ভেনাস ও পিউমিস



রাবেয়া রব্বানী
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ইলুতমিস লজ
ঘোড়াগুলো লেজ দিয়ে মশা তাড়াচ্ছে। কুয়াশা গাছের ফাঁক গলে নেমে গেছে ফসলের মাঠে। দূরের রান্নাঘরগুলো থেকে উগরে উঠছে সাদাটে ধোঁয়া। মাখনের মতো শীত লেপটে আছে ইলুতমিস লজে। আস্তাবলের দরজায় দাঁড়িয়ে পিউমিস দেখছে এইসব।

এখন, পুরো বাড়িটাকে গিলে নিয়েছে পোড়া মাংস আর মদের গন্ধ। ঘ্রাণেন্দ্রিয় যদি মেয়ে মানুষ আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারত তবে অবশ্য তাও যোগ হতো। কেননা পিউমিসের ভাই সেরিমিস, রাইমিস, কিছু স্থায়ী কর্মচারী এমনকি তাদের ছোট বোনের স্বামীও শীতটা ভাড়াটে মেয়েদের নিয়ে কাটায়। তারা করবেইটা বা কী? গ্রামে গ্রামে টিভি প্রজেক্টর একটা, পার্ক একটা, স্কুল কলেজও একটা করে। সব আইনের ফিতেয় বাঁধা, শুধু নারী-পুরুষের যৌনতার কোনো আইন নেই। যে যেভাবে যার সাথে যে কোনো সময় ঘনিষ্ঠ হতে পারে তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে দুজনকে অবশ্যই বিবাহিত হতে হয়।

হাতমোজা পরার পরও পিউমিসের হাতের আঙুলগুলো কনকন করছে কিন্তু একেবারে হাল্কা কাপড়ে আস্তাবলে ঢুকেছে শেরপা। রঙচটা একটা ফতুয়া, একটা জিনসের প্যান্ট, ব্যাস। শেরপার হাতে একগাদা ছালা। পিউমিস বলল, সবগুলোর উপর দিয়ে দাও। ধূপ কোথায়? মশা কামড়াচ্ছে তো এদের।

শেরপা জিভ বের করে মাথা নাড়ল। পাজামার পকেটে রাখা বোতলে হাত রেখে দাঁত বের করে বোঝাল এখনো তার মদ্য পান করা শেষ হয়নি, আর কিছুটা সময় সে চায়।

পিউমিস কালো ঘোড়াটার শরীরে হাত বুলাল। নাহ! শেরপার যত্নের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তার বাবা মরে গেছে কিছুদিন হয়। ছোটখাট এই জমিদারিতে একটা ঝাঁকুনি যাচ্ছে। নিয়ম ভেঙেছিল বলে সেরিমিস আর রাইমিসকে সরকারি লোকজন ধরে নিয়ে গিয়েছিল, সে অনেক আগেই। আর ছেলে পুলে হবে না ওদের। তখন থেকেই কোনো কাজে গরজ নেই, খাজনার অংশ পেয়ে গেলে তাদের আর ঘরের বাইরে দেখা যায় না। ঘরের ভেতর দুই ভাই যতটা উদ্ভট আর অস্থির জীবন যাপন করে পিউমিস ততটাই সুস্থির হয়ে চলে। তবে আজকের কথা আলাদা। বছরে এই দিনটাতে সে সকল ছদ্মবেশ খুলে রাখে। পরিবারের সবার এইদিনে মনে পড়ে যায়, পিউমিস আসলে দাঁতে দাঁত চেপে নিয়ম মেনে যায় বছরে একবার শহরে যেতে পারবে বলে।

ওভারকোটটায় হাত বোলাল পিউমিস। বগল উঠিয়ে শুঁকে দেখল সুগন্ধিটা বহুদিন ট্রাংকে পড়ে থাকায় ভ্যাপসা গন্ধটা আড়াল করতে পেরেছে কিনা। লাইসেন্স আর গগলসটা পকেটে অনুভব করে বলল, শেরপা, লুইরের লাইসেন্স কার্ডটা দাও।

শেরপা বোতলটা মুখ দিয়ে ধরে রেখে একটা বাক্স থেকে প্লাস্টিকে মোড়া কার্ডটা নিয়ে এসে লুইরের পিঠে পানির থলের সাথে বেঁধে দিল। পিউমিস আকাশের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। চাঁদ নেই, তারার আলোও সেভাবে উসকে উঠছে না। কুয়াশার পরত মেঘের মতো সেঁটে আছে। ইলুতমিস লজের বারান্দায়-জানালায় কাউকেই দেখা যাচ্ছে না এখন। পতিত বাড়ির মতো ভূতুড়ে আবহ। শুধু রাইমিসের ঘর থেকে নাকি সুরে গান ভেসে আসছে—
কোথায় ঘুরে গা করেছো কালো?
কেন তোমায় দেখছি না আজ ভালো?
অন্ধকারে মিশলে কিছু আলো
দুঃখগুলো তবেই লাগে ভালো।
গাঁজা খেয়ে কোথায় গেলে চাঁদ?
এইদিকে রাত পেতে আছে ফাঁদ।।

