলেট সিটিতে অনড় জামায়াত, সমঝোতার চেষ্টা
ঢাকা: ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনে যেখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কথা সেখানে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। এতে সিলেট সিটি নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি'র সিনিয়র নেতারা এমনকি জোটের শরিক দলগুলো মিলে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে বারবার সামনে আসছে বিএনপি'র সাংগঠনিক অদক্ষতা ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়হীনতার কথা। জামাতের মনোনীত প্রার্থী তো তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরও একই অবস্থা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকাকে বিএনপি'র 'সাংগঠনিক অদক্ষতা' বলছেন জোট সংশ্লিষ্টরা।
জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বরাবরই নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের বৈঠকে বলা হয় ২০ দল থেকে জোটগত ভাবে প্রার্থী দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তার কোন প্রতিফলন থাকেনা। বিএনপি'র বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় প্রমাণ করে দলের ভেতরে কোনো সমন্বয় নেই। এমনকি যারা সমন্বয় কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তারাও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
প্রার্থিতা নিয়ে চলমান এই সমস্যার সমাধানকল্পে দফায় দফায় বৈঠক করলেও সমঝোতায় আসতে পারেনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের শীর্ষ নেতারা।
এদিকে আবারও মঙ্গলবার (১০জুলাই) বিকেলে রাজধানীর গুলশান চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপিসহ জোটের আরও তিন দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। জামায়াতের শক্ত অবস্থানে বিএনপি'র সিনিয়র নেতারা অনেকটাই বিব্রত। বৈঠকে জামায়াত ইসলামীকে প্রার্থী প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর দেয়া হতে পারে। এবং বিএনপি'র বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে নেয়া হতে পারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম বার্তা২৪,কমকে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে থাকার সময়ই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন যে জামায়াতকে দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবেন। কিন্তু তিনি কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি তাদের সেই কথা রাখছেন না। আমরা কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনাসহ প্রায় ১২ টি সিটিতে কোন প্রার্থী দেয়নি। সেখানে রাজশাহীতে ও আমাদের কোনো একক প্রার্থী নেই। হিসেবে মাত্র একটি সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থী দিয়েছি আমরা। প্রত্যাশা ছিল সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। কিন্তু সেটা না হয় হওয়ায় আমরা অনেকেই হতাশ।
জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ঐ নেতা আরও জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে জামায়াত এককভাবে লড়বে এটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। অনেক চিন্তা-ভাবনা করেই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিলেট সিটির ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জামায়াতে ইসলামীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থীই জোটের প্রার্থী এবং সবাই জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন'।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সংসদ রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করেন দলের অবস্থান। সেখানে তারা তুলে ধরেন বৃদ্ধির মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন নয়, দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবে জামায়াতে ইসলামী। এবং সিলেট মহানগরী আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জামায়াতের প্রার্থী।
এদিকে সোমবার (৯ জুলাই) ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু দেখা গেছে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এছাড়া বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে তিনিও তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এতে করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামীলীগ যেখানেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কথা সেখানে ২০ দল নিজেরাই তিন ভাগে বিভক্ত।
এ বিষয়ে কথা বললে বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের সিনিয়র নেতারা আলোচনা করছেন। দ্রুতই এ বিষয়টির সুরাহা হবে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বার্তা২৪.কম কে বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাথে রাজশাহী কিংবা বরিশালে তুলনা চলে না। কারণ এটা শাহজালাল ও শাহপরান এর পূণ্যভূমি। তাই আমারও চাওয়া ছিল এখানে যেন একজন ইসলামিক লোককে মনোনয়ন দেয়া হয়।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির(এলডিপি) যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জোটের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে সিলেট সিটিতে জোট গত প্রার্থী দেয়া হবে। কিন্তু এখন যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এটা সমাধান করতে না পারলে পরাজিত হবেই এমনকি এর প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনেও। তাই বিএনপির উচিত দ্রুত এ বিষয়টা নিয়ে একটা সমাধানে আসা।