‘আদিম’-এর পর মস্কো উৎসবে পুরস্কৃত ‘নির্বাণ’



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পুরস্কার হাতে পরিচালক আসিফ ইসলাম

পুরস্কার হাতে পরিচালক আসিফ ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসব রাশিয়ার ‘মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। এই চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক পুরনো সম্পর্ক। আমাদের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা এই উৎসবে একাধিকবার আমন্ত্রন পেয়ে রেড কার্পেট মাতিয়েছেন। আর যুরাজ শামীম তো সম্প্রতি তার ‘আদিম’ সিনেমাটি নিয়ে পুরস্কারও ছিনিয়ে এনেছেন। সেটি ছিল আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য অনন্য এক অর্জন।

এবার সেই উৎসব থেকে পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের আরেক সিনেমা ‘নির্বাণ’। সিনেমা স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। রাশিয়া থেকে পুরস্কারের খবর জানালেন পরিচালক আসিফ ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পুরস্কার ঘোষণার খবর তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। পুরস্কার হাতে নিয়ে এখনো তিনি কাঁপছেন।

আসিফ আরও বলেন, ‘এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার সিনেমার মধ্যে অফিশিয়াল সিলেকশনে জায়গা করে নিয়েছে মাত্র ১১টি সিনেমা। সেই সিনেমার মধ্যে আমাদের সিনেমাটি স্পেশাল জুরি পুরস্কার জিতেছে। আমাদের সিনেমার নাম ঘোষণার পর আমি চমকে উঠি। পুরস্কার হাতে নেওয়ার পরও একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখানো আমি কাঁপছি। কথা বলতে পারছি না। এই অর্জনটা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে।’

পুরস্কার হাতে পরিচালক আসিফ ইসলাম

১৯ এপ্রিল শুরু হয় মস্কো উৎসব। আজ ২৬ এপ্রিল ছিল সমাপনী আয়োজন। এই আয়োজনে শুরু থেকে অংশ নেন পরিচালক আসিফ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গতকাল ছিল সমাপনী দিন। আমি ভাবিনি পুরস্কার পাব। আমি আর অল্প কিছু সময় আছি রাশিয়ায়। পরে কালই বাংলাদেশে থাকব। এখন রাশিয়ায় আসা সাংবাদিক, প্রযোজকেরা যেভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন, সেটা হয়তো পারব না। অনেক কিছু মিস করব। বাংলাদেশে পুরস্কার নিয়ে যেতে পারছি—এটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।’

‘নির্বাণ’ সিনেমার শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালে। তখন করোনায় অনেকেই আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। আতঙ্কিত সেই সময়ে তরুণ নির্মাতা আসিফ ইসলামের মাথায় ভর করে, ছোট টিম নিয়ে সিনেমা বানাবেন তিনি। গল্পের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিরীক্ষাধর্মী সিনেমার কাজ শুরু করেন। এটা পরিচালকের প্রথম সিনেমা। দীর্ঘ সময় নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন।

আসিফ আরও জানান, শুরুতে সিনেমার চিত্রনাট্য ছিল ছোট। শুধু একটি আইডিয়া ছিল তাঁদের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিনেমার লেখক। দুজন একসঙ্গে শুটিংয়েও ছিলেন। দিনের পর দিন তাঁরা সংলাপহীন এই সিনেমা দাঁড় করিয়েছেন। পরিচালক বলেন, ‘এই পুরস্কার আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখবর।’

মস্কো উৎসবের লাল গালিচায় অভিনেত্রী প্রিয়াম অর্চি ও পরিচালক আসিফ ইসলাম

সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াম অর্চি। পুরস্কারের খবর রাতেই শুনেছেন তিনি। প্রিয়াম বলেন, ‘এই খুশি কীভাবে প্রকাশ করব, জানি না। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। পরিচালক নিজেই জানিয়েছেন। শোনার পরে ভাবছিলাম যে সিনেমাটি দুজন মানুষ দিয়েই শুরু। সেখানে চারজন অভিনেত্রী যোগ দিল। সিনেমা নির্মাণের পেছনের ঘটনার কথাই বেশি মনে পড়ছে। সিনেমার পরিচালক আসিফ ভাই, লিখেছেন আনোয়ার হোসেন ভাই। তাঁরা যে পরিশ্রম করেছেন, সেটাই মনে পড়ছে। আমরা টিমটা যে জার্নি নিয়ে শুরু করেছিলাম, সেটা আজ সফল হলো। এই প্রাপ্তি আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে।’