শেরপা এই গান শুনেই না কি মদের নেশায় বিশ্রী সুরে গোঙাতে শুরু করেছে পিউমিস বুঝতে পারল না। লুইরের খুঁড়ের শব্দ এখন একটু একটু করে সব শব্দ গ্রাস করে নিল। বাইরে বের হতে পেয়ে লুইর গর্বিত ভঙ্গিতে তার লম্বা দুই ডানা মেলে ধরল। খুঁড়ে একটু আকটু তাল তুলেই ডানা ঝাপটে দিল উড়াল। পিউমিস গগলসটা পরে শব্দ করে হেসে ফেলল। শীতের কারণে প্রথমে কুঁকড়ে গেলেও বারালি নদীর তীরে কুচি কুচি আলো চোখে পড়তেই লুইরের গলার চেইনটা ধরে একটু পাশ ফেরাল, তারপর পেটের দিকে হাল্কা চাপড় দিল সে।

লুইর নামতে শুরু করেছে। নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দে কানে তালার লাগার যোগাড়। নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছে পিউমিস, এই তো, আর কিছুক্ষণ। এরপরই শহরে রওয়ানা দেওয়া যাবে। কত দিন দেখা হয়নি! হুজ্জতি ব্যবস্থাপত্রগুলো! গাদা গাদা রোবট, ট্রান্স এনিমেল হিউম্যান, আলোয় ধোওয়া রাস্তা, আকাশের সরাইখানা আর... ভেনাস।

সাবদি গ্রাম
মুমূর্ষু রোগীর মতো দেখাচ্ছে পিউমিসকে। চোখ বোজা, মুখ বাঁকানো, মদ ছলকে পড়ে যাচ্ছে হাতের পেয়ালা থেকে, শেষ কথাটা বলতে চেয়েও যেন সে বলতে পারছে না। ত্রিশ-চল্লিশজন চাষী গোল হয়ে ঘিরে আছে তাকে। সবচেয়ে বুড়ো একজন এসে পিউমিসের মুখ তুলে চোখের নিচের চামড়া টেনে ধরল, আহ... কিছু না। একটু ঝাঁঝ লেগেছে। সরষে ফুলের মদ তো।

বুড়ো চাষীর শরীর থেকে পোকায় কাটা পুরনো কাপড়ের গন্ধে বেশ বমিভাব হলো পিউমিসের কিন্তু তাকে সরিয়ে কালো টুপি পরা যুবক একটা চাষী তার সামনে এসে বলল, বারালি নদীর তীরে শীত এবার সৈন্য সামন্ত নিয়ে আক্রমণ করেছে দেখেছেন ছোটবাবু। এই মদ না হলে চলবে কিভাবে? আমাদের কপালে তো আর অত মাংস অত ভারী কাপড় নেই।

পিউমিসের খারাপ লাগা ছুটে গেল। মাথা ঝাঁকি দিয়ে এক চোখ বন্ধ করে সে চাষীটার দিকে তাকাল। শুরুতেই অভাবের কথা বলছে এরা, তাহলে কি খাজনা দিতে চাচ্ছে না? খাজনা ওঠানোর চেয়ে বড় কথা শহরে তাকে আজ যেতেই হবে। শরীরের প্রতিটা কোণা ঝেড়ে পুছে তৈরি হয়ে বের হয়েছে। চাষীরা তার বাবা মরে যাওয়ার সুযোগটা নিতে চাইছে? নাকি তার একা আসাতে এই হাল? কিন্তু দু ভাইকে এনেই বা কী লাভ হতো। এতক্ষণে মেয়েদের সাথে কোনো এক ঘরে চলে যেত মদ খেতে। পিউমিসের হঠাত্ খুব রাগ হলো। বাবার অনুকরণ করে সে ভারী কণ্ঠে বলল, বিদ্রোহ করছো না আশা করি।

চাষীরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়িই করল। কলেজ শেষ করেনি পিউমিস তবে যেটুকু জ্ঞান আছে তা এক করে সে একটা তিক্ত বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। সরষের ফুলের মদেই আবার চুমুক দিয়ে বলল, জমিগুলো আমাদের। এই জমি কেনার জন্য আমার পূর্বপুরুষদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ভাগ্য নয় তাদের কষ্টের ফসল এই জমিগুলো। সবাই দেখতে পাও জমিগুলোতে সর্বক্ষণ ড্রোন ঘুরে বেড়ায়। ফলন কী পরিমাণ হয় তা সরকার হিসেব রাখে এবং সেই হিসাবেই খাজনার হার ঠিক করে দেয়। যাতে তোমরা যেমন আছো তেমনই থাকো। এর চেয়ে ভালোও না খারাপ ও না। তোমরা কি বুঝতে পারছো পরিস্থিতি স্থির রাখাই সরকারের উদ্দেশ্য। তোমরা নিশ্চয়ই নিজের অবস্থা আরো ভালো করার কথা ভাবছো।

