মদিনার ঐতিহাসিক আল ফকির কূপটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এটি সালমান আল ফারসি কূপ নামেও পরিচিত। কূপটি দীর্ঘ ১৪ শতাব্দীকালের স্মৃতিবিজড়িত। এর বিশেষ তাৎপর্য হলো, এটি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতার স্মারক।
কূপটি মদিনার আল-আলিয়া জেলায় অবস্থিত। একটি খেজুরের বাগানে অবস্থিত কূপটি থেকে আরবের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার হুইল ব্যবহার করে তিন-মিটার ব্যাসের কূপ থেকে পানি তোলা হয়েছিল। পরে সেখানে পাম্প প্রতিস্থাপন করা হয়।
বর্তমানে আল-ফকির কূপটি মদিনা অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য স্থানীয় সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। এই সংস্থার অধীনেই কূপটি সংস্কার করা হয়েছে। কূপটি ছাড়া ওই অঞ্চলে একটি পুল এবং জলাধার চ্যানেল রয়েছে। সেগুলোর সাহায্যে আশপাশের বাগানগুলোতে পানি সরবরাহ করা হয়।
সৌদি প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, এই কূপটি নথিভুক্ত ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংস্কার কাজ করা হয়েছে। মূল কূপটি একটি এক মিটার-উচ্চ লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে কূপ এবং এর নালাগুলোর চারপাশে লোহার বেড়া স্থাপন করা হয়েছে। বানানো হয়ে জলপথ, সেতু ও প্রধান ফটক। ফটকে মদিনার স্থানীয় পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে।
কূপের আশেপাশে বেশ কিছু খেজুর ও তালগাছ রোপণ করার পাশাপাশি হাঁটার রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের জন্য পাথরের বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারে একটি তথ্যমূলক ফলক যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে এই ইতিহাস সম্পর্কে বিশদ বিবরণ রয়েছে।
ঐতিহাসিক গবেষক ফুয়াদ আল-মাগামিসি জানিয়েছেন, আল-ফকির কূপটি সাহাবি হজরত সালমান আল-ফারসি (রা.)-এর জীবনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি একজন ক্রীতদাস হিসেবে প্রাথমিকভাবে এই অঞ্চলের একটি বাগানে কাজ করতেন। পরে নবী কারিম (সা.) তাকে মুক্ত করার জন্য বাগানের মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন। পরে ওই বাগানের জায়গাটি সালমান আল-ফারসি কূপ নামে পরিচিতি লাভ করে, যদিও এটি এখন সাধারণভাবে আল-ফকির কূপ নামে পরিচিত।
দীর্ঘ ৭৯ বছর পর পবিত্র জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক কারিয়া মসজিদে। গত শুক্রবার (১৯ মে) মসজিদটিতে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে অসংখ্য মুসল্লি অংশ নেন। এর আগে ৬ মে পুনঃনির্মাণের পর মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান।
২০২০ সালের আগস্টে দীর্ঘ দিন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক মসজিদটিকে পুরনো রূপে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন এরদোগান। এরপর শুরু হয় এর পুনঃনির্মাণের কাজ। অবশেষে চার বছর পর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় ফের এটি মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হলো।
চতুর্থ শতাব্দীর শুরুর দিকে কারিয়া স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয় একটি চার্চ হিসেবে। পরে উসমানিয়া শাসক সুলতান দ্বিতীয় বায়জিদের শাসনামলে প্রধান উজির আতিক আলি পাশার নির্দেশে এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।
