শহীদ মুনীর চৌধুরী: শাসকের গদি তাড়া করে ফেরা এক ‘মুর্দা ফকির’



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা টোয়েন্টিফোর
অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

টাইপরাইটারে তখনো বাংলা টাইপ করার ব্যবস্থা চালু হয়নি। সময়টা ১৯৬৫ সাল। কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপিং-এর জন্য সর্বপ্রথম উন্নতমানের কীবোর্ড উদ্ভাবন করলেন একজন অসামান্য প্রতিভাবান মানুষ। মানুষটার নাম মুনীর চৌধুরী। তাঁর নাম অনুসারেই কী-বোর্ডের নাম রাখা হয়েছিল ‘মুনীর অপটিমা’।

১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, কোনো এক হেমন্তের নবান্নের দিনে খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী এবং উম্মে কবির আফিয়া বেগমের কোলে জন্ম নেন মুনীর চৌধুরী। পুরো নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। ১৪ জন ভাই-বোনের মাঝে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর বাবা ছিলেন ইংরেজ আমলের জেলা ম্যাজিট্রেট। খানবাহাদুর সাহেবের প্রচুর বই সংগ্রহ করার শখ ছিল। যার ফলে ছেলেবেলাতে পরিবার থেকেই মুনীর চৌধুরী পেয়েছেন একটা চমৎকার সাংস্কৃতিক শিক্ষা। তাঁর বাবা তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ২৭ খন্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া উপহার দিয়েছিলেন। আর মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি এই এনসাইক্লোপিডিয়ার বিশাল রাজ্যে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন।

পরিবার থেকে ভালো সাংস্কৃতিক শিক্ষা পেয়েছিলেন বলেই হয়তো তিনি এমন অসামান্য ব্যক্তি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। অথচ যখন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন, তখন তাঁর বাবা তাকে মাসোহারা দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। তিনি বললেন, তোমার মতের সাথে আমার মতের যেহেতু বিস্তর অমিল; তাই তোমাকে পড়ালেখার খরচ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মুনীর চৌধুরী তাঁর বাবার কথা মেনে নিলেন। এবং ছাত্রাবস্থাতেই সাহিত্যের মাধ্যমে সামান্য আয়-রোজগার করতে শুরু করলেন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লিলি চৌধুরীর সাথে মুনীর চৌধুরী

ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করে ভর্তি হলেন কলকাতার আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়ির কড়া নিয়ম থেকে একটু আলগা পেতেই তিনি নিজের মতন উড়তে শুরু করলেন। পাঠ্যপুস্তকের পড়া তাঁকে বেশি টানতো না। তিনি লাইব্রেরিতে বসে বসে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন। সাহিত্যের পড়াশোনা করতে গিয়ে আইএসসি পরীক্ষায় পেলেন দ্বিতীয় বিভাগ। তারপর এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে ভর্তি হলেন। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু মুনীর চৌধুরীর ঝোঁক ছিল সাহিত্যে। কলেজে পড়ার সময়ই তাঁর পরিচয় ঘটে বিশ্বসাহিত্যের সাথে। তিনি নিজেই বলেছিলেন: “আলীগড় আমায় মোহিত করতে পারেনি। তবে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের যা আমাকে আকর্ষিত করেছিল, তা হচ্ছে এর বিশাল পাঠাগার। বিশ্বের সকল লেখকের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ যোগ হয় এই পাঠাগারে।”

