ঢাকা-চুয়াডাঙ্গাসহ ৫ জেলায় সোমবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শিক্ষা
তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গাসহ ৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা সোমবার বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। অন্য তিন জেলা হলো- যশোর, খুলনা ও রাজশাহী।
রোববার (২৮ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়েরের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, দেশে চলমান তাপ প্রবাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার (২৯ এপ্রিল) বন্ধ থাকবে।
আরও বলা হয়, তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ চাইলে খোলা রাখতে পারবে।
এছাড়া পরবর্তী সময়ে এ পাঁচ জেলায় কিংবা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, এমন অন্যান্য জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সোমবার জানিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনিবার বন্ধ রাখার বিষয়ে আশাবাদ শিক্ষামন্ত্রীর
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
শিক্ষা
আগামী ঈদুল আজহার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনিবার বন্ধ রাখতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সচিবালয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে রবিবার (১২ মে) এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, তাপপ্রবাহের কারণে বন্ধ থাকায় তা পুষিয়ে নিতে গত ৪ মে থেকে শনিবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
আগামীতে শনিবার স্কুল খোলা থাকবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট সময় পাবে বাড়ির কাজের জন্য, সেটা বিবেচনায় নিয়ে শনিবারও স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। আরও অন্যান্য অনেক বিষয় ছিল। যেহেতু আমরা নয়টি কর্মদিবস পাইনি, আপাতত একটা ব্যবস্থা করে সেই কর্ম দিবসগুলো পাওয়ার চেষ্টা করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তবে এটা স্থায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আমরা এনসিটিবির সঙ্গে আলোচনা করছি, ডিরেক্টরেট অফিসগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষকদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে, শিক্ষার্থীদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ যথাযথভাবে করছে কিনা, সেটার জন্য যথেষ্ট সময় পাচ্ছে কিনা, সেটাও দেখার প্রয়োজন আছে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘অতিমাত্রায় চাপ দিয়ে সবদিন শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করে অনেক বেশি শিখনফল অর্জন করব, বিষয়টা কিন্তু তা নয়। এটা একটা সাময়িক বিষয়। আমরা আশা করছি আগামী ঈদুল আজহার পরে এটা (শনিবার ক্লাস) আমাদের হয়তো কন্টিনিউ করতে হবে না। অবস্থা বিবেচনায় সেটা আমরা করব।’
চলতি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে (মূল বালিকা শাখা) পাসের হার ও জিপিএ-৫'র সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছেন তিন হাজার ৭৫৭ জন, তার মধ্যে পাস করেছে তিন হাজার ৫৮৭ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৩৭ জন। আর পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
রোববার (১২ মে) সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে সকাল থেকেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়। সবার চোখে মুখে ছিল উৎকণ্ঠার ছাপ।
বেলা ১১টায় অনলাইনে রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পর দলে দলে আসতে থাকে পরীক্ষার্থীরা। সমন্বিতভাবে সবাইকে আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি একে অন্যকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়। এদের সাথে শামিল হয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
মনিপুর স্কুলের শিক্ষার্থী মাইমুনা হোসেন অবনি ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অর্জন করেছেন জিপিএ-৫। বার্তা২৪.কম-কে তিনি জানান, অনেক কষ্টার্জিত ফল এটা। এর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অযথা সময় নষ্ট না করে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। আমার এই রেজাল্টের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবা আর মার। আমার শিক্ষকরা ও সহযোগিতা করেছেন।
অবনীর বাবা মোশারফ হোসেন মেয়ের সাফল্যে আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন, আমার মেয়েটা অনেক চেষ্টা করেছে। আমরা খুব খুশি। ওর এই সাফল্যের পেছনে আমাদের যা অবদান তার থেকে ওর চেষ্টা, পরিশ্রমই বেশি। ওর ওপর কোন চাপ নেই ভবিষ্যতে যা হতে চায় হবে।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তন্নি বলেন, আমি টাইম ম্যানেজমেন্ট করে পড়েছি। অতিরিক্ত যে পড়েছি তা নয় কিন্তু যখন পড়েছি মন দিয়ে পড়েছি। আমি ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই। আমার ও আমার পরিবারের ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ডাক্তার হবো। আমাদের পরিবারের সবাই খুব খুশি। তারা পুরোটা সময় আমার পাশে ছিল।
শিক্ষার্থী সামিহা জানান, পরিশ্রমের ফল এটা। এমন ফলাফলে আমি খুব খুশি। আমার সাফল্যের পিছনে অনেকের অবদান রয়েছে তবে আমার নিজের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি পড়েছি, পরিশ্রম করেছি তাই আল্লাহ ফল দিয়েছেন। এখন ভালো একটা কলেজে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগোতে চাই।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার সার্বিক মূল্যায়ন করে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আখলাক আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি ছাত্রীদের। তারই ফল এটা।
