নিজের যত্নে অবহেলা নয়
আমাদের প্রতিদিনের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে কাজের ব্যস্ততা, দৌড়ে চলা, হিসেবের সাথে তাল মেলানোর ছন্দে।
ব্যতিক্রম খুব কমই হয়। পড়ালেখা, চাকরি, সংসার- সব ক্ষেত্রে দায়িত্ব থাকে, থাকে কাজের চাপ। সবকিছু সামলে নিজের জন্য সময় পাওয়া সোনার হরিণের মতো হয়ে যায় একদম। সারাদিনে একটা ঘন্টা সময়ও নিজের মতো কাটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেখানে নিজের যত্ন নেওয়া অনেকটাই হাস্যকর ঠেকবে অনেকের কাছেই।
কিন্তু নিজের যত্ন বা সেলফ কেয়ার নেওয়া প্রয়োজন সবার আগে। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে না পারলে, কোনভাবেই নিজের কাজগুলো ঠিকভাবে করা সম্ভব হবে না। সেলফ কেয়ার মানেই স্পা সেলুনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যায় করা কিংবা মোটা অংকের টাকা খরচ করে রেস্টুরেন্টে সময় কাটানো নয়। সেলফ কেয়ার সেটাই- যেভাবে সময় কাটাতে ভালো লাগে, যে কাজে মনে প্রশান্তি আসে। নিজের যত্ন নেওয়া বলতে ত্বকের যত্ন নেওয়া, নখ কাটা কিংবা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসই নয়। নিজের মানসিক যত্ন নেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া।
সেক্ষেত্রে এই সেলফ কেয়ার একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে। পুরো সপ্তাহের ব্যস্ততা শেষে কেউ হয়তো একা কিছুটা সময় কাটাতে ভালোবাসে, কেউ হয়তো বন্ধুদের সাথে হইহুল্লোড় করে। কিন্তু মানুষ ভেদে দুজনের জন্য দুইটি কাজ সমান ভালো লাগা তৈরি করছে। তাই আপনার জন্য যেটা ভালো লাগার মতো কাজ, অন্যের জন্যেও যে সেটা একইরকম ভালো লাগা তৈরি করবে তা নয়।
বলা যেতে পারে নিজের যত্ন নেওয়াটা খুবই ব্যক্তিগত ও স্বকীয়তাপূর্ণ। একেবারেই নিজের পছন্দমতো, নিজের মানসিক প্রশান্তি, নিজের যত্ন নেওয়া। এমন কোন কাজ যেটা আপনার মানসিক অশান্তি আরও বাড়িয়ে দেয় বা কোন না কোনভাবে মনের উপর চাপ তৈরি করে, সেটা কোনভাবেই আপনার জন্য ভালো নয়। নিজের খেয়াল রাখতে এমন কোন কাজকে বেছে নিতে হবে সেটা মনকে শান্ত করতে কাজ করবে।
ধরুন ছুটির দিনটি বাসার বাইরে ঘুরে বেড়াতে কিংবা বই পড়ে কাটাতে ভালোবাসেন আপনি, তবে সেটাই করুন। যদি প্রিয় ও পুরনো টিভি সিরিজ দেখে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে, তবে তা-ই সই। যদি রুপচর্চায় কাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে দিনটি তাহলে সেভাবেই পরিকল্পনা করতে হবে। নিজের মতো সময় কাটানোর জন্য নির্দিষ্ট কোন নিয়ম বা ধরাবাঁধা সূত্র নেই।
অনেকেই ছুটির দিনে সংসারের হিসাবনিকাশ করতে বসেন। যদি এতে মানসিক চাপ বেড়ে যায়, দুশ্চিন্তা দেখা দেয় তবে সে কাজটি বাদ দিতে হবে। এমন কাজগুলো অন্য দিনের জন্য তুলে রেখে যে কাজটি করলে মানসিক অশান্তি বাড়ার পরিবর্তে কমবে সে কাজটিই করতে হবে।
এদিকে একদিন কাজকর্ম বাদ দিয়ে আরাম আয়েশ করে কাটানোর জন্য যদি মনের মধ্যে খচখচ করে যে, কোন কাজ করা হল না তবে জেনে রাখুন- গবেষকেরা জানাচ্ছে অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা কাজের গতিকে স্লথ করে দেয়। সবকিছু থেকে একদিনের জন্য স্বেচ্ছায় ছুটি নিয়ে নিজের মতো করে সময় কাটিয়ে নিজের যত্ন নিলে কাজের গতি ও কাজে মনোযোগ বেড়ে যায় অনেকখানি।
যেহেতু সবারই নিত্যদিনের রুটিন খুব ভারি হয়, তাই প্রয়োজনে তালিকা তৈরি করে নিজের যত্ন নেওয়া যেতে পারে। হয়তো আপনার নিজস্ব সময়ে ঘুমাতে ও রান্না করতে ও রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে ছুটির দিনটিকে সেভাবে ভাগ করে নিন। কোন কারণে একটি কাজ বাদ গেলেও বাকি দুইটি কাজ করা যাবে সহজেই।
জীবনের জটিলতা ও কঠিন নিয়মের মাঝে এভাবে সময় বের করে নিজের যত্ন নিতে হবে।
আরও পড়ুন: যোগব্যায়ামের সাথে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
আরও পড়ুন: যে অভ্যাসগুলো কমাবে বয়স বৃদ্ধির হার