চুরুলিয়ার স্মৃতি ও নজরুলের অসাম্প্রদায়িক স্বদেশের অধরা স্বপ্ন



অঞ্জনা দত্ত
নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিমের সঙ্গে সঙ্গে ও প্রদীপ কুমার দত্ত

নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিমের সঙ্গে সঙ্গে ও প্রদীপ কুমার দত্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

(পূর্ব প্রকাশের পর) উপাচার্যের কক্ষ থেকে বের হয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো অন্য একটি কক্ষে, যেখানে বেশ কয়েকটি আলমারিতে নজরুলের সৃষ্টি সংরক্ষিত আছে। রয়েছে প্রায় চার হাজার গানের স্ক্রিপ্ট। এছাড়া দুটো কলের গান দেখতে পেলাম, যেগুলোতে নজরুল একসময় গান শুনতেন। দু’একটা বাদ্যযন্ত্রও ছিল মনে হয়। কয়েকটা ছবি তুলে রওনা দিলাম কবিতীর্থ চুরুলিয়ার পথে। এর মধ্যে ভদ্রলোক জানিয়ে রাখলেন তিনি চুরুলিয়ায় নজরুল একাডেমিতে বলে রেখেছেন আমাদের কথা, ‘অতএব আমাদের কোনো অসুবিধে হবে না’।

একাডেমির দেখভাল বিশ্ববিদ্যালয়ই করে থাকে। চুরুলিয়ায় পৌঁছে অবাক হলাম নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র একজন এখনো জীবিত আছেন, যে কথাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ বলেননি। সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, ওখানে আমাদের লোক আছে, নজরুল একাডেমি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ইত্যাদি অনেক কথাই জানালেন। অথচ ওখানে যে নজরুল পরিবারের একান্ত আপনজন রয়েছেন সেটি উল্লেখ করতে বেমালুম ভুলে গেলেন! এটি জানা থাকলে কুড়ি কিলোমিটারের পথ আমাদের নিকট হয়তোবা দুই কিলোমিটারে দাঁড়াত!

আসানসোল থেকে চুরুলিয়ার পথে একধরনের উত্তেজনা নিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত নজরুলের স্ট্যাচ্যুর সাথে ছবি নিতে ভুল হলো না। কুড়ি কিলোমিটার খুব বেশি দূর তো নয়। নিমেষেই পৌঁছে গেলাম। দু’জন সাধারণ চেহারা ও বেশভূষার মানুষ আমাদের দেখা মাত্র সাথে নিয়ে একতলা বিশিষ্ট বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন। টেবিলের ওপারে বসে আছেন শ্যামল বরণ, বলিরেখামণ্ডিত চেহারা, চশমা পরিহিত প্রায় আশির অধিক বয়েসি এক ভদ্রলোক। পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, ওটা ঠিক সাদা ছিল না, বহুল ব্যবহারে মলিন হয়ে পড়েছে আসল রঙ। আর চশমার ওপারে চোখ দু’টি কি ঘোলাটে ছিল ? আমাদের সাথে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো তিনি, কাজী রেজাউল করিম, নজরুলের কনিষ্ঠ ভাই আলী হোসেনের একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকার। বিস্ময়াভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইলাম কাজী রেজাউল করিমের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এঁর কথা কেন কিছু বলা হয়নি। আশ্চর্য!

রেজাউল করিমের সাথে গল্পে জমে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কথাবার্তায় সাবলীল ছিলেন। বয়স তাঁর স্মৃতিশক্তির ওপর এখনো কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই বৎসর ত্রিপুরায় নজরুলের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এই উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। স্মরণিকার জন্য আয়োজকরা পি কে ডি’কে লেখা দিতে বলেছিলেন। ওর লেখা কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল প্রায়।

রেজাউল করিম সাহেবের সাথে কথা বলতে বলতে পি কে ডি জানালেন আজকে চুরুলিয়ায় এসে রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা বলার পর সে ভাবছে তাঁকে আবার নতুন করে লিখতে হবে নজরুলকে নিয়ে। রেজাউল সাহেব জানালেন, আগরতলা থেকে তাঁকেও লিখতে বলা হয়েছে। সুস্থ থাকলে তাঁর যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে ঐ অনুষ্ঠানে। তাঁর নিজের পরিবারের কথা জানালেন। নজরুলের নাতি নাতনিদের কথা বললেন। বলা বাহুল্য সেগুলো খুব প্রীতিকর কিছু নয়। তাঁর নিজের কষ্টের কথা জানালেন। সুবর্ণ কাজী, রেজাউল করিমের তিন পুত্রের একজন, যার মধ্যে তিনি কিছু সম্ভাবনা দেখেছিলেন সংগীতে , তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে একজন হলেন সোনালী কাজী। বাকি এক মেয়ে এবং দুই পুত্রের কেউই নজরুলের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে কোনো ভূমিকা রাখছেন না। সংসারের নিয়মই মনে হয় এমন। একজন আয় (সেটি যে কোনোকিছুই হতে পারে) করেন। পরের প্রজন্ম সেটি এনক্যাশ করে চলেন (তবে এক্ষেত্রে এটি বলা যাবে না কেননা কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ নিজগুণে গুণান্বিত ছিলেন)। আর তৃতীয় প্রজন্ম দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে এই ফর্মুলা পুরোপুরি কাজে না লাগলেও নজরুলের আদর্শ থেকে এরা অনেক দূরে। আপাদমস্তক মার্ক্সিস্ট কাজী রেজাউল করিমের চেহারায় বিষণ্ণতা ফুটে উঠল।