শিক্ষার্থীদেরকে অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, গতবছরের তুলনায় আমাদের পাশের হার, জিপিএ-৫ এর হার সবই বেড়েছে। এবার তিন হাজার ৭৫৭ জন পরীক্ষা দিয়েছিল তার মধ্যে পাশ করেছে তিন হাজার ৫৮৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৩৭ জন। এবার পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এই অবদানের পিছনে ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ কামাল আহমেদ মজুমদার সার্বিক সহায়তায় আমাদের ছিলেন। দিয়েছেন বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। আমি তাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া বর্তমানে যারা দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তাদেরকে আমরা এখন থেকেই আলাদাভাবে পরিচর্যা শুরু করেছি।
মনিপুর স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি নূরে আলম বার্তা২৪.কম-কে জানান, গতবছর রেজাল্টে আমাদের একটু ছন্দপতন হলেও আমরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের যেকোন সমস্যায় পাশে আছি। আগামী দিনে আরও ভালো রেজাল্ট যেভাবে করা যায় তার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। আমাদের শিক্ষকগণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যথেষ্ট নিবেদিত।
প্রতি বছরের মতো এবারও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাইলস্টোন কলেজ। এবছর মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে মোট এক হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পাসের হার শতভাগ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ২৯৮ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ অর্জনের হার ৭৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এক হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার শতভাগ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে এক হাজার ২৬৯ জন। বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ অর্জনের হার ৮৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৩৪ জন। পাসের হার শতভাগ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে ২৯ জন।
শুরু থেকেই মাইলস্টোন কলেজ এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখছে। পাসের হার, জিপিএ-৫ অর্জন সব ক্ষেত্রেই অনন্য সাফল্যের ছোঁয়া।
নিয়মিতভাবে ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, আমরা ছাত্রছাত্রীদের গুণগতমানের শিক্ষা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ক্যালেন্ডার ভিত্তিক নিয়মিত একাডেমিক পাঠদান, বিশেষ একাডেমিক কার্যক্রম এবং সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম আমাদের ছাত্রছাত্রীদের আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে সহায়তা করে।
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমের মতে, মাইলস্টোন কলেজের প্রত্যাশা মতো ফলাফল লাভের জন্য প্রধান নিয়ামক হলো এখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা। এসএসসি পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করায় তিনি মাইলস্টোন কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী এবং সম্মানিত অভিভাবকদের আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দেখা গেছে, পরীক্ষায় বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আর অকৃতকার্য বেশি হয়েছেন মানবিক বিভাগে।
রোববার দুপুরে (১২ মে) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ তথ্য জানান।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিলেন পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৪শ ৩২ জন। তার মধ্যে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছেন। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে অংশ নিয়েছেন দুই লাখ ৭২ হাজার ১শ ২৭ জন। তার মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। মানবিক শাখা থেকে অংশ নিয়েছেন ছয় লাখ ৮২ হাজার ২শ ৯ জন। পাস করেছেন ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ২০ লাখ ৩৭ হাজার ২শ ৪২ জন শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১শ ৫৩ জন পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে পাস করেছেন ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১০টি শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ আর ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এবার মোট পরীক্ষার্থীদের তুলনায় মোট এক লাখ ৮১ হাজার ১শ ২৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর মধ্যে ছেলে-শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৩শ ৫৩ জন। আর মেয়ে-শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ হাজার ৭শ ৭৬ জন।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এর আগে রোববার সকাল ১০টার পর প্রধানমন্ত্রীর হাতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করা হয়। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহারসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সব শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।