আলীগড়ে পড়াকালীন সময়ে মুনীর চৌধুরী জাঁকজমকপূর্ণ শৌখিন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। পরনে দামী শেরওয়ানি আর পকেটে দামী সিগারেটের টান নিয়ে বিভিন্ন আড্ডায় যেতেন। এরপর যখন আলীগড় থেকে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন তাঁর পরিচয় ঘটে রবি গুহ, মদন বসাক, সরদার ফজলুল করিম, দেবপ্রসাদের মতন মেধাবী মানুষদের সাথে। তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি বামরাজনীতিতে দীক্ষিত হন। এবং জাঁকজমকপূর্ণ শৌখিনতাকে ত্যাগ করে শুরু করেন অনাড়ম্বর জীবন।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন মুনীর চৌধুরীর সরাসরি ছাত্র। ছাত্র হলেও তাঁদের দুজনের মাঝে ছিল আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এছাড়া একসময় তাঁরা দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকর্মীও হয়েছিলেন। আনিসুজ্জামান সাহেব তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে বলেছেন, “ছেচল্লিশ বছর বয়সে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে নিহত একজন অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষের নাম মুনীর চৌধুরী। অনেক বছর আগে আমি এই বাক্যটি লিখেছিলাম, অসাধারণ প্রতিভাধর বলতে কী বোঝাতে চেয়েছি, তারও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম—আদর্শ শিক্ষক ও কুশলী বক্তা, সফল নাট্যপ্রতিভা ও ক্ষুরধার সাহিত্য-সমালোচক, জীবনের নিষ্ঠাবান রূপকার ও সমাজচেতনায় দীপ্ত পুরুষ। আমার কাছে তিনি আরও কিছু ছিলেন—শিক্ষক, বন্ধু, পথপ্রদর্শক, প্রেরণাস্থল।”

প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থাতেই সলিমুল্লাহ হলের শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে জয় করেছিলেন প্রভোস্টস কাপ। অসামান্য বক্তা ছিলেন তিনি। যখন শিক্ষকতা করতেন, তখন তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্যও ক্লাসরুমে ভীড় জমতো। এছাড়া নাটকের রিহার্সাল এবং রাজনৈতিক সভায় সব জায়গাতেই সমানভাবে বক্তৃতা করতেন তিনি।

মুনীর অপটিমা কি-বোর্ডের লে-আউট

একসময় সক্রিয় রাজনীতি করা ছেড়ে দিলেন। ভাবলেন সংসার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময় তাঁর পরিচয় এবং প্রেম ঘটে লিলি মির্জার সাথে। পরবর্তীতে তাঁদের দুজনের বিয়ে হয়। বাংলাদেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান মিশুক মুনীরের জন্ম হয় তাঁদের ঘরেই। যদিও মুনীর চৌধুরী রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজনীতি তাকে কোনোদিন ছাড়েনি। সক্রিয় রাজনীতি ছাড়লেও বিভিন্নরকম এক্টিভিজমের সাথে তিনি জড়িত থাকতেন। সাংস্কৃতিকভাবে হলেও সম্পর্ক রেখেছেন রাজনীতির সাথে। সবশেষে রাজনীতির বিষাক্ত দংশনেই দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে গিয়েছে তাঁর প্রাণ।

তাঁর লেখা নাটকগুলোতে সবসময়ই আমরা পাই প্রবল হিউমার। কমেডির ধাঁচে দুনিয়ায় বাস্তবতাকে তিনি রূপায়িত করতেন নাটকে। তিনি যে তীক্ষ্ণ সমাজসচেতন এবং রাজনীতিসচেতন ছিলেন; তার প্রচ্ছন্ন ছায়া পাওয়া যায় নাটকগুলোতে। বেশ কিছু গল্প লিখেছিলেন অল্প বয়সে। তবে গল্পের চেয়ে নাটকের প্রতিই তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি।নাটক ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। এছাড়া তিনি প্রখর সাহিত্যসমালোচকও ছিলেন। নাটক এবং সমালোচনা সাহিত্যকে তিনি অন্য এক মাত্রা দিয়েছিলেন। তাঁর লেখাগুলোতে আমরা পাই ইতিহাস-সচেতনতা এবং সমকালীন সমাজের নানান বিকারগ্রস্ত ছবি।

