হ্বিটগেনস্টাইনের দিকে যাওয়া



হামীম কামরুল হক
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

“ভাষা, বোঝাপড়া ও জ্ঞান—সবই অতল গহ্বরের ওপর পেতে দেওয়া পাতলা এক জাল।”—তিনি আমাদের অনুভব করিয়েছিলেন, তিনি ল্যুডভিগ হ্বিটগেনস্টাইন। জন্ম ও মৃত্যু দুটোই এই মাসে। জন্ম ২৬ এপ্রিল ১৮৮৯ এবং মৃত্যু ২৯ এপ্রিল ১৯৫১। ভাষা মানুষের শরীর কি মানুষের নানান যন্ত্রপ্রকৌশলের চেয়ে কম জটিল বিষয় নয়। ভাষা দিয়েই এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া যেতে পারে পরাতত্ত্ব, নৈতিকতা, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি। মানুষ লুকিয়ে থাকে ভাষার পেছনে, এমনকি ঈশ্বর বা স্রষ্টাকেও খুঁজে পাওয়া যায় ভাষায়ই। ফলে ভাষা বিষয়টা মোটেও নিরীহ কোনো বিষয় নয়। এর রাজনীতি অর্থনীতিও ভয়ংকর, গূঢ় ও গভীর। ‘ট্র্যাকটেটাস’ ও ‘ফিলোসফিকাল ইনভেস্টিগেশনস’ তার মহান দুইটি কীর্তি হলেও তিনি আরো অনেক দুর্ধর্ষ বইপত্র লিখেছেন। ল্যুডভিগ হ্বিটগেনস্টাইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্ম এবং মৃত্যুদিন স্মরণে রেখে এই লেখা।

হ্বিটগেনস্টাইনকে এককথায় বলা যায় ‘ফ্রি স্পিরিট’—এক অন্তহীন স্বাধীনচেতনাসম্পন্ন মানবসত্তা—অন্তত আমি যতটুকু তাঁকে পাঠ করে ও তাঁর লেখা পড়ে বুঝতে পারি। বিচিত্র জীবনযাপন করেছেন। এক পরিস্থিতি থেকে আরেক পরিস্থিতিতে অনায়াসে যেন যেতে পারতেন। অস্ট্রিয়া থেকে ইংল্যান্ড, কখনো আমেরিকা, রাশিয়াতেও আরেকটু হলে ডেরা বেঁধে ফেলেছিলেন, নিজে কুটির বানিয়ে নির্জনে চলে গেছেন নরওয়েতে। বিচিত্র জীবন—বিচিত্র জীবিকার বহর—অধ্যাপনা থেকে বাগানের মালি, হাসপাতালের আরদালি থেকে ফের অধ্যাপক, আরো কত কী। পিতার সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। হয়ে গেছেন কখনো পথের মানুষ, কখনো প্রাসাদের। তিনি যেন হারমেন হেসের আরেক সিদ্ধার্থ। জীবন যেন ঠিক খেলা নয়, লীলার মতো এসেছে ধরা দিয়েছে ছুটে গেছে। ভিয়েনা সার্কেলের সঙ্গে মিশে রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ নাটক পড়ে মুগ্ধ। পরে হয়ে গেছেন রবীন্দ্রভক্ত। আবার কোনো বৃত্তে থাকতে চাননি। মনে করতেন, দার্শনিক কোনো গোষ্ঠীর ভেতরে বেড়ে উঠতে পারে না। দার্শনিকতা কোনো দলবদ্ধ বিষয় নয়। আর তিনি তো দার্শনিক না হয়ে হতে যাচ্ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু সেদিকে যাওয়ার আগে রাসেলের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, “উইল ইয়ু প্লিজ টেল মি হোয়েদার আই অ্যাম এ কমপ্লিট ইডিয়ট অর নট?” রাসেল যদি বলতেন হ্বিটগেনস্টাইন একজন মাথামোটা নির্বোধ কেউ, তাহলে তিনি সোজা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায় ফিরে যাবেন, আর যদি তা না হন তো দর্শনচর্চায় রত হবেন। বাঙালির মধ্যবিত্তের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সেকালে কি একালেও একথা কজন ভাবতে পারে যে, ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে কেউ দর্শন পড়তে চাইবে?