পিউমিস থামতেই চাষীরা বিড়বিড় করে একে অপরের সাথে কথা বলতে লাগল। পিউমিস আগুনের কুণ্ডুলীর কাছে হেঁটে গিয়ে আবার বলল, আমাদের অধীন তিনটি গ্রাম থেকে প্রতি বছর তিনজন করে ইলুতমিস লজের আওতায় থাকতে পারে, ভালো সুবিধা পায়। এমনকি বড় হয়ে তাদের থেকেও কেউ কেউ শহরে থাকার অনুমতিও পেয়ে গেছে। এভাবেই সরকার উন্নতির একটা অতিধীর প্রক্রিয়া তৈরি করেছে।

দুটো মেয়ে এবার চাষীদের জটলা ফাঁক করে দাঁড়াল। এই ধরনের মেয়েদের এখানে বলে পর্না। এই শীতেও তারা নাভি বের করে শার্টের বোতাম খুলে রেখেছে। অন্তর্বাসের বালাই নেই। স্তন দেখা যায় তো যায় না এমন অবস্থা। নিচে আবার ধূতির মতো মোড়ানো পেটিকোট। মাথায় ওলের টুপি। ইলুতমিস লজে এরা সহজলভ্য। টিকতে না পারলেই এদের পথ মাড়ায় পিউমিস। মিছিমিছি এদের দেখতেও তেমন ভালো লাগে না তার কিন্তু আজ এত লোকের মাঝে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না কেন? ভীষণভাবে জেগে উঠেও পিউমিসের মনে হচ্ছে এর কারণ শুধু বীর্যের তাড়না নয় আসলে একটা ধাঁধা তৈরির মতো বৈসাদৃশ্য তৈরি করে রেখেছে এরা নিজেদের সাজ সজ্জায়। সে নিশ্চিত মেয়েগুলো সুক্ষ্ণ কৌশল খাটাচ্ছে। জোর করে সেখান থেকে চোখ সরিয়ে সে বলল, এখন খাজনা না দিলে সরকার জানতে পারবেই এবং তা তোমাদের জন্য ভালো হবে না।

পর্না দুজন পিউমিসের কাছে এসে বসেছে। একজন পায়ের ধূতি আরো কিছুটা উপরে উঠিয়েছে। হাঁটুর উপর ইচ্ছে করেই ঝাপসা একটা নকশা এঁকেছে মেয়েটা যাতে যে কারো কাছ থেকে স্পষ্ট করে দেখতে ইচ্ছে করবে আর একজন নিজের খোলা শার্টের বোতাম এভাবে ধরে আছে যেন এখনি পুরোটা খুলে ফেলবে কিন্তু খুলছে না। মেয়েগুলি আসলে তাকে নিজেদের ঘরে নিতে চাইছে। এদিকে রাত বাড়ছে। চাষীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। পিউমিস আশা ও নিরাশার মাঝে দুলতে না চেয়ে সরিষের মদে বার কয়েক চুমুক দিয়ে চেহারা বিকৃত করল। তারপর শেয়ালের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার গান, আগুনের কুণ্ডুলীতে পুড়তে থাকা কাঠের পটপট ককানি শুনে শুনে ঝিমাতে লাগল। কতটা সময় চলে গেছে সে বুঝতে পারল না। ঝনঝন শব্দে ক্রেডিট জমা হতে শুনে বড় করে তাকাল পিউমিস। দেখল পর্না দুজনও চলে গেছে।

ভীষণভাবেই জেগে উঠেছে পিউমিস। লুইরকে খর বিচালি আর পানি খাইয়ে নিচ্ছে। চাষীগুলোর নীরবতায় তাদের হতাশা টের পাওয়া যায়। তাতে তার কী বা আসে যায়! সে কোন প্রাগৈতিহাসিক চরিত্র তো নয় যে এদের নেতা হয়ে উঠে বেহুদা প্রক্রিয়াগুলো নষ্ট করবে। মহান নিহিয়ান বলেছেন, নেতা হবার ইচ্ছার মধ্যে অন্যের উপকার কম নিজের জয়ধ্বনির শোনার লোভ বেশি কাজ করে। সে পিউমিস তাকে সব নিয়ম মানতে হবে, ইলুতমিস লজকে চালিয়ে নিতে হবে, বছরে অন্তত একবার শহরে যেতে হবে, যেখানে আছে অদ্ভুত সব ব্যবস্থাপত্র, আছে ভেনাস।

