পাতার ঘর



নাহার মনিকা
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

“বাগান বিক্রি করে দিব।”
“ওখানে তিহানকে নিয়ে যাব।”

রান্নাঘর থেকে শায়লা, আর শোবার ঘর থেকে আমি বেরিয়ে দুজনে মুখোমুখি হয়ে একযোগে কথা বলে বাক্যহারা হয়ে গেলাম!

শায়লা ওড়না মুখে চেপে কাঁদতে শুরু করল, যেন শব্দ না হয়, যেন তিহানের ঘুম ভেঙে না যায়। সে বাগান বিক্রির ঘোর বিরোধী।

তাহলে এখন কি উপায়? প্রবল মাথা নাড়ে সে, জানে না। সে শুধু ছেলেকে নিয়ে আব্বার বাগানে যেতে চায়।

এটা দুদিন আগে দুপুরের ঘটনা।

আমাদের গ্রামের বাড়ির পেছনে ফলফলাদির গাছ নিয়ে যে বাগানটা নোঙ্গর করা জাহাজের মতো নিঃশব্দ দাঁড়িয়ে আছে, আমার কখনো সেদিকটায় যাওয়ার আগ্রহ হয়নি। শায়লা আর তিহান মিলে সেই জাহাজটা সচল করে দিয়েছে। আমি এখন বাগানটাকে ভরসা করার মতো করে দেখছি।

লক-ডাউন উপেক্ষা করে অফিসে এসেছি। ইশতিয়াক স্যারও এসেছেন। স্টাফদের বেতন দেওয়ার আগে কিছু কাজ বাকি। ফাইলগুলো আমার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চান।

আজকে প্রথমবারের মতো হেঁটে অফিসে এলাম। শেষ কবে এতটা পথ হেঁটেছি, মনে নেই। মাস্ক মুখে, ক্যাপ, সানগ্লাস, ব্যাকপ্যাক নিয়ে বাইরে বের হওয়ার আগে ভেবেছি একটা রিক্সা অন্তত পেয়ে যাব। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা, রিক্সা তো দূর মানুষই হাতে গোনা। কিছুদূর হাঁটার পর অবশ্য শরীরের ম্যাজম্যাজে ভাব কেটে গেল। রিক্সায় যে রাস্তা চল্লিশ মিনিট লাগে, সে পথে আধঘণ্টা হেঁটে অফিসের দরজায় পৌঁছে গেলাম! দুপাশের বাড়িঘর, গাছপালা দেখতে দেখতে রাস্তার পাশের একসারি দেবদারু গাছের কচি মসৃণ পাতায় চোখ আটকে গেল! আব্বা আমাদের বাড়ির সামনে দেবদারু গাছ লাগিয়েছিল। বাড়ির পেছনে বাগানেও কি ছিল?

ইশতিয়াক স্যার আগেই পৌঁছে গেছেন। এমন নিশ্চুম অফিসেও আগে কোনোদিন আসিনি। স্বাভাবিক সময়ের সরগরম পরিবেশ মাথার ভেতর ঢুশ দিয়ে যাচ্ছে। ফোন, কম্প্যুটারের ঘড়ি এখন আর সেকেন্ডের কাঁটা দেখায় না। আমি পালস দেখার মতো ধীরে ধীরে সেকেন্ড গুনি মনে মনে। এক গোনার পর নাতিদীর্ঘ একটি শ্বাস, বুড়ো আঙুল কব্জির কাছের নীলচে শিরাতে তিনটে আঙ্গুলে অল্প চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে। দুই, তিন...পাঁচ। তিহান এভাবে শিখেছে তার দাদুর কাছে। আমি শিখেছি তিহানের কাছে।

এগারটা চল্লিশে ইশতিয়াক স্যার জুতার মচ মচ শব্দ তুলে অফিস থেকে চলে যাওয়ার আগে আমাকে বলবেন—“ফাহমিদ সাহেব আর ঘণ্টাখানেক থাকেন।”

