বিলাতের কেশপ্রকৌশলীর ক্যারিশ্মা : অপ্রতিসম রম্বস থেকে মায়াবী মুখ



সরওয়ার মোরশেদ
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর অন্তত মাস ছয়েক সুপার মার্কেট, শপিংমল, টিউব স্টেশন যেখানেই গিয়েছি, কেনাকাটা করার সময় স্বতঃচালু হয়ে যেত আমার মানসিক হিসাবযন্ত্র (Mental calculator)। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথম যেদিন সম্ভবত ৪০ পাউন্ড দিয়ে (স্টুডেন্ট ডিসকাউন্ট তখনও পাইনি) মান্থলি ট্র্যাভেল কার্ড কিনলাম, নিদারুণ মর্মবেদনা অনুভব করেছিলাম এই ভেবে যে, আহারে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা চলে গেল শুধু গাড়ি ভাড়ায় (তখন বাংলাদেশে একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন সাকুল্যে সাত আট হাজারের মতো)! একদিন ব্রিকলেনে হণ্টন করতে করতে চায়ের তেষ্টা পাওয়ায় বাংলা টাকায় সার্ধশতের শ্রাদ্ধ করে বারংবার নিকেশ করছিলাম এই টাকায় বাংলাদেশে কয়কাপ চা পান করা যেত! হারাম-হালাল না বুঝে KFC-তে একদিন চিকেন উইংস, ফ্রাইজ আর কোক খেয়ে ছয় পাউন্ডের মতো বিল দিয়ে (পাউন্ড-টাকা ১২০-১৩০ বিনিময় হারে প্রায় ৭৫০-৮০০ টাকা) ছয় পাউন্ডের বিরহব্যথায় ছয়দিন কাতর ছিলাম! এভাবেই পাউন্ড-টাকার অটো কনভার্শনের নাগর দোলায় দুলতে দুলতে মাস দুয়েকের শ্বেতদ্বীপবাস হয়ে গেল। মাথার চুল জানান দিচ্ছিল নরসুন্দর-সুন্দরীর কাছে দ্রুত না গেলে কদর্য এশীয়র নরাধম হতে বেশি সময় লাগবে না।

এরই মধ্যে প্রিয় বন্ধু ডা. হাসনাত যাকে আমরা ‘কবিরাজ’ বলে ডাকতাম, দেখি চুল কাটার সরঞ্জাম খরিদ করে রীতিমতো স্বনির্ভর হয়ে গেছে। কবিরাজ ইতোমধ্যে তার বিনেপয়সার সার্ভিস অফারও করেছে। কিন্তু তার ভাবসাব সুবিধের ঠেকছিল না। বন্ধুবর ছিল গোঁফের স্বঘোষিত বৈশ্বিক শত্রু। আমার গোঁফে সে এর মধ্যেই বার দুয়েক ব্যর্থ অভিযান পরিচালনা করেছে। একবার তো সে ‘মোর ঘুমঘোরে’ নাপিত-মনোহর হয়ে এসেছিল। ভাগ্যিস, ত্বরিত প্রতিবর্ত প্রতিক্রিয়ায় দোস্তের ওই গোঁফ-বিরোধী অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিয়েছিলাম। তদুপরি, এই অনভিজ্ঞ কৈশিক শৈল্যবিদের কাছে মুফতে ‘ছিলা মুরগি’ টাইপ কাট লাভের সমূহ আশঙ্কা ছিল। ফলে, চিকিৎসক-নরসুন্দরের ছুরির নিচে সচেতনভাবেই গেলাম না। ইয়ারকে শুধু বললাম, ‘আমি একজন Ph.D-র কাছেই চুল কাটাব, MBBS, PLAB-1-এর কাছে না।’

‘Ph.D-র হাতে চুল কাটাবা মানে?’—রাগী ভীষণ দেমাগী ভঙ্গিতে জানতে চায়।

‘Professional Hairdresser এর কাছে’, দৃপ্তকণ্ঠে জবাব দিলাম।

আমার উত্তর শুনে মুহূর্তেই কবিরাজের রক্ত-চক্ষু চাহনি প্রীতিময় অট্টহাসিতে অনূদিত হয়ে গেল।

