বিপ্লবের মহানায়ক



প্রদীপ কুমার দত্ত
বিপ্লবের মহানায়ক

বিপ্লবের মহানায়ক

  • Font increase
  • Font Decrease

মহানায়ক শব্দটি বাঙালি মানসে ছবির জগতে অবিসংবাদিত শীর্ষস্থানীয় উত্তমকুমারকে মনে করিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন রূপালী পর্দায় তুলনাহীন। আজও তা-ই আছেন। তবে আমরা আজ স্মরণ করছি দেশমাতৃকার সেবায় আত্মোৎসর্গ করা এক জনগণমন অধিনায়ককে। তিনি বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অত্যাচার ও নাগপাশ থেকে মুক্তির দিশারী, পরাধীনতার জিঞ্জির ছিন্ন করার উদাহরণ সৃষ্টিকারী, লাখো কোটি ভারত উপমহাদেশের তরুণ-তরুণীর জীবনে আদর্শের আলোকবর্তিকা, আমাদের চট্টগ্রামের বীর সন্তান মাস্টরদা সূর্য সেন।

আজ তার ফাঁসি দিবস। ১৯৩৪ এর ১২ জানুয়ারি ইংরেজ শাসকরা চট্টগ্রাম জেলখানার ফাঁসির মঞ্চে তার অত্মাচারে জর্জরিত মৃতপ্রায় নশ্বর দেহকে ঝুলিয়ে জীবনাবসান ঘটায়। একই সঙ্গে তার অন্যতম প্রধান সহযোগী বিপ্লবী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদারকেও একইভাবে সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে প্রাণবিয়োগ ঘটায়। নিজের জীবন দিয়ে সূর্য সেন মৃত্যুঞ্জয় হয়ে গেলেন। সারা ভারতবর্ষে, বিশেষ করে বাংলায় মুক্তিকামী জনতার তিনি হয়ে উঠলেন চোখের মণি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকালে এবং যুদ্ধকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মন মানসে যেসকল বীর বিপ্লবী গভীর প্রভাব ফেলে তাদের অনুপ্রাণিত করতেন তাদের মধ্যে মাস্টারদা ছিলেন অন্যতম।

বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত করে ছলে বলে কৌশলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শ’খানেক বছর ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ঔপনিবেশিক ও ব্যবসায়িক নির্মম শোষণ চালায়। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়েও তারা ব্রিটিশ রাজ সরকারের সনদ বলে বাণিজ্য করা, নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করে বাণিজ্য সুরক্ষার স্বার্থে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এবং দখলকৃত এলাকায় নিজ শাসন ও কর ব্যবস্থা চালু করে যেকোনও উপায় অবলম্বন করে সেই কর আদায় করাই ঔপনিবেশিক শাসনমূলক কাজে ব্যাপৃত হয়। শ’খানেক বছরের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ ভারত উপমহাদেশে নিজ কর্তৃত্ব কায়েম করে তারা এদেশের অঢেল সম্পদ লুণ্ঠনে প্রবৃত্ত হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের বিরুদ্ধে জন অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে এবং ১৮৫৭ তে সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সেই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

কোম্পানির সেনা এবং তাদের মিত্র কোনও কোনও দেশীয় করদ রাজ্যের তৎপরতারয় সেই বিদ্রোহ কায়ক্লেশে দমন করলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারল না। ব্রিটিশ রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত করা হলো ভারতবর্ষকে। তাতে আমাদের পিতৃপুরুষেরা সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের সৃষ্ট স্থানীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসন শোষণের বেড়াজালে দৃঢ়তর ভাবে আবদ্ধ হলেন। উচ্চশিক্ষিত, অর্থবান ও দেশপ্রেমিক ভারতীয়রা স্বদেশবাসীর অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করলেন। কিছু ব্রিটিশ সচেতন ব্যক্তিবর্গও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠনে সাথে থাকলেন। কংগ্রেস ব্রিটিশ ভারতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাবিদাওয়া পেশ, দেন-দরবার এবং সময়ে সময়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন চালাতে লাগলো।