তিনি অস্ট্রিয়ার মানুষ, গুরুত্বপূর্ণ লেখাপত্র অনেকটাই মূলত জার্মান ভাষায়। দিয়েছেন ভাষণ, বলেছেন নানান কথাবার্তা। সেসব নিয়েও আলাদা আলাদা বই আছে। তবে তাঁকে যে তকমাটি দেওয়া হয় সেটি হলো ‘লিঙ্গুয়েস্টিক ফিলোসফি’র সবচেয়ে প্রখর ব্যক্তিদের একজন তিনি। তিনি এমন এক দর্শনের নির্দেশনাকারী যেখানে দর্শন ভাষা ও যুক্তি ছাড়িয়ে যায় না। ভাষার সীমানা ও যুক্তির সীমানা যতদূর তত দূর দর্শন। সক্রেটিস-প্লেটো শুরু করেছিলেন সংলাপে, পরে অনেকেই দর্শনকে নিয়ে গেছেন বচনে বা প্রবচনে। যেমন নিৎসে, যেমন হ্বিটগেনস্টাইনও। তবে ছকে ফেলে দেওয়ার লোক কি তিনি? তিনি তো উড়ালপঙ্খি।

বাংলাদেশে হ্বিটগেনস্টাইনকে প্রথম পাই ২০০০ সালে, মঈন চৌধুরীর লেখা ‘হ্বিটগেনেস্টাইনের দর্শন: ভাষা, চিন্তা, বিশ্ব ও বাস্তবতার স্বরূপ’ নামের একেবারে ছোট্ট একটি বইতে। বইটি মাত্র ২৪ পৃষ্ঠার। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। মঈন চৌধুরী একেবারেই একটি উপক্রমণিকামূলক কাজ করেছিলেন, মানে ‘ইন্ট্রোডিউসিং হ্বিটগেনস্টাইন’। এতে একেবারে তার সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা তিনি হাজির করেছিলেন, তবে বইটির মূল অংশজুড়ে ছিল ‘ট্রাকটেটাস’ থেকে অনুবাদ। বিচ্ছিন্নভাবে করা ওই অনুবাদঅংশটি পড়ে যেটুকু বোঝা গিয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল বস্তু, বাস্তবতা, জগৎ ভাষায় আসলে কতটুকু ধারণ করা যায়। আর সেজন্য যুক্তিকাঠামো কতটুকু কার্যকর হতে পারে। এছাড়া ভাষার সীমা, চিত্রের ভূমিকা ও ভাষার স্ফটিকীকরণ, সবমিলিয়ে স্পষ্টকরণ।

‘ট্রাকটেটাসে’র নানান মন্তব্যসমূহ থেকে নানান সময় চমকে চমকে ওঠা আর ভাবা সাহিত্যের ক্ষেত্রে হ্বিটগেনস্টাইন আসলে কিভাবে কাজে লাগে, সবচেয়ে বড় কথা উপন্যাস লিখতে। ‘বিশ্বই সব, এই হচ্ছে ঘটনা।’ বা বিশ্ব হলো সত্য ঘটনার সমষ্টি, বস্তুর সমষ্টি নয়।’—এ পর্যন্ত মগজ সহজভাবে নিতে পারে। ‘মগজে’র সঙ্গে ‘সহজে’র একটা সম্পর্ক আছে, মগজ কঠিন বিষয়কে সহজ করে নিতে পারে যদি মগজের সেই সক্ষমতা থাকে; কিন্তু দ্রুতই বুঝে নিতে হয় এই সহজ সূত্রে হ্বিটগেনস্টাইন টান দিলেন অনেক গভীরে। এতই গভীরে যে তা আমার মতো মানুষের জন্য অতল হয়ে ওঠে।