‘শেম’ সিনেমার জন্য সেরা ছবির অভিনেতার পুরস্কার হাতে জ্যাঁ র‌্যামন লোপেজ ও সেরা সিনেমার পুরস্কার হাতে নির্মাতা মিগেল স্যালগাডো

উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতে নেয় মেস্কিকো ও কাতারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি ‘শেম’। ইরানের সিনেমা ‘ব্রেথ অব কোল্ড’-এর জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন নাহিদ আজিজি। ‘শেম’ এর জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন জ্যাঁ র‌্যামন লোপেজ। জার্মানি ছবি স্লামাশেল-এর জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন মারাইকে বিকির। রাশিয়ান প্রিমিয়ার শাখায় সেরা সিনেমা হয়েছে লি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি। সেবার দুটি ইন্ডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার পেয়েছে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি; রাশান ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস জুরি পুরস্কার আর অন্যটি কমেরসান্ত পুরস্কার।

ইরানের সিনেমা ‘ব্রেথ অব কোল্ড’-এর জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন নাহিদ আজিজি

২০২২ সালে রাশিয়ার মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল যুবরাজ শামীম পরিচালিত সিনেমা ‘আদিম’। পরের বছর আবার অফিশিয়াল সিলেকশনে জায়গা পায় নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘পেয়ারার সুবাস’।

   

‘পুনর্জন্ম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘আরারাত’-এর নির্বাহী প্রযোজকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অকালপ্রয়াত প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান

অকালপ্রয়াত প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান

  • Font increase
  • Font Decrease

নির্মাতা ভিকি জাহেদের তুমুল জনপ্রিয় ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্জন্ম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘আরারাত’-এর নির্বাহী প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান আর নেই। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রূহানের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন নির্মাতা ভিকি জাহেদ।

তার বন্ধু-সহকর্মীরা জানিয়েছেন, আত্মহত্যা করেছেন রূহান। রাত দেড়টার দিকে নিজের রুমে সিলিং ফ্যানে ঝুলছিলেন তিনি। ভিকি জাহেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে ওর রুমমেট দরজা খুলে দেখে, রূহান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।’ নির্মাতা আরও জানান, ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে রূহানের মা–বাবা রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা হয়েছেন। তারা ঢাকায় ফিরলে লাশের ময়নাতদন্ত হবে।

ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্জন্ম’র পোস্টার

জানা গেছে, সম্প্রতি স্ত্রীর সঙ্গে রূহানের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, এর পর থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন রূহান। সামাজিক মাধ্যম দেখলেও বোঝা যায় হতাশায় ডুবে ছিলেন রূহান। 

সর্বশেষ ৪ মে একটি পোস্ট তিনি লিখেছেন, ‘আমার চেনা পৃথিবীর বুকে যেমন তুমি নাই, তোমার বুকেও আমি নাই! তাহলে কেন সেদিন বলেছিলে? আমার সঙ্গেই এই জন্ম কাটিয়ে দেবে? ভুল বুঝিও না। আমি দোষ দিচ্ছি না। জাস্ট বললাম আর কি!’ রূহানের এই অনুভূতির পোস্টে তাকে অকালে হারিয়ে শোকবার্তা দিচ্ছেন সহকর্মী-বন্ধুরা।

ওয়েব ফিল্ম ‘আরারাত’-এর নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন মাসুদুল মাহমুদ রূহান

রূহানের এই অকালপ্রয়াণের খবরে শোকে মুষড়ে পড়েছেন বন্ধু-সহকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যম ভরে উঠেছে শোকবার্তায়। রূহানের সঙ্গে তোলা একটি ভিডিও শেয়ার করে অভিনেতা শ্যামল মওলা লিখেছেন, ‘এই হাসি আর কখনো হাসবে না…ওপারে দেখা হবে…রূহান।’

জনপ্রিয় অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব অকালপ্রয়াত এই প্রযোজকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কেন করলি রুহান???? কেন করলি রুহান???? কেন করলি রুহান????’