কংগ্রেস সৃষ্টির ২০ বছর পর প্রতিষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম দল মুসলিম লীগ। ইতোমধ্যে দেশের তরুণ সমাজের এইসকল রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি মোহভঙ্গ ঘটল। তারা মনে করলেন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে অত্যাচারী বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান অসম্ভব। শুরু হলো দেশমুক্তির নতুন অধ্যায় অগ্নিযুগ। এই ধারায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল বাংলা এবং পাঞ্জাবের যুবসমাজ। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষ, হেমচন্দ্র, উধম সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, আসসফাকুল্লা, রামপ্রসাদ বিসমিল, বীর সাভারকার প্রমুখের নেতৃত্বে দুঃসাহসিক সশস্ত্র আঘাত হানতে থাকেন এই বিপ্লবী দেশমাতৃকার সেবকরা। একটু একটু করে ভিত কেঁপে উঠতে থাকে ব্রিটিশ শাসকদের। সাথে সাথে বৃহত্তর পরিসরে রাজনৈতিক আন্দোলনও চলতে থাকে ঔপনিবেশিক শোষণমুক্ত স্বায়ত্তশাসনের জন্য। এর মাঝেই শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

এক পর্যায়ে ব্রিটিশ ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানান মহাযুদ্ধে তাদের মিত্র শক্তিকে সমর্থন জানানোর। বিনিময়ে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধ জয় শেষে তারা ভারতীয় উপমহাদেশকে স্বশাসনের দিকে নিয়ে যাবেন। ভারতীয়রা নিজেদের মুক্তির সংগ্রাম স্থগিত রেখে দলে দলে যুদ্ধে গেলো। যুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে থাকল। হতাশাগ্রস্ত ভারতীয় নেতারা নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করলেন। গান্ধীজীর নেতৃত্বে দেশ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে ফুঁসে উঠল। মওলানা ভ্রাতৃদ্বয় মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী চালু করলেন খেলাফত আন্দোলন। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই দুই আন্দোলন পাশাপাশি চলে বৃটিশদের ঘুম হারাম করে দিল। কিন্তু চতুর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নানা উপায়ে বিপথে চালিত করে আন্দোলন দুটিকে দুর্বল করে আনতে লাগল। আবারও মোহমুক্তি ঘটল দেশের যুবসমাজের। তারা পুনরুজ্জীবিত করলেন পূর্বেকার সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা।

এই সময়েই দেশের অন্যান্য জায়গার মত বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠল চট্টগ্রামেও। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ গোবেচারা স্কুলশিক্ষক যিনি চট্টগ্রামবাসীর কাছে মাস্টারদা নামে পরিচিত, সেই সূর্য কুমার সেন নেতৃত্বভার নিলেন অগ্নিযুগের একটি অধ্যায়ের বিপ্লবীদের। আসলে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মাস্টারদা নিজেই তিল তিল করে গড়ে তুললেন এই কিশোর -যুবা মুক্তিকামী বাহিনী। নাম দিলেন তার ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি (চট্টগ্রাম শাখা)। মাস্টারদার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় যে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের গতানুগতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসনের মূল উৎপাটন করা যাবে না।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির থেকে মুক্তির উপায় সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। এই ব্যাপারে মহানায়ক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ১৯১৬ সালে সংঘটিত আইরিশ বিদ্রোহের ইতিহাস পড়ে।এই বিদ্রোহের আরেক নাম ইস্টার বিদ্রোহ। ১৯১৬ সালের ইস্টার সপ্তাহ চলাকালীন আইরিশ মুক্তিকামীরা জনগণকে সংগঠিত করে রাজধানী ডাবলিন ও আয়ারল্যান্ডের অন্যান্য শহরে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে প্রজাতন্ত্র কায়েম করা। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে জন্ম নেওয়া প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রজাতান্ত্রিক দল সিন ফেইন (যেটি এখনও আয়ারল্যান্ডের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল) ও অন্য সকল ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি চাওয়া আইরিশ দল এই বিদ্রোহে অংশ নেয়। তারা সেইবার সফল না হলেও আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ শাসনাধীন অন্য সব দেশ ও পৃথিবীর মুক্তিকামী সকল জাতির মধ্যে অনুপ্রেরণা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়।

মাস্টারদা সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের মুক্তির জন্য জীবনপণ সংগ্রামের পথে এগোতে উদগ্রীব তার বাহিনীকে প্রস্তুত করলেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের জন্য। তিনি নিজে এই বিপ্লবী সংগ্রামকে চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহ নামেও অভিহিত করেছেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ছিল ইস্টার সপ্তাহের গুড ফ্রাইডে। ঐ দিনকেই তিনি ধার্য করেন অভ্যুত্থানের তারিখ হিসেবে।

