‘দেশ যদি ডুবেই যায় তবে কার জন্য পলিটিক্স?’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি এবং নিটল মোটরসের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, অর্থনীতি একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি, তাই অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়া উচিত। অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে অবশ্যই রাখবে হবে।


রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশ্ন রেখে এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, দেশ যদি ডুবেই যায় তবে কার জন্য পলিটিক্স?

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়া নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বুধবার বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন আবদুল মাতলুব আহমাদ। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: ৮ বছর পর দেশের আবারও সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হলো। এক দিন হরতালের পর টানা ৩ দিনের অবরোধের দ্বিতীয় দিন চলছে আজ। ব্যবসা-বাণিজ্যে কি ধরণের প্রভাব ফেলছে এসব কর্মসূচি

আবুল মাতলুব আহমেদ: আমরা ব্যবসায়ী কমিউনিটি থেকে ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছি, বিগত দিনেও বলেছি আবারও খুব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি-এই যে হরতাল কিংবা অবরোধ, যা জনগণের মুখের হাসি কেড়ে নেওয়ার কর্মসূচি এগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি করে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান হয় এক দিনেই। এটা আমরা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিলেও তারা অনেক খুশি হতো। সে জন্য আমরা সব সময়ই প্রত্যাশা করি, রাজনীতি চলবে, সারা বিশ্বেই চলে কিন্তু জনগণের মুখের হাসি হচ্ছে রাজনীতির আলটিমেইট এইম, তাদের হাসিই যদি আপনি নিয়ে যান, তাইলে আপনি কার জন্য আন্দোলন করছেন? এজন্য জাপানের মতো দেশে, ওরা যখন হরতাল করে তখন তারা ওভার প্রোডাকশন করে। কোনো ফ্যাক্টরি থামায় না। সাপ্লাই চেইনকে ডিস্টার্ব করে না। আমাদের এখানে আনফর্চুনেটলি আমরা পাবলিকের জিনিস নষ্ট করে ফেলি। রাষ্ট্রের জিনিস নষ্ট করে ফেলি। এবং আমাদের ইকনমিকে আমরা চলতে দিই না। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ইকনমনি যদি..গ্রোয়িং দেশ যদি ইকনমিক্যাললি থামিয়ে দেন, হাতির মতো… যা উঠতে বসতে টাইম লাগে। অর্থনীতিকে থামিয়ে দিয়ে আবার আগের মতো সচল হতে অনেক সময় লেগে যায়। এই লসটা কোন দিন পূরণ হয় না। এজন্য আমি সব সময় বলি পলিটিক্সে …নিজেদের মধ্যে কর্মসূচি হবে, আলাপ-আলোচনা হবে, ধাক্কাধাক্কি হবে…এগুলো হবে, সারা দুনিয়াতেই হয়। কিন্তু ইকনমিকে ডেস্ট্রয় করে এখনকার দুনিয়াতে আর করে না। বাংলাদেশেও এটা হওয়া উচিত না।

বার্তা২৪.কম: আমাদের রাজনীতিবিদরা কি সময়ে এই চাওয়া বা জনআকাঙ্খার সঙ্গে নিজেদের খাপ-খাওয়াতে পারছেন না? আপনার কি মনে হয়

আবুল মাতলুব আহমেদ: আমরা তো খুব খুশি ছিলাম, আন্দোলন হচ্ছে কিন্তু কোন ভাঙ্গাভাঙ্গি নাই, হরতাল নাই, বেশ কয়েকটা মাস দেখলাম। শঙ্কা ছিল যে এ ধারাটি হয়তো অব্যাহত রাখতে পারবে না। দুঃখজনকভাবে তাই ঘটলো। আমি খুব খুশি হতাম যদি ধরে রাখতে পারতো। এবং তারা তাদের যে ডিমান্ডস নিয়ে কথা বলছিলেন…সেগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হোক, কিংবা থার্ড পার্টি ডিসকাশনের মাধ্যমে হোক, সেটা করা উচিত ছিল। কিন্তু ইকনমিকে জিম্মি করে বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাসের যুদ্ধ; এই দুনিয়াতে যে সমস্যা, এর মধ্যে আমাদের দেশটা, আমরার কোন মতে বেঁচে ছিলাম, ইকনমিটা কোন রকমে বেঁচে ছিল। রিজার্ভ ক্রাইসিস, ডলার ক্রাইসিস…এর মধ্যে আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ নেবার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের ইকনমিতে এখন নেই। আমরা যারা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প করি , আমরা বেশ আতঙ্কিত।

বার্তা২৪.কম: আপনি কি মনে করেন এটি রাজনীতিবিদদের দায়িত্বহীন আচরণ?

