একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. বিরূপাক্ষ পাল

‘ডিজিটাইজেশন প্রশ্নে ঢাকঢোল বাড়ছে, অগ্রগতি নয়’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেছেন, ডিজিটাইজেশনের প্রশ্নে যতটা ঢাকঢোল আমরা পেটাই, অগ্রগতি ততটা নেই। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইন্টারনেটের অ্যাকসেসের দিক থেকে নেপালের চেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে জানিয়ে বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ঢাকঢোল যতটা বাজছে, সেইভাবে আমদের অগ্রযাত্রা ততটা হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কোর্টল্যান্ডে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল আরও মনে করেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তির আগে জ্ঞানের অন্তর্ভূক্তি প্রয়োজন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ‘নলেজেবল পার্সন বা ইনোভেটিভ পার্সন’ না দেওয়া যায়, তাহলে সেটা ক্ল্যারিক্যাল ওয়েতে চলে বলেও মন্তব্য এই অর্থনীতিবিদের।

সম্প্রতি, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সমসাময়িক নানা ইস্যুতে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. বিরূপাক্ষ পাল। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আর্থিকখাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব, প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্তকরণ, আর্থিকখাতে ডিজিটাইজেশনের ঝুঁকি ও উত্তরণের উপায়সহ অন্যান্য প্রসঙ্গে ড. পালের মূল্যায়ন। কথা বলেছেন বার্তা২৪.কমের পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: প্রযুক্তির আধিপত্যের যুগের দেশের আর্থিকখাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বের প্রশ্ন যখন আসে, আপনার বিবেচনায় কোন দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত?

বিরূপাক্ষ পাল: আমি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দিলাম তার আগে থেকেই গভর্নর ড. আতিউর রহমান এই ডিজিটালনির্ভর আধুনিক চিন্তাটি বহন করছিলেন। আধুনিক প্রযুক্তি গরিবকে ক্ষমতায়ন করে। যেমন ধরুন, কৃষকের হাতে একটি সেলফোন তাকে উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করতে কিংবা বাজারের খবর নিতে সহায়তা করে। বাজার থেকে কোনো যানবাহন এনে সেগুলো বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা তিনি নিজেই করতে পারেন। সুতরাং ক্ষমতায়নটা ডিজিটাইজেশন থেকে শুরু করে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ও ফিজিক্যাল ইনক্লুশনের মধ্য দিয়ে একসঙ্গে এগোয়।

ড. আতিউর রহমান এটি বড় অর্থে দেখেছিলেন, যার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ববাবরই গ্রিন ব্যাংক, ডিজিটালাইজড ব্যাংক এ রকমের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। যদিও অ্যাওয়ার্ডটিই বড় কথা নয়, আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কিন্তু অর্থনীতিকে ডুবিয়ে গেছেন। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই স্বীকৃতিগুলো ছিল।

আমি উনার (ড. আতিউর রহমান) গল্প থেকে শুনেছি, যখন তিনি একটি ব্যাংকে গিয়ে দেখতেন মাথা সমান উঁচু ফাইল, তিনি ভেবেছিলেন এগুলো কীভাবে রিপ্লেস করা যায়... এটাই! আসলে প্যাশন (আগ্রহ) থাকতে হয়। যেমন-‘এত উঁচু ফাইলগুলোকে কীভাবে রিপ্লেস করতে হয়’ হঠাৎ করে একজন আমলার মাঝে এই চিন্তা আসবে না। তিনি দেখবেন, সার্কুলারে কী আছে। কিন্তু যখন একজন ইনোভেটরকে একটি ইনস্টিটিউশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন পরিবর্তন আসে। যা বিদেশে সব সময় দেখা যাবে..। যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে যদি একটু নলেজেবল পার্সন বা ইনোভেটিভ পার্সন না দেওয়া যায়,তাহলে সেটা ক্ল্যারিক্যাল ওয়েতে চলে।

বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন...