বিপ্লবী নেতার দলভুক্ত দেশমাতৃকার জন্য প্রাণপাতের শপথ নেওয়া তরুণদের মধ্য থেকে ৬৪ জনকে তিনি বেছে নিলেন সেই দিনের মহান কর্মকাণ্ডের জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি দল ধুম স্টেশনের কাছে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অপর একটি দল টেলিগ্রাফ অফিস দখলে নিয়ে চট্টগ্রামের সাথে বহির্বিশ্বের টেলিযোগাযোগ ছিন্ন করে। আরেক দল দখলে নেয় অক্সিলারি ফোর্সের অস্ত্রাগার। ইস্টার উপলক্ষে ক্লাব বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ক্লাব আক্রমণ শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়। মূল দল দখলে নেয় চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন এবং এর অস্ত্রাগার। চট্টগ্রাম হয়ে গেল বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত।

যদিও সেটা সাময়িক। সর্বাধিনায়ক মাস্টারদাকে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি (চট্টগ্রাম শাখা) মুক্ত এলাকার প্রধান হিসেবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। ব্রিটিশ শাসনের প্রতিভু সকল ইংরেজরা প্রাণ বাঁচাতে কর্ণফুলী নদী ও নিকটবর্তী বঙ্গোপসাগরে নোঙর করা জাহাজে আশ্রয় নেয়। চট্টগ্রাম হয়ে যায় বৃটিশ শাসনের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন এলাকা। মাস্টারদা জানতেন অচিরেই শক্তিশালী ব্রিটিশরা প্রবল আক্রমণ হানবে যা তার অতি ক্ষুদ্র সেনাদল নিয়ে মোকাবিলা সম্ভব হবে না। তিনি চেয়েছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষের জনগণকে দেখাতে যে ইংরেজরা অপরাজেয় নয়। তারা যেন জেগে ওঠেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটান। মুক্তির সূর্য ছিনিয়ে আনেন।

পুলিশ লাইন দখলের পর যখন তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য সফল হলো তখন মাস্টারদা তার ক্ষুদ্র কিন্তু নৈতিকভাবে বলীয়ান ও সদ্য বিজয়ী বাহিনীকে নিয়ে শহরের অদূরবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান নিলেন। তখন ১৯ এপ্রিল ভোর। তারা তাদের সীমিত শক্তি নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিতে লাগলেন আসন্ন ভয়ংকর যুদ্ধের। জালালাবাদ পাহাড়ের গা ঘেঁসে চলে গেছে রেললাইন। ২১ তারিখে একটি ট্রেন এসে থামলো পাহাড়ের নিচে। সারি ধরে ট্রেন থেকে নামলো ইংরেজদের সেনাদল। যুদ্ধ আসন্ন। মাস্টারদা লোকনাথ বলকে নিয়োগ করলেন সেদিনের সেনাপ্রধান। নেতার পরামর্শ নিয়ে লোকনাথ নামলেন অসম যুদ্ধে। শত্রুদের সংখ্যা ও অস্ত্র অনেকগুণ বেশি ও উন্নততর। অপরদিকে বিপ্লবীদের ছিল পাহাড়ের ওপরে থাকার অবস্থানগত সুবিধা। হাতেগোনা কয়েকজন বিপ্লবী মরণপণ লড়ে গেলেন কয়েকশ' প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সেনার বিরুদ্ধে। তাদের মন্ত্র লড়েঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। জালালাবাদ পাহাড় দখল করতে পারলো না ইংরেজ সেনাদল। বিফল মনোরথ হয়ে পশ্চাদপসরণ করে ট্রেনে উঠে ফিরে গেল তারা। সেদিনের যুদ্ধে জয়ী কিন্তু শ্রান্ত,ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত মাস্টারদার বাহিনী একত্রিত হয়ে নিজেদের পক্ষে সেই যুদ্ধে বীর শহীদ ১২ জনকে সামরিক কায়দায় দিল শেষ বিদায়।মহানায়ক বুঝলেন যে পরবর্তী দিন আরও বেশি শক্তি নিয়ে পুনঃআক্রমণে আসবে শত্রুসেনারা। তাদের অস্ত্র ও রসদের কোনও সরবরাহ পাওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি পরবর্তী নির্দেশনা দিলেন অনুগামীদের। তারা যেন রাতের মধ্যেই সহানুভূতিশীল এলাকাবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায় এবং গেরিলা পদ্ধতিতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জন যুদ্ধ চালিয়ে যায়। তারা তাই করলেন। ১৯৩৩ এর ফেব্রুয়ারিতে মাস্টারদা লোভী বিশ্বাসঘাতক এক মীরজাফর নেত্র সেনের কারণে আটক হওয়ার আগে পর্যন্ত বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইংরেজদের রাতের ঘুম হারাম করে রাখেন বিপ্লবীরা। ১৯৩৩এ তিনি আটক হওয়ার পরও কয়েক বছর তার অনুগামীরা নিজেদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখেন।