এবারে রেজাউল সাহেব আমাদের তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। পাকা একতলা বাড়ি। টিনের ছাউনির ওপর পুরনো বাড়ির অনুকরণে খড় দিয়ে ছেয়ে দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী গত হয়েছেন বেশ ক’বছর হলো। যে দুজন আমাদের প্রথমেই তাঁর কাছে নিয়ে এসেছিলেন তারাই রেজাউল সাহেবের দেখাশোনা করেন। পরিবারটি, অন্তত রেজাউল সাহেব, তাঁর চাচার মতো অসাম্প্রদায়িকই রয়ে গেলেন। আমি বাড়িটি ঘুরে দেখতে চাইলাম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর এবং বাসনপত্র দেখে অবাক হলাম। কেননা ছেলেরা এল্যুমিনিয়ামের ডেকচি কড়াই এমন পরিষ্কার রাখতে পারার কথা নয়। জানালেন রান্নার জন্য অন্য মহিলা আছে। আর তাঁর স্ত্রী যে ঘরে রাঁধতেন, সে ঘরটিও অবহেলায়, অযত্নে পড়ে নেই।

হঠাৎ রেজাউল করিম সাহেব আমাদের এমন একটা প্রশ্ন করলেন যার জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি জানতে চাইলেন এত রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করার পর আমাদের দেশে কীভাবে মৌলবাদের উত্থান হয়? উত্তর দেবার বিশেষ কিছু ছিল না। অথবা বলা ভালো সংক্ষেপে বলার মতো নয় বিষয়টি। তাই প্রসঙ্গান্তরে চলে গেলাম। আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি তাঁর সহচরদের বললেন, আমাদের সব ঘুরিয়ে দেখাতে। সব বলতে নজরুল একাডেমি, লাইব্রেরি, নজরুল যে বাড়িতে জন্মেছিলেন, তার ভগ্নাবশেষ, পারিবারিক গোরস্থান ইত্যাদি সব দেখিয়ে দিতে। তিনি এখন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন। ও হ্যাঁ, নজরুল একাডেমি-যেটি রেজাউল করিমের বড়ো ভাই প্রয়াত মোফাজ্জল ইসলাম সাহেব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণে নেয়ায় তিনি খুশিই হয়েছেন।

‘ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি...’ কবির বিখ্যাত সেই ছবিতে সাজানো অফিস কক্ষ..

কেননা এটি চালিয়ে নেয়ার মতো ক্ষমতা তাঁর নেই। তাঁর সন্তানদের এবং নজরুলের নাতি নাতনিদের এই ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ নেই। আমার মনে হয়েছিল কাজী রেজাউল করিম সাহেব স্বস্তিতে আছেন এই ভেবে যে নজরুল যথার্থভাবে বেঁচে থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আর একটি ব্যাপার অনেকক্ষণ থেকে আমার মাথায় পাক খাচ্ছিল নজরুলের বাড়ির সীমানা, একাডেমি, বিশাল লাইব্রেরি (যেখানে সতের হাজার বই রয়েছে, এটা পরে হয়েছে), কবরস্থান ইত্যাদি দেখে ভাবছিলাম কেন নজরুলকে বালক বয়েসে বাবাকে হারানোর পরে সংসার প্রতিপালনের জন্য রোজগার করতে যেতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন: কবিতীর্থে একদিন

নয় বছর বয়েসে মক্তব শেষ করার পর ঐ মক্তবে ছোটো শিশুদের তিনি পড়াতেন। মসজিদে আযান দিতেন। যোগ দিলেন লেটো দলে। এটি অবশ্য একেবারে খারাপ সিদ্ধান্ত ছিল না আমার দৃষ্টিতে। কেননা ঐ সময়ে তাঁর সঙ্গীত প্রতিভা স্ফুরিত হয়। নজরুল নিজেই সংস্কৃত এবং অন্যান্য বই পড়ে জ্ঞান আহরণ করেন। স্কুলে তিনি আবার ফিরে এসেছিলেন। শিক্ষকরা প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাঁর থেকে ভালো রেজাল্ট আশা করেছিলেন। কিন্তু তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজায় নজরুল যুদ্ধ করতে চলে যান। আর স্কুলে ফিরে আসেননি।