বিরূপাক্ষ পাল: আমি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াই। এখান থেকে দেশে গিয়েছি দায়িত্ব পালন করতে। যুক্তরাষ্ট্রে সমস্ত কিছুর মধ্যে আধুনিকায়ন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের প্রতি ওয়েলকামিং। সেটা আমরাও বহন করি। সেই বিষয়গুলো কাজ করেছে। সুতরাং আমার সঙ্গে একটি সোনায় সোহাগা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল (তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক নেতৃত্বের সঙ্গে) চিন্তাধারার দিক দিয়ে। কারণ, আমি আমলাতন্ত্র থেকে যাইনি। উনিও (গভর্নর ড. আতিউর রহমান) আমলাতন্ত্র থেকে আসেননি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে, তিনি ট্র্যাপেই পড়ে গেলেন! হঠাৎ করে যে হ্যাকিংটা হলো, সেটার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাইজেশনের শিকার তিনিই হয়ে গেলেন! হতেই পারে! কারণ, ইন্টারনেট যিনি করেছিলেন আজ থেকে ৩২ বা ৩৩ বছর আগে ইউরোপের একজন, তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন, আমি ইন্টারনেটের প্রযুক্তিটাকে যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে গড়ায়নি। এর মাঝে হ্যাকাররা বেশি ঢুকে গেছে। কিন্তু এর দ্বারা তাঁর সব কর্ম ব্যর্থ হয় না। এখন যেটা হয়েছে, অনেকটা স্থিমিত হয়ে রয়েছে।

ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ইনডেস্কে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার যদি একটি ম্যাপ করেন তবে দেখবেন, ইদানিং খুব একটা এগোচ্ছে না। ওই সময়টাতে প্রগ্রেসটা খুব ফাস্ট হয়েছিল। আমরা মনে করতাম, আমি যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে বলেছি, বাংলাদেশের অর্থনীতিটা খুব ভালো জায়গায়, কনজামশনটা চাঙা করতে মানুষকে ক্রেডিট কার্ড দেওয়া যায় কি না। মানুষকে ১০ হাজার টাকা করে ক্রেডিট কার্ড দেওয়া যায় কি না! অন্য দেশে আছে বড়লোকের জন্য। পরবর্তীতে যদিও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে যেটা বলতে পারি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ও তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁরও অনেক ড্রাইভ আছে। নিউ জেনারেশনকে তিনি বুঝতে পারছেন। ডিজিটাইজেশন সমাজে একটা বিরাট ইনক্লুশন আনবে। কিন্তু আমরা যতটা ঢাকঢোল পেটাই, ডিজিটাইজেশনের প্রশ্নে ভারত থেকে আমরা পিছিয়ে। ইন্টারনেটের একসেসের দিক থেকে নেপালের মতো দেশগুলো থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। ঢাকঢোল যতটা বাড়ছে, সেইভাবে আমরাদের অগ্রযাত্রা হচ্ছে না। কাজ করার অভিজ্ঞতা তাই বলে!

বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার যে অর্থনীতি, তাতে ডিজিটাল সিস্টেম একটি বড় নিয়ামকের ভূমিকা রেখেছে। সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল...

ড. বিরূপাক্ষ পাল: প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক ক্ষমতায়নে ডিজিটাল সিস্টেম নিশ্চয়ই বড় অবদান রেখে যাচ্ছে। তাদের অ্যাকসেস আছে। সমস্ত তথ্য একটি ফোনের মধ্যে বসে পাওয়া যাচ্ছে। আজ রিজার্ভ কত, কারেন্সি রেট কত এসব বিভিন্ন তথ্য ব্যাংকে সামনের ডিসপ্লে বোর্ডে পাওয়া যাচ্ছে। আমি যেহেতু পাবলিক ইনস্টিটিউটে কাজ করেছি, আমি অনুভব করেছি, একটি ইনক্লুসিভ অর্থনীতি করার জন্য ইনক্লুসিভ ব্যাংকিং দরকার। যেহেতু, ইনক্লুসিভ ক্যাপিটাল মার্কেট নেই আমাদের, বিদেশে একজন বৃদ্ধাও ঘরে বসে স্টক কিনতে পারছেন; বাংলাদেশে ওই সিস্টেমটা এখনও ডেভেলপ করেনি।

