কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৩)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ : আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

জিনি লকারবি ১৯৭৩ সালে On Duty in Bangladesh: The Story The Newspapers Didn’t Publish, বইয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর অনন্য অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টান মিশনারি, চট্টগ্রামে সেবিকার দায়িত্ব-ব্রত নিয়ে এসেছিলেন আটলান্টিকের ওইপার, সুদূর আমেরিকা থেকে। মিশে গিয়েছিলেন এই দেশের মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত দুঃখ-বেদনা-আশার সাথে। তাদের সঙ্গে একজন বিদেশি হয়েও তিনি একইরকমভাবে চেয়েছিলেন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা।

তখন কী প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি সেখানে? প্রত্যক্ষ করেছিলেন, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বস্ব-ত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এক জাতিকে। বইটিতে এসেছে ভুখা-নাঙ্গা, প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার তবুও বাংলা ভাষাকে নিয়ে গর্ব করা ও লকারবির ভাষায়, “কবিস্বভাবের” মানুষগুলোর যাতনার অবসানকল্পে সূর্যের মতো জ্বলে ওঠা এক নেতার নেতৃত্বের কথা—তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন এমন অনেককিছু, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আরো গভীরভাবে জানতে-বুঝতে সাহায্য করে।

গত ১২ মে ২০২০ থেকে অনুবাদক, সমালোচক ও শিল্পসংগঠক আলম খোরশেদের অনুবাদে বইটির বাংলা অনুবাদ, “কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা” বার্তা২৪-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে। এবং ১৬ মে ২০২০ তারিখে সবশেষ দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হয়। বিদ্যমান লকডাউন পরিস্থিতি ও এরইমধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের বিশেষ আয়োজন-সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণের জন্য কিছুটা বিরতি নিয়ে ধারাবাহিকটির তৃতীয় কিস্তি আজ (৫ জুন ২০২০) প্রকাশিত হলো। এখন থেকে সপ্তাহে দুদিন, প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার অনূদিত বইটির নতুন কিস্তি প্রকাশ হবে। - বিভাগীয় সম্পাদক


যে-ঈশ্বর সবই দেখেন

[পূর্ব প্রকাশের পর] ১৯৭১-এর গোড়ার মাসগুলোতে আমাদের মিশনের কর্মীরা পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের চারটি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই, উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে আমরা একে অপরের অবস্থা বিষয়ে জানতে উন্মুখ হয়ে পড়ি। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে তিনজন বাচ্চা ও আমরা পাঁচজন বয়স্ক ব্যক্তি ছিলাম। আমাদের অবস্থান থেকে পঁয়ষট্টি মাইল দক্ষিণে মালুমঘাটের মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে ঊনিশজন বয়স্ক ও ছাব্বিশটি বাচ্চা ছিল। ধীরগতির দেশি নৌকায় আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় আটঘণ্টার দূরত্বে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তে, হেব্রনে আমাদের জঙ্গলবাড়িতে ছিল আরেকটি দম্পতি ও তাদের দুই বাচ্চা। অন্য দিকে, বরিশালের দুর্গম এক শহরে, যেখানে আমাদের প্রাচ্যভাষা ইন্সটিটিউটটি অবস্থিত ছিল, সাতটি বাচ্চা ও আটজন বয়স্ক ব্যক্তি ছিল। আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা ছিল এদের নিয়েই, কেননা তারাই আমাদের সবচেয়ে নবীন কর্মীদল। পরে, তারা যখন তাদের অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছিল, তখন আমাদের নতুন করে মনে হয়েছিল, ঈশ্বর সবচেয়ে প্রবীণ মিশনারিটির চেয়েও হাজার গুণে ভালো যত্ন নিতে পারেন তাঁর সেবকদের।

“আমরা সমস্যার প্রথম ইঙ্গিত পাই,” উত্তর মিশিগান থেকে আগত পয়লা মেয়াদের মিশনারি ড. জো ডিকুক বলেন, “যখন ফেব্রুয়ারি মাসে ডাক ধর্মঘট শুরু হয়। এতে বরিশালে যারা ছিল তারা কেবল বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্নই হয়ে গেল না, আমাদের মিশনপরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পথও গেল বন্ধ হয়ে।