কিন্তু আমার থাকতে হবে আরো ঘণ্টা তিনেক, আমি জানি। ইশতিয়াক মাহমুদের একঘণ্টা মানে আমার তিন ঘণ্টা। আশিদিনে ভূ-প্রদক্ষিণের কাহিনীর মতো আমার সময় পৃথিবীর গতির মধ্যে হাপিশ হয়ে যায়।

এখন মাত্র দশটা বেজেছে, আমি একটা-দেড়টার আগে বের হচ্ছি না। শায়লা পাথুরিয়া যাওয়ার গাড়ি ভাড়া করতে চাইছে আগামীকাল। আসলে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে। যে ইচ্ছে আব্বা বেঁচে থাকতে তেমন একটা করেনি।

দেবদারু গাছের কি বনসাই হয়? তিহানের মামাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। তার বনসাইয়ের শখ এখন নেশায় রূপ নিয়েছে। বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে আনাচে কানাচে রকমারি বনসাই। বনসাই জিনিসটা শায়লা অপছন্দ করে। শ্লেষের কণ্ঠে ভাইকে বলে—“মানুষকেও তাইলে বাইন্ধা বাইন্ধা ছোট করে রাখার ব্যবসা খুলতে পারো। এত বড় ঘরবাড়ি লাগবে না। মুরগির খোপের মতো খোপ বানায়া ঢুকায় দিয়ো। গাছেদের যে কষ্ট হয় সেইটা কি সে বোঝে?”

শায়লা নাকি শৈশব থেকেই এমন গাছ পাগল মেয়ে। বন জঙ্গলে গেলে মাথা ঠিক থাকে না। তিহানের মামা গাছ নিয়ে বোনের নানা কীর্তি বলে, উলটো বোনকে খ্যাপায়—“কপাল খারাপ তোর, এই দেশে তো আর জঙ্গল নাই, সব সাফ। বনসাই ভরসা।”

গতকালকে সকালে তিহানের জ্বর আসেনি। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে ভাত খেয়েছে বলে শায়লাও খুশি। আমার কাছে ওকে ঘুম পাড়াতে দিয়ে সে বাথরুমে গোসল সারতে ঢুকল।

তিহানকে বুকের ওপরে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি, বড় হয়ে কী হতে চায়, এসব কুটুর কুটুর গল্পে এসে আমি বললাম—“তিহান, বাইশ বৎসর বয়েসের মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করতে হবে। তারপর তোমাকে বিয়ে করায় দিব।”

তিহানের ক্লান্ত কিন্তু তখনও উৎসাহী স্বর। বলে—“বাবা দাদুবাড়িতে বিয়ে করব? খুঁজতে হবে তো!” ছেলেটা দাদুকে ভুলতে পারে না। ওর শিশুমনের জন্য খুব তাজা স্মৃতি রেখে আব্বা না ফেরার দেশে চলে গেছে আজকে চারমাস।

আমার চোখে ঘুম নেমে আসছে, কিন্তু তবু সিরিয়াস কথা চালিয়ে যাই—“আমাদের দেশে পড়ালেখা করতে গেলে খালি খালি কতগুলি বছর নষ্ট হয়। ক্লাস ওয়ানে উঠতে প্লে-গ্রুপ, কেজি ওয়ান, কে টু কত হাবিজাবি! সিস্টেম লস। ছেলেমেয়েদের জীবন শুরু করতে ত্রিশ পয়ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যায়। তুই একুশ বছরে পড়া শেষ করে বাইশ বছরে চাকরি পাবি। তারপর খুব ধুমধাম করে তোর বিয়ে দিব। বউ নিয়ে ব্যবিলন ঘুরতে যাবি।” হঠাৎ আমার ঘুমভাব চটে যায়। আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করি যে, এতক্ষণ ছোটবেলায় বলা আব্বার ছাড়া ছাড়া কথা ঘুরিয়ে বাড়িয়ে বলছিলাম!