আগেই নিয়ত করে ফেলেছিলাম শ্বেতদ্বীপে এসে শ্বেতকায় নরসুন্দরের কাছেই কেশকর্তন করাব। জানতাম, টাকা হয়তো একটু বেশি যাবে। শখের তোলা আশি টাকা! ফলে ভাবটা ছিল ‘কুচ পরোয়া নেহি’। মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনীতে পড়েছিলাম, বিলেতে এসে ভদ্দরনোক হবার নেশায় তিনি অনেক দাম দিয়ে স্যুট-কোট বানিয়েছিলেন, রীতিমতো টিউটর রেখে পিয়ানো-নাচা-গানা শেখার কোশেশ করেছিলেন। আমি তো আর গাঁধীর পথ মারাচ্ছি না—সামান্য চুল কাটাই তো! তাছাড়া, ‘আমরা সবাই রাজা’ ঘোষণানুসারে আমিও একজন রাজা। চুলই হচ্ছে আমার ‘কোহিনূর’—অমূল্য মুকুট! মহাজনেরা উমদা কথাই বলেছেন, ‘Invest in your hair. It is the crown you never take off.’

পরিকল্পনামতোই পরেরদিন এক সফেদ নরসুন্দরের সেলুনে গেলাম। খালি চেয়ার পেয়ে বসে পড়লাম। শ্বেতাঙ্গ নাপিত তার ঢাল-তলোয়ার নিয়ে রণপ্রস্তুতি সেরে ফেলল। ভদ্রলোকের ছুরত আর বয়স দেখে আশ্বস্ত হলাম। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের কথাটা এক্ষেত্রে স্মর্তব্য—Beware of the young doctor and old barber. যাক বাবা, কোনো বুড়ো নাপিতের পাল্লায় তাহলে পড়িনি!


বার্তা২৪.কম-এর শিল্প-সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]


শুভ্র নাপিত দ্রুত রণদামামা বাজিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। কথা বলে জানলাম, ভদ্রলোক পোলিশ, নাক উঁচা ইংরেজ নন। একটা ‘হালকা হইতে মাঝারি’ মাত্রার ধাক্কা খেলাম। বিশ্বব্যাপীই নাপিতরা Verbal diarrhoea-য় ভোগেন। এ মহাজন দেখি নাপিতকূলের প্রবাদপ্রতিম বাচালতার উল্টো দিকে অবস্থান করছেন। হয়তোবা ভাষাগত কারণেই তার এই অ-নাপিতসুলভ বাকসংযম। Let English barbers in Thames melt—এই ভেবে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করলাম যে লেসওয়ালেসার এই দিশি কমরেডও হয়তো ভাবেন—‘I speak hair. English is my second language.’ সত্যিই তো, তামাম জাহানের সব কেশশিল্পীর প্রথম ভাষা হচ্ছে ‘চুল’। সে জবানে এ কেশযোদ্ধা আমার সাথে মিনিট বিশেক ‘ঘ্যাচাঙ ঘ্যাচাঙ’ বাতচিত করলেন। আমিও ছোট্ট বেলায় বিনা প্রশ্নে সোনাইয়া নাপিতের কাছে মাথা সঁপে দেওয়া একান্ত বাধ্যগত বালক হয়ে বেজঙ্গম, লা-জবান থাকলাম। কর্ম সম্পাদন হলে আমি ‘Leave me mother, let me cry’ ভাব নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। ‘I am glad, it’s over!’ তবে ভদ্রলোক ছয় পাউন্ডের বিনিময়ে এমন হেয়ারকাট দিয়েছিলেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সপ্তাহখানেক ঊন-কোয়ারেন্টিনব্রত পালন করেছিলাম। মানবমুখে রীতিমতো জ্যামিতিক অসৌন্দর্য—কুরিদের দেশের ক্ষৌরকারের করকারিকুরিতে আমার চেহারা মোবারক অনেকটা অপ্রতিসম রম্বসের আকার ধারণ করেছিল!

এই এক পোলিশ কাট আমার কেশকর্তন ভাবনায় কোপার্নিকান বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলল। আর ইউরোপীয় নাপিতের বেলতলায়? নৈব নৈব চ। এক কাটে মাস তিনেক কাটিয়ে দেওয়ার পর আরশিতে নিজের দিকে তাকিয়ে বারবার আমার নবতিপর পিতামহীকে মনে পড়ছিল। চুল একটু বড় হলেই দাদি বলতেন, ‘অ মুন্সি (আদর করে নাতিদের তিনি মুন্সি ডাকতেন) চুল তোর ফাঁস (সার বা পুষ্টি) টানি ফেলার। ক্ষেমাইশ্যাততুন চুল হাডি আগৈ (অনুবাদ: ও মুন্সি, চুল তোর শরীরের পুষ্টি শুষে নিচ্ছে। ক্ষেমাইশ্যা নাপিতের কাছে গিয়ে চুল কেটে আয়)।’ পরে জেনে অবাক হয়েছি, আমার দাদির তরিকায় অনেক মহাত্মাও চিন্তা করেছেন।