আবুল মাতলুব আহমেদ: আমি বলব যে, আন্দোলনের বাইরে ওনাদের সমাধান খোঁজা উচিত ছিল। যাঁরা দায়িত্বশীল, তাদের সমাধান আনা উচিত ছিল, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, অন্ততঃ এই বারে এরকম সহিংস আন্দোলন ছাড়াই তারা একটি সমাধানে আসবেন। আমি এখনো আশা করি, এটি আর বিস্তৃত না হয়ে রাজনীতিবিদরা একটি বোঝাপড়ায় পৌছাবেন। তারা চিন্তা করবেন যে আমরা দেশকে বাঁচাব। দেশকে এগিয়ে নেব এবং দেশের জনগণের যে গ্রোথ ছিল, যে হাসি ছিল, সেটা ফেরত নিয়ে আসব। 

বার্তা২৪.কম: চলমান এই অবরোধ বা সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে কি ধরণের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

আবুল মাতলুব আহমেদ: আমদানিতে আমাদের ডলার ক্রাইসিস চলছে দেড় থেকে পৌনে দু’বছর। ক্রাইসিস অলরেডি আমাদের আছে। এখন আমরা কিছু ইনভেস্টমেন্ট বিদেশ থেকে পাচ্ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে ওরা (বিনিয়োগকারীরা) একটু ঘাবড়ে যেতে পারে, অর্থছাড় বিলম্ব করে দিতে পারে। আমাদের ডলার ইনফ্লোটা ডিলে করলেও আমাদের জন্য ক্ষতি। এই জন্য আমি মনে করি যে, ইনভেস্টমেন্ট স্লো ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা যারা শিল্প করি, তাদের আমদানি পণ্য আসতে পারবে না। কাঁচামাল আসতে পারবে না। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। জনগণের জন্য আমরা যে মালামাল বানাচ্ছিলাম এমন চলতে থাকলে তো আমরা তা তৈরি করতে পারব না। তখন জিনিসের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। বটম লাইন এটাই হচ্ছে যে, এমপ্লয়মেন্ট ইফেক্ট করবে এবং জনগণের যে পণ্য চাহিদা আমরা তা আনতে পারব না, দেশেও উৎপাদন করতে পারব না। জনগণের যে প্রত্যাশা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতি এটি আমরা কেউই পূরণ করতে পারব না। আমরা তো দাঁড়িয়ে আছে ফুলফিল করার জন্য। কিন্তু রাজনীতিবিদদের অবশ্যই এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।

বার্তা২৪.কম:  আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, ব্যবসায়ী নেতারা রাজনীতিকে ডমিনেট করেন, এবারের এই সংকটে কি আপনারা রাজনীতিবিদদের সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার জন্য কোন ভূমিকা নিতে পারেন?

 আবুল মাতলুব আহমেদ: মনে রাখতে হবে যে  পলিটিক্সের আগে হচ্ছে দেশ। এবং আমি যেটি মনে করি, পলিটিশিয়ান, বিজনেস পিপল-যারাই আছেন তাদের এখন দেশের জন্য সেক্রিফাইসের সময় এসেছে। জিনিস ক্রাইসিস আছে, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবেন না। চেষ্টা করতে হবে আগের দামেই দেওয়ার জন্য। দাম কিছুতেই বাড়ানো যাবে না। সরকারের উচিত হবে, যেমন কোভিডের সময় ট্রাক চালু রেখেছিলেন, সব পার্টি মিলে অন্ততঃ ইকনমিক লাইফ লাইন যেমন ট্রাকসহ পণ্য পরিবহণের যানসমূহ, এগুলোকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির বাইরে রাখতে হবে। যেমন আমদানি পণ্য আনতে হবে। রপ্তানি পণ্য পাঠাতে হবে। এগুলো পলিটিক্যাল ইভেন্টস এর বাইরে রাখতে হবে। দেশের জন্য সর্বাগ্রে চিন্তা করতে হবে। দেশ যদি ডুবেই যায় তবে কার জন্য পলিটিক্স?

