প্রবাসীদের গল্প নিয়ে এ পর্যন্ত বহু নাটকই নির্মিত হয়েছে যা দর্শকমনে ছাপও রেখেছে। তেমনি বাস্তবধর্মী গল্পে নির্মিত সাম্প্রতিক নাটক ‘বাহাদুরি’ও দর্শকদের আবেগে ভাসাচ্ছে! এটি পরিচালনা করেছেন শেখ নাজমুল হুদা ঈমন।
গল্পে দেখা যায়, সাত বছর পর বিদেশ থেকে দেশে আসেন নিলয় আলমগীর। কিন্তু তার মেয়ে তাকে চেনে না, বাবা বলে ডাকে না। বিদেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা পাঠালেও দেশে এসে ব্যবসা করার জন্য পরিবারের কাছ থেকে কোন সাহায্য পান না। অথচ তার কাছে স্ত্রী, শালী, শ্বাশুড়ি, ভাই, বাবার নানা আবদার। যখন নিলয় সবকিছু বুঝতে পারলো তখন তার দেশে থাকার ইচ্ছেটাই মরে গেল!
বিজ্ঞাপন
ইউটিউবে মুক্তির পর দারুণ সাড়া পাচ্ছে নাটকটি, বিশেষ করে প্রবাসীদের। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নাটকটি দেখেছে ২৫ লাখেরও বেশি দর্শক এবং মন্তব্য পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। সব ইতিবাচক মন্তব্য এবং শেষ দৃশ্যে এসে আবেগাপ্লুত হচ্ছেন দর্শক।
ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে অনেকেই লিখেছেন, ‘একজন প্রবাসী হিসাবে নাটকটি আমার জীবনের সাথে মিলে গিয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ পরিচালক ভাইকে, তিনি বাস্তবসম্মত একটি নাটক তৈরি করেছেন এবং এটা দেখে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের শিক্ষা নিতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
নির্মাতা নাজমুল হুদা ঈমন বলেন, ‘যখন নাটকটি সম্পাদনার কাজ করছিলাম তখন শেষ দৃশ্যে নিলয় আলমগীর ভাইয়ের অভিনয় দেখে আমার চোখেও পানি চলে আসে। অভিনয় দিয়ে একজন নির্মাতাকে আবেগপ্রবণ করে তোলা চাট্টিখানি কথা না।’
নিলয়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও জানালেন এই নির্মাতা, ‘নিলয় ভাইকে নিয়ে শুটিং করার আগে অনেকেই আমাকে বলছিল, তাকে নিয়ে এরকম গল্প দর্শক পছন্দ করবে না। এমনকি এও বলেছিল যে, তিনি নাকি সেটে নির্মাতাকে ডমিনেট করেন, স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন করে ফেলেন। কিন্তু আমি এমন কিছুই নিলয় আলমগীরের মধ্যে পাইনি। স্ক্রিপ্টটা পড়ার পর সেখান থেকে একটা শব্দও তিনি পরিবর্তন করেননি বরং তার সহশিল্পীদের সঙ্গে আলোচনা করে পুরো কাজটা কীভাবে ভালো করা যায় সেটা নিয়ে তাকে উদগ্রীব হতে দেখেছি।’
‘বাহাদুরি’ নাটকে নিলয় আলমগীর ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন তানিয়া বৃষ্টি, শোয়েব মনির, শাহবাজ সানি প্রমুখ। নাটকটি দেখা যাচ্ছে বাংলাভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে।
একটু আগেই শপথ গ্রহণের মধ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে যোগ দিলেন দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তবে তার এই যাত্রাপথ ফুলে মোড়ানো ছিল না। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ফারুকীকে আসতে হয়েছে আজকের অবস্থানে।
তাকে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অনন্য কণ্ঠস্বর’। না, এটা আমার কথা নয়। ২০১৮ সালে যখন ‘ডুব’ সিনেমাটি বাংলাদেশ থেকে অস্কার প্রতিযোগিতায় গিয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ভ্যারাইটি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে এই কথাটি বলেছিলো।
নব্বইয়ের দশক ও পরবর্তী সময়ে কোনো নাটক প্রচার হলে সেখানে বেশির ভাগ সময়ই মধ্যমণি থাকতেন পর্দার সামনের তারকারা। পরিচালকদের নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যেত না। তবে ২৫ বছর আগে ভিন্ন ঘটনা ঘটে। সেই সময়ে নাটক নির্মাণ করে আলোচনায় এলেন এক তরুণ মুখ। শুরুতেই তাকে নিয়ে সমালোচনা। তিনি বাংলা নাটককে ছক-কষা ড্রয়িংরুমের ভাষা থেকে বের করেছেন। শুধু ভাষাই নয়, যার কাজের পুরো চিত্রনাট্য নেই, তিনি কোনো ব্যাকরণও মানেন না। ‘নিয়ম ভাঙছেন’ বলে জোরেশোরে তার সমালোচনায় নিয়ম করে চলতে থাকে। অন্যদিকে কড়া সমালোচনা মধ্যেই মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী নামটি দর্শকদের কাছে হয়ে উঠতে থাকে তারকাদের মতোই আলোচিত। বলছি ছবিয়ালের এই প্রধান মানুষটির কথা। দেখতে দেখতে সেই ছবিয়াল পেরিয়ে গেল ২৫ বছর।
