কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১২)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

[পূর্ব প্রকাশের পর] “যেদিন আমি কয়েকজন মিশনারিকে জাহাজে নিয়ে গিয়েছিলাম,” রিড বলেন, “সেদিন ইউ এস এইডের একজনকে বন্দরের ডকের ওপর পাই। তিনি আমাকে জানান যে, কাপ্তাইয়ে বিদেশিরা আটকা পড়ে আছে। (সেখানে আমেরিকানরা একটা ড্যাম বানাচ্ছিল ১৯৬০-এর গোড়া থেকে।) তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি যেহেতু বাংলা বলেন না, কোনো বাঙালি তাঁকে সেখান পর্যন্ত সঙ্গ দিতে পারবে কিনা।

“এটা যদি হয় শুধু বাংলা বলার জন্য, তাহলে আমিই যেতে পারি আপনার সঙ্গে,” আমি স্বেচ্ছায় বলি।

“এইড এর ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। এই যাত্রায় বিপদের সম্ভাবনা দেখে আমি তাঁকে বলি দুজনে মিলে প্রার্থনা করতে।”

তাঁর জবাবটা আমার মনে আছে: “আবারও প্রার্থনা করাটা ভালো নিশ্চয়ই।”

প্রথম সমস্যা হচ্ছে গাড়ির জন্য পেট্রোল যোগাড় করা। পেট্রোল খুব কড়াকড়িভাবে রেশন করা হচ্ছিল। একমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যরাই কোনো স্টেশনে গিয়ে বলতে পারত, “এটাতে গ্যাস ভর্তি করে দাও।” একটা পেট্রল স্টেশনের খোঁজে আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই এবং দেখতে পাই যে, সব জায়গাতেই আগুন জ্বলছে।

কাপ্তাই যাওয়ার পথে রাস্তায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া বেতারকেন্দ্রটা দেখি। আর একশ গজের মধ্যেই আমরা একটা পাকিস্তানি ট্যাংকের দেখা পাই, যা কয়েক মিনিট আগেই আমাদের যাওয়ার পথের দিকে নিশানা করে গুলি ছুড়ছিল। রাস্তা জুড়ে কেবল সদ্য ছোড়া মর্টারের শেল। কুড়ি পঁচিশজন ব্যক্তিকে মাথার ওপর হাত তুলিয়ে রাস্তার নিচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্যাংকটা অতিক্রম করার পর, আমাদের দিকে তাক করা অস্ত্রের নলের আধিক্য দেখে আমরা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকি এবং সিদ্ধান্ত নিই, আমরা আর এগুব কিনা মিলিটারির কাছে তার অনুমতি চাইব। অফিসার আমাদের বলেন, “আমরা এখনো এই রাস্তা পরিষ্কারের অভিযানে আছি,” এই বলে তিনি আমাদেরকে বেতারকেন্দ্রের দিকে ফেরত পাঠিয়ে সেখানে আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে বললেন।

“শেষ পর্যন্ত অনুমতি যখন এলো, তখন আমাদেরকে বলা হলো তাড়াতাড়ি এই জায়গাটা পেরিয়ে যেতে,” “কেননা কখন আবার গুলি শুরু হবে আমরা জানি না। আরেকটা কথা, সন্ধ্যা হয়ে গেলে আর ফিরবেন না। সন্ধ্যার আগে আসতে না পারলে কাল সকালে ফিরবেন।”

“কাপ্তাইয়ে নানা দেশের নাগরিকরা উদ্ধার পাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা যখন তাঁদেরকে গাড়িতে তুলছিলাম তখন বুঝতে পারি, একটা আমেরিকান পরিবার সেখানেই থেকে যেতে চাইছে। আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে জানায় যে, তারা একটা পশ্চিম পাকিস্তানি পরিবারকে লুকিয়ে রেখেছে বাসায়, এবং জানতে চায়, আমরা তাদেরকে আমাদের বিছানাপত্রের বাক্সপ্যাটরার সঙ্গে লুকিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারব কিনা।”