বার্তা২৪.কম:  আপনারা কি রাজনীতিবিদদের এটি বোঝাবার জন্য কোন দায়িত্ব নেবেন, যাতে তারা সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত হয়?

আবুল মাতলুব আহমেদ: বিগত দিনে আমরা এ রকম প্রচেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ইফেক্টিভনেস আমরা পাইনি। সেজন্য আমরা চাই যে, পলিটিশিয়ানরা আমাদের বলুক, দ্য উইল ওয়ান্ট থার্ড পার্টি টু মেডিয়েট। ওনারা যদি মেডিয়েশন না চান তাহলে কিন্তু মেডিয়েটররা কোন রুল পান না। যখন দু’পক্ষই বলবে আমরা একটি থার্ড পার্টি রুল চাই, যারা আমাদের মধ্যে একটি সমাধান আনবে। এটি দেশে-বিদেশে মিলেও হতে পারে বা শুধুমাত্র দেশেও হতে পারে, ব্যবসায়ী কমিউনিটি থেকেও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে রাজনীতিবিদদের ওপর। তারা যতোক্ষণ পর্যন্ত সমমনা হচ্ছেন না, বলছেন না যে আমরা সমাধান চাই-ততোক্ষণ পর্যন্ত যে যতো কথাই বলেন না কেন , দু’জনের যে কোন একজন যদি বেঁকে বসেন তাহলে কিন্তু আর মেডিয়েশন হয় না। আমি প্রত্যাশা করব, অচিরেই আমরা হয়তো আলোচনার ইঙ্গিত দেখতে পাব। ৪ তারিখে যেমন ইলেকশন কমিশন সব পার্টিকে ডেকেছেন। হয়তো এমনও হতে পারে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো সবাইকে ডাকবেন ইনক্লুডিং বিএনপি। এটা উনার ওপর নির্ভরশীল অনেক বেশি। আর আমরা যারা আছি, আমরা যখন দেখব যে মেডিয়েশন করলে আমাদের কথা তারা কানে দেবেন, ব্লাইন্ড থাকবেন না, শোনার জন্য বা বলার জন্য রেডি থাকেবেন তখন আমরা চেষ্টা করতে পারি নয়তো কি করে এগুবো। এজন্য পলিটিশিয়ানদের জানান দিতে হবে, ‘উই আর রেডি ফর অ্যা মেডিয়েশন ফর দিজ টেল মিট’…টেল মিট মেডিয়েশন করতেই হবে।

বার্তা২৪.কম:  আপনি যে ইতিবাচকভাবে বললেন তা যদি হতো তবে তো ভালোই হতো রাজনীতির জন্য

আবুল মাতলুব আহমেদ: অবশ্যই হবে..ডোন্ট বি ডিজহার্টেনড..সবই হবে। পলিটিক্স তো, একটু প্রেশারে খেলা হয়। এখন কার প্রেশার কতোটুকু যাবে….কার প্রেশারে কতটুকু গিয়ে কোথায় আউট ব্রাশ্ড হয়ে একটি সল্যুশনে আসবে …বিগত দিনে আমরা বহু দেখেছি ৫০ বছরে। আলটিমেটলি একটি সল্যুশনে আসবে আর যদি সল্যুশনে না আসে তবে দেশের ক্ষতি হবে, জনগণের ক্ষতি হবে। এবং যার জন্য পলিটিক্স সেই টার্গেট থেকে আমরা ছিটকে পড়ে যাব।

বার্তা২৪.কম: এবারের নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলোর একটি প্রেশার রয়েছে। রাজনীতিবিদদের একটি চাপের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করছে তারা। দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান যদি না হয় তাহলে পশ্চিমানির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের যে খাতগুলো রয়েছে, সেগুলো কি ধরণের সংকটের মধ্যে পড়তে পারে বলে আপনার মনে হয়?