ফিন্যান্সিয়ের দুইটা সেক্টর থাকে- একটি ব্যাংকিং আরেকটি, ক্যাপিটাল মার্কেট। এটা তো আমেরিকা নয়। ইউরোপীয় বা উপমহাদেশের দেশগুলোতে ব্যাংকিং সিস্টেমের মধ্যে যে ডেভেলপমেন্টটা হয়েছে, তাতে ব্যাংকিং সিস্টেমটাকে যদি ইনক্লুসিভ করা না যায়, শুধু মুষ্ঠিমেয় মানুষের জন্য রাখা হয়, তাহলে এটা ঠিক অর্থে ইনক্লুসিভ ইকোনমি সৃষ্টি করবে না। যেটার প্রমাণ আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি। ধণিক শ্রেণি, কোটিপতি শ্রেণির সংখ্যা বেড়েছে। এই ধণিক শ্রেণি সমস্ত ডিপোজিটরের শতকরা আশিভাগ ডমিনেট করছে। এটা ইনক্লুসিভ নয়। ৪৭ ভাগ এডাল্টরা ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে রয়ে গেছে। আবারও বলবো যে, ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট নিয়ে ড. আতিউর রহমানের প্রচেষ্টাকে নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন। উন্নত দেশেও তা হয়; যেমন প্রেসিডেন্ট ওবামা সবার জন্য স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স চেয়েছিলেন। 'ওবামা কেয়ার' বলে তারা বিদ্রুপ কর হতো। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বলতেন, এটাতে বিদ্রুপের কিছু নেই। এর মধ্যে মমতা আছে।

একইভাবে বলবো, ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট নিয়ে তখন অনেককে বলতে শুনতাম, ‘একেবারে কৃষক-চাষাভূষাদের ব্যাংকে ঢুকাচ্ছে’, এটা ঠিক না। এটা করেও কিন্তু আমরা অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিংয়ের বাইরে রেখে দিয়েছি। ইনক্লুসিভ ব্যাংকিং নেই। ক্রেডিট বিতরণে ইনক্লুসিভিটি নেই। সুতরাং, এই জায়গাটাতে মূল ধাক্কাটা খাচ্ছে। কিছু মানুষ কোটি কোটি টাকা পাচ্ছে। তাদের ফিন্যান্স, তাদের ব্যাংকিং, তাদের ইন্ডাস্ট্রি..। কিছু মানুষ অতি সামান্য... একটি রুটির দোকান শুরু করবে; সেই জন্য যে লোন সাপোর্ট পাওয়া দরকার, সেটা তারা পাচ্ছেন না। সুতরাং এধরনের বৈষম্যমূলক ঋণ বিতরণ আমাদের সমাজকে খুব অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে দেবে না। সেজন্যই প্রবৃদ্ধির মধ্যে একটা ঝিমানো ভাব এসেছে। ৮ ভাগে পৌঁছে যাওয়া প্রবৃদ্ধি এখন ৫ ভাগের ঘরে হাবুডুব খাচ্ছে। সুতরাং ইনক্লুসিভ না হলে ইকোনমিতে ড্রাইভ দেওয়া সহজ হবে না।

বার্তা২৪.কম: সংকট উত্তরণে তাহলে কোন পথে যাওয়া উচিত?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: আরেকটা ড্রাইভ দিতে হলে ইকনমিতে রিফর্ম আনতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টর বরাবরই বড়। সম্প্রতি, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, হৃদপিণ্ডে রক্তক্ষরণ। আসলে তো এটা হৃদপিণ্ড নয়। দুই খাত- ব্যাংকিং এবং ক্যাপিটাল মার্কেট। যেহেতু ক্যাপিটাল মার্কেট অনেকটা ডিফ্যাক্টিভ; এখানের দুষ্টু লোকেরা কোনোদিন শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। তাই ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতি মানুষের ভরসা কম। লুটেরা শ্রেণিরা ক্যাপিটাল মার্কেটে যায় না। গেলে তাদের এজিএম ডাকতে হবে। শেয়ার হোল্ডারের কাছে অ্যাকাউন্টিবিলিটি থাকতে হবে। বিকজ অব দ্য কর্পোরেট স্ট্রাকচার। কিন্তু ব্যাংক থেকে গেলেই তখন ...আপনি ডিপোজিট করেছেন, আমি ডিপোজিট করেছি- এই ডিপোজিটরদের চোখে দেখতে হয় না লোনগ্রহণকারীদের। জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র এমডি বা পরিচালকদের খুশি করে টাকা নিয়ে যায়। সেই জায়গাগুলোতে যদি সংস্কার আনা না যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় পড়বো।