আমরা আমাদের ভাষা শিক্ষকদেরও মধ্যে, বিশেষ করে যারা হিন্দু ছিলেন, তুমুল উৎকণ্ঠা লক্ষ করি। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে তাঁরা উত্তেজনা ও অস্থিরতার কারণে পড়াতেই পারছিলেন না আর।”

“যেহেতু দেশব্যাপী ডাকধর্মঘট সফল হয়ে গেল, আমাদের মনে হলো এরপর শুরু হবে পরিবহন ধর্মঘট। তাহলে তো আমরা বরিশালেই আটকা পড়ে যাব। মার্চের ৮ তারিখের মিশন ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ের জন্য আমরা ৫ তারিখে চিটাগাং যাওয়ার জাহাজের সিটের বুকিংও দিয়ে রেখেছিলাম।”

“তবে মার্চের ১ তারিখেই ইয়াহিয়া খান জাতীয় সংসদ অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেন এবং সারা দেশ জুড়ে ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয় তার ফলে। ক্ষমতাসীন সরকার শহরে ও বন্দরে নানারকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাঙালিরা দপ্তরের কাজ এবং স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে অস্বীকার করার মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানায়।”

“তাতে করে তখনকার মতো স্কুল কর্মকাণ্ডও শেষ হয়ে যায়! ৫ তারিখ সকালে জাহাজ আদৌ ছাড়বে না ভেবে, আমরা বরিশাল পরিত্যাগের অন্য উপায়ের খোঁজখবর নিতে শুরু করি। উত্তরমুখী সড়ক ধরে ঢাকা যাওয়া যায়, কিন্তু পথে চওড়া এক নদী পারাপারের ফেরি পড়বে, কিন্তু যেহেতু সবরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সেই ফেরি আদৌ ছাড়বে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যে-ট্রেন চলে সেগুলোও চলছে কিনা কে জানে? যে-কোনো অবস্থাতেই হোক ট্রেনস্টেশন পর্যন্ত যেতে হলেও তো আমাদেরকে নৌকা কিংবা স্টিমার ধরতে হবে। তবে এগুলো চালু থাকলেও, পনেরোজনের এত বড় দল ও মালপত্র নিয়ে, আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত একটি দেশের মহাসড়ক ধরে ঢাকার পথে যাত্রা করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হতো না। আমরা কোনো ব্যক্তিগত বাহনও পাচ্ছিলাম না, এমনকি দাঁড়টানা কোনো নৌকাও নয়, যেটা আমাদেরকে চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে পারে।”

“একটা জাহাজ অবশ্য বরিশাল থেকে ঢাকা যাচ্ছিল মাঝেমধ্যে, আটকেপড়া বিদেশিদের নিয়ে, কিন্তু ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কোনো উপায় জানা ছিল না আমাদের। আর সেই জাহাজ চড়ে বসা মানে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য সম্মত হওয়া, যেটা চাচ্ছিলাম না আমরা কেউই। দেশের বাইরে গেলে আমাদের অনেকেরই আবার ফেরত আসার ভিসা ছিল না। মার্চের ৫ তারিখে মাত্র আধাঘণ্টার নোটিশে ভাষাশিক্ষার জন্য আসা অন্য ছাত্ররাও সব চলে যায়। (আমরা অবশ্য জানতামই না যে তখন ঐ জাহাজটি ছেড়ে যাচ্ছিল, সেটা পরের দিনই কেবল জানতে পারি আমরা।”)