আবুল মাতলুব আহমেদ: সব দেশের সঙ্গেই আমোদের যে সম্পর্ক, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এটা কিন্তু আমাদের পলিসির মধ্যে আছে। পলিটিশিয়ানরাও সেটা জানেন। আজকে আমাদের এখানে ডেভেলপমেন্টটা হচ্ছে ‘বিকজ অব আওয়ার রিলেশনশিপ উইথ দ্য ফরেন ন্যাশনস্’। আমাদের কিন্তু প্রাকটিক্যালি কোন সমস্যা নাই। এখন যদি আমরা জোর করে শত্রু বানাই তাইলে নিশ্চিতভাবেই যারা শত্রু বানাবে তারা দেশের জন্য কাজ করছেন না। দেশের খারাপের জন্যই তারা কাজ করছেন..। আমি এটা বলব, এখনও আমাদের এক্সপোর্ট যেসব দেশের ওপর নির্ভরশীল সেসব দেশকে কিন্তু আমরা সার্ভিস দিচ্ছি। আমরা কিন্তু কম দামে জিনিস দিচ্ছি। তারাও উপকৃত হচ্ছে, শুধু আমরাই উপকৃত হচ্ছি তা নয়। তারাও যদি বলেন, না আমরা কম দামে কিনব না, ডাবল দামে কিনব অন্য জায়গা থেকে নেব, সেটাও তাদের জন্য ডিফিকাল্ট। তাদের যারা জনগণ আছেন তারাও কিন্তু কম পয়সায় ভালো জিনিস চায়। দ্যট ক্যান বি ডেলিভার্ড অনলি ফর বাংলাদেশ। ওইদিকে আমাদের একটা বড় এডভান্টেজ আছে। যে তারা যদি বিগ কার্টেল না করে, যদি বলে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বন্ধ..আজই আফ্রিকার ৪টি দেশের সঙ্গে ব্যবসাই বন্ধ করে দিয়েছে…নো বিজনেস। ওরকম যদি বাংলাদেশের সঙ্গে করে তবে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বলেছেন যে, ‘লুক ফর নিউ মার্কেট অ্যান্ড নিউ প্রোডাক্টস’। তবে এটি এক কথায় বলা যাবে, অবশ্যই প্রভাব পড়বে। সেজন্য আমাদের উচিত, সবার সঙ্গে মিলমিশ করে একটি সিদ্ধান্তে পৌছানো। মনে রাখতে হবে, আমি আর আপনি যদি না মিলি তবে বিদেশিরা হাজার চেষ্টা করলেও মিলবে না। তখন ভিন্ন এঙ্গেলে যাবে, দেশটা ভোগান্তিতে পড়বে।

আরও পড়ুন: ‘দেশ যদি ডুবেই যায় তবে কার জন্য পলিটিক্স?’

   

৮ মে যে সব এলাকায় বন্ধ থাকবে ব্যাংক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৮ মে দেশের ১৪১টি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাংক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডিওএস) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৬ মে তারিখের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক আগামী ৮ মে রংপুর বিভাগের ১৯টি, রাজশাহী বিভাগের ২৩টি, খুলনা বিভাগের ১৭টি, বরিশাল বিভাগের ৫টি, ঢাকা বিভাগের ২৯টি, ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি, সিলেট বিভাগের ১১টি ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২৮টি উপজেলায় পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকগুলোর আঞ্চলিক কার্যালয়সহ সব শাখা বা উপশাখা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

;

নগদ ইসলামিকে লেনদেন করে মক্কা-মদিনা যাচ্ছেন মুন্না



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ ইসলামিকে লেনদেন করে মক্কা-মদিনা সফরের জন্য প্রথম উপহার বিজয়ী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ মুন্না। ব্যাংক থেকে নগদ ইসলামিকে অ্যাড মানি করে এই উপহারজয়ী হয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি মুন্নার বাড়ির সামনে তাঁর হাতে এই উপহারের কাগজপত্র তুলে দেন হলি টিউন-এর সিইও ইসলামি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বদরুজ্জামান।

