স্কুল ইন্সপেক্টর



এম আতহার তাহির ।। অনুবাদ : জিয়া হাশান
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

লাঙল নিয়া মিস্ত্রির কাছে যাচ্ছে এমন এক কৃষকের কাছে ইন্সপেক্টর স্কুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন।
: হ্যাঁ, হ্যাঁ, এখানে একটা স্কুল আছে। গ্রামের বাইরে মনে হয়।
সে তার ধুলামাখা চামড়া ফাটা খসখসে আঙুল তুলে গ্রামের বাইরে যাবার রাস্তা খায়ে দ্যাখায়ে দেয়। ইন্সপেক্টর তাকায়ে দ্যাখেন—উঁচানিচা এবড়োথেবড়ো রাস্তা। তার এখানে সেখানে পানি জমে কর্দমাক্ত। বাকিটুকু ধুলোময়। তা ক্ষেতের কাছে গিয়া শেষ হয়েছে। তিনি তাই দুই ক্ষেতের মাঝখান দিয়া চলে যাওয়া সে রাস্তা ধরে আগান। দূর থেকে এক সাইকেল আরোহীকে আসতে দ্যাখেন। ইন্সপেক্টরের কাছে এসে সে থামে এবং সাইকেল থেকে নেমে সম্ভ্রমে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। তার কাছে ইন্সপেক্টর জিজ্ঞেস করেন—স্কুল কোথায়?
: স্কুল?
: হ্যাঁ
কয়েকটা মাঠের ওপারে একটা বড় গাছের দিকে ইশারা করে সে বলে—ঐ যে শিশাম গাছ দেখছেন তার নিচে।
: আমার সাথে গিয়া একটু দ্যাখিয়ে দিতে পারবে?

শহরের সাহেবকে সহায়তা করতে গ্রামের লোকটা সানন্দে রাজি হয়ে যায়। কেননা স্কুলের ছেলেমেয়েরা এবং মাস্টারসাব কিংবা পথচারীরা যদি তাকে শহরের এই সাহেবের সাথে দেখে তাহলে নিশ্চয়ই গ্রামে তার মান-সম্মান বেড়ে যাবে। এ ভাবনায় তার বুক ফুলে ওঠে। সে পথ দেখায়ে আগায়—সাহেবজি, স্কুল মাস্টার খুব ভালো। দারুণ পরিশ্রম করেন।

কিন্তু স্কুল ইন্সপেক্টর কোনো জবাব দেন না। জেলাজুড়ে এইসব স্কুলের পিছে পিছে ঘোরা অনেকটা নিষ্ফল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা নোংরা শহর, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং তার জিপ যেতে পারে না এমন প্রত্যন্ত গ্রামে স্কুলগুলো ছড়ানো-ছিটানো। আর তাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। খুবই হতাশাজনক। গত তিন বছরে এসব তার গা-সওয়া হয়ে যাবার কথা। কিন্তু না। প্রতিটা স্কুল তাকে এখনো আহত করে। কেননা এগুলোতে সাজ-সরঞ্জামের অভাব, স্থানীয় লোকজনের অনাগ্রহ আর ছাত্রছাত্রীরা যেমন অলস তেমনি শিক্ষকরাও পরজীবী। এসব আজকাল মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে তিনি নিজে কি করতে পারেন? সুপারিশ আর সুপারিশ। আর প্রতিটা সুপারিশই পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ ছেঁটে ফ্যালে। তাদের কাজই যেন স্বল্প পরিকল্পনা আর সামান্য উন্নয়ন।

তারা ফসলের ক্ষেতের মাঝ দিয়া আগান। তার কোনোটা কেবল চাষ দেওয়া আবার কোনোটায় গমের চারা মাথা তোলা। এক জায়গায় দেখা যায় জমি খুব নিচু। ফলে সেখানে পানি জমে ছোটখাট ডোবার মতো হয়ে আছে। তার ওপর পোকামাকড়ের ওড়াউড়ি আর জলে শ্যাওলার ভেসে বেড়ানো চোখে পড়ে। তারা কাছে যেতই একটা গুঞ্জন ওঠে। স্কুল ইন্সপেক্টর হাত নেড়ে মুখের কাছে আসা পোকামাকড় তাড়ায়ে দেন।

গ্রামের লোকটা লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত হাঁটে। ফলে তার সাইকেলের ঢিলা বেল ঝনঝন করতে থাকে। তবে তার বিবর্ণ জুতার এখানে সেখানে কয়েটা তালি দেওয়া ও সেলাই করা এবং হিল ভাঙা। ফলে তা পায়ে দিয়া হাঁটতে তার কষ্টই হয়।