এর ভেতরে তার দিকে আরো আগ্রহ জাগে। পুরোনো বইয়ের দোকানে ‘দ্য ব্লু অ্যান্ড দ্যা ব্রাউন বুক’ পাই; ২০০৬ সাল তখন। এরপর বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া যায়, আফজালুল বাসারের অনুবাদে ‘ট্রাকটেটাস’। এটি ২০০১ সালে প্রকাশিত হলেও আমি পেয়েছি ২০১১ সালে। আর টের পাই হ্বিটগেনস্টাইনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে শুরু হয়ে যায় ভাষার খেলা। ভাষার খেলা অবশ্য সেই অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স থেকে শুরু, পরে জানি, যে-কারণে জেমস জয়েস বারবার অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স পড়তেন। জীবনকে ভাষার খেলায় নিতে পারার কাজটি যেভাবে দার্শনিক করেন, সেভাবে লেখক করেন না—এটিই হ্বিটগেনস্টাইন থেকে অনুভূত হতে থাকে। এরপর ২০১৩ সালে পেয়ে যাই তার ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’। বিপুল অর্থমূল্যের সেই বই। কিন্তু পেয়ে হাত ছাড়া করার কথা চিন্তাও করিনি। কারণ হ্বিটগেনস্টাইনের মূল যে দুটো বই ‘ট্রাকটেটাস’ ও এই ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’—এছাড়া তো তাঁকে জানা বোঝার উপায় এই বাংলাদেশে বসে তখন আর ছিল না। যদিও পরে জানি, তার আরো কতকগুলি বই আছে—যার প্রায় সবই এখন ইন্টারনেটে পিডিএফে পাওয়া যায়। এছাড়াও তার সম্পর্কে ছোটবড় নানান বইপত্র একে একে জোগাড় হতে থাকে। অক্সফোর্ডের কিছু, আইকন বুকস থেকে প্রকাশিত তাঁকে নিয়ে বই পাই, পাওয়া হয় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার তুষার কান্তি সরকার, শেফালী মৈত্র ও ইন্দ্রাণী সান্যাল সম্পাদিত ‘হ্বিটগেনস্টাইন: জগৎ, ভাষা ও চিন্তন’ বইটি। এটি পাওয়ার ভেতর দিয়ে বাংলায় তাঁকে চর্চার একটি কার্যকর বই পাওয়া গেল। উল্লিখিত বইপত্র থেকে তাঁকে যতটুকু ধরতে পারা গেল, তাই বর্তমানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমরা জানি, দর্শনচর্চাকারীর লক্ষ্য হলো জগৎটাকে বোঝা, জীবনকে বোঝা। একজন ঔপন্যাসিকের কাজও জগৎ ও এর মানুষকে বোঝা। আরো আগে জেনেছিলাম, দর্শনের কাজ হলো অস্তিত্বের স্বরূপ সন্ধান ও জীবনের সম্ভাবনাগুলি দেখানো। অল্পস্বল্প দর্শন বিষয়ক বইপত্র পড়ে এইটুকুই আমার মগজ নিতে পেরেছিল। এর ভেতরে হ্বিটগেনস্টাইন করেছেন কী, ভাষার কাজের জায়গাটির সন্ধান দিয়ে চিন্তার স্পষ্টতা ও জীবনের সম্ভবনাগুলি দেখাতে লাগলেন আমাকে।