এদিকে শুরু হয় মাস্টারদা ও তারকেশ্বর দস্তিদারের প্রহসনমূলক বিচার। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাত্র দশ মাসের মধ্যেই বিচার, আপিল ও হাইকোর্টের কার্যক্রম শেষ করে তাদের উভয়কেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে প্রচন্ড অত্যাচারে তাদের মৃতপ্রায় করে আক্রোশ মেটায় বর্বর ব্রিটিশরা। ১২ জানুয়ারি তাদের মৃতপ্রায় দেহকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে রায় বলবৎ করা হয়। জীবিত সূর্য সেনের চাইতে মৃত সূর্য সেনও ইংরেজদের কাছে কম ভয়ের পাত্র ছিলেন না। তাই সভ্য জগতের রীতিনীতির বরখেলাপ করে মাস্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের মরদেহ তাদের আত্মীয় ও নিকটজনদের কাছে হস্তান্তর না করে জাহাজে তুলে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে ভারী ওজন মৃতদেহের সাথে বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

১১ জানুয়ারি তার বিদায়ী বার্তায় মহানায়ক অনুগামীদের নির্দেশ দেন তারা যেন দেশমাতৃকার মুক্তির সেবায় আত্মোৎসর্গ করা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি যেমন মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে তার অসমাপ্ত কাজ অনুগামীদের কাছে হস্তান্তর করে যাচ্ছেন, তেমনি তারাও যেন সফল না হওয়া পর্যন্ত এই ধারা অনুসরণ করেন।

তার দেশমাতৃকার মুক্তির সোপানতলে আত্মবলিদানের এই দিনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। মাস্টারদা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নিয়ে বহু নিবন্ধ ও বইপত্র লেখা হয়েছে। তার ও তার দলের কীর্তি গাঁথা সম্পর্কে তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ। অনেক প্রকাশনায় এই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ বা ইস্টার বিদ্রোহ না বলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বলে উল্লেখ করা হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল। লুণ্ঠন তস্করের কাজ। ইংরেজরা ঐ নামেই মহানায়ক সূর্য সেন ও তার সহযোগীদের নামে মামলা করেছিল। ইংরেজরাই আমাদের শোষণ ও লুণ্ঠন করে সম্পদের পাহাড় নিজেদের দেশে পাচার করেছে। আমাদের সম্পদে কেনা অস্ত্র দিয়ে আমাদের মেরেছে। তার কিয়দংশ বিপ্লবীরা দখলে নিয়েছেন। আমরা সেই কাজকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন না বলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল বলবো না কেন?

মাস্টারদার সম্মানে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং কিছু ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান নামকরণ করা হয়েছে। তার একটি আবক্ষমূর্তি চট্টগ্রাম জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয়েছে। সেটি অবশ্য করেছিলেন ১৯৭৪ এ তার কয়েকজন সহযোদ্ধা কলকাতা থেকে এসে। ভারতে বিভিন্ন জায়গায় তার নামে ভবন, স্ট্যাচু, মেট্রোরেল স্টেশন, রাস্তা, স্কোয়ার ইত্যাদির নামকরণ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও এই মহানায়কের স্মরণে উল্লেখযোগ্য রাস্তা এবং প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এতে আমাদের এই গর্ব করার মত পূর্বসূরির প্রতি সম্মান জানানো যেমন হবে, তেমনি নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা যাবে। তাদের করা যাবে ইতিহাস সচেতন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটানোর সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া সিংহপুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেন... লও লও লও সালাম।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;