নিজাম উদ্দিন সালেহ’র ভোকেশনাল এক্সেলেন্সি এওয়ার্ড লাভ



সাঈদ চৌধুরী
এওয়ার্ড নিচ্ছেন নিজাম উদ্দিন সালেহ

এওয়ার্ড নিচ্ছেন নিজাম উদ্দিন সালেহ

  • Font increase
  • Font Decrease

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য দৈনিক জালালাবাদের সহকারী সম্পাদক কবি-সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন সালেহ ‘ভোকেশনাল এক্সেলেন্সি এওয়ার্ড’ লাভ করেছেন। গত সোমবার রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন সিলেটের ব্যবস্থাপনায় সিলেট অঞ্চলের ১৬টি ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে এই এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ব্যবসায়িক ও পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে উঠা বিশ্বব্যাপী সেবামূলক সংগঠন। উচ্চস্তরের মানদণ্ড, সমাজ সেবা ও আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ায় এ সংগঠনের ভূমিকা অপরিসীম। স্থানীয় শাখাসমূহ কেন্দ্রের নীতিমালার আলোকে বহুমুখি কর্মকান্ড পরিচালনা করে। মানবিক মূল্যবোধ ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ভোকেশনাল এক্সেলেন্সি এওয়ার্ড প্রদান তাদের কর্মসূচির অংশ।

নিজাম উদ্দীন সালেহকে এই এক্সেলেন্সি এওয়ার্ড প্রদান খুবই যথার্থ হয়েছে। রোটারি ক্লাব সমূহ থেকে একজন গুণী লেখককে সম্মান জানাতে পেরে রোটারি ক্লাব অব সিলেট সিটির চাটার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমিও গর্ববোধ করছি।

নিজাম উদ্দীন সালেহ কবি, গবেষক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় রয়েছে অবাধ বিচরণ। বাংলা ও ইংরেজিতে সমান পারদর্শী এই লেখক আধুনিক বাংলা কবিতায় অন্যরকম নান্দনিকতা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন। সেখানে রোমান্টিকতা যেমন আছে, তেমনি মৃত্যুচেতনাও রয়েছে। দেশ প্রেমের পাশাপাশি বিশ্বজনীনতা ও মানবিকতা উঠে এসেছে তার সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়। এই সৃজনকর্ম প্রবীনদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকেও উজ্জীবিত করে।

নিজাম উদ্দীন সালেহ আমার একজন প্রিয় লেখক। প্রায় তিন দশক ধরে তাকে আমি কাছে থেকে দেখছি। বিভিন্ন সময় বহু প্রকল্পে একসাথে কাজ করেছি। শৈশব থেকেই সংগ্রামী চেতনার মানুষ তিনি। তার মেধা এবং নিষ্ঠা, সততা ও সাহসের প্রশংসা করতে হয়।

সিলেটের আলোকিত সাংবাদিক মুকতাবিস-উন-নূর সম্পাদিত দৈনিক জালালাবাদে আমরা একত্রে কাজ করেছি। সেখানে ছিলেন শক্তিমান লেখক-সাংবাদিক আব্দুল হামিদ মানিক ও নিজাম উদ্দীন সালেহ। সালেহ ভাই বয়সে বড় হলেও এক ধরণের বন্ধুবৎসল আচরণ করতেন। আমি তখন জাতীয় দৈনিকের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি। ঢাকার খবর পাঠিয়ে জালালাবাদে যেতাম এবং শেষরাত অবদি দেশ-বিদেশের সর্বশেষ সংবাদ তৈরীতে এক সাথে কাজ করতাম।

সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টেও নিজাম উদ্দীন সালেহ সম্পৃক্ত ছিলেন। আমি সংলাপের সেক্রেটারি জেনারেল থাকাকালে আমাদের অনেক অনুষ্ঠানে তিনি মুখ্য আলোচক হিসেবে সাহিত্য আসরে পঠিত লেখার প্রাণবন্ত মূল্যায়ন করতেন। উপস্থিত নবীন-প্রবীন লেখিয়েরা এতে মুগ্ধ ও পরিতৃপ্ত হতেন।

প্রবাসীদের উদ্যোগে সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ও রিসোর্ট প্রতিষ্ঠার পর সেখানেও একত্রে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে আমি তাকে অনুরোধ করলে তিনি পাবলিক রিলেশনস অফিসার (পিআরও) হিসেবে যোগ দেন। এসময় ফেইসবুক সহ বিভিন্ন মিডিয়াতে তার চমৎকার বর্ণনায় সিলেটের ট্যুরিজম দারুণভাবে বিকশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভাবে হালাল ট্যুরিজম নিয়েও আমরা একসাথে কাজ করেছি।