“বাবা, শীত লাগে, বাবা পিঠে ব্যথা করে।” তিহানের সাত বছরের মসৃণ কপাল আগুন গরম, আবার জ্বর বেড়েছে। ও ঘুমিয়ে গিয়ে একটু পরে আবার ব্যথায় কঁকিয়ে জেগে ওঠে। শায়লা দৌড়ে এসে আমার কাছ থেকে প্রায় ছোঁ মেরে ওকে নিয়ে নিল। কম্বলে জড়িয়ে কোলে নিয়ে হাঁটে, আর নিজে গরমে ঘামতে থাকে। কালকে রাতে প্রায় সারারাত জেগে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। বেরিয়ে আসার আগে ওকে জাগাইনি।

ফাইলগুলো গুছিয়ে নিয়ে বাসায় বসে কাজ করব। কিন্তু পারব কি? তিহান ওর বিছানা থেকে প্রায় নামেই না বলতে গেল, অথচ পুরো বাসা জুড়েই সে। কোথায় বসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারব, ভাবছি। মনোসংযোগ করার দক্ষতা আমার আয়ত্তে ছিল, কিন্তু ইদানীং বড়শি ফসকে যাওয়া মাছের মতো চলে যাচ্ছে।

এখন আমার মন পরে আছে টিফিন বক্সের লাঞ্চে। আজকে অফিসে লাঞ্চ আনতে হলো। বাইরে দোকানপাট বন্ধ, খোলা থাকলেও খাওয়া চলবে না। মিষ্টিকুমড়া নিরামিষে কালোজিরা আর রসুনের ফোঁড়ন। শায়লা আগে রুটি দিয়ে দিত, কিন্তু আজকে ভাত নিয়েছি আমি। ফ্রিজ খুলে একটা বালুসাইও এনেছি। তিহানকে দেখতে এসে ওর মামা দু সপ্তাহ আগে এনেছিল। তখন আমরা ওর পাসপোর্ট করার কথা বলছিলাম। দেশে না। মুম্বাই, না কি ঠাকুর পুকুর যাব, এইসব। ওর মামা বলছিল একেবারে বাম্রুনগ্রাদ নিয়ে যেতে। ব্লাড টেস্টের পর শিশুরোগবিশেষজ্ঞ আরো কতগুলি টেস্টের সঙ্গে বায়োপসি করতে দিলেন, তখন থেকে আমরা অস্থির হয়ে আছি, কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়। এখন ঘরবন্দী দিনে দেশের ডাক্তার হাসপাতালই ভরসা। তাই এসব আর বলে লাভ নেই, বলি না। কিন্তু বিরতিহীন ভাবছি, যাব। কিন্তু যাওয়ার জন্য রসদ চাই।

বাড়ির পেছনের বাগান বেচে দেয়ার কথা শুনে শায়লা কাঁদতে শুরু করল। আব্বা কোনো কোনো ভয়াবহ বিপদেও এই বাগান বিক্রির কথা ভাবেনি, সে শুনেছে সেসব গল্প। গাছগুলো তিহান আর তার দাদুর যৌথ স্মৃতি। হেন ফলের গাছ নেই যা আব্বা লাগায়নি। একটা ভালো জাতের পেয়ারা চারা আনতে আরেক জেলায় গেছে।

আমি ধমক দিলাম—“এই সময়ে কিছু বেচব বললেই কি বিক্রি করা যায়? গাহেক পাব?”
“তিহান ঐখানে গেলে ভালো হয়ে যাবে।”
“বেকুবের মতো কথা বলবা না”—একথা শায়লাকে বলি না। ওইই ঠিক এটা বিশ্বাস করতে মন চায়।

এসব কথা তখন এক কান দিয়ে শুনে অন্য কানে যাতায়াতের পথে যেটুকু অবশিষ্ট থেকেছে, তা-ই এখন তিহানকে শোনাই।

অথচ আমি যখন হাইস্কুলে, পরিষ্কার সাদা ড্রেস, জুতো মোজা পরে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে আম্মা আঁচলে হাত মুছে কপালে চুমু খেয়ে বিদায় দেয়ার সময় আব্বা পেছনবাড়ির দরজা থেকে সুড়ুক করে হাজির হতো। তার কাদামাখা পা, হাতে মাটির দলা, দাড়িগোঁফেও আগাছা ঘাস লেগে আছে। আমার ধোপদুরস্ত কাপড় জামার পাশে আব্বা ছিল দূরের, অনাত্মীয়ের মতো। টিফিনের জন্য লুঙ্গির খুট খুলে আধময়লা টাকা দিলেও আমি বিরক্ত হতাম। হাতে ধরে আমার টিফিনের জন্য আনা গাছপাকা কোনো পেয়ারা বা আতাফল নেওয়ায় কোনো আগ্রহ ছিল না আমার।

