নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব বিষয়ক দুই বই নিয়ে টেরি ঈগলটন



অনুবাদ : রাজিয়া সুলতানা
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি প্রকাশিত দুটো বই নিয়ে করোনার এই সময়ে আলোচনা করেছেন বিশ্বখ্যাত সাহিত্যতাত্ত্বিক, সমালোচক ও বুদ্ধিজীবী টেরি ঈগলটন। প্রথম বইটির নাম, নিঃসঙ্গতার ইতিহাস—লিখেছেন ডেভিড ভিনসেন্ট। অন্যটি, একাকীত্বের জীবন-চরিত—এটি লিখেছেন ফে বাউন্ড আলবের্তি। প্রথম গ্রন্থটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আজ এপ্রিলের ২৪ তারিখে প্রকাশনা সংস্থা পলিটি থেকে। দ্বিতীয়টি ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড থেকে বেরিয়েছে। বিচ্ছিন্নতার এই সময়ের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ঈগলটনের এই আলোচনা এক ভালো উপায় হতে পারে। অপরদিকে তার অন্যসব সারগর্ভ আলোচনার মতো এই লেখাটিতেও ঘটেছে সাহিত্য, ইতিহাস আর সমাজ-রাষ্ট্রের নানামুখী চলকের সম্মিলন। যা পাঠকদের এক অন্য অভিজ্ঞতায় পৌঁছে দিতে পারে।

আলোচনাটি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

টেরি ঈগলটন

নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব এক কথা নয়। একাকী মানুষ সঙ্গের প্রয়োজন অনুভব করে আর নিঃসঙ্গ ধরনের মানুষ সঙ্গ থেকে নিষ্কৃতি বা অব্যাহতি চায়। ডেভিড ভিনসেন্ট তার চমৎকার নতুন এক অধ্যয়নে একাকীত্বের অনবদ্য একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি একে ‘ব্যর্থ নৈঃসঙ্গ’ বলে অভিহিত করেছেন। এই দুইদল নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্বের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য করে থাকেন। তারা বলেন যে তপস্বী, ধীবর, মৌনব্রত সন্ন্যাসী আর রোমান্টিক কবিরা একা থাকতে পছন্দ করেন তবে কেউই চান না লোকজন তাদের ত্যাগ বা বর্জন করুক। ‘নিজে নিজের সঙ্গী’ হবার ব্যাপারটি হচ্ছে মনে করেন আপনি সিনেমা দেখবেন বলে নিজেই নিজের হাতটি ধরে বসেছেন। হতে পারে আপনার সত্যি সত্যিই খুব একা থাকতে ইচ্ছে করছে অথবা বিচ্ছিন্ন থাকাকে যে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয় তাকেই আপনি যুক্তিগ্রাহ্য করে তুলতে চাইছেন এভাবে। তবে যাই হোক না কেন সবচে বড় পার্থক্য হচ্ছে নিঃসঙ্গতায় কেউ মারা যায় না, কিন্তু একাকীত্ব আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেও পারে। করোনাভাইরাসের যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে এতে করে আমরা কেউ কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারি।

সপ্তদশ শতাব্দীর আলোকায়নের আবহে, একা একা নিজের মতো করে থাকার ব্যাপারটি ছিল মানবিকতার প্রকৃত রূপের ব্যত্যয়। অথচ প্রকৃতিগতভাবেই মানবিকতা একটি সামাজিক বিষয়। তবে রোমান্টিকদের হাত ধরে এর পরিবর্তন এলো। সাধারণের মধ্যে বিচ্ছিন্ন থাকার ধারণাটি বেশ পরিচিতি পেল। ফ্রাংকেস্টাইনের দৈত্যটি হচ্ছে ইংরেজি সাহিত্যের প্রথমদিককার স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত একটা চরিত্র যা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমানভাবে ধিকৃত ও প্রত্যাখ্যাত। তবুও আধুনিক যুগের একটা উপসর্গ হচ্ছে একাকীত্ব—নিঃসঙ্গতা হতে পারে যার সমালোচনা। এ হচ্ছে উত্তম কিছুর সংস্পর্শে আসার কয়েকটি উপায়ের মধ্যে একটি যা এভাবে আমাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু বস্তুবাদী সমাজের ঘাটতিকে প্রকাশ করে। যখন ওয়ার্ডসওয়ার্থ লেখেন, তিনি মেঘের মতো একা একা ঘুরে বেড়ান তখন হয়তোবা তিনি শুধু বলতে চান তিনি একা আছেন অথবা তাঁর সঙ্গীর অভাব কিংবা একাকী থাকার ব্যাপারটা তাঁর নিজেকে জানার জন্য গভীর পারলৌকিক এক ধ্যানের সুযোগ এনে দিয়েছে।

