সিলেটে জামায়াত-বিএনপি দ্বন্দ্বে কতটা সুবিধা পাবে আ'লীগ?
সিলেট থেকে: নির্বাচনের আর মাত্র ১২ দিন বাকি। ৩০ জুলাই একযোগে অনুষ্ঠিত হবে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে নির্বাচনের। প্রচারণা শুরুর পর থেকে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দ্বারে দ্বারে ঘুরে চাইছেন ভোটারদের সমর্থনের জন্য। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সঙ্গে নিচ্ছেন দোয়াও।
তিন সিটির মধ্যে অন্যতম সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকলেও সিলেট তার ব্যতিক্রম। এখানে রয়েছে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী। যেখানে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটেরই প্রার্থী তিন জন। আর সেই সুযোগ ভালোভাবেই নিচ্ছে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। বলতে গেলে, সিলেট সিটিতে সুবিধাজনক অবস্থায় আওয়ামী লীগ।
একদিকে আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরদিকে সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হকের ১৮ মাসের উন্নয়ন সেখানকার ভোটারদের দাঁড় করিয়েছে প্রশ্নের মুখে। নগরবাসী কাকে নির্বাচিত করবেন নগরপিতা হিসেবে। এই প্রশ্নের সুযোগ হয়তো থাকবে না ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে। তার বড় কারণ বিএনপির অন্তকোন্দল ও জোটের সমন্বয়হীনতা।
২০ দলীয় জোট থেকে একক প্রার্থী দেয়ার কথা বলা হলেও জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলা আমীর এহসানুল মাহবুব জোবায়েরকে প্রার্থী ঘোষণা করে। অপরদিকে জোটের শরিকদের সমর্থন নিয়ে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। যাকে তারা জোটগত প্রার্থী দাবি করছেন। এখন যেখানে বিএনপির প্রার্থী আরিফের সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগি হবে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে ‘বিষফোড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে দল থেকে বহিস্কৃত বদরুজ্জামান সেলিম।
যিনি নিজেকে বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এমন অবস্থা কেন্দ্রীয় বিএনপি তথা জোটের জন্য সুখকর নয়। এমনকি বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের ভবিষ্যতের জন্যও বড় উদ্বেগের কারণ। যাকে এক কথায় বলে, ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’।
তবে বিএনপি জামায়াতের দ্বন্দ্বে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোট সমর্থিত ‘নৌকা প্রতীক’ এর একক প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। বলতে গেলে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই আছেন ২ মেয়াদে নির্বাচিত সাবেক এই মেয়র। তার আমলে সিলেট সিটিকে আধুনিক পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়েছিলেন মাস্টারপ্লান। নানাবিধ কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি স্বীকার করে নিজের তৈরি মাস্টারপ্লানে আরো সংযোজন বিয়োজন করে নতুন এক নগর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পুনরায় সুযোগ চান সাবেক এই মেয়র।
অপরদিকে, যার নামের আগে ‘আধুনিক সিলেটের রুপকার’শব্দ জুড়ে দিয়েছেন নগরবাসী সেই সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক কামরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। যার উন্নয়নের কথা নগরীর প্রত্যেকের মুখে মুখে। ২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। কারামুক্তির ১৮ মাসে সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা, সড়ক প্রশস্তকরণ, বিশুদ্ধ পানি সরাবরাহ নিশ্চিতকরণসহ নগরীর উন্নয়ন দৃশ্যমান। যা তাকে নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। স্বল্প সময়ের কাজ দাগ কেটেছে সিলেটবাসীর মনে।
নিজের কাজের প্রতি শতভাগ আস্থা রয়েছে সাবেক এই নগরপিতার। তাই খুবই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন, তিনি জনগনের উন্নয়নে কাজ করেছেন তাই জনগন তাকে আবারও মেয়র নির্বাচিত করে কাজের সুযোগ দিবে।
তিনি আরও বলেন, যারা আমার প্রতি বিরাগভাজন হয়েছেন তাদের প্রতিও আমার ভালোবাসা রইলো। বিশ্বাস করুন, ব্যক্তিগত স্বার্থে আমি কাজ করিনি কখনো যা করেছি তা আপনাদের জন্য নগরীর জন্য। তাই আপনারা আমাকে ও আমার কাজকে মূল্যায়ন করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সর্বাত্মক কাজ করছে প্রশাসন ও ইসি যা এসব প্রার্থীদের কথা ও প্রচার প্রচারণায় সুস্পষ্ট। আ.লীগ , বিএনপি কিংবা জামায়াত প্রত্যেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নিজেদের জয়ের নিয়ে আশাবাদী। তবে জামায়াত ও বিএনপির দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ কতটা সুবিধা করতে পারবে তা সময়ই বলে দেবে। আর সিলেটবাসী কাকে নগরপিতা হিসেবে নির্বাচন করে তা দেখার অপেক্ষামাত্র।