এই যেমন Weike Wang আমার পিতামহীর প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, ‘My mother has a theory about hair. It is that the longer the hair grows, the dumber a person becomes. She warns that too much hair will suck nutrients away from the head and leave it empty.’ দাদির অদৃশ্য নেত্র-রাঙানিকে প্রিয়তমার সৌন্দর্যতিলক মনে করে এবার চুল কাটাতে গেলাম ব্রিকলেনে। ট্যাকের টাকার চিন্তা না করে ঢুকলাম একটা ভদ্রদর্শন সেলুনে। কোথায় যেন দেখেছিলাম—
Cheap Haircuts
Are Not Good!
Good Haircuts
Are Not Cheap!

কথা খাসা, নিঃসন্দেহে। দেখলাম কয়েকজন Tonsorial artist শিল্পীর অভিনিবেশ নিয়ে কেশকর্তনে ব্যস্ত। আহা! এই লন্ডনের ফ্লিট স্ট্রিটেইতো একদা খুনের মচ্ছবের পুরুত হয়েছিলেন এক দানব-নাপিত (Demon barber of Fleet Street)! আমার সামনের এই ক্ষুরশিল্পীদেরই তো পেশাগত ভাই ছিলেন Sweeney Todd নামের ওই নাপিত যার রক্তপিপাসা নিয়ে বাজারে চালু আছে হাজারো গালগল্প। আমার পালা আসলে দেখলাম, নিতান্ত নিরীহ দর্শন নাপিতের ভাগে পড়েছি। সুইনিকে ভুলে নিশ্চিন্তে তার ছুরি-কাচির নিচে মাথা সোপর্দ করলাম।

মায়াবী মুখের এই ছোকরা পোলিশ নাপিতের মতো মিতবাক নয়। পাকিস্তানি এ যুবক বেশ কথাবার্তা বলল। সঙ্গত কারণেই, বাংলাদেশের চাইতেও তার আগ্রহ বেশি সিলেট নিয়ে। বেশ যত্ন করেই চুল কাটল। অভিজ্ঞ ভাষাবিদের মতো যথার্থই রায় দিল আমার কথা বলার ধরন সিলেটীদের মতো নয়। সন্তুষ্টচিত্তে বিল দিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে মনে হলো এ নরসুন্দর আসলে Part artist, part therapist, part stylist! পরবর্তীতে এ হেয়ারকাট নিয়ে ডা. হাসনাত মন্তব্য করেছিল, ‘এই নাপিত তোমার চেহারার ছিনতাইকৃত মায়াবী ভাবটা পুনরুদ্ধার করেছে!’ যাক বাবা, পয়সা তাহলে উসুল হলো!

আশির আহমেদের ‘জাপান কাহিনী’ পড়ে জেনেছি, জাপানি ভাষায় নাপিতকে বলা হয় Riyoshi বা চুলকাটা প্রকৌশলী। আসলেই, একজন নাপিত বহুজ্ঞানকাণ্ডে বিচরণকারী এক প্রকৌশলী—তিনি একধরনের চলিষ্ণু বিদ্যাকল্পদ্রুম! একজন নাপিত জীবন্ত সংবাদপত্র, রাজনীতি বিশ্লেষক, কলাকৈবল্যবিদ, মনস্তত্ত্ববিদ, ভাষাবিদ, সর্বোপরি একজন টকারু বা বাকশিল্পী! তবে বহুজাতিক শহরে এথনিসিটি, ভাষা আর সংস্কৃতিও মনে হয় সেলুন পছন্দে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তাই তো পোলিশ নরসুন্দর আমার চেহারাকে অপ্রতিসম রম্বস বানিয়ে দিয়েছিল। বিপরীতে, ব্রিকলেনের পাকিস্তানি-বাংলাদেশী নাপিত আমার দৃষ্টিতে হয়ে উঠেছিল ভিডাল স্যাসুন কথিত কৈশিক-স্থপতি (Architect of hair)! আর সেকারণেই বিলেতবাসের প্রায় তিন বছর পরিপূর্ণভাবে পরিপাটি হতে (এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য উক্তি—You are never fully dressed without great hair) অনেক দূরের শুটার্স হিল থেকে ছুটে যেতাম দেশীভাই শুক্কুর আলিদের কাছে। আমাদের একান্ত নিজস্ব কৈশিক স্থপতিদের কাছে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;