এসময় আমার অনুপ্রেরণায় তিনি ফেইসবুকে বেশ সক্রিয় হন এবং আপন প্রতিভা গুণে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেন। ২০১৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তাকে নিয়ে 'পারসোনাল জার্নালিজম ইন সোশ্যাল মিডিয়া: এ নিউ হরাইজন অব জার্নালিজম’ (PERSONAL JOURNALISM IN SOCIAL MEDIA: A NEW HORIZON OF JOURNALISM) শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করি। আমার (সাঈদ চৌধুরী) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনি অসাধারণ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, বর্তমান সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর, অধ্যক্ষ কবি আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষাবিদ লেঃ কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, কবি মুকুল চৌধুরী, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, টেলিভিশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ, রোটারী ক্লাব অব ক্বীনব্রীজের প্রেসিডেন্ট এডভোকেট রফিক চৌধুরী, এডভোকেট কবি কামাল তৈয়ব, শেভরণ বাংলাদেশের এইচইএসটিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর শাহ মনসুর আলী নোমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রায় সকলেই একমত হন যে, ’পারসোনাল জার্নালিজ’ সাংবাদিকতার একটি আধুনিকতম, সময়োপযোগী ও গতিশীল বিবর্তন, যার প্রতি মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই নতুন ধারার প্রবক্তা ও প্রোপোন্যান্ট হিসেবে সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন সালেহ’র ভূমিকা অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষভাবে ফেইসবুক কেন্দ্রিক সাংবাদিকতা বিষয়ে গবেষণা দিয়ে ‘ব্যক্তিগত সাংবাদিকতা’ নামে তিনি অবশেষে গ্রন্থ রচনা করেছেন। ঢাকার শব্দকোষ প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে। এটি সম্ভবত এশিয়া থেকে এ বিষয়ক প্রথম গবেষণা ও প্রামাণ্য গ্রন্থ।

শিক্ষক হিসেবেও নিজাম উদ্দীন সালেহ বেশ সফল। ১৯৯৭ সালে সিলেটে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করি। আমার শিক্ষা কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি অবহিত হয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন শহরের জিন্দাবাজার কাজী ম্যানশনের সত্তাধিকার ও এপেক্স বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট কাজী এনাম উদ্দিন আহমদ। তিনি তার বন্ধু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কয়সর জাহান সহ আরো কয়েকজনকে সাথে রাখার অনুরোধ করেন। এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের আরো ক‘জন বন্ধুও সম্পৃক্ত হন। প্রতিষ্ঠিত হয় বৃটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বিবিআইএস)।

স্কুল প্রতিষ্ঠায় ইংলিশ মিডিয়ামের খ্যাতিমান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া, এনাম চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল হাই (পরিচালক) প্রমুখ এবং সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন সালেহ ও এডভোকেট রফিক আহমদ চৌধুরীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিজাম উদ্দীন সালেহ পরবর্তীতে বিবিআইএস শিক্ষক এবং অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

সিলেট ও লন্ডনের অনেক সৃষ্টিশীল কর্মের সাথে নিজাম উদ্দীন সালেহ সক্রিয় ভাবে জড়িত। ২০০১ সালে আমাদের উদ্যোগে ও সম্পাদনায় লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলায় তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। এরপর আমার সম্পাদিত সময়২৪ এর তিনি বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘকাল সম্পৃক্ত ছিলেন। আরব নিউজ সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংবাদ পত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন অনুবাদ করে দেয়ার জন্য তাকে পাঠাতাম। কয়েক ঘন্টার মধ্যে তিনি তা করে দিতেন। এভাবে তার অনুদিত মুসলিম দুনিয়ার সেরা খবর সবার আগে আমরা বাংলা পাঠকের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি।

লন্ডনে সংবাদ সংস্থা মিডিয়া মহল থেকে আমার সম্পাদিত ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি, ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরি এবং ওআইসি ভুক্ত ৫৭টি দেশের তথ্য সমৃদ্ধ মুসলিম ইন্ডেক্স প্রকাশনায় নিজাম উদ্দীন সালেহ নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