“বাঙালিরা কাপ্তাইয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এবং এটা নিশ্চিত যে, বিদেশিরা চলে গেলেই এই পশ্চিম পাকিস্তানি নির্ঘাৎ মারা পড়বে। পশ্চিম পাকিস্তানি সম্প্রদায়েও আমাদের কিছু বন্ধু ছিল। আমি এই আমেরিকানের সঙ্গে সহমর্মিমতা বোধ করি। শত্রু লাইনের দুই দিকেই সবসময় কিছু ভালো লোক থাকে। আমি জানতাম একমাত্র একটি উপায়েই আমি বেঁচে থাকতে পারব; এতকিছুর মধ্যেও যদি আমি আমার সব আচরণ খোলামেলা ও স্বচ্ছ রাখি। কোনো অন্যায়ের অংশীদার হয়ে আমি নিজেদের মিশনারি ও দেশি বন্ধুদের সাহায্য করার সুযোগকে নষ্ট করতে পারি না।”

“আর কোনো উপায় না দেখে এই পরিবারটি তাদের বন্ধুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল।”

“বাঙালি সেনারা, যেহেতু জানতেন যে, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ছিল, তাঁরা কিছু কূটকৌশলের আন্দাজ করছিলেন। তাঁরা ঐ গাড়ি দুটোকে খুব কড়া তল্লাশি করেন। আমরা একটা ইঁদুরকেও সেখানে লুকিয়ে রাখতে পারতাম না।”

“পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কাপ্তাইয়ের দখল নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এইডের বন্ধুটি সেখানে ফেরত যান, রয়ে-যাওয়া আমেরিকান পরিারটির সাহায্যার্থে। তাঁরা সেই পাকিস্তানি অতিথি পরিবারটিকে সেনাবাহিনীর হাতে নিরাপদে তুলে দিয়ে পরিষ্কার বিবেকে কাপ্তাই ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু ততদিনে টেবিল উল্টে গেছে এবং তখন বাঙালিদেরই সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের একজন উঁচুপদের প্রকৌশলীকে যখন সেনারা জোর করে তুলে নিতে চায় তখন তাঁরা তাঁকে রক্ষা করার এক অসফল প্রচেষ্টায় প্রায় জীবনেরই ঝুঁকি নিয়ে বসেন। বন্দুকের নলের মুখে যখন তাঁদের দুজনকে আদেশ দেওয়া হয়, তখন তাঁরা ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হন। কয়েক সেকেন্ড পরে, তাঁদের বাড়ির মাত্র একশ গজ দূরে, একজন উন্মাদপ্রায় পাকিস্তানি মেজর হুকুম দিলে, সেই প্রকৌশলীকে গুলি করে রক্তধারার মধ্যে ফেলে রাখা হয়। তিনি তৎক্ষণাৎই মারা যান। এই বাঙালি প্রকৌশলী নিজে বেশ কয়েকটি পশ্চিম পাকিস্তানি পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করেন যখন তারা বিপদে পড়েছিল, কিন্তু ঘৃণায় উন্মত্ত এক মেজরের হাত থেকে কেউই তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি।”

রিডের দুশ্চিন্তাজাগানো প্রতিবেদন শোনার পর আমরা একটু সিরিয়াস হই এবং ঘরে গিয়ে আবারও ভাবতে বসি: আমরা কি থাকব, না কি দেশ ছাড়ব?

এপ্রিল ১৭, শনিবার

আমরা সকালবেলায় পুরো দলটার সঙ্গে মিলিত হই। গোল হয়ে বসে আমরা কে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা বাকিদের জানাই। এত কঠিন ও আত্মানুসন্ধানী সব সিদ্ধান্ত!

থাকা ও যাওয়ার ভালো মন্দ নিয়ে এক ঘণ্টা ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়।

লিন এবং আমি, এককভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ঈশ্বর চান আমরা থাকি এবং সময়টাকে সাধন করি: একেকটা বাড়তি দিন মানে ইতোমধ্যে প্রস্তুত বাংলা বাইবেলের পাণ্ডুলিপি ও নির্দেশিকা ব্যবহারের আরো কাছাকাছি চলে আসা। আমি বাড়িতে যেমনটি লিখেছিলাম: “আপনারা নিশ্চিত থাকেন যে, আমরা নায়ক কিংবা শহিদ হতে চাইছি না। আমাদের দেশত্যাগের একটা পরিকল্পনা রয়েছে, ঈশ্বর যে-ই বলবেন যাও, আমরা তক্ষুণি বেরিয়ে যাব। আমরা শুধু এখন পর্যন্ত সেই সবুজ সংকেতটি পাইনি।”

আমাদের দলের কেউ কেউ ভাবছিলেন যে, এই সমস্যাসঙ্কুল দিনগুলোতে ধর্মপ্রচারের কাজ তো ভালোই বিঘ্নিত হবে, তাহলে খামোখা এখানে থেকে গিয়ে, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি রসদের ক্রমে কমে আসা সরবরাহের অপচয় করা কেন?