নগরlদ্বার
পেটমোটা সি হর্সের মতো ড্রোনটা লুইরের দৃষ্টি সীমানায় ঘুরে ঘুরে তাকে বিভ্রান্ত করছে। সামনে এগুতে দিচ্ছে না। লুইর বিরক্ত হয়ে শরীর বাঁকিয়ে ঝাঁকি দিচ্ছে। চিঁহি করে ডেকে উঠছে। পিউমিস ঘুমিয়ে পড়েছিল। জেগে অবাক হয়ে দেখল সামনেই বিশাল নগরদ্বার আর তার পেছনে আলোয় ধোওয়া শহর। চেইন টেনে লুইরের পেট চাপড় দিল সে। লুইর রাগী ষাঁড়ের মতো সোজা নিচের দিকে নামতে লাগল কিন্তু তার চেয়েও গোয়ার ড্রোনটা তাদের নামা পর্যন্ত পিছু ছাড়ল না, লুইরের পা মাটিতে নামার পরই আবার উপরের দিকে উঠে চলে গেল।

শহরে রাত দিন নেই, সারাদিনই যাত্রী আসা যাওয়া করে। পিউমিসের মতো আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের সামনে। কয়েকজন খাকি পোশাকের লোক দাঁড়িয়ে হাতের তালু থেকে চানা খাচ্ছে। সামনেই একজন ভদ্রলোকের হাতে একটা কালো মাদী ঘোড়া। পিউমিস লুইরের দিকে খেয়াল করল। কোনো অভদ্রতা না করে বসে।

এত সুন্দর সাদা ঘোড়া, পুলিশটা লুইরকে ছুঁয়ে ছেনে দেখল। লুইর এতে বিরক্ত হয়ে তার খুঁড় দিয়ে রাস্তায় শব্দ করে পিছিয়ে গেল।

ইলুতমিস এরিয়া থেকে এসেছেন? আচ্ছা আপনার আর ঘোড়ার কার্ড দুটা দেখান।

পিউমিস কার্ডগুলোর পাশাপাশি ওভারকোটের ভেতরের পকেট থেকে ক্রেডিটের থলেটাও বের করে দেখাল। তার খুব প্রস্রাব চেপেছে। পুলিশটা পিউমিসের তাড়াহুড়ো বুঝে সন্দেহের চোখে তাকাল। হেসে বলল, ক্রেডিট দেখতে চাইনি এখনো। ঠিক কী কারণে আসেন এখানে। অনেক খরচ তো তাই না?
বছরে একবার আসার অনুমতি আছে।
এটাও তো উত্তর হলো না।

আবার সন্দেহজনক ভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে পুলিশটা বলল, আপনি আসুন আমার সাথে।
কেন?

আরো দুজন পুলিশ পিউমিসকে ঘিরে দাঁড়াল। লুইরের চেইনটা পিউমিসের হাত থেকে একজন পুলিশ নিয়ে নিল।

বেশ বড় একটা ওয়াশরুমে পিউমিসকে জামা কাপড় খোলার জন্য আনা হয়েছে। উত্তেজনায় জামা কাপড় একটানে খুলে ফেলে সামনের আয়নায় নিজেকে দেখতে পেল। ইলুতমিস লজে প্রচুর আয়না তবে অর্ধেক শরীর দেখা যাওয়ার মতো লম্বা। মন খারাপ হয়ে গেল তার, এর আগে প্রতিবার সহজেই শহরের ভেতর চলে গেছে সে আর এবার শেষ পর্যন্ত এভাবে একজন পুলিশের সামনে যেতে হচ্ছে। হাত মুখ ধুয়েও আয়নার সামনে সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। একটা ভয়ের স্রোত তার মেরুদণ্ড বেয়ে উপরে উঠল। ইচ্ছে করেই সময় নিয়ে মূত্রত্যাগ করল সে, নিজেকে বাধ্য করল খেয়াল করতে টালিটা শুধু লালই না ইচ্ছে করেই এমনভাবে রঙ করা হয়েছে যে দেখে মনে হবে কিছুক্ষণ আগেই কারো রক্তে জায়গাটা ভেসে গেছে। দরজায় টক টক শব্দ হতেই পিউমিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বের হলো। টেবিলের অপর পাশে কম বয়সী একটা পুলিশ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

এত ক্রেডিট খরচ করে আপনি ঘুরতে আসেন কেন?
এমনি।
সারা বছর চলেন কিভাবে? বৌ বাচ্চা?