সমগ্র বিশ্ব থেকে নিজেকে এভাবে সরিয়ে রেখে তবেই স্বরূপকে জানা—অন্তত প্রথমদিকে এ ছিল মরুভূমি অঞ্চলের খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের একটা বিশ্বাস। কিন্তু এই বইয়ে দেখানো হয়েছে যে, দিনে দিনে আধুনিক সমাজ আরো জনাকীর্ণ হওয়াতে আত্মকথনের প্রয়োজনও বেশি হয়ে পড়েছে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটা ব্যয়সাপেক্ষও বটে। ভার্জিনিয়া উলফ এ ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেছেন—এজন্য প্রত্যেকের আলাদা একটি কক্ষ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময়ে শুধু উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেই এই ব্যয় সংকুলান সম্ভব ছিল। বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ এভাবে আলাদা হয়ে একা একা থাকত। দু হাজার এগার সালে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে একত্রিশ শতাংশ বা আট লক্ষে পৌঁছে। এরপর নগরায়ন আর বড় বড় পরিবারগুলো বহুসংখ্যক মানুষকে এক জায়গায় এনে নিক্ষেপ করে; শিল্প ও পুঁজিবাদের বেনামি দুনিয়াও এদের বিচ্ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে দেয়। গ্রামীণজীবন কঠিন হলেও আমরা জানতাম কারা আমাদের প্রতিবেশি। তাই একা থাকার বাসনা তীব্র হলেও একইসঙ্গে ভেতরে ভেতরে পরিত্যক্ত হবার ভয়ও কাজ করত।

নিঃসঙ্গতার ইতিহাস গ্রন্থটির দাবি এটি একটি ‘ব্রিটিশ সমাজের নিশ্চল ইতিহাস’ অথবা ‘অকর্মণ্য বসে থাকার ইতিহাস’। জন ক্লেয়ারের কবিতা থেকে শুরু করে ‘ইন্টারনেটের নিঃসঙ্গতা’ ধর্মানুষ্ঠানের প্রতি একনিষ্ঠতা—সবকিছু মিলিয়ে উল্লেখ করার মতো এটি একটি বহুমুখী অধ্যয়ন। একাকী হাঁটার ওপর চমৎকার একটা অধ্যায় আছে বইটিতে। আধ্যাত্মিক বিনোদনের জন্য বিংশ শতাব্দীর মধ্যবিত্তশ্রেণি একা একা হাঁটায় মন দিয়েছিল। ওয়ার্ডসওয়ার্থ তাঁর সমগ্রজীবনে ১৮০,০০০ মাইল হেঁটেছিলেন বলে জানা যায়। শ্রমিকশ্রেণীও কাজের অন্বেষণে হেঁটেছে বহুপথ। নিয়মিত একটানা এই হাঁটার বিষয়টি কৃষক আর অভিজাত শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

চাইলে যে কেউ একাকীত্বকে সঙ্গ হিসেবে বেছে নিতে পারে। মনস্তত্ত্ববিদ ডোনাল্ড উইনিকট মনে করেন কেবল বিশ্বস্ত একজন পূর্ণ বয়স্ক কারো উপস্থিতিতে একটা শিশু একলা থাকা শিখতে পারে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যায় নতুন এক ধরনের আশ্রমের ধারণায় মানুষ ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বলা চলে এ ব্যাপারে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে যেখানে স্ত্রীলোকেরা দলবেঁধে আলাদা থাকতে পারত। কারা-ব্যবস্থায় এরকম অপেক্ষাকৃত উচ্চ-মানের একাকী বন্দিত্বের ব্যবস্থা করা হতো। ইয়টসম্যান, রবিন নো জনসন মনে করতেন মানুষকে জেলবন্দী না করে যদি শাস্তি হিসেবে সমুদ্রপথে বিশ্বের সবজায়গায় একাকী পাঠানো হতো, তবে অপরাধ সংঘটিত হতো কম। পাথরের ওপর খোদাই করা একটা মণিযুক্ত মূর্তিতে দেখা যায় যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ধূমপানের অভ্যেসে গির্জায় যাওয়ার চেয়ে নানান রকম প্রার্থনায় ভেতরের অস্থিরতাকে শান্ত করাকেই প্রাধান্য দিয়েছে মানুষ।

