ব্রেস্ট ক্যানসার: সচেতনতার বিকল্প নেই!
’ক্যানসার’ শব্দটিই ভীতিকর। কারণ অধিকাংশ ক্যানসারই কোনো উপসর্গ ছাড়া মানব দেহে দাঁনা বাঁধে। তেমনই ব্রেস্ট বা স্তন ক্যানসারও উপসর্গহীন একটি নিরব ঘাতক, যা মৃত্যু ডেকে আনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসচেতনতা, অবহেলা ও লজ্জ্বার কারণে এই রোগের শুরুটা আঁচ করা যায় না ফলে রূপ নেয় ভয়াবহতায়।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে,
ব্রেস্ট ক্যানসার শুরু হয় তখনই, যখন ব্রেস্টের মধ্যে কোনো কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এই সেলগুলোই পরবর্তীতে নিরবে টিউমার বা lump এ পরিণত হয় যা কেবল এক্সরে তে দেখা যায়। টিউমারটি যদি ক্যানসারাস হয় তবে তা ব্রেস্ট আবর্তিত টিস্যুতে আক্রমণ করে এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
ডানা ফারবার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মতে, সব টিউমারই ক্যানসারাস নয়। প্রায় ৮০% টিউমার বেনাইন হিসেবে অবস্থান করে বা শেষ হয়ে যায়।
কারণ
ব্রেস্ট ক্যানসার নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি বেশি। এই রোগ হওয়ার তেমন কোনো কারণ না থাকলেও কখনো জেনেটিক, দৈনন্দিন জীবনাভ্যাস, আবার কখনো বা কোনো কারণ ছাড়াই হতে পারে।
উপসর্গ:
ব্রেস্টের যে কোনো স্থানেই ক্যান্সার হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ব্রেস্ট ক্যান্সার নিপল বা স্তনে দুধ সরবরাহকারী নালিতে হয়। এছাড়া দুধ উৎপন্ন হয় এমন গ্ল্যান্ডেও হয়। ব্রেস্ট ক্যানসারের কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে যা সকলের জানা থাকা জরুরি:
-
ব্রেস্টের কিছু অংশ ফুলে ওঠা (thick area)
-
টোল পড়া বা ভিতরে ডেবে যাওয়া (dibple)
-
নিপল পরিবর্তন বা নিপলের আশেপাশে ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া (nipple crust)
-
রং পরিবর্তন বা গরম অনুভব করা (red of hot)
-
নিপল থেকে রক্ত বা তরল (fluid) পদার্থ বের হওয়া
-
ত্বকে ক্ষত বা ঘা দেখা দেওয়া বা র্যাশউঠা (skin sores)
-
ব্রেস্টের ভেতরে গোটা ওঠা, চাকা চাকা হয়ে যাওয়া (bump)
-
শিরা বা ভেইন স্পষ্ট হওয়া বা রেখার মতো দেখাদেওয়া (growing vain)
-
নিপল ভিতরের ঢুকে যাওয়া (sunken nipple)
-
আকারবা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া (new shape/size)
-
কমলার খোসার মতো ত্বক কুচতে যাওয়া (orange peel skin)
-
ব্রেস্ট শক্ত হয়ে যাওয়া (hard lump)
-
আন্ডারআর্ম ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেওয়া (under arm)
-
ঋতুস্রাবের আগে বা পরে ব্রেস্টে ব্যথা অনুভব হওয়া (Menstrual period)
-
ব্রেস্টের কোন অংশে চাপ দিলে স্বাভাবিক হতে সময় নেওয়া।
সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া
সচরাচর অবহেলা বা এড়িয়ে যাওয়ার কারণে ব্রেস্ট ক্যানসারের এই উপসর্গগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে।
ঘরোয়াভাবেই পরীক্ষা করার কিছু সহজ উপায়:
-
আয়নার সামনে দাড়িয়ে খেয়াল করুন ব্রেস্টের আকার, আকৃতি, রং এবং নিপলে কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা এবং র্যাশ উঠেছে কিনা।
-
নিপল থেকে কোনো তরল পদার্থ বের হচ্ছে কিনা খেয়ার করুন। তবে প্রসব পূর্ববর্তী বা পরবর্তী অবস্থায় এ পরীক্ষা প্রয়োগযোগ্য নয়।
-
আন্ডার আর্ম বা বগলে অথবা ঘারে কোনো চাকা আছে কিনা খেয়াল করুন।
-
সবচেয়ে সহজ উপায় হলো গোসলের সময় ভিজা এবং পিচ্ছিল অবস্থায় ডান হাত দিয়ে বাম স্তন এবং বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন কোনো গোটা গোটা চাকা অনুভব করছেন কিনা।
প্রতিকার:
‘ক্যানসার’ মানেই আতঙ্ক নয়। চিকিৎসার চেয়ে রোগের প্রতিকার হওয়াটাই শ্রেয় তাই প্রয়োজন একটু সচেতনতা।
-
ব্রেস্টের কোনো পরবর্তন হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে সজাগ থাকুন।
-
সন্তান জন্মদানের পর অন্তত ছয়মাস বুকের দুধ পান করাবেন।
-
হরমোন রিপ্লেসমেন্টথেরাপিনেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
-
মনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের বিষয়টি চিকিৎসককে অবগত করুন।
-
ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের কোনো পদার্থ বা কৃত্রিম ব্রেস্ট বৃদ্ধিকরণ ক্রিম ব্যবহার করবেন না।
-
ভিটামিন ডি যুক্ত খাদ্যবেশি গ্রহণ করুন
-
অন্তত ছয় ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন
-
জাঙ্কফুড, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করে খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি গ্রহণ করুন
-
অতিরিক্ত মেদ ঝড়িয়ে ফেলুন বা ওজন বৃদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা রোধ করুন।
-
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
-
ব্রেস্টে কোনো ধরণের সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে বা লজ্জা ভুলে দ্রুত চিকিৎসকের সরণাপন্ন হন।
-
অ্যালকোহল পরিত্যাগ করুন।
-
দীর্ঘদিন ধরে গর্ভনিরোধক পিল না খাওয়া।
-
যে কোনো ধরণের হরমোন রিপলেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ না করা।
-
প্রতিছয়মাস অন্তর ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং মেডিকেল পরীক্ষাগুলো করান।
-
পঞ্চাশোর্ধ নারীদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি হওয়ায় সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শে থাকা।
-
এলুমিনামযুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। এর পরিবর্তে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি ডিও ব্যবহার করুন।
-
স্তন ক্যানসারের অপারেশন হওয়া ব্যক্তিরা নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন।
মনে রাখতে হবে ব্রেস্টের পরিবর্তন মানেই তা ক্যান্সার নয়। কেবল অসচেতনতা আর অবহেলায় ঝুঁকির মাত্রাটা বাড়িয়ে দেয় মাত্র। কাজেই এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে নিজেকে ক্যানসারের ঝুঁকিমুক্ত করুন। আপনার মনে যে কোনো ধরণের পরিবর্তন অনুভব করা মাত্র ভয় বা লজ্জাকে দুরে ঠেলে চিকিৎসকের দারস্থ হন।