ড. ও মিসেস ডিকুকের একটা ধারণা হয়েছিল, তাঁদের সব জিনিসপত্র ৫৫ গ্যালনের ড্রামে ভরে, যেনবা তাদেরকে পৃথিবীর অপর প্রান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এমনভাবে মুখ আটকে দেবার সময় এসে গেছে। তাঁদের সেই ‘অনুভূতি’টা প্রায় দৈব বলে প্রমাণিত হয়েছিল। বিলস্‌রা একটা ভাষা কোর্স করতে এসেছিলেন; যারা দ্বিতীয় মেয়াদের মিশনারি, ফলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার অভিজ্ঞতায় প্রবীণ। তাঁরা কিভাবে বুঝবেন যে, তাঁদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে থাকা অন্যান্য সংকটগুলো থেকে এটা একেবারে আলাদা হবে? কিন্তু, মার্জরি বিল্স্, এক ধরনের ভেতরের তাগিদের বশে, তাঁর পড়ার সময় থেকে কয়েক ঘণ্টা চুরি করে, একটা কাজের কাজ করেন, যেটা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর অনেকদিনের। তিনি মিশনের শিশুদের, বন্ধুবান্ধব এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মূল্যবান ছবিগুলো ঝাড়াই বাছাই করে একটা অ্যালবামে সেঁটে, এক সপ্তাহের জন্য ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ে যাবার জন্য নেওয়া সুটকেসের একেবারে তলায় রেখে দেন!

তাঁর স্বামী, মেল বিল্স্ ও বব আডল্ফ্, আমাদের ল্যাব প্রযুক্তবিদ, মার্চের ৭ তারিখ থেকেই বন্দরে আঠার মতো লেগে থাকেন কোনো জাহাজ আসে কিনা তা দেখার জন্য। হঠাৎ একদিন তাঁরা দূর থেকে একটা হালকা হুইসেলের শব্দ শুনতে পান। তাঁরা তখন সাইকেলে যত জোরে সম্ভব প্যাডেল মেরে অ্যাপার্টমেন্টে এসে আমাদেরকে তক্ষুণি রওনা দিতে বলেন। তাঁরা ভক্সওয়াগন মিনিবাসে মানুষ ও মালপত্র ভরে মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যেই সবাইকে ডকে পৌঁছে দেন। জো ডিকুক আবারও ঘরে ফিরে গিয়ে গাড়িখানাকে গ্যারাজবন্দী করেন, তারপর একটা রিকশা ধরে তার চালককে বাড়তি পয়সার লোভ দেখিয়ে দুইমাইলের পথটুকু দ্রুত পাড়ি দিয়ে ঠিক সময়েই পৌঁছে যান বন্দরে।

ড. ডিকুক তার গল্প এখান থেকেই শুরু করেন।

“সোমবার সন্ধ্যায় আমরা চট্টগ্রাম পৌঁছাই নিরাপদেই। জিন গুর্‌গানস সারা সপ্তাহেই বরিশাল থেকে চাটগাঁয় আসা জাহাজের খোঁজ নিয়ে যাচ্ছিলেন—কিন্তু যেগুলোর আসার কথা সেগুলো কখনোই আসত না। ফলে আমাদের অনির্ধারিত জাহাজটা যখন এসে পৌঁছাল, তখন আমরাই বাড়ি গিয়ে তাঁকে গিয়ে ডেকে আনি। বন্দর থেকে শহরে যাওয়ার পথে তাঁর গাড়িতে বসে আমরা জানতে পারি, মার্চের ৬ তারিখ, যেদিন আমাদের আসার কথা ছিল, সেদিন সাংঘাতিক যুদ্ধ হয়েছে বন্দরে। তাহলে ঈশ্বরই কি জাহাজটি দেরি করিয়েছিলেন আমাদেরকে বাঁচানোর জন্য?”