বার্তা২৪.কম: আর্থিকখাতে ডিজিটাইজেশনের মোটাদাগে কী কী ঝুঁকি দেখছেন?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: প্রথমত- আমরা যখনই আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে ভাবছি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে, টেকনোলজির কিন্তু জাত নেই। বাই নেচার সবই গ্লোবাল হচ্ছে। গ্লোবাল ঝুঁকির একটা অংশ বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। সেই অনুযায়ী, তাদের প্রিপেয়ারডনেস থাকতে হবে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কাজ করি, আমরা জানি আমাদের ঝুঁকি আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের যে ইক্যুইপমেন্টগুলো দেয়, সেগুলো নিয়ে বলা হয়- ইউনিভার্সিটি আমাদের প্রটেক্ট করবে। সেন্ট্রাললি আমরা সেই প্রটেকশনটা পাচ্ছি। সেটার পেছনে তাদের খরচ আছে। আমেরিকার মতো দেশগুলো যতটা টেকনোলজি বিকাশে গবেষণা করে, হ্যাকারদের প্রতিরোধেও তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।

জাহাজের নির্মাণে যত টাকা খরচ করবে তেমনি এন্টি-পাইরেসি প্রটেকশনগুলোও খরচ করে তৈরি করতে হবে। ওই প্রিপেয়ারডনেসটা বাংলাদেশের মাথার মধ্যে আসে না। আমরা অনেকটা ভাগ্যবাদী মানুষ...এজন্য অনেক সময় আমাদের পুকুরচুরিটা হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা সেক্ষত্রে কিছুই না। ড. আতিউর রহমানের মতো গৌরবময় মানুষকে তারা মুহূর্তের মধ্যে ম্লান করে দিলো। অনেক সময় অনেক আমলারা বলছেন যে, এখানে একাডেমিকরা ভালো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু একাডেমিকরাই পৃথিবীতে ভালো কাজ করে। তার প্রমাণ হলো আমেরিকা।

এখানে সেন্ট্রাল ব্যাংক চালানোর জন্য প্রিন্সটন থেকে বেন্ডামনকে নেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী যিনি হয়েছেন, তিনি হার্ভার্ডে পড়াতেন। তিনি জেনেটিক্যালের। তিনি আবার সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। নলেজেবল মানুষগুলোকে নলেজের জায়গায় রাখতে হয়। নলেজেবল বলেই পৃথিবীর সেরা মানুষগুলোকে নিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো সিইও, এমডি বানায়। ভারতের বহু লোক আছেন যারা আমেরিকার অনেক কোম্পানির সিইও। ওই জায়গাগুলিতে আমাদের প্রস্তুতি নেই। কারণ, কথা বলার মতো মানুষ আমরা পাচ্ছি না। আনুগত্যকে মেধার আগে বসিয়ে দিয়েছি। সেই জায়গাগুলিতে আমরা সেভাবে প্রটেক্টেড হচ্ছি না। প্রটেকশনের পেছনে থাকতে হয় ভাবনা বা বোধ। যেমন, আমরা প্লাস্টিক পেয়েছি, ব্যবহার করেছি দেদারসে। আমরা যে পরিবেশকে ধ্বংস করে দিয়েছি দেদারসে, সেটা ভাবিনি। আমাদের লংটার্ম ভিশনগুলো আমাদের লিডারশিপে উহ্য থেকে গেছে!

আমরা যেমন কালো তারের ঝুলের একটি বিচ্ছিরি নগর তৈরি করেছি, সিঙ্গাপুরে কোথাও কোন তার দেখিনি, নির্বাচনের আগে কোন পোস্টারও দেখি না। সেখানে গিয়ে জানলাম সিঙ্গাপুরে চুইঙ্গাম খাওয়া যাবে না। এটা বিধি। সিঙ্গাপুরের ড্রাগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে সামারি ট্রায়াল হয়ে যায়। এই জিনিসগুলোকে যদি নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে সুফল আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি পেছনে পড়ে যায়।