যাত্রা শুরুর পর থেকেই নগদ ইসলামিক নানারকম আকর্ষণীয় ক্যাম্পেইন এনেছে ইসলামপ্রিয় মানুষের জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পবিত্র রমজান মাসে মক্কা-মদিনা সফরের এই ক্যাম্পেইন আনা হয়। নগদ ইসলামিক অ্যাপ বা *১৬৭# ডায়াল করে যেকোনো পরিমাণ টাকা লেনদেন করলেই নির্বাচিত হওয়া যাচ্ছিল মক্কা ও মদিনা সফরের জন্য। এ জন্য লেনদেনের কোনো সর্বনিম্ন সীমা ছিল না। যেকোনো পরিমাণ লেনদেন করলেই এই সুযোগ পাওয়া যেতে পারত।

এমনকি কোনো নির্দিষ্ট লেনদেনের ওপরও নয় এই অফার। নগদ অ্যাপ বা *১৬৭# ডায়াল করে যেকোনো লেনদেন করলেই এই সুযোগ পেতে পারতেন গ্রাহকেরা। মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট, ব্যাংক বা কার্ড থেকে অ্যাড মানিসহ যেকোনো লেনদেনই বিবেচ্য হয়েছে। কেবল শর্ত হচ্ছে যে, নগদ ইসলামিকের ব্যবহারকারী হতে হবে এবং পরিপূর্ণ সক্রিয় একটি নগদ ইসলামিক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

এই ক্যাম্পেইনে বেশ কয়েক জন মক্কা-মদিনা সফরের উপহার পাবেন। তারমধ্যে প্রথম উপহার পেলেন শ্রমিক মুন্না। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার জালকুড়ি গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছোট ছেলে এই মুন্না। পারিবারিকভাবেই কাঠের কাজের সাথে জড়িত মুন্না।

তাদের পরিবারের কেউ সুদ জড়িত আছে, এমন কোনো লেনদেন করেন না। ফলে শুরু থেকেই পরিবারের সবাই একমাত্র শরিয়াহসম্মত মোবাইল লেনদেন সেবা নগদ ইসলামিক ব্যবহার করেন। এই ব্যবহার করতে গিয়েই ব্যাংক থেকে অ্যাড মানি করেন মুন্না।

মক্কা-মদিনা সফরের উপহার পাওয়ার কথা শুনে আবেগ আপ্লুত মুন্না বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই ইসলামসম্মত জীবনযাপন করি। সে জন্য আমি কেবল নগদ ইসলামিক অ্যাপ ব্যবহার করি। এখান থেকেই আমি সব পেমেন্ট দেই, কেনাকাটা করি। সেভাবে অ্যাড মানি করে এই উপহারের জন্য নির্বাচিত হয়েছি।’

মুন্না আরও বলেন, ‘আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল মক্কা-মদিনা সফরের। আল্লাহ নগদের মাধ্যমে আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। নগদের প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ চাইলে এরপর বাবা আর মাকে ওমরাহ করতে পাঠাব।’

দেশের প্রথম ও একমাত্র মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলাদা ইসলামিক এমএফএস চালু করে নগদ। প্রতিষ্ঠানটির ইসলামিক অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ শরিয়াহ পর্যবেক্ষক কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। ‘নগদ ইসলামিক’মোবাইল অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে গ্রাহকেরা খুব সহজেই সুদমুক্ত ও শরিয়াহসম্মত উপায়ে নিজস্ব তহবিল পরিচালনা করতে পারছেন, যা তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিধানকে সংরক্ষণ করছে।

এই অ্যাকাউন্টের অর্থ সবসময়ই কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রক্ষিত থাকে। ফলে গ্রাহককে কোনোরকম সুদ গ্রহণ বা ইসলামে অননুমোদিত লেনদেন করতে হয় না।

 

;