স্কুল, কলেজ, আড্ডায় বা পরিবারে যেভাবে কথা বলা হতো, যেভাবে কেউ আচার-আচরণ করতেন, সেভাবেই গল্পগুলো তুলে ধরতে থাকেন ফারুকী। প্রথম ‘ওয়েটিং রুম’ সেটাই মনে করিয়ে দেয়। জীবনযাপনকে সহজভাবে পর্দায় তুলে ধরতে গিয়ে তোপের মুখে পড়লেও সমালোচনার ধার ধারেননি তিনি। তথাকথিত রীতি ভেঙে তিনি বাংলা নাটকে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছেন।
যিনি তরুণদের বুঝতে পেরেছিলেন। যে কারণে তার নির্মিত ‘চড়ুই ভাতি’, ‘সিক্সটি নাইন’, ‘৫১বর্তী’, ‘৪২০’, ‘ক্যারাম’ নাটকগুলো দর্শকেরা সহজেই আপন করে নিয়েছিলেন। ২০০০ সাল পরবর্তী নাটকের অন্যতম নাম হয়ে ওঠেন ফারুকী। তাঁর কাজ দিয়ে আলোচনায় আসেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশাদের মতো জনপ্রিয় তারকারা।
১৯৯৮ সাল, ছবিয়াল থেকে ফারুকীর প্রথম নির্মাণ ‘ওয়েটিং রুম’, সেই সময় কোনো টিভি চ্যানেল কিনতে চায়নি ফিকশনটি। ২৫ বছরে এসে চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নামের আগে যুক্ত হয়েছে বিশেষণ। তিনি এখন অন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো সে স্বীকৃতি দিয়েছে তাকে।
‘ছবিয়াল’ নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মালিকানাধীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারেই তিনি নির্মাণ করে আসছেন বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা। নিজস্বতা তৈরি করার এই চেষ্টাই অনন্য করে তুলেছে ছবিয়াল ও ফারুকীকে। এ যাত্রায় ছবিয়াল ও ফারুকীকে অনেকেই সাহায্য করেছেন। যাদের মধ্যে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও চ্যানেল ওয়ানের কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন অন্যতম।
এর পাশাপাশি ছবিয়াল আরও একটি দৃষ্টান্ত রেখে গেছে দেশের বিনোদন অঙ্গনে। সেটি হলো, ফারুকীর পাশাপাশি তরুণ নির্মাতা তৈরি করা। যারা একসময় সহকারী পরিচালক হিসেবে ছিলেন ছবিয়ালে, তারাই এখন নিজেদের নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন। অনেকেই তাদের গুচ্ছ আকারে ‘ভাই বেরাদার’ নামে চেনেন। যাদের মধ্যে অন্যতম রেদওয়ান রনি, আশুতোষ সুজন, শরাফ আহমেদ জীবন, আশফাক নিপুণ, ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও আদনান আল রাজীব।
ছবিয়ালের উল্লেখযোগ্য ফিকশন ও ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে রয়েছ ‘আয়শা মঙ্গল’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘কানামাছি, ‘চড়ুইভাতি, ‘৬৯’, ‘৫১বর্তী, ‘৪২০’। সিনেমার মধ্যে রয়ছে ‘ব্যাচেলর’, ‘টেলিভিশন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘ডুব’, পিঁপড়াবিদ্যা’ ইত্যাদি।
ফারুকীর বেড়ে ওঠা পূর্ব নাখালপাড়ায়। কিশোর বয়স থেকেই তার মাথায় ভর করে সিনেমার ফ্রেম। পড়াশোনা আর দেশ-বিদেশের সিনেমা দেখে সময় কাটতে থাকে। যার মাথায় ঘুরতে থাকে আকিরা কুরোসাওয়া, ফেদেরিকো ফেলিনি, জ্যঁ-লুক গদার, ফ্রঁসোয়া ত্রুফো, আব্বাস কিয়ারোস্তামিদের মতো খ্যাতনামা সিনেমার দৃশ্যপট, তিনি থেমে থাকার পাত্র নন। বাধা উপেক্ষা করে ফারুকীর কাঁচা হাত শুরু হয় দক্ষতার সঙ্গে নাটক থেকে সিনেমা পরিচালনার কাজ, যা ছিল সময়ের তুলনায় অনেক সাহসের।
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা ‘ব্যাচেলর’ দিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েন এই পরিচালক। এগুলোকেও আগের মতোই তোয়াক্কা না করে এগিয়ে চলেছেন। কারণ, দর্শকদের কাছ থেকে বাহবা পাচ্ছিলেন। ফারুকী মনে করেন তার নির্মিত সব গল্পই, আন্তব্যক্তি সম্পর্কের গল্প। যেখানে চারপাশে দেখা কিছু চরিত্র থাকে। এই চরিত্রগুলো একে অন্যের সঙ্গে ইন্টারেকশন তৈরি করে। এরই মধ্য দিয়ে তৈরি গল্পের ন্যারেটিভ স্ট্রাকচার, যা প্রতিফলিত করে সমাজ বাস্তবতাকে। যে কারণে পরবর্তী ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’,‘ ডুব’, ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’সহ প্রায় সব সিনেমা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রশংসিত হতে থাকে। হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক নির্মাতা।
ফারুকীর সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দীর্ঘদিন সেন্সর বোর্ড আটকে আছে। গুঞ্জন রয়েছে, ছবিটি গুলশানের হলি আর্টিসানের সাড়া জাড়ানো ঘটনা নিয়ে তৈরি, তাই বিগত সরকার ছবিটি মুক্তি দিতে চায়নি। এই ছবি মুক্তি দিতে ফারুকীকে দারুণ বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে যাননি, লড়াইটা করে গেছেন নিজের মতো করে।
ফারুকীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল দলবল নিয়ে চলার। সেটা ফিল্ম মেকিংয়ে হোক, কোনো দাওয়াতে হোক বা নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেওয়ার সময়েই হোক, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। যে কারণে ৩/৪ জন সহকারীর জায়গায় ছবিয়াল টিমে থাকত ১০/১২ জন সহকারী। এ জন্যও সমালোচনার মুখে পড়তে হতো। তবে এত সহকারী রাখার কারণ প্রসঙ্গে ফারুকী এক সাক্ষাৎকার জানিয়েছিলেন, তার কাজগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরে তিনি পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন। তার কাছে মনে হতো, যত মেধাবী তরুণ তার সঙ্গে যুক্ত হবে ততই ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো কাজ হবে।
তারেক মাসুদ পরবর্তী সময়ে ঢাকার সিনেমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কয়জন সিনেমা দিয়ে তুলে ধরেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফারুকী। একই সঙ্গে কমার্শিয়াল ও শৈল্পিক ঘরানার সিনেমা বানিয়ে তিনি অনেক তরুণকেই উৎসাহ জুগিয়েছেন। তরুণেরা কেউ কেউ মনে করেন, ফারুকীই তাদের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসব চিনিয়েছেন। বুসান, মস্কো, সিঙ্গাপুর, এশিয়া প্যাসিফিকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে নিয়মিত তার সিনেমা মনোনয়ন, পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছেন।
বেশ পরিণত হয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে বিয়ে করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শোবিজের আদর্শ দম্পতি হিসেবে সুনাম রয়েছে তাদের। এই দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে ইলহাম নামের এক কন্যা সন্তান। যাকে পাওয়ার হৃদয়স্পর্শী ঘটনা নিয়ে ফারুকী নির্মাণ করেছেন ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমাটি।
এতে তিশার বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে ফারুকী অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ফারুকীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নির্মাতা হওয়া কিংবা আজকের সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যে সফল ও কঠিণ জার্নি তাতে বরাবরই মেরুদণ্ড হয়ে শক্তি জুগিয়েছেন তিশা। এ কথা ফারুকী বরাবরই স্বীকার করেন।
বদলে ফেলা হচ্ছে গাজীপুরের কবিরপুরে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি’র নাম। প্রাথমিকভাবে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ দেশের সর্ববৃহৎ এই ফিল্ম সিটির নাম পরিবর্তনে প্রস্তাব দেয়।
আজ (১০ নভেম্বর) বিকেলে ফিল্ম সিটির ইনচার্জ নাসির উদ্দিন বলেন, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাশ হয়নি। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে নতুন নাম হবে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’। তবে লিখিতভাবে এখন আমরা কোথাও আগের নামটি ব্যবহার করছি না।
‘এফডিসি থেকে নির্দেশ আছে কবিরপুরস্থ ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’ বলতে। ১৯৮০ সালে যখন ফিল্ম সিটি নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয় তখন এই নামটিই ছিল। ২০১৫ সালে থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি’ রাখা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে, বাকিটা সবারই জানা আছে।’
৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৫ একর (৩১৭ বিঘা) জমির উপর ফিল্ম সিটিটি অবস্থিত। এই প্রকল্পের পুরোপুরি কাজ হবে ২০২৮ সালে। যেখানে থাকবে শিল্পীদের শুটিংয়ের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। সেইসঙ্গে আধুনিক সব শুটিং স্পট, ফ্লোর, ভিএফএক্স, যন্ত্রপাতি ও স্টুডিও।
সিনেমা সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, ফিল্ম সিটি পুরোপুরি চালু হলে দেশে মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মিত হবে। শুটিং করতে বিদেশ নির্ভরতা কিছুটা কমবে। চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদের সিনেমা হলে যাওয়ার আগ্রহ বাড়বে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৭ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ সংস্কারের কাজ সাধ্যমতো চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শুরুতেই এই সরকার প্রতিটি মন্ত্রনালয়ের জন্য আলাদা আলাদা উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়নি।