সিনেমাটোগ্রাফার বিদ্রোহী দীপনের সঙ্গে অকালপ্রয়াত প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান (ডানে)

‘পুনর্জন্ম’, ‘রেডরাম’, ‘চম্পা হাউজ’, ‘শুক্লপক্ষ’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘আরারাত’–এর মতো জনপ্রিয় ওয়েব ফিল্ম, নাটক-সিরিজের নির্বাহী প্রযোজক তিনি। ভিকি জাহেদের বেশির ভাগ কাজেরই নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন রূহান। গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত সিরিজ ‘রুমি’রও লাইন প্রোডিউসার ছিলেন রূহান। এ সিরিজটিরও নির্মাতা ছিলেন ভিকি জাহেদ।

;

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই, যেভাবে সম্পৃক্ত সোহেল চৌধুরী হত্যায়



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরী

আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

আজিজ মোহাম্মদ ভাই, পরিচিত চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবে। তাকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি এই রহস্যময়তাকে আরো আলোচনায় নিয়ে এসেছে। পারিবারিক এ পদবী তিনি পেয়েছেন পিতা মোহাম্মদ ভাই এর কাছ থেকে। যুবক বয়স থেকেই প্লে-বয় হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে, তৈরি করেন নানা বিতর্ক, আলোচনা। মুখরোচক অনেক গল্পও রয়েছে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে নিয়ে। অভিনেতা হত্যা ও নায়িকাদের নিয়ে কেলেঙ্কারিসহ চলচ্চিত্র জগতের সব অপরাধে যেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম। এছাড়াও রয়েছে মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। তবে এসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ না থাকায় সবসময় তিনি থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বর্তমানে থাইল্যান্ডে প্রবাসী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। বেশ কিছুদিন আলোচনার বাইরে থাকলেও, বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ২৫ বছর পর চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারক। এবার আবারও আলোচনায় এসেছেন রহস্যময় এ ব্যক্তি।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা জানিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাইয়ের একটি ঘটনা থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই, আজিজের আত্মীয় বান্টি ইসলাম, বান্টির বন্ধু আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেলের বিরোধের শুরু। এর জেরেই ট্রাম্প ক্লাবের সামনে ভাড়াটে লোক দিয়ে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে।

এর আগে ২০১৯ ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় আরেকবার আলোচনায় এসেছিলেন বহুল আলোচিত এই ব্যক্তি। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মালিকানাধীন গুলশান-২-এর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বাড়ির ছাদে মিনি বার ও ক্যাসিনোর সন্ধান পেয়েছিল। এছাড়া বিপুল পরিমাণে বিদেশি নামি-দামি ব্র্যান্ডের মদ, গাঁজা, সিসার উপকরণ এবং ক্যাসিনো সামগ্রীও জব্দ করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

কে এই আজিজ মোহাম্মাদ

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঠিকুজি অনুসন্ধানে জানা যায়, শিয়া মুসলিম ও প্রিন্স করিম আগা খানের ইসমাইলি সম্প্রদায়ভুক্ত তারা। মোহাম্মদ ভাই পরিবার নিয়ে ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসেন। ধণাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় বসবাস শুরু করে।

পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত থাকলেও ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে ঢুকে পড়েন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। অলিম্পিক ব্যাটারি, বেলপেন অলিম্পিক ব্রেড, বিস্কুট ইত্যাদি ছিল তাদের পারিবারিক ব্যবসা।

আজিজ মোহম্মদ ভাই এরশাদ জামানায় লাইমলাইটে আসেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কন্যা মুনমুন সেনকে ঢাকায় এনে। এক সময়ের টালিগঞ্জের হার্টথ্রব এ নায়িকা বহুবার ঢাকা আসেন।

কথিত আছে, সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা আছে উপমহাদেশের কুখ্যাত ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে। তার পরামর্শে আজিজ মোহাম্মদ ঢুকে পড়েন সিনেমা ব্যবসায়।

পরিবারের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই

তার প্রোডাক্টশন হাউস এমবি ফিল্মস ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছে। শুরুতেই নায়িকাদের নিয়ে মুখরোচক খবরে আসে এই প্রযোজকের নাম। আশির দশকের বাংলা সিনেমার নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে আসে তার নাম। এই হত্যাকাণ্ডটি বনানীর কামাল আতার্তুক সড়কের তৎকালীন ট্রাম্পস ক্লাবে সংঘটিত হয়।

জনশ্রুতি আছে, জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুতেও তাঁর হাত রয়েছে। এ নিয়ে মোহাম্মদ আজিজ ভাইকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

জানা যায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে নারীঘটিত বিতর্কে জড়িয়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তবে তাকে মুক্ত করতে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ধর্মীও নেতা প্রিন্স করিম আগা খান নিজেই বাংলাদেশে এসেছিলেন।