এখন কিন্তু আমাদের হাই গ্রোথের সময় ছিল। ভারতের মতো হাতি অর্থনীতিও ১০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ফেলেছিল। তারা অনেক ভালো অবস্থানে আছে। কৌশিক বসু সম্প্রতি বলেছেন যে, ইন্ডিয়া ইজ এ সুইট স্পট। উনি ক্রিটিক মানুষ, কিন্তু এটা বলেছেন। সবকিছু অনুসরণ করতে হবে তা কথা নেই কিন্তু ভালো দিকগুলো গ্রহণ করলে ক্ষতি নেই। ভারত হাতি অর্থনীতির দেশ, তার অর্থনীতির অনেক সমস্যা, সেটা হাতি, আমরা সে তুলনায় আমরা খরগোস। খরগোসের দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সিঙ্গাপুর যেভাবে মালয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে, আমাদেরও কিছু সুযোগ আছে। সেই জায়গাগুলো আমরা সেই স্মার্টনেসগুলো ব্যবহার করিনি। আমরা অনেকি কছু করিনি। ভূমির যে ডিজিটাইজেশন, ভূমির পেমেন্ট সিস্টেমগুলোকে ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন ও ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনলে একসেস টু ইনফরমেশন যেটা হয়, তাতে কারোর সঙ্গে অবিচারের সুযোগ কমবে।

গ্রামে গিয়ে জানলাম, একজনকে সরকার টাকা পাঠাতো; কিন্তু দু’দিন আগে ফোন হারিয়ে ফেলেছে, এখন আর টাকা পাচ্ছে না। প্রটেকশনটা কি হবে ওই জায়গাগুলো আমরা তৈরি করিনি। ইউরোপে মদের দোকানের যেমন বিকাশ হয়েছে আবার ফিউনারেল হাউজের সংখ্যাও বেড়েছে। মদ খেয়ে মারা গেলে কে দেখবে, তার জন্য ফিউনারেল হাউজও আছে! আমাদের সমাজে লংটার্ম প্রিপেয়ার্ডনেস নিয়ে আরও ভাবতে হবে। সত্যিকারের মমতা না থাকলে কাজ করতে পারব না।

বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ডিজিটাইজেশন সুবিধার জন্যই হয়েছে তাই বলে কি ডিজিটাইজেশন থেকে সরে যেতে হবে? অনেকের এমন মূল্যায়ন প্রসঙ্গে আপনার মত কি?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: আমরা নীলক্ষেত থেকে প্যাকেজ কিনে ফেলি, কিন্তু এন্টিভাইরাস কিনি না। হ্যাকাররা যে টাকাটা নিয়েছে ৬৬০-৬৬৪ কোটি টাকা। হাজার কোটি টাকাও না। ৭ দিনে কত হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তার গড় দিয়ে যদি হিসাব করি তাহলে ড. আতিউর রহমানের সময় যদি ৬০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি থাকে এখন যে তা দেড় লক্ষ কোটি টাকায় ঠেকেছে। সে অনুপাতে হ্যাকারের বিষয়টাকে এমপ্লিফাই করে রেখেছে আমলাতন্ত্রের একটা গ্রুপ। কারণ আলোচিত এই হ্যাকিং নিয়ে আমেরিকাতে নিউইয়র্ক কোর্টে পর্যন্ত রায় হয়ে যায়, বিদেশে সিনেমা বানিয়ে ফেলে কিন্তু বাংলাদেশের সিআইডি কমপক্ষে ৭০ বার পিছিয়ে দিয়েছে রিপোর্ট দিতে পারেনি। রিপোর্ট সাবমিট করে ফেললে তো জিনিসটা বেরিয়ে পড়বে, বের না করলে তো একটা মানুষকে অপরাধী বানিয়ে রাখা যায়। ব্লেইম করে বের করে ফেললে তো মানুষটা দায়মুক্ত হয়ে গেল! বা যারা দায়ী তারা চিহ্নিত হবেন। এগুলোর পেছনে কিছু চক্র থাকে। আমার মনে হয়, একাডেমিকদের একটা এন্টি চক্র থাকে, যাতে একাডেমিশিয়ানরা কখনো কোন ভালো জায়গায় না আসতে পারেন। বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার তো কিছু ছিল না।

অন্যদিকে, দেখা যাচ্ছে-তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু গণমাধ্যমে রিপোর্ট হয়ে যাচ্ছে। এটাতো এক ধরণের ইন্টিগ্রিটির প্রশ্ন। তার মানে এই শ্রেণিটা চাচ্ছে, বদনামটা শুরু হোক কিন্তু সমাধানটা না হোক। এটাতো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মতো। বিচার দীর্ঘায়িত করতে করতে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় না এলে তো বিচারই হতো না। সেজন্য বলি যে হ্যাকাররা যে টাকাটা নিয়েছে, তার একটা আন্তর্জাতিক লম্বা প্রসেস আছে তা হতে থাকুক, কাজ চলতে থাকুক; কিন্তু যে মানুষগুলি সত্যিকার অর্থে কাজ করতে পারে তাদের কাজ করতে দিন। যদি এমন কিছু মানুষকে নেন যে তারা অনুগত কিন্তু তার মান-মেধা, একাডেমিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে তাহলে?