লেখক ও গবেষক হিসেবে নিজাম উদ্দীন সালেহ’র ডকুমেন্টারি ‘পণাতীর্থ: অ্য প্লেস অব পিলগ্রিমেজ’ ২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ শর্ট ফিল্ম হিসেবে লস এঞ্জেলেস ফিল্ম ফেস্টিভেলে পুরস্কৃত হয়েছে। ক্বীন ব্রিজের ঠেলাওয়ালা শিশুদের নিয়ে ‘পুশ কীডস্’ ডকুমেন্টারিতেও তিনি কাজ করেছেন, যেটি আন্তর্জাতিক ভাবে পুরস্কার লাভ করেছে। তার লেখা ‘স্বপ্ন পরবাসী’ নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন ১৯৭৮ সালে তার লেখা ‘রত্নগুহা’ নাটক মঞ্চস্থ ও স্থানীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কর্তৃক পুরস্কৃত হয়।

খ্যাতিমান ব্রিটিশ সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাসের বাংলাদেশ বিষয়ক গ্রন্থ ‘বাংলাদেশ: অ্য লিগ্যাসি অব ব্লাভের’ প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদক নিজাম উদ্দিন সালেহ। পরে যদিও বইটির একাধিক অনুবাদ হয়েছে। এছাড়া তিনি ইউরোপের ইউক্রেইনে চেরকাসি স্টেট টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যা বিষয়ক সারফেইস টেকনোলজির ওপর লেখা একটি ম্যানুয়েল বাংলায় অনুবাদ করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘রেফারেন্স বুক’ বা সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত। ঢাকা বিদ্যালয়ের থিসিস লেভেলের অনেক বিষয় তিনি ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন।

নিজাম উদ্দিন সালেহ বাংলাদেশে অতিন্দ্রিয় বা অতি প্রাকৃতিক বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক। সিলেট টাইমস্ পত্রিকায় তার জ্বীন বিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত তার ‘অতীত দিনের সিলেট’ বইটিও বেশ আলোচিত ও সমাদৃত হয়েছে। নিজের স্মৃতিচারণমূলক এই গ্রন্থে লেখক গত পঞ্চাশ বছরে সিলেট নগরির বিকাশের চিত্র তুলে ধরেছেন।

লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, এইদেশ এই মাটি (১৯৭৫), সবুজের আগ্নেয় প্রপাত (কবিতা সংকলন, ১৯৭৭), অভিযাত্রীর স্বপ্ন (১৯৮৬), শ্বাশ্বত প্রত্যয় (১৯৯৬), ব্যক্তিগত সাংবাদিকতা (গবেষণা-২০১৪), নীল চাঁদোয়ার নীচে (কাব্য- ২০১৬), অতীত দিনের সিলেট (২০২১)।

আমার ‘কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা আল মাহমুদ’ গ্রন্থে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রধান কবি ও কথাসাহিত্যিক আল মাহমুদ সত্তর ও আশির দশকের খ্যাতিমান কবিদের মধ্যে নিজাম উদ্দীন সালেহ’র নাম এনেছেন বেশ গুরুত্বের সাথে।
নিজাম উদ্দীন সালেহ’র জন্ম ১৯৫৭ সালের ২২ নভেম্বর, তার নানাবাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জের রাজাপুর গ্রামে জায়গীরদার বাড়িতে। পৈতৃক নিবাস ওসমানীনগরের তাহিরপুরে। পিতা মৌলভী আব্দুল জলিল ছিলেন সুনামখ্যাত শিক্ষক। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।

ইংরেজি অনার্সের মেধাবী ছাত্র নিজাম উদ্দীন সালেহ সাবসিডারী পাশের পর ৩ বছর পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য অনার্স সম্পন্ন করতে পারেননি। পরে বিএ পাশ করে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে আইনশাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের সিলেট শাখায় প্রোগ্রাম অর্গ্যানাইজার হিসেবে তার কর্মজীবনের শুরু। আশির দশকের শুরুতে দৈনিক জালালাবাদী ও সাপ্তাহিক সিলেট সমাচারে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। পরে সিলেটের ডাক ও যুগভেরীতে সহকারী সম্পাদক ছিলেন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইংরেজি সাপ্তাহিক বাংলা মিরর, অনলাইন ইংরেজি সিলেট মিরর, নিউ নেশন, নিউ এইজ, নিউজ টুডে ইত্যাদিতে তিনি লেখালেখি করেন। বাংলা-ইংরেজি দ্বিভাষিক সাপ্তাহিক সিলেট টাইমস্ পত্রিকা ৩ বছর সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে দৈনিক জালালাবাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।