তবে এতসব অভিযোগে যার নামে, তার এসব বিষয়ে নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ! দিব্যি থাইল্যান্ডে বসে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। গুলশানের বাসা দেখাশুনা করেন তার ভাই-বোন।

নায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যায় যেভাবে জড়িত আজিজ মোহাম্মাদ

সোহেল চৌধুরীকে হত্যার কারণ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে যে সুপার ট্রাম্পস ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপকে ঘিরেই মূলত আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয় এবং পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ড ঘটে।

সেই দিন রাতে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গান বন্ধ করতে বলেছিলেন সোহেল ও তাঁর বন্ধুরা। গান বন্ধ করা নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী আজিজের ওপর ক্ষেপে যান। তখন সোহেলের বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে যান। এ সময় ক্লাবের বাথরুমে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এই ট্রাম্প ক্লাবের মালিকানা ছিল বান্টি ও আশীষের। বিরোধের শুরু এখান থেকেই।

তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগপত্রে বলেন, ‘বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের আট তলায় সুপার ট্রাম্পস ক্লাব। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও নারী দিয়ে অশ্লীল নাচ হতো। সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।’

মামলার এক সাক্ষীর তথ্যমতে, খুন হওয়ার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝগড়া হয়। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্লাবের বান্টি ইসলামের সঙ্গে সোহেলের দুই থেকে তিনবার ঝগড়া হয়। পরে তা মিটেও যায়। তবে আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। আশীষ চৌধুরীই সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দেন। ভবিষ্যতে সোহেলকে ক্লাবে না আসার জন্য হুমকিও দেন।

এছাড়া সোহেল চৌধুরী হত্যা নিয়ে তাঁর মা নূরজাহান বেগম আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, সোহেল খুন হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে টেলিফোনে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলামের লোকজন হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, সোহেলের মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন রাত দুইটায় সোহেল বাসায় ফেরেন। ক্লাবের সামনে জামে মসজিদ। পরে সোহেল আবার ক্লাবে গেলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে দুটি গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

মামলার অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর বাকবিতণ্ডা হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। তারা তখন সোহেল চৌধুরীকে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা পেশাদার খুনি দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করান।‘

২৩ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে ডিবির তদন্তে উঠে আসে, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে খুন করা হয়।

;

মগবাজার থেকে চলচ্চিত্র পরিচালকের মরদেহ উদ্ধার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মগবাজার দিলু রোডের একটি বাসা থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক এম এ আউয়ালের (৬০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি সহযোগী পরিচালক হিসেবে ‘সিটি রংবাজ’ ছবিতে কাজ করেন। এরপর পূর্ণ পরিচালক হিসেবে ‘রাজপথের বাদশা’ ও ‘কাছের শত্রু’ ছবি পরিচালনা করেন।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক বলেন, খবর পেয়ে মগবাজার দিলু রোডের ৩৪৮/১ নম্বর বাড়ির পাঁচতলার একটি মেস থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ওই মেসে তিনিসহ কয়েকজন সহকর্মী মিলে ভাড়া থাকতেন। তার রুমেরটারা যে যার মত কাজে চলে যান। রাতে বাসায় ফিরে রুমের দরজা যখন বন্ধ পেয়ে ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে থানায় খবর দেন। পরে সেখানে গিয়ে দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় রুমের মধ্যে বিছানায় শায়িত অবস্থায় ছিলেন তিনি।

এসআই আরও জানান, ওই চলচ্চিত্র পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবুও বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

পরিচালক এমএ আউয়ালের রুমমেট দুলাল হোসেন জানান, রুমটিতে চারজন মিলে মেস করে থাকতেন। তাদের একজন রুমমেট বাড়ি গিয়েছেন। দুলালসহ অন্য রুমমেট সকালে যে যার মত কাজে চলে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুলাল হোসেন বাসায় ফিরে রুমে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। তখন অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পান না। এরপর বাড়ির দারোয়ান ও মালিককে খবর দেন। তারাও অনেক ডাকাডাকি করেন। পরে তারা থানায় খবর দেন।

তিনি জানান, আউয়ালের হার্টের সমস্যা ছিল। এছাড়া কিডনি জটিলতা ছিল দীর্ঘদিনের। চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং বাসায় নিয়মিত ঔষধ সেবন করতেন। বিয়েসাদী করেননি আউয়াল। এছাড়া পরিবারের সাথেও তার কোনো যোগাযোগ ছিল না।