যেমন এক রাজার একটি পোষা বানর ছিল, তাকে বলা হল, তুমি মশা তাড়াও। সে মশা তাড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ দেখাতে গিয়ে দেয়াল থেকে তরবারি এনে মশাকে কুপিয়ে মারতে গিয়ে রাজাকেই দু’ভাগ করে ফেলেছে। অনুগতদের ক্ষেত্রে একটা বিপদ হয়, তাদের মেধার দিকটা ওরকমভাবে থাকে না বলেই আনুগত্যের আশ্রয় নেয়। আমি বলব, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিডারশিপের র‌্যাংকিং হওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও হয়েছে। র‌্যাংকিং হলেই হলো না। করাপশনের র‌্যাংকিং পাই, প্রথমে বলা হলো এটা চক্রান্ত, আমি তা মনে করি না। সারা পৃথিবীর ১৯০টি দেশের মধ্যে শুধু বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করতে যাবে কেন? অনেকে বলে আমেরিকার চক্রান্ত। আমি এতদিন আমেরিকায় আছি, ওরকম হদিস পাই নাই। কনস্পিরিসি থিওরির সঙ্গে আমি একমত নই। এগুলো নিজের দায় ঢাকার ব্যাপার বলেই মনে হয়।

এই জায়গাগুলোতে একটা মানবিক শুদ্ধি ও জ্ঞানের অন্তর্ভূক্তি আনতে হবে। যদি ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন আগে আনতে চান তাহলে তার আগে নলেজের ইনক্লুশন আনতে হবে। যেন আমাদের মেরিটরিয়াসরা দেশে থাকতে পারে। তারা দেশে না থাকলেও যাতে দেশে এসে কাজ করতে পারে সেরকম কিছু করা উচিত। বাঙালি স্বভাব হলো তৃতীয় শ্রেণির রেলযাত্রীর মতো, তারা রেলগাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে আর আরেকজন উঠতে চাইলে উঠতে দেয় না। নিজে উঠার সময় কষ্ট করে উঠে। উঠার পর আর কাউকে উঠতে দেয় না। দরজার মধ্যে আটকে রাখে।

বার্তা২৪.কম: তার মানে হ্যাকিংয়ের অজুহাতে ডিজিটাইজেশন থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ কি আমাদের আছে?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: বাংলাদেশে তাঁতীরা যখন কাজ হারিয়ে ফেলে তারা কিছু করে না। তারা মেনে নেয়। ওরা আক্রোশে যন্ত্রপাতি রাস্তায় এনে পিটিয়ে ভাঙে না, যদিও যন্ত্রকে থামানো যাবে না। আমেরিকায় ওয়ার্ল্ডমার্টে দেখতে পাই, ২০টা কাউন্টারে সমানে কাজ হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সে স্ক্যান করে বেরিয়ে যাচ্ছে সবাই। তার মানে যদি বলি লোকগুলোকে নিয়োগ করা বন্ধ করে দেব...এটা নন্দলালের মানসিকতা ‘গাড়িতে চড়িও না, দুর্ঘটনাও হবে না’। দেবদাসের মত ‘গরুর গাড়িতে যাব, যেতে যেতে পার্বতীর কাছে যাওয়ার আগেই মারা যাব’। তারা অতীতকে নিয়ে থাকতে চায়। পত্রিকায় রিপোর্ট দেখলাম, পদ্মাব্রিজ হওয়ায় তীরের কিছু মানুষের যে কি কষ্ট মাঝিদের জীবনে! মাঝিদের প্রতি ভালোবাসা আছে। কিন্তু মাঝিদেরও ভাবতে হবে এখানে ব্রিজ হচ্ছে, আমাকে অন্য পেশায় যেতে হবে। এটিই জগতের নিয়ম।

সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, এডিটর-অ্যাট-লার্জ, বার্তা২৪.কম 

   

আট দফা কমার পর বাড়ল সোনার দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা আট দফা কমার পর দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ২১৩ টাকায়। নতুন এ দাম রোববার (৫ মে) থেকে কার্যকর হবে।