তারা কান পর্যন্ত উঁচু ভুট্টো গাছের এক ক্ষেত পাড়ি দিতেই দ্যাখেন শিশাম গাছ। চাষ করে বীজ রোপণের উপযোগী করা একটা ক্ষেতের পাশে ছায়াদানকারী গাছটা দাঁড়ানো। কিন্তু সেখানে তো আর কিছু নাই। গ্রামের লোকটা হতাশায় ভেঙে পড়ে—হ্যাঁ, স্কুলটা তো এখানেই ছিল। এই জমি চাষ দেওয়ার আগে এখানেই আমি দ্যাখছি।
: তাহলে?
: মনে হয় অন্য কোথাও চলে গেছে।
: কিন্তু তার ঘর?
: ঘর?
: এখানে কোনো ঘর ছিল না? স্কুল ঘর?
: না, জনাব, কোনো ঘর নাই স্কুলের। মাস্টারসাব তাঁর সাথে সাথে স্কুল নিয়া বেড়ান। তিনি যেখানে যান স্কুল সেখানে যায়।

তাহলে এখন কী করা, ইন্সপেক্টর কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না।

তখন গ্রামের লোকটা কয়েকটা ক্ষেত ওপাড়ের একটায় নিড়ানি দিতে এক লোককে দেখে তার পানে চিৎকার ছুড়ে দেয়—‘হেই মিয়া!’ ডাক শুনে নিড়ানি দেওয়া লোকটা কাজ রেখে তাদের দিকে ফেরে। ফলে তার চোখের ওপর সরাসরি সূর্যের রশ্মি পড়ে। তাই হাত দিয়া ছায়া তৈরি করে সে তাকায়।
: হেই মিয়া! স্কুল কোথায়? এই সাহেব শহর থেকে স্কুল দেখতে এসেছেন।
: স্কুল? ছেলেপেলেগুলা আখক্ষেতের দিকে আছে। সকালে তাদের ওদিকে যেতে দেখেছি।

ঘন ও পরিপুষ্ট আখে ভরা ক্ষেত। ধূসর সবুজ ও গোলাপি তাদের গায়ের রং। মাথায় ঘন সবুজ পাতা। বাতাসে তাদের মৃদু-মন্দ নড়াচড়া। তার পাশে চাষ দিয়া তৈরি করা আরো অনেক ক্ষেত। তারা তাই এদিকওদিক তাকান কিন্তু আর কিছুই চোখে পড়ে না। ফলে গ্রামের লোকটা হতবুদ্ধ হয়ে পড়ে—নিড়ানি দেওয়া লোকটা আখক্ষেতের কথাই তো বলেছিল, তাই না?
: হ্যাঁ, ইন্সপেক্টরের স্বরে বিরক্ত বাসা বাধা।
: তাহলে হয়তো ক্ষেতের ওপাশে হবে।
ভ্রু কুঁচকে ইন্সপেক্টর বলেন—শোনেন, আপনি গিয়া খুঁজে দেখেন। পেলে আমাকে এসে জানান।

গ্রামের লোকটা পাশেই সাইকেল শোয়ায়ে রেখে খুঁজতে চলে যায়। স্কুল ইন্সপেক্টর রাস্তার পাশে বসে সামনের দিগন্তজোড়া পরিষ্কার নীল আকাশ ছোঁয়া ধূসর মাঠ, উঠতি ফসল আর সবুজের নিস্তেজ ছায়ার পানে তাকান। দেখেন দূরের গাছে কয়েকটা কাক আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। আর আকাশের উঁচুতে অলস বিন্দুর মতো কয়েকটা চিল ঘোরাঘুরি করছে। আর কিছু ছোট ছোট পাখি কিচিমিচির জুড়ে দিয়েছে।

কিছুক্ষণ পরে চিৎকার কানে আসে। গ্রামের লোকটা ফিরছে। নানা অঙ্গভঙ্গির সাথে সে ছুটে আসছে। তাকে দেখেই ইন্সপেক্টর উঠে দাঁড়ান। তার শরীরের মাংশপেশিগুলা যেন আড়ষ্ট হয়ে পড়েছে। বুঝতে পারেন যে, তিনি নিজেই অচল হয়ে যাচ্ছেন। এখন তার দরকার অফিসে, জিপের সিটে কিংবা যেসব স্কুল পরিদর্শন করেন তার চেয়ারে বসে থাকা।