“ঈশ্বর আমাদের জন্য আরো বিশেষ কিছু করেছিলেন—আমরা যেসব সম্পর্কে সবখানেই প্রচুর পড়ে থাকি এবং দেশে আমাদের বন্ধুরা সবসময় যে-প্রার্থনাগুলো করে যাচ্ছিলেন আমাদের জন্য। আমরা মালুমঘাটে আমাদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নিরাপদেই ছিলাম। কিন্তু বরিশালে, সেই তিনটি শূন্য বাসায়, ছিল হাজার হাজার টাকা দামের যন্ত্রপাতি : ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডার, রেডিয়ো, তৈজসপত্র, গার্হস্থ্য সামগ্রী, এবং কাপড়চোপড়। মে’র শেষ দিকে মিলিটারি পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে বরিশাল ছিল রীতিমতো চোরডাকাতের অভয়ারণ্য। আইনহীনতা ও বিশৃঙ্খলাই ছিল যেন সাধারণ নিয়ম। আমাদের পাশের বাড়িটিকে নাকি ষোলোজন ডাকাতে মিলে একেবারে খালি করে দিয়েছিল প্রখর দিবালোকেই। তারা জানত তিনটি আমেরিকান পরিবার কোনো একটি বাসায় থাকে সেখানে—এবং তারা কোথায় চলেও গেছে! নৈশপ্রহরী হিসাবে যাকে নিয়োগ করা হয়েছিল, যে কিনা সিঁড়িঘরে ঘুমাত, এবং সামান্য এক প্যাঁচার ডাকেই দৌড়ে পালাতে সিদ্ধহস্ত ছিল।”

“মেল বিল্স্ ও আমি জুনের দিকে বরিশালে ফিরি ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে। বাড়িটার দরজা একবার ভাঙা হয়েছিল ঠিকই, একটি ক্যামেরা ও কিছু কাপড়ও খোয়া গেছে, তবে সিংহভাগ জিনিসই অক্ষত ছিল। আমরা বিছানা, চুলা, ফ্রিজ, এবং ড্রামভরা গার্হস্থ্য সামগ্রী বাক্সবন্দী করে পর্বতপ্রমাণ এক বোঝা নিয়ে বন্দরে যাই। প্রতি দশদিনে একটা জাহাজ আসত বরিশালে, তবে আমাদের বলা হয় যে, তারা কেবল সামরিক জিনিসই বহন করে।

ঘাটবাবুর কাছে গেলে আমাদের লটবহর দেখে তিনি বলে ওঠেন ‘এটা অসম্ভব’, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে কী ভেবে ধীরস্বরে বলেন, ‘আপনারা তো দেখছি মহা ঝামেলায় আছেন। ঠিক আছে, আমি এগুলোকে চট্টগ্রামে পাঠানোর জন্য যা করা দরকার করব।’ এবং তিনি তা করেছিলেন বৈকি! সবই নিরাপদে চট্টগ্রাম পৌঁছায়। তখনকার পরিস্থিতিতে এটা অলৌকিকের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।

ঈশ্বর আমাদের জন্য সেটা না করলেও পারতেন। কিন্তু সেসব তো ছিল তাঁরই জিনিসপত্র যেগুলোকে তিনি নিরাপদে রাখার যোগ্য ভেবেছিলেন।”

“আরো একদিন ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁর বিশেষ দয়া দেখিয়েছিলেন। আমাদের হাইস্কুলগামী তরুণ দলটি তখন পশ্চিম পাকিস্তানের মারী খ্রিস্টান স্কুল থেকে শীতকালীন ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছিল। নতুন সেমিস্টার শুরু হব হব করছিল তখন, চারজনের জন্য সেটা ছিল আবার একেবারে স্নাতক হবার আগের চূড়ান্ত সেমিস্টার। স্বাভাবিকভাবেই তাদের অভিভাবকেরা দেশের এই আসন্ন গোলযোগের মুখে চারটি মেয়ে ও তিনটি ছেলেকে সেখানে পাঠাতে দ্বিধা করছিলেন, আবার এই চিন্তাও ছিল তাদের মনে যে, সত্যি যদি গোলমাল শুরুই হয়ে যায় এখানে, তাহলে বাচ্চারা হয়তো স্কুলেই ভালো থাকবে। যে-ছাত্ররা হাসপাতালে থাকত তারা ৯ তারিখে চট্টগ্রাম শহরে আসে ট্রেনে করে ঢাকায় যাবে বলে, তারপর সেখান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে। পরিকল্পনা ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানের অপর মিশনারি বাচ্চাদের সঙ্গে একসাথে ভ্রমণ করবে। সত্যি বলতে কী, আমাদের এই কিশোরবয়সী শিক্ষার্থীরা সবসময় ছোট বাচ্চাদের অভিভাবক হিসাবেই তাদের দেখভাল করত, বোর্ডিং স্কুলে যাওয়া আসার সময়টাতে। ১০ তারিখ খুব সকালে তারা ট্রেনস্টেশনে গিয়ে জানল যে, কোনো টিকিটই আর অবশিষ্ট নাই। তাতে তখন একটামাত্র পথই খোলা থাকে : ভোক্স ওয়াগন বাসে করে সড়কপথে সারাদিন লাগিয়ে রাত্রিবেলায় ঢাকায় গিয়ে পৌঁছানো।”