;

সিনেমা প্রযোজনায় বাঁধন, নির্মাতা দিতিকন্যা লামিয়া



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
আজমেরী হক বাঁধন / ছবি : ফেসবুক

আজমেরী হক বাঁধন / ছবি : ফেসবুক

  • Font increase
  • Font Decrease

নিঃসন্দেহে এ সময়ে শোবিজ অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত তারকা আজমেরী হক বাঁধন। অকারণে নয়, শুধু ভালো কাজ আর ভালো উদ্যোগের জন্য আলোচিত তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নিজের কাজ দিয়ে বাংলাদেশকে করে চলেছেন গর্বিত।

এই তারকা এবার নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চলেছেন। একটু আগেই বার্তা২৪.কমকে জানালেন সে কথা। বাঁধন বলেন, ‘আমি একটি সিনেমার এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হতে চলেছি। গল্প, নির্দেশক সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। এখন ফাইন্যান্সার খুঁজছি। সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে বড়পর্দার জন্যই ছবিটি করব।’

আজমেরী হক বাঁধন / ছবি : ফেসবুক

বাঁধন আরও জানালেন, তার প্রযোজিত প্রথম সিনেমাটির নাম ‘মেয়েদের গল্প’। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এটি একটি নারীকেন্দ্রীক সিনেমা হতে চলেছে। মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাদের সমাজ কেমন সেটি ফুটে উঠবে এই ছবিতে। ছবিটি পরিচালনা করবেন লামিয়া চৌধুরী। নিশ্চয়ই তিনি নিজের মেধার জোরেই শোবিজে একদিন জায়গা করার স্বপ্ন দেখেন। তবে পাঠকের অবগতির জন্য বলা, লামিয়া একজন স্টারকিড। তার মা এ দেশের চলচ্চিত্রঅঙ্গনের অন্যতম তারকা প্রয়াত চিত্রনায়িকা দিতি।

লামিয়া চৌধুরী ও আজমেরী হক বাঁধন

বাঁধনের ভক্তরা হয়ত জেনে থাকবেন, দিতির সঙ্গে তার সম্পর্ক কতোটা গভীর ছিল। দিতির বিভিন্ন কাজ ও গুণাবলীর দ্বারা একসময় প্রভাবিত হয়েছেন বাঁধন। ফলে সেই সম্পর্কের খাতিরেই কি লামিয়ার মতো একজন নতুন পরিচালকের ওপর ভরসা করে কাজ করছেন বাঁধন? তিনি এখন প্রতিটি কাজ যতোটা বিচার বিশ্লেষন করে করছেন, এই কাজটিও কি সেই মান বজায় রাখতে সক্ষম হবে?

সরাসরি এমন প্রশ্নের জবাবে বাঁধন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই কাজটি খুব ভালো হবে। লামিয়া আমার ওপর কিছুই চাপিয়ে দেয়নি। ইনফ্যাক্ট সে একবারও আমাকে কাজটি করার অনুরোধ করেনি। গল্প আমাকে দিয়েছে, আমার পছন্দ হয়েছে বলে নিজেই তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছি। গল্পের কিছু জায়গায় আমার ইনপুটও দিয়েছি। সে সাদরে সেগুলো গ্রহণ করেছে।’

আজমেরী হক বাঁধন / ছবি : ফেসবুক

বাঁধন আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমার পথচলা সহজ ছিল না। আমি সমস্ত বাঁধা ঠেলে নিজের মতো করে পথ চলতে চেষ্টা করেছি এবং এতোদূর এসেছি। আমি জানি, প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি রিস্কি কাজ। তারওপর আবার পরিচালক ও গল্পকার লামিয়া একেবারেই নতুন। কিন্তু আমি নিজেই চেয়েছি কাজটি করতে। আপনারা একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমি বহুবার বহু জায়গায় বলেছি যে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নারী লেখক ও নির্দেশক আসা প্রয়োজন। মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমাজ কেমন সেটিও আমাদের কাজে ফুটে উঠুক সেটা চাই। আমি অনেক চেষ্টাও করেছি নারী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার। সেই জায়গা থেকে লামিয়ার গল্প যেহেতু আমাকে ভীষণ আলোড়িত করেছে সেহেতু আমি চেয়েছি তার পাশে থাকতে। এজন্যই এখনই প্রযোজকের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছি।’

;