গ্রামের লোকটার মুখে বিজয়ের হাসি—‘স্কুল খুঁজে পাইছি।’ তারপর ইন্সপেক্টরকে ক্ষেতের ভেতর দিয়া পথ দেখান।

ইন্সপেক্টর দ্বিধা নিয়া আগান। কেননা ঘন আখক্ষেতের ভেতরে ছিনতাই করে সবকিছু নিয়া গেলে কেউ কিছু টের পাবে না। কিন্তু আখের সবুজ পাতা তার মুখে ও হাতে আঁচড় কাটা শুরু করলে তিনি হাত দিয়া তাদের সামলে নিয়া সামনে তাকান। দেখে নেন কোথায় যাচ্ছেন। মাটি উঁচা-নিচা তাই বেশ কয়েকবার তাকে হোঁচট খেতে হয়। তারপর ক্ষেতের মাঝ বরাবর শোরগোল ও গাছের নড়াচড়া লক্ষ করে তারা আগাতে থাকেন। পৌঁছে দেখেন আখগাছ পরিষ্কার করে খোলা মতো একটা জায়গা। সেখানে মাটির ওপর গায়ে গায়ে ঘেঁষে বসা জন চল্লিশেক শিক্ষার্থী। কোনো মাদুর-ম্যাট চোখে পড়ে না। ক্ষেত ভেঙে আসার সময় শোনা শোরগোল এখানে এসে হঠাৎ থেমে যাওয়ায় কানে বাজে। তবে শিক্ষার্থীদের দেখে মনে হয়, তারা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে নামতা মুখস্থ করছিল। বাকিরা ঝুঁকে পড়ে স্লেট বা বোর্ডে লিখছিল। কয়েকটা বোর্ড আবার সূর্যের দিকে মুখ করে আখগাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা। তাতে তখনো কালির দাগ তরতাজা।

শিক্ষার্থীদের মাঝখানে একটা নড়বড়ে চেয়ারে বেত হাতে এক বয়স্ক লোক বসা। দেখেই বোঝা যায় চেয়ারটাতে কয়েকবার জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। তাই জোড়ায় জোড়ায় বাড়তি পেরেক মারা। আর পিছনের মূল ফ্রেমের সাথে আরেকটা তক্তা আঁটা। তাছাড়া বসার ও হেলান দেবার কাঠের যেসব জায়গায় পচন ধরেছে সেখানে বিসদৃশ্যভাবে তক্তা লাগানো। ইন্সপেক্টরকে দেখে মাস্টারসাব উঠে দাঁড়ান। তার খালি পা জুতো খুঁজে নেয়।

মেন্টর ইংরেজিতে কমান্ড করে—‘ক্লাস স্ট্যান্ড।’ সাথে সাথে সব শিক্ষার্থী উঠে দাঁড়ায় এবং তাদের জামার পেছনের ধুলো ঝেড়ে নেয়। স্কুল ইন্সপেক্টর আসায় মাস্টারসাব অস্থির হয়ে পড়েন। থির হতে কিছু সময় নেন। তারপর কাঁধের রুমালে চেয়ারের ধুলোবালি ঝেড়ে নিয়া তাতে বসার জন্য ইন্সপেক্টরকে অনুরোধ জানান। তার সাথে আসা গ্রামের লোকটা স্বস্তি বোধ করে। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইন্সপেক্টর বিদায় জানান। সাথে সাথে সে হাওয়া হয়ে যায়।

: হুজুর! হুজুর!!
ইন্সপেক্টর চারদিকে তাকান—এই তাহলে স্কুল?
মাস্টার সাব ঢোক গেলেন—জি, সাব।
: আপনি এদের কী কী পড়ান? প্রশ্ন করে তিনি আবার মাস্টারসাবের ঢোক গেলার শব্দ শুনতে পান।
: উর্দু, অঙ্ক, ইংরেজি আর হাতের লেখা শিখাই, স্যার।
: সরকার নির্ধারিত বই থেকে?
: জি স্যার, সরকার নির্ধারিত বই থেকে।
তিনি চেয়ারের পায়ার কাছ থেকে পাতা ছেঁড়া কতগুলো আস্তো বই তুলে স্কুল ইন্সপেক্টরের হাতে দেন।

ইন্সপেক্টর উর্দু টেক্সট বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা অধ্যায়ে গিয়া থামেন। একজন ছাত্রকে তা পড়তে বলেন। কিন্তু ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে।
: স্যারজি, বইটা ক্লাস ফোরের কিন্তু ছেলেটা ক্লাস টুয়ের।
: এখানে তাহলে কয়টা ক্লাস আছে?
: ছয়টা, স্যারজি। ক্লাস ওয়ান থেকে সিক্স।