এরপর চার শতাব্দীরও অধিক সময় এটি মসজিদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর আয়া সোফিয়ার মতো এটিকেও ১৯৪৮ সালে জাদুঘর বানিয়ে ফেলে তৎকালীন ইসলামবিরোধী তুর্কি সরকার।
দীর্ঘ দিন পর গত শুক্রবার মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরে বেশ উল্লসিত মুসল্লিরা। এদিন তারা তাকবির ধ্বনিতে মসজিদ ও এর প্রাঙ্গণ আন্দোলিত করে তোলেন। মসজিদের অভ্যন্তর, সামনের চত্বর ও আশপাশের সড়কগুলোও মুসল্লিদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে।
শুধু এই মসজিদ নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে এরদোগান বন্ধ থাকা ও জাদুঘরে রূপান্তর করা অনেক মসজিদ পুনরায় চালু করেন। এর মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। এরদোগানের উপস্থিতিতে সেখানে ৮৬ বছর পর নামাজ শুরু হয়।
পুরনো মসজিদ উদ্ধার ছাড়া তিন বেশ কিছু নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। তুরস্কের তাশামালিজা মসজিদ এর অন্যতম। আয়তনগত দিক বিবেচনায় এশীয় ও ইউরোপ অঞ্চলে এটিকে বলা হচ্ছে- সর্ববৃহৎ মসজিদ। বিগত প্রায় এক শতাব্দীতে আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠার পর এটিই তুরস্ক নির্মিত সর্ববৃহৎ মসজিদ।
মা, মা, এবং মা। প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ। শুধু প্রিয় শব্দ নয়, প্রিয় বচন- মা। প্রিয় অনুভূতি- মা। পৃথিবীর সব প্রিয় শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করে। কারণ মা-ই পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি, যে নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে যায় সন্তানকে কোনো বিনিময় ছাড়া। অথচ আমরা সেই প্রিয় মাকে সময়ের প্রেক্ষিতে ভুলে যাই, যে মা ছোটবেলা থেকে আদরযত্ন করে লেখাপড়া শিখিয়ে; মানুষের মতো মানুষ হয়ে মাথা উঁচু করে সমাজের মানুষের সামনে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন- তাকে অবহেলার পাত্র বানিয়ে ফেলি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মাকে নিয়ে ইসলাম যত কথা বলেছে, অন্যকোনো ধর্ম তত কথা বলেছে কি-না জানি না। মাকে নিয়ে বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত মাকেই জান্নাত, মাকেই জাহান্নাম বলেছে ইসলাম। মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম। এত সম্মান যে মানুষের, সে মানুষের প্রতি আমাদের কত না অবহেলা! অথচ যে বেহেশত মায়ের পায়ের নিচে, সেই বেহেশত মাকে খুশি করা ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।
মা ঘরে অসুস্থ হয়েছে, ওষুধটা পর্যন্ত এনে দিই না আমরা। বয়স হয়েছে বলে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিই। অথচ এই আপন মানুষটা কী চান আমাদের কাছে? শুধু একটু আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে একটু খেলা করা, এ ছাড়া আর কিছুই না। মা অসুস্থ, হাসপাতালে নিতে চাইলে নিজেই যেতে চান না। কারণ, সন্তানের টাকা খরচ হবে বলে। সন্তানের ওপর কোনো রকম বোঝা চাপিয়ে দিতে চান না তিনি। শুধু একটু মায়া চান। যে মায়া তিনি সারাজীবন করে এসেছেন, তার কিঞ্চিৎ তাকে ফেরৎ দিলেই তিনি খুশি। তিনি প্রতিদান চান না, তিনি প্রাপ্য চান না, অধিকার নিয়ে কোনো কথা বলেন না। শুধু একটু মায়া চান। তাও কি আমরা দিতে পারি না?
কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে।’ -সুরা আনকাবুত : ৮
‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্যকারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ২৩
‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।’ -সুরা লোকমান : ১৪
‘আর উপাসনা করো আল্লাহর, শরিক করো না তার সঙ্গে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।’ -সুরা আন নিসা : ৩৬
মা সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যক্তি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার বেশি কোন মানুষের? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার বাবা। -সহিহ বোখারি
এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদের অনুমতি চাইল। নবী কারিম (সা.) বললেন, তোমার পিতা-মাতা কি বেঁচে আছেন? লোকটা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের জন্যই পরিশ্রম করো (এতেই তুমি জিহাদের সওয়াব পাবে)। -সহিহ বোখারি
একদা নবীজী (সা.) বললেন, ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক। পুনরায় ধ্বংস হোক। বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, অথচ এরপরও সে (তাদের সেবা করে) জান্নাতে যেতে পারেনি। -সহিহ মুসলিম
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম কাজ হলো- পিতার সুহৃদদের (বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন) সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। -সহিহ বোখারি
নবীজী (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। -জামে তিরমিজি
হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (সা.) বলতে শুনেছি, পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা সংরক্ষণও করতে পারো। –জামে তিরমিজি
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ কোনগুলো তা বলব না? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, এতটুকু বলে নবী কারিম (সা.) বসে পড়লেন, এতক্ষণ তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন। এর পর নবীজী (সা.) বললেন, মিথা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে থাকলেন যে, আমরা মনে মনে বললাম; আর যদি না বলতেন! -জামে তিরমিজি
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অন্যতম কবিরা গোনাহ হলো, ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা। সাহাবারা বললেন, পিতা-মাতাকেও কি কেউ গালমন্দ করে? নবী কারিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ। কেউ কারও পিতাকে গালি দিলে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। আবার কেউ কারও মাকে গালি দিলে, সেও তার মাকে গালি দিলে। (এভাবে অন্যের পিতা-মাতাকে গালমন্দ করলে প্রকারান্তরে নিজের পিতা-মাতাকেই গালমন্দ করা হয়।) -জামে তিরমিজি
জীবন চলতে গিয়ে মানুষকে নানা রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নানা ধরনের কাজকর্ম করতে হয়। ভাবতে হয় নানা রকম বিষয় এবং সামলাতে হয় বিচিত্র রকমের পরিস্থিতি। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ যেমন হয়, তেমনি হয়ে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভুল ও বিচ্যুতি।
মানুষের মানবিক ও প্রাকৃতিক নানা দুর্বলতাও প্রকাশ পায় সেখানে। প্রকাশ পায় তার আত্মশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তির বিভিন্ন অবস্থা। কোনো সন্দেহ নেই- এসবকিছু সত্ত্বেও জীবনের বহুক্ষেত্রে মানুষ সফল হয়। তবে ব্যর্থতাও অধিকার করে নেয় বহুক্ষেত্র। জীবনের এই ধারা চলমান। জীবন যতদিন আছে হয়তো ততদিনই চলবে এই অবস্থা। এরই মাঝখান দিয়ে মানুষকে চেষ্টা করতে হবে, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার। আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে এ বিষয়গুলো বেশ কার্যকর। সেগুলো হলো-
নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা গোনাহটা তো মানুষের চোখ দ্বারাই বেশি হয় এবং নির্জনে বেশি হয়। সুতরাং নির্জনে কিছু চোখের পানিও বিসর্জন দিতে হবে। এটা সাধারণ দোয়া থেকে স্পেশাল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।’ -জামে তিরমিজি : ২৩১১
গোনাহর কারণে দয়াময় আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের নামই হলো- জাহান্নাম। আর সেই জাহান্নাম থেকে চোখের পানির উসিলায় বেঁচে যেতে পারেন। এর অর্থ হলো, আল্লাহতায়ালা আপনাকে হয় গোনাহটি থেকে বিশেষ রহমতে বাঁচিয়ে নেবেন কিংবা মৃত্যুর আগে হলেও এ থেকে তওবার তওফিক দিয়ে দেবেন।
গোনাহ না করার চেষ্টা করা এক দিনে কিংবা এক রাতে আপনি গোনাহ ছেড়ে দিয়ে পবিত্র হয়ে উঠবেন, এ ধারণা ভুল। বরং এ জন্য কষ্ট করতে হবে, প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাতে হবে। আপনি গোনাহ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক, এটা তখনই বুঝা যাবে- যখন এ ব্যাপারে আপনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গেই আছেন।’ -সুরা আনকাবুত : ৬৯
মনে রাখুন, আমার ওপর পাহারাদার আছে মাঝে-মধ্যে অন্তরে এই ভাবনা জাগিয়ে তুলুন যে, আমার ওপর পাহারাদার আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সব বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখেন।’ -সুরা আহজাব : ৫২
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) একজন কবির কাছে একটি কবিতা শুনে দরজা বন্ধ করে খুব কেঁদেছিলেন। কবিতাটি ছিলো এই, ‘যদি তুমি দিনের কিছু সময় একাকী কাটাও, তখন এ কথা বলো না যে, আমি নির্জনে একাকী সময় কাটিয়েছি; বরং বলো, আমার পেছনে সদা সর্বদা একজন পাহারাদার ছিলো।’
আল্লাহকে লজ্জা করতে শেখা হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) কথাটা এভাবে বলেছেন, গোনাহ থেকে বাঁচার একটি কৌশল হলো, এ কথা চিন্তা করা- গোনাহটি আমি আমার শায়খের (পীর, শিক্ষক, ধর্মগুরু) সামনে মা-বাবার সামনে কিংবা যারা আমাকে ভালো মানুষ মনে করে তাদের সামনে করতে পারবো কিনা! তারপর চিন্তা করো, তারা তো এখানে নেই। কিন্তু আমার আল্লাহ তো আছেন। তিনি সবার চেয়েও বড়। সুতরাং তার সামনে গোনাহটি কীভাবে করবো!