কথাটা জিজ্ঞেস করতে করতেই পুলিশটা পিউমিসের লাইসেন্সের নাম্বার ঘেঁটে কম্পিউটার থেকে তথ্য পেয়ে গেল। বিবাহিত না দেখতে পেয়ে “ও” শব্দ করে নড়েচড়ে বসল তারপর বলল, এমনিতে কী করেন?
কিছু করি না। সারাদিন বারান্দায় বসে বসে সূর্যের উঠানামা দেখি আর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি।

পুলিশটা হেসে বলল, আমার বাবা পুলিশ ছিল তার বাবাও পুলিশ ছিল। আমিও সারাদিন বসে বসে আপনাদের মতো মানুষদের পরীক্ষা করি, প্রশ্ন করি।

মাথার উপর থেকে পিউমিসের শরীরের ওপর সবুজ আলো পড়েছে। পুলিশটা থেকে থেকে তার দিকে আর কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে, ডানে ঘুরেন, এবার বায়ে, সোজা হন। পোশাক ছাড়া একটা মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে যে পরিমাণ স্থিরতা দেখাতে হবে তা দেখানোর জন্য পিউমিস শহরের কথা ভাবতে লাগল। চমৎকার পার্ক আছে অতসী লেনে, স্কাই বোটগুলো কি অদ্ভুত রকম দোল খায়, দেখার মতো ডলফিনের শো হয় উত্তর সিটিতে, কিছু মানুষ দেখা যায় যাদের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকেও গবেষণা করেও বোঝা যায় না কোন লিঙ্গ, আবেগ যোগ করা রোবটগুলো কী মজার! ভেনাসের সাথে আজই দেখা হবে তো! ভেনাসের সুন্দর মুখ, আধ খোলা ঠোঁট, এলোমেলো চুল, ভেজা হাতের তালু, নাকের ফুলের বড় সাদা পাথর!

কিছুক্ষণ পর কম বয়সী পুলিশটা বলল, আপনার ঘোড়াকেও পরীক্ষা করা হয়েছে। সব ঠিক আছে। পরশু ঠিক এসময় আপনি বহির্গমন ধরে বের হবেন। নির্ধারিত হোটেলগুলোতেই কেবল থাকতে পারবেন। ভ্রমণ আনন্দময় হোক।

কাপড় পরতে পরতে পিউমিসের কণ্ঠ কেঁপে উঠল, ধন্যবাদ।

ভেনাস ও আকাশের সরাইখানা
সরাইখানাটা আকাশে, টানা ঝকঝকে, সাদা একটা দালান। প্রতিবছর শহরে এলে রাতটা এখানেই কাটায় পিউমিস। আজ সরাইখানার সামনে লম্বা লাইন। পিউমিসের পেছনে একটা টিকটিকি মানব স্ট্র থেকে সুড়ুত সুড়ুত শব্দ করে জুস খাচ্ছে। তার সামনের এক বয়স্ক ভদ্রলোক হাতঘড়ি থেকে কাউকে হলোগ্রাফে দৃশ্যমান করতে চেষ্টা করছে। সামনে-পিছে প্রায় ত্রিশজন অপেক্ষমাণ। এমনিতেই শীত তার ওপর আকাশে আলগা সাজগোজ নেই। সবার দৃষ্টি এখন সরাইখানার সদর দরজার দিকে। কতক্ষণে ভেতরে ঢুকবে। একজন গার্ড লুইরকে নিয়ে পিউমিসের হাতে একটা টোকেন ধরিয়ে দিল।

উপরের পেটে যেন আগুন লেগে গেছে পিউমিসের। বলি বলি করে সে টিকটিকি মানবকে বলে ফেলল, আচ্ছা আমার খুব খিদে পেয়েছে।

টিকটিকি মানব মাথা এক চুল না নাড়িয়ে চোখের ইশারায় জুসের কাউন্টারটা দেখাল।
না না জুস না। ফুড কোর্টের জন্য কি এটাই লাইন?

হতাশ করা মেয়েলী কণ্ঠে লোকটা বলল, এখন আর লাইন ধরা লাগে না। সরাসরি বেসমেন্টে চলে যান।

কোনো রকম দৌড়ে পিউমিস একটা টেবিলে এসে বসল। রোবট মেয়েটা স্ট্রাইপড বিকিনি পরে হাতে একটা থালায় বেশ কিছু মদের গ্লাস নিয়ে হাঁটছিল, পিউমিসকে বসতে দেখেই তার শার্টের কলারে স্পর্শ করে বলল, কী লাগবে শুনি।

পিউমিস হেসে বলল, আলু, রুটি, মাংস, ভারী বিয়ার আর মোটা চুরুট সব লাগবে।

রোবট মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে বলল, ও গ্রাম থেকে এসেছো বুঝি? তাইতো বলি! এখানে এখন আর কার্ভ চলে না বাপু। নদর শরীর এখন আবার কেউ পছন্দ করে না। আমাকে দেখো, এক ফোটা ফাও নেই, পুরোটাই সলিড। রোবটটা চোখ টিপে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শরীরের যে সব জায়গাগুলো যতটা দেখাল পিউমিস সেসব জায়গাগুলো ততটাই আগ্রহ নিয়ে দেখল। একবছর পর পর আসে বলে রোবট বিজ্ঞানের উন্নতিটা তার বেশ চোখে লাগে।

তার ডান দিকের টেবিলে দুজন লোক কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে একজন আরেকজনকে বলল, গ্রামের মানুষ ইদানীং আসেই না।
আরে আসবে কিভাবে ক্রেডিটের যে চাপ দিচ্ছে বেচারাদের।