এদিকে ভোকেশনাল এক্সেলেন্সি এওয়ার্ড প্রদানের জন্য গত সোমবার রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন সিলেটের ব্যবস্থাপনায় সিলেট অঞ্চলের ১৬টি ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রোটারি ডিস্ট্রিক্ট (৩২৮২) গভর্নর আবু ফয়েজ খান চৌধুরী। ইভেন্ট চেয়ার আইপিপি প্রভাষক রেহান উদ্দিন রায়হানের সভাপতিত্বে প্রোগ্রামের কল টু অর্ডার করেন মেট্রোপলিটন সিলেটের প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান সাইফুর রহমান।

কোরআন তেলাওয়াত করেন রোটারি ক্লাব অব সিলেট সেনারজির প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান। রোটারি প্রত্যয় পাঠ করেন রোটারি ক্লাব অব গ্রীণসিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আলমগীর হোসাইন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন সিলেটের প্রেসিডেন্ট সাইফুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পিডিজি ও ডিস্ট্রিক্ট ট্রেইনার প্রিন্সিপাল কর্নেল অব. এম আতাউর রহমান পীর, পিডিএফএল রোটা ফিরোজা রহমান, পিডিজি ইঞ্জিনিয়ার এম এ লতিফ এমডি। ভোট অব থ্যাংকস জ্ঞাপন করেন রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন সিলেটের ফার্স্ট লেডি রোটারিয়ান তাহমিনা আক্তার।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চিটাগাং আগ্রাবাদ ক্লাবের পিপি ও পিডিএস কেরামুতুল আজিম পিন্টু, পিডিএস এ এইচ এম ফয়সল আহমদ, পাস্ট ডিস্ট্রিক্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি গার্ডেন সিটির পিপি সেলিম খান, ফাস্ট জোনাল কো অর্ডিনেটর জাকির হোসাইন চৌধুরী, এসিস্ট্যান্ট গভর্নর কবিরুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, ডায়নামিক ক্লাবের জিএস আর ডেপুটি গভর্নর ব্যাংকার নাজিম উদ্দিন শাহান, গ্রীণসিটির প্রেসিডেন্ট শাহজাহান সেলিম বুলবুল, রাইজিং স্টারের ইউনুস আলী, ই ক্লাব অব ৩২৮২ এর প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আজিম উদ্দিন, হিলটাউন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট দিদার হোসাইন, ছাতক ক্লাবের রাসেল আহমদ, ডাউন টাউনের আবুল আজাদ, রোজ গার্ডেনের নাজমুল ইসলাম, ডেফোডিলের ইসলাম উদ্দিন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, প্রখর মেধাবী নিজাম উদ্দীন সালেহ শিক্ষাজীবন থেকে লেখালেখি ও সেবা কর্মের সাথে জড়িত। একজন নিভৃতচারী লেখক ও গবেষক হিসেবে বিরামহীন ভাবে লিখে চলেছেন। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি নন্দিত। সফল অনুবাদক হিসেবে সর্ব মহলে সমাদৃত। লেখকের একটি কবিতার নিম্নোক্ত পংক্তিমালা থেক থেকেই তার জীবন ও কাব্য ভাবনা সহজে অনুধাবন করার যাবে।

‘নদীর ভাঙ্গনে গেছে ঘর-বাড়ি, যাক্ / সোনা দানা টাকা কড়ি হারায়, হারাক / শুধু ভয় নৈতিক অবক্ষয় / যদি কেড়ে নেয় মূল্যবোধ / জীবনের শেষ সঞ্চয়! / আমাদের আঙ্গিনায় সত্য ও ন্যায় / স্খলিত লতার মতো গ্রীষ্মের ক্রোধে / হাঁফায়, লুটায় / এক বিন্দু পানি নেই, শিশিরও যে নেই / ভেজাবে প্রীতির রসে, বিবেকের বোধে। / প্রচন্ড খরায় পুড়ে যায় জমি, যাক্ / শস্যের সোনালি হাসি মিলায়, মিলাক / শুধু ভয় লোভ মোহ স্বার্থের উদগ্র পিপাসা / শুষে নেয় উদ্ভাসিত মানবতাটুকু / অন্ধকারে শেষ আলো আশা।’ (কবিতা- ভাঙ্গনের শব্দ)

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;