বরং প্রতিজন উপদেষ্টা একাধিক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু এরইমধ্যে উপদেষ্টাদের কার্যভার কমানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাইতো উপদেষ্টামণ্ডলীতে যোগ হয়েছে নতুন নাম।
তারই ধারাবাহিকতায় উপদেষ্ঠা তালিকায় নাম সামিল হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর। শোনা যাচ্ছে, আজ সন্ধ্যায় উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন তিনি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বরাবরই বিগত সরকারের অন্যায় কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এসেছেন। শুধু তাই নয়, ছাত্র আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকেই তিনি পাশে ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরও নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন ফেসবুকের পাতায়। ফলে তার উপদেষ্টা হওয়ার গুঞ্জন বেশ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিলো। অবশেষে সেই গুঞ্জন সত্য হতে চলেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন টিভি নাটকে জনপ্রিয় তারকাদের মায়ের চরিত্রে সুঅভিনয় দিয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নেওয়া অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আর ফেরা হলো না। অবশেষে জীবনযুদ্ধে পরাজিত হলেন এই প্রিয় মুখ। আজ সকাল ছয়টায় রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসায় মারা গেছেন অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।) তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন অভিনয়শিল্পী মনিরা আক্তার মিঠু।
অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নিয়মিত আফরোজার কথা হতো অভিনেত্রী মনিরা মিঠুর সঙ্গে। সময় পেলেই ছুটে যেতেন সহকর্মীকে দেখতে। যেতে না পারলে প্রায়ই কথা হতো মুঠোফোনে। আজ সেই প্রিয় সহকর্মীকে শেষবারের মতো দেখতে পারলেন না তিনি। এই অভিনেত্রী টাঙ্গাইলে একটি শুটিংয়ে রয়েছেন।
মনিরা মিঠু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জরায়ু ক্যানসার থেকে আফরোজা আপার ক্যানসার ফুসফুসে পর্যন্ত চলে যায়। যার চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। তিনি একাধিকবার ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয় অনেক বাড়তে থাকে। হাসপাতালেই ছিলেন, ১৫ দিন ধরে তিনি বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।’
জানা যায়, দুই বছর আগে তার ক্যানসার ধরা পড়ে। পরে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিলেও পরে তিনি মুম্বাইয়ে চিকিৎসা নিতে যান। গত বছর শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তিন মাস ধরে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। এ সময় তার চিকিৎসার জন্য অনেকেই এগিয়ে আসেন।
২০০৮ সালে প্রথম অভিনয় শুরু করেন আফরোজা হোসেন। ইউনেসকোর সচেতনতামূলক নাটক দিয়ে তার পথচলা শুরু হয়। এটি দুই বছর বিটিভিতে প্রচারিত হয়। তখন তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করতেন। চাকরির ফাঁকে করতেন অভিনয়। তিনি মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, মাহফুজুর রহমান, কচি খন্দকারসহ অনেকের নির্মিত নাটকে অভিনয় করতে থাকেন।
২০১৩ সালে আফরোজা সিদ্ধান্ত নেন, শুধু নাটকেই অভিনয় করবেন। সেই থেকে চাকরি ছেড়ে টানা অভিনয়ে। তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন অনন্য মামুনের পরিচালনায় ‘আবার বসন্ত’ সিনেমায় অভিনয় করে।
এ ছাড়া ‘ঠেটারু’, ‘সূর্য অস্তের আগে’, ‘বিদেশি ছেলে’সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। নাটকের চেয়ে তিনি ইউনেসকো, ইউনিসেফ, ইউএনডিপি ও বিবিসির তথ্যচিত্রে বেশি নাম লিখিয়েছেন।
অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন দুই ছেলে রেখে গেছেন। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা শেষে এখন চাকরি করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, কল্যাণপুর হাউজিং সোসাইটিতে তার জানাজা হয়েছে। কোথায় দাফন হবে, সেটা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।