আব্বা কি আমার মনের ভাব টের পেত? তার মুখের ওপর কড়া রৌদ্রে আচমকা মেঘের মতো একটা পাতলা ছায়া এসে নামত। বুঝতে পারলেও পাত্তা দিইনি।

আমার সঙ্গে আব্বার দূরত্বকে নিকট বানিয়ে নিয়েছিল শায়লা।

দু বছর আগে অফিসের ট্রেনিংয়ে সিঙ্গাপুর গেলাম। শায়লা বায়না ধরল পাথুরিয়ায় গিয়ে থাকবে। তিহানের স্কুল? সে নিজেই পড়াবে। দাদুর সঙ্গে নাতির প্রকৃতি পাঠ হবে। স্কুলে পিছিয়ে যাওয়ার ঘোরতর বিরোধী আমি, কিন্তু শায়লা শুনলে তো! একবছর না কি দেখতে দেখতে কেটে যাবে, এটা নাকি তিহানের জন্য বিরাট সুযোগ। অবশ্য ঢাকায় একা বাসায় মা ছেলে থাকার চেয়ে গ্রামের বাড়ি নিরাপদ, এই যুক্তি মেনে নিতেই হলো। ভাইয়ের বাসায় কিছু জিনিসপত্র রেখে তারা পাথুরিয়া গেল।

সেই একবছরে মুখচোরা লাজুক ছয় বছরের ছেলেটা দিন দিন দুরন্ত হয়েছে। শায়লা খুশিতে ডগমগ করতে করতে খবর দিত—আজকে তিহান নারকেল গাছ বেয়ে ওপরে উঠেছে। দাদুর সঙ্গে খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়ি নামিয়েছে। পরেরদিন, সে ভাত খায়নি, বড় এক ফজলী আম একবসায় খেয়ে ঘুম দিয়েছে। সাঁতার শিখছে! দাদুর সঙ্গে মাছ ধরতে গেছে। নাতির জন্য খেলনা কাস্তে এনেছে দাদু, ক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছে। সফেদা ফল খেতে ভালোবাসে বলে গাছের সব ফল পেড়ে খাটের নিচে রেখে দিয়েছে। কাদামাটি মাখা তিহানের ছবি তুলে পাঠায় শায়লা। আমি রাগ করতে গিয়ে নিজেকে সংবরণ করি। আর মাত্র কয়েকটা মাস, তারপর পাথুরিয়া যাওয়া বন্ধ। পড়ালেখা বাদ দিয়ে যত্তসব হাবিজাবি শেখায় উৎসাহ।

এক বৎসরকাল দাদুবাড়িতে কাটিয়ে তিহান ফলের বাগান সমন্ধে রাজ্যের তথ্য নিয়ে ফিরেছে। ওর অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমার অনীহাপ্রসূত স্মৃতি জোড়াতালি দিতে গেল ধরা পড়ে যাই।

তিহান ডাইনে বাঁয়ে মাথা দোলায়, বলে—“হলো না বাবা, আরেকটু ঐদিকে, লম্বা কদবেলগাছের পাশে দাদুর যে মিস্রিদানা আম আছে না? তারও আরেকটু পরে মিষ্টি জামগাছ। ঐ জাম খেয়ে আমি আর দাদু জিভের রঙ বেগুনী করে ফেলতাম।”

আমার স্কুলজীবনে ঐ জামগাছটা কি ছিল?

“আর তুমি তো আমাদের পাতার ঘর দেখোই নাই। দাদু ঐ জামগাছের নিচে একটা সত্যি সত্যি সবুজ পাতার ঘর বানায় দিছিল আমাকে! আমরা ওখানে দুপুরে ঘুমাইছি। ঝি ঝি পোঁকা কানে তালা লাগায় ডাকত। দাদু আমাকে নারকেল পাতা দিয়ে কত কিছু বানায় দিত! ঘড়ি, আংটি, মুকুট। আর বলত—আমি হচ্ছি পাতা রাজকুমার, হি হি হি।”

ঐ ঘর আছে এখনো?