বস্তু ও বাস্তবতা কী করে জীবন গড়ে দেয়, বা মেটেরিয়াল ও রিয়ালের সংযোগ কোথায়—এ নিয়ে মার্কসবাদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু আমি যদ্দূর বুঝতে পারি হ্বিটগেনস্টাইন তার জগতের ব্যাখ্যার জন্য ভিন্ন খুঁটিতে বোধের দড়িটা বাঁধতে চেয়েছেন। তার খুব চালু উক্তি হলো, যা ট্রাকটেটাসেই আছে, যা দিয়ে তিনি মূলত ‘ট্রাকটেটাসে’র আপাত ইতি টেনেছেন। তিনি ১, ১.২, ১.২৩...৪, ৪.১ এভাবে (এর মন্তব্যগুলি দিয়ে তো ‘ট্রাকটেটাস’ গড়া, যেগুলিকে আমরা আয়াতও বলতে পারি) বিন্যাস করেছেন, এর শেষ আয়াত হলো ৭, যেখানে বলছেন, “আমরা যে বিষয়ে আদৌ বলতে পারি না, অবশ্যই সে বিষয়ে নীরব থাকতে হবে।” কিন্তু এ দিয়েই কি ‘ট্রাকটেটাস’ শেষ হয়ে যায়? কত না বিষয় এসেছে তার এই বইতে। বলাবাহুল্য, জীবদ্দশায় তিনি এই একটি মাত্র বইয়ের প্রকাশনা দেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যায় পরবর্তীকালে তার প্রকাশিত আরো কিছু বইতে যেমন এর ভেতরে সবচেয়ে বিখ্যাত যেটি যে ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’, তাতে ঠিক ‘ট্রাকটেটাসে’র জায়গায় পড়ে থাকেননি। তবে দর্শনের সাহায্য মানে ভাষার সাহায্যে যে জগৎকে পুরো ব্যাখ্যা করা যায় না—সেটিরও তো আভাস দিয়ে গেছেন তিনি। যে-তিনি ভাষার ভেতরে এত স্পষ্টতার অভিমুখে আমাদের নিয়ে যান, তিনিই বলেন যে, “জগতের মানে জগতের বাইরে বিরাজ করে।” তখন ফের চমকে উঠতে হয়। (একসময় কানে এসেছিল যে বৈজ্ঞানিক আবদুস সালামের চেষ্টা ছিল প্রাণ জগতের বাইরে থেকে এসেছে এটা বের করার, কিন্তু সেটি প্রমাণ করার আগে তিনি গত হলেন।) হ্বিটগেনস্টাইনের কথায় তাই ধাক্কা লাগে। প্রাণ তো প্রাণ, এর তো একটা বস্তুগত দিক আছে; কিন্তু জগতের ‘মানে’ জগতের বাইরে বিরাজ করে—এটা একটা বিরাট গোলকধাঁধায় আমাদের ফেলে দেয় না কি? তাহলে ভাষা দিয়ে জগতের আর কতটুকু ধরা যাবে, যেখানে মানেটাই জগতের বাইরে? আর জীবন? আর মানুষকে, যে মানুষকে নিয়ে লেখকের কাজ, একজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিকের কাজ? এখানে থমকে যেতে হয়, তাহলে মনে হয় জীবনের ক্ষেত্রে জীবিকার ক্ষেত্রে হ্বিটগেনস্টাইন যেমন এক মুক্ত স্বাধীন ছিলেন, কোথাও আটকে পড়তে চাইতেন না, সেরকম করে তিনি তার ভাবনাকে মুক্ত করে দিলেন, তার ভাবনাকে বেঁধে দিতে চাইলেন না? কারণ তিনি দর্শনকে (দেকার্তীয় ও তার সমকালের চল অনুযায়ী যা অনেক দিন রাজত্ব করেছিল দর্শনের জগতে) ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা মুক্ত করেছিলেন, ‘আমি’-র প্রাধান্যহীন করে কান্ট ও হেগেলের অসমাপ্ত কাজকে সম্পূর্ণতা দিলেন বলে উল্লেখ করা হয়, সেই তিনিই তো একটি বস্তু ও বাস্তবতা, যুক্তি, চিন্তা পেরিয়ে জগৎকে আমাদের সামনে রেখে গেছেন আরো অনুসন্ধানের জন্য। বিষয়টি যেন এমন, আমার দ্বারা এটুকু করার ছিল, বাকিটুকু তোমরা তোমাদের মতো করে করে নিও, তাই কি?

আরো প্রশ্ন তো হাজির হয়। আসলে প্রাচীন কাল ছিল প্রশ্নহীন বিশ্বাসের, আধুনিক কাল হলো প্রশ্ন ও উত্তরের, আর উত্তরাধুনিককাল হলো প্রশ্নই হয়ে ওঠে প্রশ্নের জবাব—এমন একটা জায়গায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা যারা অবস্থান করছি, সেখানে হ্বিটগেনস্টাইন তো কিছু বিষয় আমাদের কাছে হাজির করেছেন। বা উস্কে দিয়েছেন এমন কিছু যেখানে তাঁকে চর্চার যৌক্তিকতা তৈরি হয়। আমরা যেমন ফার্দিনান্দ দ্যা স্যোসুরের ক্ষেত্রে জানি তিনি শব্দকে তার পরিপ্রেক্ষিত থেকে বুঝে নেওয়ার জন্য বলেছেন, ঠিক তেমন হ্বিটগেনস্টাইন বলেছেন কোনো কিছুকে বুঝতে হলে ‘যাপনের প্রেক্ষাপটে’ বুঝতে হবে। তিনি সহজ একটি দিক হাজির করেছিলেন এভাবে যে, যদি সিংহ কথা বলতে পারত তাহলে কি আমরা তার ভাষা বুঝতে পারতাম? সিংহের ভাষা বুঝতে হবে সিংহের যাপনের পরিপ্রেক্ষিতে। এখানে এসে ফের মনে হলো হ্বিটগেনস্টাইন তো তাহলে যে কথাগুলি আসলে জগৎকে বোঝার মূল কথা সেই কথাগুলিই নিজের মতো করে বলে গিয়েছেন। ফলে তার সঙ্গে অনেকের তফাত থাকলেও মিলও বিপুল। জগৎ, চিন্তা ও ভাষা-র পরম্পরায় কোনটা কোনটাকে মেনে চলবে খেলাটা কেবল তিনি যেভাবে যা হাজির করেছেন। তাতে আমরা আমাদের মতো টের পাই যে জগৎ থেকে চিন্তা তৈরি হবে, তারপর চিন্তা থেকে ভাষা? নাকি উল্টোটা ভাষা তৈরি হলে তবে চিন্তা আর চিন্তা তৈরি হলে পরে জগৎকে বোঝা যায়। আমরা শিশুর ভাষা দিয়ে তো বিষয়টি দেখে নিতে পারি। তার ভাষা শেখা থেকে তার করা নানান প্রশ্নের ভিত্তিতে আমরা জগতের আরেকটি চেহারা পাই। একটি শিশু বা প্রতিটি শিশু তার মতো করে তার আশপাশকে চিনতে চেষ্টা করে, তার চিন্তা শক্তি যতটুকু সেসময় সে ধারণ করে। যদিও হ্বিটগেনস্টাইন দেখান তিনটিই সংযুক্ত।