প্রথম জন আবার বলল, কিচ্ছু করার নেই এভাবেই একটা স্পষ্ট প্রভেদ তৈরি করে সরকার মানুষের সংখ্যা আর প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, প্রকৃতিকে রক্ষা করে।
কিন্তু ব্যাপারটা বেশ বাড়াবাড়ি। এরা কি মানুষ না?
যে কোনো নিয়ন্ত্রণই বাড়াবাড়ি। বেশিরভাগ মানুষ স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতা বোঝে। কয়েক হাজার বছর আগে আমরা আমাদের বিখ্যাত স্বাধীনতা নিয়ে গ্রহটার তেরোটা বাজিয়ে ফেলেছিলাম না? অথচ মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর সুপার অর্গানিজম হিসাবে কাজ করার কথা।

পিউমিস তাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে দেখে লোক দুটো তাদের একইভাবে ঠোঁট প্রশস্ত করল তারপর তাদের কথোপকথন ফিসফাস পর্যায়ে নিয়ে গেল।

রোবট মেয়েটা খাবার নিয়ে এলে পিউমিস তাকে বলল, আচ্ছা একজনকে খবর পাঠাব। আমার তো সেরকম ওয়াচ নেই। আগেরবার তো কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠিয়েছিলাম। এবার...
তার কি সরাইখানায় একটা নিজস্ব কামরা আছে?
হ্যাঁ।
নাম বলো। এখুনি যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি।
ভেনাস, শব্দকার, ০০৯ভ।
ও... ২৩০৯ নাম্বার কামরার ভেনাস, রোবটটা মুখ বাঁকাল।

পিউমিস রোবটটার কৃত্রিম হিংসা দেখে খুব হাসল। খাবার শেষ হবার পর তার চারপাশ দেখার কথা মনে পড়ল। মদের কাউন্টারে এখন সবচেয়ে বেশি ভিড়। অদ্ভুত ভাষার গান হচ্ছে। তিন চারজন করে মানুষ আর ট্রান্স এনিমেল এক একটা টেবিলে বসে গল্প করছে। এবার নতুন যা দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে ট্রান্স এনিমেলদের জুটি। যেমন, একজন বেড়াল মানব আর একজন বেড়াল মানবীকে চুমু খাচ্ছে। আগেরবারের চেয়ে এদের সংখ্যাও এবার বেশি। সবকিছু একটু বেশিই অদ্ভুত লাগছে পিউমিসের তার ওপর হলরুমটায় জানালা নেই। মেঘ বা চাঁদ কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আকাশের সরাইখানা বলে কোনো প্রমাণই এখানে নেই।

চুরুটটা ধরাতেই পিউমিসের সামনে ভেনাস এসে বসল। পেটে চালান করা খাবারগুলো যেন মাথায় গিয়ে ঠেকল, প্রচণ্ড বিষম খেল পিউমিস। এত দ্রুত আজ ভেনাসকে আশা করেনি সে। একটা আশঙ্কা বা অশুভ কামনাও ছিল তার, হয়তো ভেনাস আজ এখানে আসবেই না, হয়তো আগামীকাল অল্প সময়ের জন্যই দেখা হবে কিংবা হয়তো তাকে দেখে চিনতেই চাইবে না ভেনাস।

পিউমিস! তোমাকে দেখে ভালো লাগছে। আচ্ছা আজই এলে?

ভেনাস পিউমিসকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা টপকা চুমু খেল। ভেনাসের চুলগুলো এবার আগের চেয়ে লম্বা মনে হচ্ছে পিউমিসের। গায়ের রঙটাও আরো খুলেছে। উগ্র একটা সুগন্ধি মাখা গায়ে সাদা শাড়ি চাপানো ভেনাসকে দেখে যে কারো গন্ধরাজ ফুলের কথা মনে পড়বে এটা ঠিক। তবে এখানে দৃষ্টি আকর্ষণের কোনো সূক্ষ্ণ কৌশল নেই, পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবকিছুই অতি পরিচিত ও মানানসই তারপরও চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।

দুদিন থাকবে তো তাই না?
...
এত শুকিয়ে গেছো কেন?
...
পাইন নগরে যাবে আমার সাথে? এক দিনের জন্য? ওহ পারমিশন লাগবে?...