আধুনিক জীবনে একাকীত্বের যে তথাকথিত মহামারি, ভিনসেন্ট সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি দেখান যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবপর ছিল বলেই নারী ও পুরুষ ক্রমে আরো ব্যাপকভাবে একা একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। তবে যাই-ই হোক না কেন ব্যাপক এই একাকীত্বের ধারণা নতুন কিছু নয়। কোনো কোনো সমাজতাত্ত্বিকের মতে এই ধারণাটা যে আর প্রচার বা প্রসার পাচ্ছে না—এর সপক্ষে প্রমাণ খুব কমই রয়েছে। অন্যদিকে ফে বাউন্ড আলবের্তির একাকীত্বের জীবন-চরিত এ এই বিষয়টি আরো গভীর ও মূর্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। ভিনসেন্ট সামাজিক ইতিহাসবিদ হলে ফে বাউন্ড হবেন আবেগের ইতিহাসবিদ যিনি বিশ্বাস করাতে সমর্থ হয়েছেন, মানবিক আবেগ বা অনুভূতি মোটেও নিরন্তর ও সার্বজনীন নয়, চিন্তা ও কাজের মতোই সেগুলো ঐতিহাসিকভাবে যেমন নির্ধারিত হয় তেমনি এর সবকিছুই আবার পরিবর্তনশীল। এই গ্রন্থে একটা বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে তা হচ্ছে—আমরা যেভাবে অনুভূতির প্রকাশ করি, আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি তার রূপ দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রিয় কাউকে হারানোর শোকে অথবা ধূসর রঙের কোনো ভল্লুক জড়িয়ে ধরার কারণে আতঙ্কিত হলে আপনি ক্যানসাস নাকি ক্যাম্বোডিয়া থেকে এসেছেন এটা বিবেচ্য নয়। আবেগের মুহূর্তে যে মানসিক অবস্থা তা লিঙ্গভিত্তিক—এরকম বললে সন্দেহের উদ্রেক হবেই। এই বইয়ে সেটাই দেখানো হয়েছে। পাহাড় থেকে পড়ে গেলে একজন নারী কি সত্যিই একজন পুরুষের থেকে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়? আলবের্তি জোর দিয়ে বলেছেন—“সব আবেগ-অনুভূতিই রাজনৈতিক”। কিন্তু “সবকিছুই রাজনৈতিক”—এভাবে বললে ‘রাজনীতি’ শব্দটি অর্থহীন হয়ে পড়ে। যারা মনে করেন লর্ড চ্যান্সেলরের পদটি রাজনৈতিক নয় বরং স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে আলবের্তির এই যুক্তিটি ধোপে টেকে না।

এরপরও অনেক যত্ন নিয়ে লেখা বিস্তর এই অধ্যয়নে জোরেশোরে দাবি করা হয় যে একাকীত্ব আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮০০ সালের দিকে। রবিনসন ক্রুশো একদা দ্বীপান্তরিত হয়েও কেন একাকী জীবনের জন্য তার কোনো অভিযোগ ছিল না এত্থেকে সেই কারণটা বোঝা সহজ হতে পারে। যখন ভিনসেন্ট বলেন ‘একাকীত্ব’কে নেতিবাচক আবেগ হিসেবে দেখা হয়েছিল শুধু এই সময়টাতে, তখন আলবের্তিও সেই সুরে সুর মেলান। কেউ একা একা থাকছে এই ব্যাপারটি এখন আর আগের মতো করে দেখা হয় না বরং নেতিবাচক অর্থে বোঝানো হয়, উপায়হীনভাবে জীবন এখন এভাবেই, বায়রনের বিষণ্ন নায়কেরা যেমন। আলবের্তি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, যারা বেশি একাকী, তাদের অপেক্ষাকৃত কমবয়সে মৃত্যুর সম্ভাবনা যারা কম একাকী তাদের চেয়ে ৩০% বেশি। দরিদ্ররা ধনীদের চেয়ে বেশি একা, অপেক্ষাকৃত কমবয়সী তরুণ তরুণীরা আরো বেশি একা। একা হওয়ার অর্থ হচ্ছে “অর্থপূর্ণ উপায়ে অন্যদের থেকে দূরে সরে থাকা”।