আমরা জানি, হ্বিটগেনস্টাইন ‘মন’ নিয়েও গভীরভাবে ভেবেছেন। ফ্রয়েড ও তিনি প্রায় সমসাময়িক, আর দুজনেই অস্ট্রিয়ার মানুষ। ফ্রয়েড সাইকোঅ্যানালিসিস দিয়ে যেভাবে মানুষকে বুঝতে চেয়েছেন, হ্বিটগেনস্টাইন সেখানে তার ভাষা-দর্শন দিয়ে জগৎ-জীবন বোঝার জন্য বস্তু ও বাস্তবতার বিন্যাসকে লক্ষ্য করতেই তো বললেন। দুজনের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায়, যে হ্বিটগেনস্টাইন আমাদের উপলব্ধি করান যে, ভাষা, বোঝাপড়া ও জানা বা জ্ঞান এক অতল গহ্বরের ওপরে পাতা পাতলা জাল ছাড়া আর কিছুই না। সেই জালটি সরিয়ে নিলে আমরা কোন যে অতলে তলিয়ে যেতে পারি—ফলে ভাষা, বোঝাপড়া ও জানার সীমানা আমাদের নির্ধারণ করে নিতে হয়। নইলে সমূহ সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে।

একটি মানুষের বেঁচে থাকাকে, তার আবেগ-অনুভূতি, তার মমতা-নির্মমতাকে বোঝার ক্ষেত্রে এভাবে হ্বিটগেনস্টাইন আমাদের সহায়তা করেন বোধ করি। সেদিক থেকে ভাষার খেলা মানে জীবনের খেলা। কথার পেছনে যে মানুষ লুকিয়ে থাকে, লুকিয়ে থাকে তার অতল বা নির্জ্ঞান, সেদিকেও নিয়ে যান হ্বিটগেনস্টাইন। জীবন থেকে বিজ্ঞানে, বিজ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতায়, বিশ্লেষণ, প্রয়োগ, ভাষা ও চিন্তার সীমা সসীম ও অসীম—কত দিকে ঘুরিয়ে আনেন তিনি। ‘ট্রাকটেটাস’ ও ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’ বই দুটোকে ধারাবাহিক পড়ায় যেমন এক ধরনের পাঠ, তেমন হলো, এর নির্ঘণ্টে গিয়ে নানান বিষয় সম্পর্কে কোথায় কী বলেছেন, সেভাবেও আবার পড়া যায়, মানে জীবন, জীবিকা, অভিজ্ঞতা, দৈনন্দিন ভাষা ব্যবহার, সত্য, বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি কত কত বিষয়ই না আছে।

ফলে হ্বিটগেনস্টাইনের কাছে যাওয়া ও তাঁকে চর্চা করার মানে এক ভ্রাম্যমাণ মন ও মস্তিস্কের সন্ধান পাওয়া। কারণ তাঁকেও তো বুঝতে হবে তার যাপনের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখান থেকে তিনি তার পথনির্দেশক গটলব ফ্রেগে ও শিক্ষক বার্ট্রান্ড রাসেলকে পেরিয়ে হয়ে উঠলেন এক ও অনন্য হ্বিটগেনস্টাইন।

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;