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ক্যাম্পেইন উদ্বোধন



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

  • Font increase
  • Font Decrease

আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গ্রাহকদের ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে নিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে তিনমাসব্যাপী ক্রেডিট কার্ড ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জাফর আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান।

প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন নির্বাহীবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানগণ, শাখা ব্যবস্থাপকবৃন্দ ও উপশাখা ইনচার্জগণ ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন এবং অনেকে আলোচনায় অংশ নেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফর আলম বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের বিকল্প নেই। আমাদের কার্ড শরী’আহভিত্তিক ব্যাংকের কার্ডগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে। আমাদের কার্ডের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সকলের কাছে আমাদের কার্ডকে জনপ্রিয় করে তোলাই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ।

;

টাকা ছাপানোর কথা ঠিক নয় : গভর্নর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘বিভিন্ন পর্যায় থেকে টাকা ছাপানোর কথা বলা হচ্ছে। এটা ভুল ধারণা। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে কোনো ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি ঋণের পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংক সরবরাহ করছে। এর ফলে এখন টাকা ছাপানোর নিট প্রভাব শুন্য।’

রবিবার (৫ মে) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বণিক বার্তা যৌথভাবে ‘বিতর্কিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পন্থা খাপ খাওয়ানো’ শীর্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন আয়োজন করে। সম্মেলনের প্রথম দিনের প্লেনারি-২ অধিবেশনটি হয় মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির সমন্বয় বিষয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ফজলে কবির, সাবেক অর্থসচিব ড. এম তারেক ও মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।

আলোচনায় শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সুদহার, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, তারল্য সঙ্কটসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। আর স্বাধীনতা কেউ দেয় না। লোকবল, দক্ষতার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আবার বাইরের চাপ থাকে সেটা মোকাবিলার দক্ষতা থাকতে হয়।’

সাবেক এই গভর্নর জানান, তিনি গভর্নর থাকা অবস্থায় সবাই ফেরেস্তা ছিল তেমন নয়। নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার চাপ ছিল। তবে তিনি নানাভাবে সময় ক্ষেপন করে শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলে দিয়েছেন ব্যাংক দিলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতি হবে।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত হওয়ার সময় এসেছে। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে না। এখানে সবাই সহজ পন্থায় হাটতে চায়। পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ কর আদায় সহজ- সেদিকেই সবার দৃষ্টি। এখানে এক পাউরুটিতে ধনী, দরিদ্র সবাইকে একই হারে কর দিতে হয়।

ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলে শুধু মুদ্রানীতি সংকোচন করলে হবে না। কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এসব না হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কার জন্য আবার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিলে প্রথম প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিনিয়োগে।

সাবেক অর্থ সচিব এবং এক সময়ের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কথা বলা হচ্ছে। আবার সার বিদ্যুতের ভর্তুকির বিপরীতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছে। আবার ব্যাংকগুলো এই বন্ড রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারবে, এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারবে। ফলে মানি মাল্টিপ্লায়ার প্রভাব ৫ গুণ ধরলে ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি টাকার প্রভাব ফেলছে। অবশ্য একটা ভালো খবর হলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সুদহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সময় চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারণের কথা বলা হয়। তবে সব ক্ষেত্রে এটা ভালো নয়। কিছু প্লেয়ার অনেক সময় নিজের স্বার্থে এই টার্ম ব্যবহার করে।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বিদ্যুৎ ও সারের জন্য সরকারি ভর্তুকির বিপরীতে সরকার বন্ড ইস্যু করেছে। এই বন্ড ইস্যু না করলে দুই ধরনের সঙ্কট তৈরি হতো। প্রথমত, যারা সরকারের কাছে টাকা পায় তাদের কোনো সমস্যা না থাকলেও খেলাপি হয়ে যাচ্ছিল। আরেকটি হলো– ব্যাংক খাত এমনিতেই তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। বন্ড না দিলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়ত। এখন প্রশ্ন হলো এতে ‘মানি ক্রিয়েশন’ হয়েছে কিনা। বন্ড ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানি ক্রিয়েশন হয়ে গেছে এটা ঠিক না।

দুদিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকে আয়েশা খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে এতে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

;