ইন্সপেক্টর যাদের একটা দল বলে ভেবেছিলেন এতক্ষণে তাদের ভাগটা বুঝতে পারেন। মাস্টারসাব তার হাতের বেত দিয়া ইঙ্গিত করে বলেন—স্যারজি, ও ক্লাস ফোরে।
তাকে ইন্সপেক্টর নির্দেশ দেন—তুমি পড়ো।

ছেলেটা উঠে দাঁড়ায়ে পড়া শুরু করে। স্পষ্ট উচ্চারণে জোরালো কণ্ঠে সে পড়ে যায়। কোনো ভুল নাই, এতটুকু তোতলামি নাই। ফলে মাস্টারসাবের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। তিনি অনুরোধ করেন—স্যারজি, অন্য ক্লাসের একজনরে ধরেন।

স্কুল ইন্সপেক্টর ক্লাস টুয়ের শিক্ষার্থীদের একটা অংক কষতে দেন। তা অধিকাংশেরই সঠিক হয়। ক্লাস ওয়ানের একজোড়া ছাত্র মুখস্থ রাখতে সুবিধা হয় সেরকমভাবে গানের সুরে সুরে ছন্দের তালে তালে আগে-পিছে মাথা দুলিয়ে ইংরেজি অক্ষরগুলো নির্ভুলভাবে আবৃত্তি করে। একই সুরে সুরে বা বা ব্লাক শিপ ছড়াটা পড়ে শোনায় ক্লাস সিক্সের একটা ছেলে। যদি সে অন্তর থেকে তা করে থাকে তাহলে বলতে হবে চমৎকার হয়েছে। আর যদি বই থেকে পড়ে থাকে তাহলে উত্তম হয়েছে বলে ইন্সপেক্টরের মনে হয়। তাই স্বীকার করতেই হয় যে, তার আওতাধীন প্রাথমিক স্কুলগুলোর তুলনায়, যে কোনো বিচারেই হোক, এটার মান অনেক উঁচুতে। সুতরাং এই স্কুল মাস্টারের সুখ্যাতি অবশ্যই তাঁর প্রাপ্য। শিক্ষার্থীদের পারফমেন্সে সন্তোষ প্রকাশ করে ইন্সপেক্টর উঠে দাঁড়ান। ফলে চেয়ারটা ক্যাঁচক্যাঁচ করে ওঠে। তবে মাস্টারসাবকে উদ্দীপ্ত দেখায়।

মেন্টর চিৎকার করে ওঠে—‘ক্লাস স্ট্যান্ড।’ আগেরবারের তুলনায় এবারেরটা অনেক জোরালো। ইন্সপেক্টর চলে যাবার পথ ধরেন। বেত হাতে মাস্টারসাব তার পিছু নেন। তাদের গ্রামের হালহাকিকত ও আরো অনেক বিষয় নিয়া কথা বলতে থাকেন। ক্ষেতের বাইরে বের হয়ে তবেই ইন্সপেক্টর স্বস্তি বোধ করেন। তখন জিজ্ঞাস করেন—আপনি স্কুলের স্থান বদল করেন কেন? এখানে ভাড়ায় ঘর পাওয়া যায় না?
: ভাড়ায়, স্যারজি?
: তাহলে তো ভালো হয় ।
: না, না, সাবজি। কেউ-ই আমাদের ঘর দিতে চায় না। তারা চায় না এখানে স্কুল হোক। সে কথা তারা বহুবার বলেছে। তারা মনে করে তাদের সন্তানদের সময় অপচয় হচ্ছে। কোথাও কাজ করা, বাবাকে ক্ষেতখামারে সহায়তা করা কিংবা গরু-বাছুর চড়ানোর বদলে এখানে এসে তারা দুষ্টুমি করছে। গ্রাম-প্রধান চৌধুরী আলী মোহম্মদই একমাত্র আমাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন, স্যারজি। তিনি মনে করেন শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনিও আমাদের ঘর দেননি। কিংবা এক খণ্ড জমি। কিন্তু ক্ষেতে চাষবাস শুরু করার আগ পর্যন্ত গত মৌসুমের পুরোটা সময় তিনি আমাদের শিশাম গাছের ছায়াটা দিয়েছিলেন। আর এই মৌসুমে আমরা তার এই আখক্ষেত ব্যবহার করছি।
: আপনাদের জন্য আখক্ষেতের মাঝখানটা খালি করে দিয়া তিনি ভালোই করেছেন।
: হ্যাঁ, সাবজি। মাঝখানটা খালি করে দিয়া তিনি ভালো করেছেন। স্কুলের ছেলেরা ও আমি মিলে তার এ জায়গার আখ কেটে দিয়েছি, স্যারজি। তার জন্য আমার তিন দিন কাজ করেছি। এমনকি ক্লাস ওয়ানের ছেলেরাও। সকাল আটটা থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত। শেষে ঘন অন্ধকার নেমে এলে আমরা আঁটি বেঁধে বেঁধে চৌধুরীর গরুর গাড়িতে তুলে দিয়েছি। চৌধুরী বলেন, আমাদের অবশ্যই শিক্ষার মূল্য দিতে হবে। তাই এইভাবে আমাদের তা দিতে হয়েছে বলে মাস্টারসাব মাথা থেকে তাঁর সাদা পাগড়ি খুলে দেখান। সেখানে তাঁর মেহেদিরঙা চুলের মাঝখানে এক ফালি টাক। তাঁর চোখে পানি চলে আসে। কিছুক্ষণের জন্য কণ্ঠ ফুঁপিয়ে ওঠে। শেষে পাগড়ি আবার মাথায় দিয়া অন্য দিকে তাকায়ে বলেন—আঁটিগুলো বয়ে নিয়া যেতে গিয়া আমার মাথার চুল পড়ে গেছে।