আমাদের যাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরার বৈধ ভিসা ছিল না, তারা ভাবছিল একবার বেরিয়ে গেলে যদি আর ফিরতে না পারে।

আমরা শুনতে পাই যে, আমেরিকানদের সঙ্গে আওয়ামী নেতাদের এক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয় এর আগের রাতে। স্বদেশী সৈন্যরা খুব ভালোভাবেই কাজ করছিল। তারা জানত, তারা কিসের জন্য লড়াই করছে এবং তার পরিণাম কী হতে পারে। আমেরিকানরা পরিষ্কার করে দেয় যে, আমেরিকা কখনোই তাদের স্বীকৃতি দেবে না কিংবা সাহায্য করবে না। আওয়ামী নেতারাও খুব করুণ অবস্থায় ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িঘর ও বিষয়সম্পত্তি হারিয়েছেন: অনেকেই তাঁদের পরিবারের কোনো খোঁজও জানতেন না।

এপ্রিল ১৮, রবিবার

ইংরেজি প্রর্থনাসভার পর, কে কে যাবে আর কারা থাকবে সেটা নিয়ে আবারও পর্যালোচনা করা হয়। বিল্সরা সিদ্ধান্ত নেন যে, কেবল মার্জরি ও বাচ্চাদের দেশত্যাগের চাইতে তাঁরা গোটা পরিবারই বার্মার ভেতর দিয়ে গিয়ে পেনাংয়ে তাঁদের ছুটি কাটাবেন।

বিকেলে মটরসাইকেলে করে রিড আসেন। তিনি বলেন শহরের অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে: আইনহীনতার চূড়ান্ত, লুটতরাজ, মাঝেমধ্যেই গোলাগুলি—রীতিমতো খুবই উত্তেজনাকর পরিবেশ। তিনি এও বলেন যে, মালুমঘাটের এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কয়েকদিন থাকার পর তিনি ভাবছিলেন, আদৌ কি কোথাও যাবার দরকার আছে; কিন্তু চিটাগাংয়ে গিয়ে তিনি যা দেখলেন তাতে তাঁর মনে হয়েছে এখনই উপযুক্ত সময় দেশত্যাগ করার।

যারা চলে যাবার ছিল, তাদেরকে সবাই গোছগাছে সাহায্য করে।

লিন ও বেকি বাইবেলের একটা শ্লোককে মন্ত্রগুপ্তি হিসাবে নির্ধারণ করে, যা সবাই মনে রাখবে এবং সবার সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করবে।

অঙ্ক ১৬:৭ আমরা ফিরতে চাইছি কিন্তু পারছি না।

২ কিংস ৭:৭ তিনজন ছাড়া সব মিশনারিই দেশ ছেড়েছেন।

২ কিংস ৭:১০বি সবাই, এমনকি তিনজনও দেশ ছেড়েছেন।

২ কিংস ৪:২ খাবার ও অন্যান্য জিনিসের অভাব, দেশে ফেরাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না।

ইসাইয়াহ ৩০:১৫ সব ঠিক। ফিরে আসুন।

জেরেমিয়াহ ৪:১এ ফিরে আসুন। আপনাদেরকে প্রয়োজন।

জেনেসিস ২৮:২১ পশ্চিম পাকিস্তানি দল দেশে ফিরে যাচ্ছে।

অঙ্ক ২১:৪ এক্ষুণি ফিরে আসার দরকার নেই।

অঙ্ক ১৬:৩৬ মিলিটারি আমাদেরকে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এপ্রিল ১৯, সোমবার

বিমানে করে দেশত্যাগীদের দল, অ্যাডল্‌ফ পরিবার ও তাদের চার বাচ্চা, পাঁচ নারী মিশনারি সকাল আটটায় দুটো ল্যান্ডরোভারে করে রওনা দেয়; গাড়িগুলো চালাচ্ছিলেন ল্যারি গলিন ও মি. জো ডিকক। রিড তাঁর সাইকেলে করে আগে আগে যাচ্ছিলেন।