ভেনাস উত্তরের অপেক্ষা না করে প্রশ্ন পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে। পিউমিসের সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পিউমিসের নিজের কোনো ইচ্ছে নেই, যে কারো যে কোনো সিদ্ধান্তই সে মেনে নেয়। ভেনাস সময় নষ্ট না করে তার কন্টাক ওয়াচে ব্যস্ত হয়ে গেল। পিউমিস ভাবল, চোখ ফেরানো যাচ্ছে না তাতে কী? চোখ ফেরাতেই বা হবে কেন? সে চুরুটের ধোঁয়াগুলো সরিয়ে সরিয়ে দেখতে লাগল, যতটা দেখা যায়। পলক ফেলার মূহূর্তটাও নষ্ট করতে না চাওয়ায় তার চোখ মিছিমিছি কিছু পানি এনে জমা করল এবং তা মুছতে তার কিছু মুহূর্ত নষ্ট হলো। নিজের চোখের এমন মাতব্বরিতে পিউমিস খুবই বিরক্ত হলো।

ক্রেডিট
ভেনাসের কামরায় বসে আছে তারা। জানালাটা অল্প খোলা। ভেনাস আর মাইলান মিলে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটা ঘাঁটছে। মাইলান বলল, তোমার কাছে আছে কত ক্রেডিট?
তিন হাজার ছিল। কিন্তু আসা যাওয়া বাবদ কাটবে এক হাজার আর খাওয়া থাকা মিলে পাঁচশ। মানে বাকি থাকবে পনেরশো। এর মধ্যে ফেরার পথে থাকতে হবে এক হাজার।

ভেনাস ভ্রু কুঁচকে বলল, সকাল থেকে তো কোনো হোটেলে আর থাকতে হবে না। খাওয়ার খরচ পাইন বনের ভিজিটের ভেতরই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারপরও লাগবে আরো এক হাজার। দুই হাজার ক্রেডিট ছাড়া যেতে পারবে না।

মাইলান জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করল। পিউমিস শুনেও শুনল না। যেতে পারলে, যাবে না পারলে নেই। দুদিন সব ঘুরে দেখলে আর ভেনাসের সাথে বসে থাকলেই তার জন্য যথেষ্ট।
ভেনাস আবার অস্থির হয়ে মাইলানকে বলল, কী করা যায়, ভোরের মধ্যে লাগবে ক্রেডিটটা। পিউমিসের এখানে থাকার মেয়াদ মাত্র দুদিন।

কিছুক্ষণ অবোধ্য ভাষায় ফিসফিস করল দুজন। মাইলান ভেনাসের ভালো বন্ধু। প্রায় প্রতিবারই তার সাথে দেখা হয়েছে পিউমিসের। হাতব্যাগে সবসময় একটা গিনিপিগ থাকে যা উঁকি দিয়ে বারবার ভেতরে চলে যায়। আজও নিশ্চয়ই তাই করছে। পিউমিস গিনিপিগটাকে আজ খেয়াল করছে না। তার দৃষ্টি ভেনাসের দিকে। বেশ কিছু স্থিরচিত্র মাথায় পুরে নেয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের মতো কাজ বলে তার মনে হচ্ছে। এবার আর চোখে পানি জমতে দিচ্ছে না পিউমিস। শাটারের মতো পলক পড়ছে থেকে থেকে।

গতবার অবশ্য ভেনাসকে এভাবে দেখতে পারেনি পিউমিস। সেবার তাকে দেখেও একজন সুদর্শন পুরুষের সাথেই সময় কাটিয়েছিল ভেনাস। পিউমিস অবশ্য তাতে মোটেও অবাক বা হতাশ হয়নি। আবার, গতবারের আগেরবার যখন দুদিন সাথে ছিল, কথায় কথায় গালে মুখ ঘষে দিয়েছিল, ঝাঁকুনি দিয়ে আলিঙ্গন করেছিল সেবারও স্বপ্নরাজ্যে ভেসে যায় নি। ভেনাস যে তার ধারণা আর চাওয়া পাওয়ার বাইরে তা প্রথম পরিচয়েই তার বুঝে সারা।

ভেনাস হঠাত্ উৎফুল্ল হয়ে উঠল। বলল, পিউমিস তিন তলায় যাও তো। ওখানে দিরিস লাইন আছে।
আচ্ছা।
তুমি তোমার সব ক্রেডিট বের করে জুয়া খেলবে।
আচ্ছা।
দিরিস লাইন হেরে গিয়ে তোমাকে একটা ঘুষি দিবে। তুমি কন্ট্রোল প্যানেলে অভিযোগ করবে। খেলার ক্রেডিটসহ বাড়তি কিছু ক্রেডিট তুমি পেয়ে যাবে। ভালো অভিনয় করবে ঠিক আছে, যাতে গার্ডরা নিশ্চিত হয় তুমি খেলেই ক্রেডিটটা পাচ্ছো।
আচ্ছা।

মাইলানের মুখে রা নেই। সে পিউমিসের চেহারা মাপছে। ‘এতগুলো ক্রেডিট আমি কেন উনার কাছ থেকে নিতে যাব, কিভাবেই বা ফিরিয়ে দিব’—হয়তো এইরকম আক্ষেপ জাতীয় কিছু শুনতে চাইছে সে। ভেনাস ঠিকই পাইন বনে যাওয়ার নিয়ম-কানুন দেখতে শুরু করেছে কারণ সে জানে পিউমিসের কাজ আপত্তি করা না, সমর্থন করা।