হাদিস শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটাই বলেন, ‘আল্লাহকে লজ্জা করো, যেমন তুমি তোমার কওমের (সম্প্রদায়ের) নেক মানুষকে লজ্জা করে থাকো।’ -বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান: ৭৭৩৮
ভাবুন, আল্লাহর সরাসরি প্রশ্নে কী উত্তর দেবেন আজ আমি যে গোনাহগুলোতে লিপ্ত, কেয়ামতের দিন তো আল্লাহ আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে, বান্দা! এ গোনাহটা কেন করলে? দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমাকে কেউ দেখে নাই। আমিও কি দেখি নাই? তুমি কি মনে করেছ যে, আমার দেখা মাখলুকের চোখের চেয়ে দুর্বল? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মাঝে কোন দোভাষী এবং এমন কোনো পর্দা থাকবে না, যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৯৩৫
চিন্তা করুন, সেদিন তখন আমরা কী উত্তর দেবো? সেদিন যদি আল্লাহ সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, বান্দা! রাতের দুইটা বাজে কেন তুমি অশ্লীলতার ভেতরে ডুবে গিয়েছিলে? কেন তুমি এমন জিনিসের চর্চা করেছিলে যে, যেখানে পৌত্তলিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ প্রেম ও নগ্নতাসহ কত শত অপরাধের চর্চা ও শিক্ষা ছিল? তখন আমরা কী উত্তর দেবো?
তানযীমুল উম্মাহ‘র ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব অনুষ্ঠিত
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ইসলাম
অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব।
১২ মে রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের পরিচালিত শাখাসমূহের ১২৩৪ জন হাফেয শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট, সনদ, পাগড়ি/স্কার্ফ, অ্যাওয়ার্ড ব্যাগ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সম্মাননা প্রদান করা হয় তাদের পিতা-মাতাকেও।
জাতীয় ও অন্তর্জাতিক পর্যায়ের ইসলামী চিন্তাবিদ, কুরআন গবেষক, হাজার-হাজার হাফেযদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে তানযীমুল উম্মাহর এই বর্ণিল আয়োজন। সকাল থেকেই অভিভাবকদের হাত ধরে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের বেশিরভাগই ছিল পবিত্র কুরআনের হাফেয।
সুবিশাল আয়তনের আইসিসিবি হলরুমের দৃষ্টি নন্দন শোভা বর্ধন করেছে কুরআন-হাদীসের বাণীতে রং-বেরঙের অত্যাধুনিক ডিজাইনের নানান ব্যানার-ফেস্টুন। শুরু থেকেই বিভিন্নু সুরে সুললিত কন্ঠে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের সুরের মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল; শিক্ষার্থীদের কন্ঠে মনোমুগ্ধকর হামদ-নাত ও ইসলামী সংগীত, বক্তৃতা, আলোচনা, কবিতা আবৃত্তিসহ চমৎকার পরিবেশনায় সকলের মন কাড়ে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো: হাবিবুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হাফেয ড. এ. বি. এম হিযবুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফাদিলাতুশ শায়খ সাইয়েদ কামাল উদ্দীন জাফরী।