যাবার পথে তাঁরা একজন ব্রিটিশ নাগরিকের দেখা পান, যার চিকিৎসা নেবার জন্য মালুমঘাট হাসপাতালে আসার কথা ছিল। তিনি আর আসেননি, তাই আমরা ধরে নিয়েছিলাম তিনি হয়তো সেই উদ্ধারকারী জাহাজে করে দেশত্যাগ করেছেন। আসলে তিনি হাসপাতালে আসার পথে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি সাদা মুখগুলো দেখে কী যে খুশি হয়েছিলেন, এবং তিনি উদগ্রীবভাবে একটা গাড়িতে উঠে বসেন দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ইউনিয়ন জ্যাক লাগিয়ে একটি ব্রিটিশ গাড়ি তাঁরই সন্ধানে এদিকে আসছে। তিনি গাড়ি বদল করেন এবং তাঁর নিজদেশের পতাকার সুরক্ষায় সামনে যাত্রা করেন।

ভাঙা সেতুটি আমাদের লোকেরা হেঁটেই পার হন এবং ওপারে গিয়ে অপেক্ষমাণ গাড়িতে ওঠেন। তাঁরা দেখেন, যাদেরকে ইতোমধ্যে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের লাশগুলো সেখানেই পড়ে আছে। বিল্ডিংগুলোর গায়ে প্রচুর ছিদ্র জানান দিচ্ছিল যে, সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছে।

নিরাপদে চট্টগ্রাম পৌঁছে এই দলের সদস্যরা বিমানে করে ঢাকায় গেলেন; সেখান থেকে একদল পশ্চিম পাকিস্তানে এবং আরেক দল আমেরিকায় পাড়ি দিলেন। বিদায়-নেওয়া মিশনারিরা তাঁদের জিনিসপত্র গুছিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। তাই আমরা দিনটা কাটাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালিয়ে। কোনো কোনো পরিবার বাচ্চাদের পোশাকগুলো বাক্সে ভরে আমাকে ও লিনকে পাঠিয়ে দেন, আমরা যেন সেগুলো শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করে দিই। হাসপাতালের গুদামঘরে ড্রামের মধ্যে ভরে রাখা পুরনো কাপড়গুলোকে ঝাড়াই বাছাই করার কাজও ছিল। আমরা সেগুলোকে নার্সদের কোর্য়াটারে পাঠিয়ে দিই এবং দ্রুতই দেখতে পাই, আমাদের বারান্দায় সুন্দর করে সাজানো শার্ট, জুতা, পোশাক ও বাচ্চাদের কাপড়ের বান্ডিলগুলো ফেরত আসে।

এপ্রিল ২০, মঙ্গলবার

জে ওয়াল্শ ও জো ডিকুক বিল্স পরিবারকে টেকনাফ পর্যন্ত গাড়ি করে পৌঁছে দেন, যেখান থেকে তাঁরা বার্মা চলে যাবেন। ফেরার পথে এই দুই লোক নতুন ব্যারিকেডের দেখা পান, সেখানে হাসিবিহীন প্রহরীদের মুখ ও যাবতীয় আলামতই বলে দেয় যে, এই এলাকায় সামনে বিরাট যুদ্ধ হবে।

নতুন ‘আতঙ্ক পরিষদ’ মিলিত হয় সভায়। (পুরনো সদস্যরা সবাই চলে গেছে।) আমরা—ভিক ও জোয়ান ওল্সেন, ইলিয়ানোর ওয়াল্শ, এবং আমি—একটা কর্মসূচি প্রণয়ন করি, যেটাকে আমরা বলি, ‘গ্রামের আশ্রয়।’

সেনারা এলে, হাসপাতাল থেকে গুলির শব্দ শোনা যাওয়ামাত্র (মিশনারিদের বাড়ি থেকে আধা মাইল দূরে) সব নারী ও বাচ্চা একজন নির্দিষ্ট পুরুষ সদস্যের সঙ্গে কাছের গ্রামে, আমাদের বন্ধুদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে। আমরা খাবার, পানি, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং সময় কাটানোর মতো হালকা খেলার জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারব সঙ্গে। আমরা সেখানে বেশিদিন থাকার প্রত্যাশা করিনি।

তবে সেটা ছিল বেকি ডেভি তার ‘প্রথম ডাক্তারি ভুল’টি ঘটানোর আগে! [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১১)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১০)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;