জাহান্নামে যাক বাগান। বিক্রির বাজারদর যাচাই করতে এখানে সেখানে ফোন করি। যত দ্রুত পারা যায় বিক্রি করতে হবে। তিহানের ডাক্তার চেম্বারে বসছে না। ফোন করলে ধরছেও না।

পিজি হাসপাতালে শায়লার ভাইয়ের বন্ধুর পরিচিত ডাক্তার আছে, তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছি।

এগারোটা পঁচিশ। অফিসের সময় কি নড়ছে না? অনেকদিন হলো হাতঘড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছি। হাতঘড়ি তিহানের খুব পছন্দ। সিঙ্গাপুর থেকে ওর জন্য একটা ক্যাসিও ঘড়ি এনেছিলাম। মিনিটের পর সেকেন্ডগুলি লটারি খেলার স্লট মেশিনের বলের মতো সরসর করে নেমে যায়। আজকাল ঘড়িটা নিয়ে তিহান বিছানার ঠিক মাঝখানে বসে। চারপাশে অনেকগুলো হাবিজাবি খেলনা ছড়িয়ে রাখে, স্পাইডার ম্যান, লোগোর বাক্স। একেক সময় সে তার ঘড়ির ছোট নীল রঙ প্লাস্টিকের ডায়ালের দিকে পলক না ফেলে চেয়ে থাকে। তখন মনে হয় যে, সাত না। ওর বয়স অনন্তকাল। আগের মতো খেলার জন্য হুটোপুটি করে না। ফ্যানের বাতাসের সঙ্গে সখ্য করতে বাইরের বাতাস উড়ে এসে ঢোকে। বারান্দার গ্রিলে অহেতুক একটা ধূসর পাখি এসে বসে। গুরুক গুরুক ডাকে। তিহান চমকে একঝলক দেখে। তারপর আবার ঘড়ির ডায়ালে চোখ ফেরায়।

দুদিন হলো ঘড়িটায় সেকেন্ডের সংখ্যাগুলো ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। আগের মতো গড়গড়িয়ে জলপ্রপাতের মতো নামছে না। কোনোভাবে পানি ঢুকে গেছে কি? তিহানের ফুসফুসের মতো! ওর মিনিট থেকে সেকেন্ডের সংখ্যাগুলি নাই হচ্ছে?

তিহান কালকে রাতে কিছু খেতে চাইছিল না। শায়লা খাবার নিয়ে যতবার মুখের কাছে ধরছে, ততবার সে বাঁ হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছিল। ওর ছলছল চোখে বুকভর্তি বিতৃষ্ণা। অনেকক্ষণ ধৈর্য্য ধরে একসময় শায়লা আবারও ওড়নায় চোখ চেপে শোবার ঘরে ঢুকে গেল শায়লা।

কিছুসময় পরে শান্ত হয়ে ফিরল। ছেলের কাছে বসে বলল—“দাদুবাড়ি যাবি?”
তিহানের চোখ যেন চকচক করে উঠল!

“আমি ভাইয়াকে বলছি গাড়ি ভাড়া করতে। আমরা পাথুরিয়া যাচ্ছি।” তারপর স্যুটকেস নামিয়ে কাপড় গুছিয়েছে শায়লা।

এগারোটা পয়তাল্লিশ বাজল। ইশতিয়াক স্যার বেরিয়ে গেল। এবার আমি একহাতে টিফিনবক্স খুলি।

অন্যহাতে একটা করে অক্ষর টিপে বিক্রয় বিজ্ঞপ্তি টাইপ করতে থাকি “এক বিঘা জমিতে অতি যত্নে তৈরি ফলদায়িনী গাছভর্তি বাগান বিক্রি হবে। ”

ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না। একপাশে সরিয়ে রেখে শুরুতেই বালুসাইতে কামড় দিলাম। চিনির সঙ্গে দাঁতের ফাঁকে বালু কড়মড় করে উঠল।

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;