তারা আরো সামনে হাঁটতে থাকেন। স্কুল ইন্সপেক্টর আলপথে আর ক্ষেতের ওপর দিয়া বিসদৃশ্যভাবে তার পাশে পাশে কিছুটা খাটো দেহের মাস্টারসাব। তিনি নরম কণ্ঠে বলেন—সাবজি, যদি আমাদের একটা ঘর থাকত, কেবল একটা ঘর, যদি ঘর নাও হয় একখণ্ড জমি। তাহলে ছেলেপেলেদের নিয়া আমি নিজেই তা বানিয়ে নিতাম। তাতে হয়তো পুরো একটা মৌসুম লেগে যেত, স্যারজি। তবু আমরা তা করে নিতে পারতাম।

স্কুল ইন্সপেক্টর নীরবে হাঁটতে থাকেন।

: আমি বুঝি, স্যারজি, একখণ্ড জমি অনেক দামি আর লোকজনও এতটুকু চায় না স্কুল। তবে যে কোনো জায়গায় জমি হলে আমার আপত্তি নাই। গ্রামের কামলা-কিষাণরা যে এলাকায় থাকে সেখানে কিছু জমি আছে। তাই সেখানে স্কুল নিয়া যেত হলেও আমরা খুশি হব, স্যারজি। একখণ্ড জমিই ভালো...

স্কুল ইন্সপেক্টর নীরব। তিনি ইতিমধ্যেই তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হিসাবে দেখে ফেলেছেন। কেননা প্রাইমারি স্কুলের জন্য সরকার কোনো জমি বা ঘর দেয় না। স্থানীয় লোকজনকেই তা দিতে হয়। সুতরাং এখন কেন তা বদলানো হবে। আইন আইনই। এমন আইনও আছে যা শত শত বছর ধরে মেনে চলা হচ্ছে। স্বাধীনতার পরও তার কোনো বদল হয়নি। তখন যা ভালো ছিল এখনো তা-ই ভালো হয়ে আছে। সর্বোপরি আছে ব্যয় সংকোচন। সর্বত্র তিনি তা শুনতে পান। তাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। ছ্ট্টো একখণ্ড জমি—শুধু এইটুকুমাত্র চাওয়া। কিন্তু তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক কয়জন আছে। কতজনই বা এমন আন্তরিক হয়েও এরকম হতাশার মুখোমুখি। এই তিন বছরের চাকরি জীবনে তিনি আর একটি মুখও মনে করতে পারেন না।

তিনি জিপে ওঠেন। ইঙ্গিতে মাস্টারসাবের বিদায়ী সালামের জবাব দিলে গাড়ি চলতে শুরু করে। তবে মাস্টার সাবের চোখে চোখ রাখা তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না।


এম আতহার তাহির
পাকিস্তানের এই গল্পকারের জন্ম ১৯৫১ সালে। লাহোর সরকারি কলেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ায় তিনি পড়াশোনা করেছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি হুবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপ লাভ করেন। প্রধানত ইংরেজিতেই তাঁর লেখালেখি। দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে।

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;