শনিবার (৪ মে) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে খাঁটি সোনার দাম বেড়েছে, সে জন্য সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ১০ হাজার ২১৩ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯০ হাজার ১৭৪ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৪ হাজার ৯৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ৩ মে এবং ৩০ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল ২৮ এপ্রিল, ২৭ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ও ২৩ এপ্রিল আট দফা সোনার দাম কমানো হয়। এর মধ্যে ৩ মে এক হাজার ৮৭৮ টাকা কমানো হয়। তার আগে ৩০ এপ্রিল ৪২০ টাকা, ২৯ এপ্রিল ১ হাজার ১১৫ টাকা, ২৮ এপ্রিল ৩১৫ টাকা, ২৭ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৪ এপ্রিল ২ হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়। এতে আট দফায় ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ২৬২ টাকা কমানো হয়।

;

আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টারের উদ্বোধন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টার। 

মুবারক আলী ফাউন্ডেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) যৌথ এ উদ্যোগে দেশের ব্যবসায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জিত হয়েছে।

শুক্রবার (০৩ মে) দ্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আয়োজনে মুবারক আলী কেইস সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়।

আইবিএ ক্যাম্পাসে ফিতা কাটার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- দেশের শিক্ষা ও ব্যবসা খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টার শিক্ষাক্রমের সাথে প্রাসঙ্গিক ব্যবসায়িক কেস স্টাডি একীভূত করার মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়িক শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী যেন দেশে ব্যবসায়িক শিক্ষাখাত বিস্তৃত হতে পারে এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।

এ উদ্যোগ গ্রহণের পেছনের কারণ তুলে ধরে মুবারক আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমরীন বশির আলী ও তানভীর আলী বলেন, আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টারটি শুধু একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই ভূমিকা রাখবে এমন নয়, পাশাপাশি এ সেন্টার প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবসম্মত শিক্ষার পরিসর বিস্তৃতিতে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।

অংশীদারিত্বমূলক এ উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে আইবি'র পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মাদ এ. মোমেন বলেন, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরুর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব আমাদের শিক্ষাক্রম এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি সমৃদ্ধ করতে এবং দেশে ব্যবসায় শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নজির স্থাপনে অনন্য ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের ব্যবসাখাতের ওপর আলোকপাত করে কেস স্টাডি তৈরি ও প্রকাশে কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল পাবলিশিং ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের সাথে এ অংশীদারিত্ব। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যেন শিক্ষার্থীরা উদীয়মান বাজারের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

এ অংশীদারিত্ব হার্ভার্ড বিজনেস পাবলিশিং এডুকেশনের দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক পরিচালক দিব্যেশ মেহতা বলেন, আমরা আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টারের সাথে অংশীদারিত্ব করতে পেরে আনন্দিত। এ উদ্যোগ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ব্যবসাখাতের সম্ভাবনা তুলে ধরবে; পাশাপাশি, শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থবহ অংশীদারিত্ব কীভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে তারও অনন্য উদাহরণ তৈরি করবে। একসাথে আমরা সাফল্যগাঁথা রচনা করছি; আর এর শেকড় প্রাসঙ্গিকতা ও রূপান্তরমূলক শিক্ষাগত অভিজ্ঞতার ভেতরে নিহিত রয়েছে।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরুর (আইআইএমবি) ডিসিশন সাইন্সেস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ইউ দীনেশ কুমার বলেন, আইআইএম বেঙ্গালুরু (আইআইএমবি) আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টারের সাথে গুরুত্বপূর্ণ এ অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। এ অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ব্যবসায়িক মডেলের কার্যকারিতা বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। কেস স্টাডি তৈরির পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে এ অংশীদারিত্ব বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করবে।

তিনি বলেন, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মুবারক আলী বিগত চার দশকে সফলভাবে একটি অনবদ্য প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আজ মুবারক আলীর অন্তর্ধানের এক বছর পূর্তি। তার সাফল্যমণ্ডিত জীবন ও কর্মের স্মরণে আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা, শিল্পকলা ও স্থাপত্যে টেকসই উন্নয়ন এবং উৎকর্ষ অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে মুবারক আলি ফাউন্ডেশন। শিল্পকলার ক্ষেত্রে এ ফাউন্ডেশন লন্ডনে ফ্রিজ আর্ট ফেয়ার ইমার্জিং আর্টিস্ট প্রাইজে সহায়তা করে যাচ্ছে। এ অঞ্চলগুলোর প্রতি ফাউন্ডেশনের প্রতিশ্রুতি কমিউনিটির উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি প্রয়াত মুবারক আলীর নিষ্ঠা ও নিবেদনকেই প্রতিফলিত করে।

ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে আগত অতিথিদের উদ্যম ও উৎসাহ প্রকাশের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। আইবিএ মুবারক আলী কেইস সেন্টারের উদ্বোধন বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। এ উদ্যোগ দেশে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে, যারা দেশে ও বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ভবিষ্যৎ আকৃতিদানে ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য সকলের। 

;

সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বিজনেস পার্টনার মিট



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বিজনেস পার্টনার মিট

সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বিজনেস পার্টনার মিট

  • Font increase
  • Font Decrease

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র সম্মানিত ট্রেড পার্টনারদের সৌজন্যে ০২ মে বৃহস্পতিবার, সিলেট এর রোজ ভিউ হোটেল এক মতবিনিময় সভা’র আয়োজন করা হয়।

‘এয়ার এ্যাস্ট্রা বিজনেস পার্টনার মিট’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এয়ার এ্যাস্ট্রার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইমরান আসিফ, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সোহেল মাজিদসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র সিইও ইমরান আসিফ বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গন্তব্য সিলেট এয়ার এ্যাস্ট্রা’র জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। বর্তমানে এই রুটে প্রতিদিন দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ার এ্যাস্ট্রা, যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধি পেলে খুব শিঘ্রই আরও ফ্লাইট এই রুটে যুক্ত করা হবে।

সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে চারটি, কক্সবাজার রুটে চারটি ও সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ার এ্যাস্ট্রা। এয়ার এ্যাস্ট্রা সম্মানিত যাত্রীদের সুবিধার্থে ইন-ফ্লাইট ম্যাগাজিন ও শিশুদের জন্য ফানবুক প্রদান করে থাকে।

যাত্রীরা ফ্লাইট টিকিট এয়ার এ্যাস্ট্রা’র ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, সেলস অফিস, অনলাইন ও অফলাইন্ ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ক্রয় করতে পারবেন। এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট এবং ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম। খুব শিঘ্রই আন্তর্জাতিক রুটেও ডানা মেলবে এয়ার এ্যাস্ট্রা।

;

ভর্তুকি কমাতে বছরে চারবার বাড়বে বিদ্যুতের দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে সরকার। পর্যায়ক্রমে আগামী তিন বছর এভাবেই বাড়ানো হবে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সচিবালয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ এ কথা জানিয়েছে।

জানা গেছে, চলতি মাসে আবারও বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের মূল্য। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল্য বাড়াবে। তবে বিশ্ববাজারে কমলে এখানেও কমানো হবে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশিকা জারি করেছে।

সমন্বয়ের নামে মূলত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার খরচ কমিয়েও ভর্তুকি সমন্বয় করতে পারে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে সরকারের মনোযোগ নেই। বরং চাহিদা না থাকলেও দরপত্র ছাড়া একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে এ খাতের খরচ আরও বাড়াচ্ছে।

আইএমএফের প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গেও বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি প্রায় একইভাবে আইএমএফকে জানিয়েছে, গ্যাস ও জ্বালানি তেলে নতুন করে ভর্তুকির চাপ নেই। তেলের দাম নিয়ে স্বয়ংক্রিয় যে পদ্ধতি (আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে কমবে) চালু করার কথা আইএমএফ বলেছিল, তা হয়েছে। প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে জ্বালানি তেলে আর কখনো ভর্তুকি দিতে হবে না। প্রথম দুই দফায় দাম কিছুটা কমানো হলেও শেষ দফায় দাম বেড়েছে। তিন মাস ধরে এ চর্চা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এ বছর বিদ্যুতের মূল্য আরও কয়েক দফা সমন্বয় করা হবে। এভাবে আগামী তিন বছর চলবে। তবে কোন মাসে সমন্বয় করা হবে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

জ্বালানি তেলের মূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে সমন্বয় করা হবে। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে সমন্বয় করা হলেও জ্বালানি তেলের মূল্য খুব বাড়বে না। তবে পরিবর্তন হলে সেটি নির্ভর করবে বৈশ্বিক বাজারের ওপর।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর এ পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ১৩ বার।

;