পাইনের বন
পাইন গাছগুলোকে প্রায় চেনাই যাচ্ছে না। সাদা চুলো বুড়োদের নকল করে সার সার দাঁড়িয়ে আছে। আশ-পাশের মাঠ, গেস্ট হাউজের ছাদগুলো সবই পুরোপুরি সাদা। ছোট একটা জেট প্লেন থেকে নেমে পিউমিস অবিরত মাথা ঘুরাতে লাগল। প্রচণ্ড দুঃখজনক ও প্রচণ্ড আনন্দের ঘটনা দুই অবাস্তব চেহারা নিয়ে নেয় তার ওপর এমন একটা জায়গা! পিউমিস খেই হারিয়ে ফেলে কিছুক্ষণ বরফ ছাটা পিচের রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। তারপর আবার দৌড়ে কাউন্টারে ভেনাসের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দ্রুত কামরায় চলে গেল। উত্তেজনায় বারবার প্রস্রাবের চাপ হচ্ছে তার।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল পিউমিস। কামরার ভেতরটাও সাদা, আরামদায়ক উষ্ণতার ব্যবস্থা করা আছে, আছে বিশাল বড় জানালা, একটা ফায়ার প্লেস, টেবিলে বড় বড় ক্যান্ডল ল্যাম্প। একপাশে বিয়ারের ক্যান, হুইস্কি, চুরুট, সিগারেট, কি নেই! বিছানাকে পুকুর ভেবে নিয়ে লাফ দিয়ে পিউমিস বুঝতে পারল অস্বাভাবিক আচরণ করছে সে। ওমনি ভেনাস কামরায় ঢুকে ওভারকোট খুলতে খুলতে ওয়াশরুমে চলে গেল কিন্তু বের হলো যেন অন্য কেউ। হাঁটু পর্যন্ত পাতলা মিডি পরে ভেনাস সিগারেট আর লাইটার খুঁজে নিল তারপর শিশুদের মতো পা মুড়ে বিছানায় বসল। তারপর কয়েক টান দিয়ে বলল, তোমাদের ওখানে পাইন গাছ নেই?
আছে এমন একসাথে না।
আচ্ছা তুমি তো এর আগে তুষারপাত দেখোনি তাই না?

পিউমিস হেসে বলল, না।

ভেনাসের হঠাত্ মুখ গম্ভীর করে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, তিবারকে ছেড়ে দিয়েছি, বলেছি তোমাকে?
না। মেয়েটা?
আছে এখন বাবার সাথে। ওকে মনে পড়ে।
আচ্ছা।

পিউমিস আবিষ্কার করল, সে ভেনাসের কাছে চলে এসে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু কই? কোন ধুপধাপ নেই, ভেতরটা বরফের মতো জমে আছে। পিউমিসের হঠাত্ এভাবে জড়িয়ে ধরাতে ভেনাস হেসে ফেলল। পিউমিসের দিকে ঘুরে বলল, আচ্ছা, প্রেমিকা আছে তো তোমার?
প্রেমিকা নেই, তবে মাঝে মাঝে পর্নাদের সাথে শুতে হয়।
তা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে নিয়ে এসেছি বলে আমাকে নিয়ে কিন্তু আবার কিছু ভেবো বসো না।
আচ্ছা।
দেখো, তুমি গ্রামের, আমি শহরের।
জানি। (ভেনাসের চুলে মুখ ডুবিয়ে বলল পিউমিস)
আমার অনেক প্রেমিক আছে। (আবার পিউমিসের মুখটা সামনে এনে ধরে বলল ভেনাস)
জানি। (ভেনাসের গলার চেইনের পাথরগুলোতে চুমু খেয়ে বলল পিউমিস)
বিয়ে টিয়ে আমি একদম পছন্দ করি না। (আবার পিউমিসের মুখ সামনে এনে বলল ভেনাস)
আমিও না। আমি তো বিয়ের জন্য কখনোই ক্রেডিটই জমাইনি। (সোজা হয়ে মাথা পিছনে নিয়ে বলল পিউমিস)
কেন?

উত্তর দিতে না চেয়ে এবার ভেনাসকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল পিউমিস। প্রবলভাবে জেগে উঠতে উঠতে খেয়াল করল কটকটে দিনের আলোয় ঘর-দোর ভেসে যাচ্ছে। সব কিছু স্পষ্ট, হাল্কা সবুজ অন্তর্বাস, একই রঙা মিডি, সবুজ কানের দুল, পাতলা একটা সোনার চেইন, তাতে শিশিরের মতো কিছু ছোট ছোট পাথর। নাহ কোনো কৌশল নেই, বৈসাদৃশ্য নেই কিন্তু চোখ ফেরানো যাচ্ছে না কেন। পিউমিস ব্যাপারটা বুঝতে চাইল। ভেনাসের ঠোঁটে ঠোঁট রেখেও চোখ বুজল না। এসময় চোখ বুজতেই হবে কেন?

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;