আমার মনে হয় প্রকৃতিগত ভাবে নজরুল ছিলেন অতি চঞ্চল। ধরাবাঁধা জীবন যাপনে তিনি অভ্যস্থ ছিলেন না। সৃষ্টির নেশা তাঁকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াত। সংসারের ব্যাপারে তিনি ছিলেন উদাসীন। বিশেষ করে তাঁর দ্বিতীয় সন্তান বুলবুলের মৃত্যুর পরে (প্রথম সন্তান কৃষ্ণ মুহাম্মদ জন্মের মাস কয়েক পরে মারা যান) তিনি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েন। বুলবুল কচিকন্ঠে অপূর্ব সুন্দর গাইতেন। নজরুলের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে গান শেখাবেন। সেই ইচ্ছায় বাধ সাধলেন স্বয়ং ঈশ্বর।১৯৩০ সালের মে মাসে বুলবুল না ফেরার দেশে চলে যান। বারো বছর পরে ১৯৪২ সাল হতে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। লেখালেখি করার ক্ষমতা সব কোথায় যেন হারিয়ে গেল ! বুলবুল মারা যাওয়ার পর কবি ছেলের স্মৃতিতে লিখেছিলেন ‘ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি …’!

প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর সেই বাবরি দোলানো ঝাঁকরা চুলের নজরুল ধীরে ধীরে অপস্রিয়মাণ হয়ে পড়ছিলেন। কবি বুঝতে পারেননি তিনিও ক্রমশ শ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

কবি তাঁর ‘কাণ্ডারি হুশিয়ার’ কবিতায় বলেছিলেন-
“অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কান্ডারি! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোনজন?
কান্ডারি! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!”

চিরকালের অসাম্প্রদায়িক নজরুল, যিনি সবসময় লড়াই করেছিলেন মানব ধর্মের জন্য; তিনি জানলেন না তাঁর দেশ বিভক্ত হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল দুই সম্প্রদায়ের লোক। এই বিভাজন নজরুল মেনে নিতে পারতেন না জেনেই বিধাতা হয়তো বা তাঁকে বহু আগে থেকেই বাকশক্তি রহিত করে রেখেছিলেন। কে জানে!

নজরুলের এই কথাগুলো আজকের বাংলাদেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক। যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের, সেটি ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন হ্যামিলনের বংশীবাদক, যাঁর এক ডাকে মুক্তিকামী বাঙালি ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিল। তবে এই দেশের মাটিতে মীরজাফরদের সংখ্যাও নেহাৎ কম ছিল না। এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল সাগরসম রক্তের বিনিময়ে। ত্রিশ লক্ষ শহিদ, চার লক্ষাধিক মা-বোনের নৃশংস অত্যাচার নির্যাতন ঘটিয়েছিল এই দেশের মীরজাফররা পাকিস্তানি সেনাদের মাধ্যমে। আর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। দেশের এই অপশক্তিরা ঝাড়েবংশে বেড়ে চলেছে। একজন নজরুলের আবির্ভাব কী তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্নকে, লড়াইকে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে? (সমাপ্ত) 

লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

   

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল দত্ত, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;

চতুর ঘুঘু



শরীফুল আলম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নেশাখোরের মত কখনো কখনো খিলখিল করে হাসি
প্রথমত দহন উষ্ণতায় ,
তারপর সুবিশাল শূন্যতায় ,
কখনো কখনো ছুঁয়ে ফেলি সাজানো প্রতিমা
জীবনের দাবী ,
তবে আপাতত গন্তব্য বলে কিছু নেই আমার
কবিতার অবয়ব এখনো যেটুকু আছে
তাকে আমি রঙ্গের উৎসবই বলি
কিম্বা যেটুকু আছে তা জীবনের দাবী ।

ক্রমাগত অন্তর্গত দ্বন্দে
অবাধ্য ভাষা এখন প্রাচীর তোলে
প্রসারিত মৃত্যুর কথা বলে ,
আমি তার গল্পের শেষটা জানার চেষ্টা করি
রাতের গহ্বর থেকে তোলে আনি মৃত্যুর পরোয়ানা ,
কিন্তু অস্পষ্টতা কিছু থেকেই যায়
আবার নিজে নিজেই বলি
আমার জলভূমিতে আবার কিসের নিঃসঙ্গতা ?

স্বপ্নবাসর ? সে এক চতুর ঘুঘু
আমি তার ক্ষণিকের হটকারীতা বুঝতে পারি
এমনকি চোখ বুজে
আমি ভুলে যাই তার সন্ধ্যার ঘায়েল
যেন দেখেও দেখিনা
বিনা মোহে সারারাত অহেতুক তার অহংকার
নিরর্থক বাজি ধরে সে
অর্কিড নিরালায় আমিও একা থাকি
ভাঙ্গা চোরা রাত জেগে থাকে আমার পাশে
মনে হয় চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তার ঢাকাঢাকি
ফিরতি নজরে সেও আমায় দেখে
আমার মিষ্টি কবিতার মতই
আমিও থমকে যাই পাখীর ডাকে
দূর দরিয়ায় তখন উলুধ্বনি শংখ বাজে ,
ইচ্ছে হয় নাগরদোলায় আবার গিয়ে দুলি
আর জানই তো কবিরাই প্রেমে পড়ে
কবিরাও চুমু খায়
সুন্দরী পেলে তাঁরাও শুয়ে পরে।

*************************
শরীফুল আলম ।
২১এপ্রিল । ২০২৪ইং
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

;