বিবিসির ড্রামা সিরিয়ালে মিস হ্যাভিশাম চরিত্রে গিলিয়ান অ্যান্ডারসন/ ছবি: বিবিসি

চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স অবলম্বনে বিবিসি যে ড্রামা সিরিয়াল তৈরি করেছে তাতে প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুতে রানী ভিক্টোরিয়ার অতিরিক্ত শোক প্রদর্শনকে রাজতন্ত্র দ্বারা আক্রান্ত মিস হ্যাভিশাম—এই পরাবাস্তব চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ একটি গ্রন্থ এটি। ভিনসেন্টের দৃষ্টিতে যা ‘নিঃসঙ্গতা’, এই বইয়ে সেটাকে ‘একাকীত্ব’ হিসেবে দেখানো হয়েছে—হতে পারে, সৃজনশীল কাজের জন্য মূল্য দিয়ে যেটিকে পেতে হয়। একাকীত্ব হচ্ছে নিজের কাছে প্রত্যার্পণ অথবা ধ্বংসের দিকে গমন কিন্তু কেবল তখনই যখন কেউ তা স্বেচ্ছায় বেছে নেয়। ঐতিহাসিকভাবে, নিজেকে নিজের ও সমাজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা থেকেই এর প্রসূন। কিন্তু এর শুরু হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীরও অনেক আগে, হ্যামলেট বা ওথেলো এর সাক্ষ্য দেয়। এই গ্রন্থটি ঊনবিংশ শতাব্দীকে আদর্শিকভাবে একটা “অপেক্ষাকৃত সমষ্টিগত বিশ্ব” হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে—কর্মহীন আর ভবঘুরেদের কাছে যা আশ্চর্যের একটি বিষয়।

একইভাবে, আলবের্তিও সঠিকভাবে একাকীত্বের রাজনীতিকীকরণ করেন, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা এত্থেকে মুক্তি পাবার জন্য ঔষধের বড়ি আবিষ্কারের দিকে ছুটছেন। নিজেকে দিয়ে কিছু হচ্ছে না—এই অনুভূতি আর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের দাসত্বের ইতিহাস থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায় না। এই ইতিহাস পেছনের দিকে টেনে যতই লম্বা করা হোক না কেন, এমনকি লেখকের কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেলেও তা সম্ভব নয়। তিনি দেখান, “একবিংশ শতাব্দীতে অর্থ ব্যয় না করে কেউ কারো সঙ্গে সুবিধাজনক কোনো স্থানে গিয়ে দেখা করবে, এ রকম জায়গা খুব কম”। এর বড় কারণ হচ্ছে নব্য-উদারনীতিবাদের নীতি এর কোনো প্রয়োজন দেখে না। এভাবে এই বইয়ে আছে এক খলনায়ক; অন্যদিকে ভিনসেন্টকে তার অনুধ্যানে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে দেখা যায়। তবে আরো বেশ কিছু বিষয় এসেছে বইটিতে যেমন—বৃদ্ধ বয়সের ওপর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, গৃহহীনতা, উদ্বাস্তু, আদর্শ জীবনসঙ্গী, ক্ষুধা নিয়ে যেসব শিল্পী কাজ করেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো উত্তেজনা, মেদবহুল শরীর হওয়ার কারণে যে একাকীত্বের অনুভূতি—এইসব নানান জল্পনা-কল্পনা, সন্দেহ, ওয়াদারিং হাইটস উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে হিথক্লিফ গাড়ি চালিয়ে বাড়ি আসতে ব্যর্থ হয়—এইসব মাথামুণ্ডুহীন অবান্তর বিষয়েরও অবতারণা হয়েছে।

এইসব ছাড়াও আরো নানান বিষয় আনা হয়েছে বইটিতে। এই অধ্যয়ন দুটোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের গবেষণামূলক অনুসন্ধান ও সাধারণ ব্যাখ্যার মিশ্রণ। নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব নিয়ে বিভিন্ন শতাব্দীতে যা যা ঘটেছে সেসবের লম্বা লম্বা আখ্যানের বর্ণনা রয়েছে তবে বিস্তর প্রমাণ-দলিলও দেওয়া হয়েছে সেগুলোর সপক্ষে। বইদুটোতে পাণ্ডিত্য ও সহানুভূতি, কবিতা ও মনস্তত্ত্ব এসবের যে সমন্বয় ঘটেছে তা সাধারণ পাঠক ও বিশেষজ্ঞদের কাছে সমানভাবে আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। একাকীত্ব ঘোচানোর একটা উপায় হচ্ছে নিঃসঙ্গতা। একাকী থাকাটা উপভোগ করা অথবা অন্তত একে সহ্য করাটা বেড়ে ওঠারই একটা অংশ। কিন্তু ভিনসেন্ট আর আলবের্তি উভয়েই কিভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কবিদের জন্য একাকীত্বকে ইতিবাচক করে তোলা সম্ভব, সেই বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে সচেষ্ট থেকেছেন, অন্যদিকে বাচ্চাদের লালনপালনে সময় কাটে যেসব নিঃস্ব, দরিদ্র গৃহিণীর, সামাজিক বিধি-বিধান যেখানে এর শাঁসটুকু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে—সমাজের সেই শ্রেণীর কথা আদৌ বলা প্রয়োজন মনে করেননি তারা।

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;