রেভারেন্ড জে ওয়ালশ, যিনি বাচ্চাদের সঙ্গ দিচ্ছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে যাবার বিমানে জায়গা পাবার বিষয়ে তাঁর হতাশার কথা এভাবে বলেন।

“মার্চের ১১ তারিখ আমরা জানতে পারি যে, পশ্চিম পাকিস্তানগামী প্লেনের টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ির কারণে কর্তৃপক্ষ টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে দিয়ে অন্য ব্যবস্থা করেছে। যারা টিকিটের জন্য লাইন ধরেছিল তাদেরকে একটা করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। প্রথম নম্বরটি দেওয়া হয়েছিল ৬ তারিখ। ১১ই মার্চ আমাদের স্কুলছাত্রদের দেওয়া হলো ৩৩১৯ থেকে ৩৩২৫ নম্বর!”

“আমাদেরকে ঘনঘন বিমানবন্দরে গিয়ে দেখতে হচ্ছিল সেই নম্বরগুলো কিভাবে এগুচ্ছে। দিনে দুটো কি তিনটেমাত্র ফ্লাইট ছিল, এবং আমরা জানতাম না আমাদের পালা কখন আসবে। ভারত তাদের আকাশসীমার ওপর দিয়ে পাকিস্তানি প্লেন চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়ার ফলে বিমানভ্রমণের সময়ও বেড়ে গিয়েছিল অনেক। পাকিস্তানি বিমানকে তখন ভারতকে এড়িয়ে কলম্বোর মাটি ছুঁয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে হচ্ছিল।”

“বিমানবন্দর তখন দেশ থেকে পালানো লোকে লোকারণ্য ছিল। আমি একজনকে দেখতে পাই ছোট একটি বাক্সকে টেনে কাউন্টারের দিকে নিয়ে যেতে—সেটি ছিল সোনায় ভর্তি! (লোকজন তখন তাদের অর্থসম্পত্তি ব্যাংকে রাখার চাইতে নগদে কিংবা সোনার অলঙ্কার করে রাখত।) বণিক ও ব্যবসায়ী যারা আশ্রয়ের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমাচ্ছিল, তারা তাদের সমুদয় সম্পত্তি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছিল।”

করাচি থেকে আসা ফ্লাইটগুলোও পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বিমানগুলোর মতোই যাত্রীভর্তি ছিল, তফাত শুধু এই যে, সে-যাত্রীরা নতুন কোনো দেশে আসা অভিভাসী ছিল না। সেই বিমানগুলো আসলে ভরা ছিল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অস্ত্রধারী পাকিস্তানি সৈন্যে।

নাম্বারগুলো ক্রমে এগুতে থাকে এবং অবশেষে মার্চের ১৪ তারিখে দিনের শেষ ফ্লাইটে করাচি যাওয়ার উদ্দেশে বিমানে ওঠে আমাদের তরুণ ছাত্রেরা। সেখান থেকে তারা মারী হিল্স হয়ে তাদের স্কুলে গিয়ে পৌঁছায়।

তখনও কেউ জানত না যে, এই মিশনারি বাচ্চাগুলো আরো বহুদিন পূর্ব পাকিস্তানে ফেলে আসা তাদের বাবামা ও বন্ধুদের কাছ থেকে, কিংবা তাদের সম্পর্কে, কিছুই শুনতে পাবে না। [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ২)

কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১)

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;