বাংলা-সাহিত্যে সার্থক প্রতিবাদী একাঙ্কিকা নাটক লিখেছিলেন তিনিই। ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের করা মানববন্ধনে তিনি ভাষা-শহীদদের পক্ষে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এজন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হলো। জেলে থাকাকালীন সময়ে রণেশ দাশগুপ্ত মুনীর চৌধুরীকে একটা নাটক লিখতে অনুরোধ করলেন। নাটকটি ভাষাশহীদদের স্মরণে জেলেই মঞ্চস্থ করা হবে। এবং নাটককে হতে হবে জেলে মঞ্চস্থ করার উপযোগী। কারণ জেলে তো তেমন আলোকসজ্জা করা সম্ভব নয়। এবং জেলে নারীচরিত্র থাকাও সম্ভব নয়। এই সকল কথা মাথায় রেখেই মুনীর চৌধুরী লিখলেন বাংলাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘কবর’ নাটকটি। সকল দিক চিন্তা করে এইজন্যই তিনি ‘কবর’ নাটকের স্থান নির্বাচন করলেন গোরস্থানকে। জেলখানায় বন্দী থেকেও পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার অপর নাম ‘কবর’। এর মধ্য দিয়ে তাঁর অসম্ভব সাহসিকতার পরিচয় পাই আমরা।

নাটকের চরিত্র শক্তিশালী হলেই কেবল শৈল্পিক-দিক থেকে নাটকের বুনন মজবুত হয়। ‘কবর’ নাটকের প্রধান চরিত্র তিনটি। একজন মাতাল অসৎ ক্ষমতার অপপ্রয়োগকারী রাজনৈতিক নেতা। একজন দূর্নীতিগ্রস্ত চাটুকার পুলিশ কর্মকর্তা। এবং একজন পাগল মুর্দা ফকির। নাটকের প্রেক্ষাপট ভাষা-আন্দোলন। ভাষা-আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের গণকবর দেবার জন্য গোরস্থানে নেয়া হয়েছে। অসৎ নেতা'র ভাষ্যমতে ভাষা-শহীদেরা হচ্ছে দুষ্ট ছেলের দল। আর দুষ্ট ছেলেদের নাকি গুলি করেই মারা উচিত। মদ খেয়ে মাতাল হবার মধ্য দিয়ে নেতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে হাফিজ পুরোটা সময় কেবল নেতার চাটুকারিতায় পঞ্চমুখ। নেতার নেকনজর পেতে সবসময় ব্যস্ত। আর নেতার কাছ থেকে ঘুষ খাওয়ার জন্য হাফিজ সবসময় উন্মুখ হয়ে থাকে। হাফিজ হচ্ছে সবচেয়ে ধূর্ত এবং কৌশলী চরিত্র; যে কিনা সকল দিক সামলিয়ে নিজের আখের গোছাতে চায়। ‘কবর’ নাটকের সবচেয়ে আকর্ষনীয় চরিত্র হলো মুর্দা ফকির। ৪৩'র দুর্ভিক্ষে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। গোরস্থানেই সে বসবাস করে। মুর্দা ফকির হচ্ছে এই নাটকে রূপক-অর্থে সমাজের বিবেকের ছবি। রূপকধর্মী সংলাপের মধ্য দিয়ে ফকির আমাদেরকে বাস্তবতার সাথে পরিচিত করে।

“গন্ধ! তোমাদের গায়ে মরা মানুষের গন্ধ! তোমরা এখানে কী করছ? যাও, তাড়াতাড়ি কবরে যাও। ফাঁকি দিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা বাইরে থেকে মজা লুটতে চাও, না? না, না আমার রাজ্যে এসব চলবে না।” মাতাল নেতা এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে মুর্দা ফকিরের এই সংলাপটির মধ্য দিয়েই আমরা এই চরিত্রের হিউমার ও মুনীর চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়।

মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কবর’ নাটকের একটি দৃশ্য

ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে ওরা ছাত্রদের হত্যা করে যখন রাতের অন্ধকারে কবর দিতে নিয়ে গেল। তখন নাটকের শেষদিকে আমরা দেখি, ভাষাশহীদেরা জেগে উঠে প্রতিবাদ করছে। তাঁরা কবরে যেতে চায় না। হাফিজের কথার প্রতিবাদে ওরা বলে, “মিথ্যে কথা। আমরা মরিনি। আমরা মরতে চাইনি। আমরা মরব না।...কবরে যাব না।” এই নাটকের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসে মহান ভাষা-আন্দোলনের তাৎপর্য খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। জর্জ বার্নাড'শর ব্যঙ্গাত্মক রচনায় তিনি প্রভাবিত হয়ে ‘কবর’ নাটক সৃষ্টি করলেও, ‘কবর’ বাংলাসাহিত্যের প্রতিবাদী নাটক হিসেবে এক অনন্য সৃষ্টি।

এছাড়া তাঁর রচিত নাটক ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ বাংলাসাহিত্যের আরেকটি অনবদ্য রচনা। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে আবহ করে রচিত হয় ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’। যদিও যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রচিত, তবে যুদ্ধ এই রচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। যুদ্ধের থেকেও যুদ্ধের সময়ে মানুষের হৃদয়ের ক্ষত-বিক্ষত অনুভূতিই এই নাটকের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে ভারতবর্ষের মানুষের মাঝে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের সেই বিভৎস সাম্প্রদায়িক ছবি এবং লেখকের লেখনী এই নাটককে নিয়ে গেছে অন্যন্য উচ্চতায়। এই নাটকের প্রধান চরিত্রগুলো হলো সুজাউদ্দৌলা, নজীবদ্দৌলা, জোহরা, ইব্রাহিম কার্দি এবং আহমদ শাহ আবদালি। এটি একটি সফল ট্র্যাজিক কাহিনি। যুদ্ধের ময়দানে নায়কের করুণ মৃত্যু ঘটে। আর নায়কের মৃত্যুতে নায়িকার হৃদয়ের বেদনা এই নাটককে সার্থক ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে।

এছাড়াও মুনীর চৌধুরী ছিলেন একজন অনবদ্য অনুবাদক। জর্জ বার্নার্ড'শ-সহ আরো অনেক বিশ্বমানের লেখকের লেখা তিনি অনুবাদ করেছিলেন। আগেই বলেছিলাম তিনি রাজনীতি ছাড়তে চেয়েছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকে বেরিয়েও এসেছিলেন।কিন্তু রাজনীতি তাঁকে ছাড়েনি। তাঁর লেখায় সবসময় পাওয়া গেছে বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। সবসময় তিনি ছিলেন মননশীলতা, উদারতা এবং প্রগতিশীলতার পক্ষে। আর এজন্যই তিনি পাকবাহিনীর হিট-লিস্টে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের সেই কালো দিনটিতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের সহযোগী আলবদর বাহিনী। আর আমরা হারিয়েছি বাংলাসাহিত্যের এক অসামান্য প্রতিভাবান মানুষকে।

আজ ২৭ নভেম্বর। এই অসামান্য প্রতিভাধর মানুষটার ৯৬ তম জন্মদিন। তিনি তাঁর ভিন্নধর্মী ক্ষুরধার নাটক আর সমালোচনা-সাহিত্যের জন্য বাংলাসাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। তাঁর প্রজ্ঞা, তীক্ষ্ণধী, প্রগতিশীলতায় তিনি অনন্য। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহেবের লেখা থেকে আমরা জানতে পাই, প্রেমে ব্যর্থ এক ছাত্র একবার মুনীর চৌধুরীর কাছে গিয়ে মনের আবেগের কথা জানায়। সেই বয়সের আবেগ থেকে ছাত্রটি তাকে আত্মহত্যার ইচ্ছার কথা জানায়। মুনীর চৌধুরী তাঁকে বলেছিলেন, “দেখো, তোমার মতো অবস্থায় আমারও একাধিকবার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু পরে দেখেছি, আত্মহত্যা না করে ভালোই করেছি—পৃথিবীটা বসবাসের যোগ্য।” তাঁর সেই যাপনযোগ্য জীবনের অবসান হলো অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে; কমেডি যাঁর প্রিয় শিল্পমাধ্যম, তাঁর জীবনে নেমে এল মহৎ ট্র্যাজেডি—তাঁর পক্ষে শহীদের মর্যাদালাভও আমাদের এ দুঃখ ঘোচাতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয়পত্রে মুনীর চৌধুরীর ছবি

এক নজরে জীবনপঞ্জি:
পুরো নাম: আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী
জন্ম: ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর
জন্মস্থান: মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ
মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), স্বাধীনতা পুরস্কার(১৯৮০)
উল্লেখযোগ্য রচনা: কবর, রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, কেউ কিছু বলতে পারে না (অনুবাদ-সাহিত্য), রূপার কৌটা(অনুবাদ-সাহিত্য)

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;