সব ধরনের কলুষতা, মলিনতা ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়াই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এবং নফসের প্ররোচনায় এসব থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায় না। জিন শয়তানকে পবিত্র মাহে রমজানে বন্দী করে রাখা হয়। কিন্তু মানুষ শয়তান ও নফস শয়তান তখনও সক্রিয় থাকে। তাই মানুষ পাপাচার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে না।
পাপতাপ থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তির জন্য প্রথমে ষড়রিপুর তাড়না থেকে মুক্ত হয়ে নফস শয়তানকে পরাভূত করতে হবে। আর মনুষ্য শয়তানের প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য অসৎসঙ্গ ত্যাগ করে সৎসঙ্গ অর্জন করতে হবে। এই দুটি সুসম্পন্ন হলেই পরিপূর্ণরূপে শয়তানের প্রভাব থেকে আত্মরক্ষা করা যাবে।
আলেমরা বলেন, তওবা ও ইস্তেগফার হলো- এর অন্যতম উপায়। তওবা মানে পাপ ছেড়ে পুণ্যে মনোনিবেশ করা। ইস্তেগফার হলো- কৃত অপরাধের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পুনরায় ওই অপরাধ বা পাপ না করার অঙ্গীকার করা এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্টু জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও তখন খোলা হয় না; জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকে, হে কল্যাণকামী! অগ্রসর হও! হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আছে জাহান্নাম থেকে বহু লোককে মুক্তি দান। প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে।’ -সুনানে তিরমিজি : ৬৮২
রমজান মাস মুমিনের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এই মাসে আল্লাহ মুমিনের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ রেখেছেন। রমজানের প্রথম প্রহর থেকেই একজন ঘোষণাকারী এই কল্যাণের ঘোষণা দিতে থাকে। সে বলতে থাকে, ‘হে কল্যাণকামী! অগ্রসর হও! হে পাপাসক্ত! বিরত হও।’
এই আহ্বান বান্দার প্রতি আল্লাহর কল্যাণকামিতারই বহিঃপ্রকাশ। কেননা তা বিশ্বাসী ব্যক্তিকে আল্লাহর আনুগত্য করতে এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে, বিশেষত যখন ঘোষণা করা হয় জাহান্নাম থেকে মুক্তির। প্রত্যেক মুমিনের উচিত, পাপ পরিহার ও নিষ্ঠার সঙ্গে তওবা করে মুক্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পাপ পরিহারের পুরস্কার এভাবে ঘোষণা করেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য পাপমোচনকারী হবে যদি কবিরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকে। -সহিহ মুসলিম : ২৩৩
প্রতি বছর হজ মৌসুমে সৌদি আরবে একত্রিত হন প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া পুরো বছর পবিত্র উমরাপালনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবে যান লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম। হজ কিংবা উমরাপালন করতে গিয়ে অনেকে নিজের সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেন। এতে করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আবার অপরিচিত দেশ, অপরিচিত জায়গায় হারিয়ে গেলে এক ধরনের ভয়ও কাজ করে ভেতরে।
মক্কায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে অভিজ্ঞদের পরামর্শ হলো, বর্তমানে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকাংশেই কমে গেছে। এরপরও কেউ কখনো হারিয়ে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
যা করবেন হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে মক্কায় যাওয়ার আগেই মানুষ কী কী কারণে হারিয়ে যায়, তা চিহ্নিত করুন। তাহলে হারিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না।
>> মসজিদে হারাম বিশাল এলাকাজুড়ে। প্রায় ১০০টি প্রবেশপথ রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদে হারাম সম্প্রসারণের জন্য ভেতরে-বাইরে নির্মাণকাজ চলছে। প্রবেশপথগুলো দেখতে একই রকম হলেও নাম ও গেট নম্বর ভিন্ন। প্রবেশপথগুলোর নাম ও নম্বর মুখস্ত করে নিন।
>> ভিড়ের কারণে তাওয়াফ, সাঈ করতে গিয়ে হজ ও উমরাযাত্রী বেশি হারান, তাই সঙ্গীর সঙ্গে আগেই কথা বলে নিন হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করতে হবে। যেমন, তাওয়াফ শেষ করে কোথায় নামাজ আদায় করবেন, তা চিনিয়ে দিন। আবার সাঈ করতে গিয়ে সাফা বা মারওয়া পাহাড়ে অপেক্ষা করতে পারেন।
>> মনে রাখতে হবে, মসজিদে হারামের ৭৯ নম্বর বাদশাহ ফাহাদ প্রবেশ গেটে সব সময় ভিড় বেশি থাকে। সুতরাং এ গেটে ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য গেটগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
>> হোটেলের ঠিকানা বা হোটেলের কার্ড কাছে রাখুন।
>> সঙ্গী বা গ্রুপ লিডার বা মোয়াল্লেমের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রাখুন।
>> মনে রাখতে হবে, হারিয়ে যাওয়া হজযাত্রীদের পথ চিনিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মক্কা-মদিনার সবাই হেল্পফুল, মক্কায় অবস্থানকারী স্থানীয় প্রবাসী, সৌদি নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তা নিতে পারেন। যে কাউকে বললেই পথ চিনিয়ে দেবে।
আর কিছু বলতে না পারলেও শুধু বাংলাদেশ বাংলাদেশ বললেও তাকে মক্কার ইব্রাহিম খলিল রোডে বাংলাদেশ হজ অফিস কিংবা মদিনার কিং ফাহাদ ২১ নম্বর গেইটের কাছে বাংলাদেশের হজ অফিসে পৌঁছে দেওয়ার লোকের অভাব হবে না। সেখানে গেলে অফিসের আইটি বিভাগ তার পরিচয় বের করে ঠিকানা মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
>> এছাড়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করুন।
জুমার দিন। ইতালির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর মনফালকনের একটি পার্কিং লটে শত শত মুসল্লি জড়ো হয়েছেন জুমার নামাজ পড়তে। এই শত শত মুসল্লি শহরটিতে বসবাসরত মুসলিম জনসংখ্যার একটি অংশ মাত্র। গত নভেম্বরে শহরটির কট্টরপন্থি মেয়র মুসলিম কালচারাল সেন্টারের ভেতরে নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
মনফালকনে বসবাসরত মুসলিমরা কোথায় নামাজের অনুমতি পাবেন, তা নির্ধারিত হবে এ মাসের শেষে আদালতে।
এখন তারা যে জায়গাটিতে নামাজ পড়ছেন তার মালিক প্রবাসী বাংলাদেশি রেজাউল হক। অন্যান্য মুসলিমদের মতো তিনিও নামাজ পড়ায় অসুবিধার বিষয়টিকে তিনি দেখেন কর্তৃপক্ষের হয়রানি হিসেবে।
২০০৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পাড়ি জমিয়ে তিনি পেয়েছেন ইতালিয়ান নাগরিকত্ব। রেজাউল বলেন, ‘বলুন, আমার কোথায় যাওয়া উচিত? আমাকে কেন (নামাজ পড়তে) মনফালকনের বাইরে যেতে হবে? আমি এখানে থাকি, এখানে ট্যাক্স দিই!’
তার ক্ষোভ, ‘ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট, ইহুদি সবার জন্য প্রার্থনালয় থাকতে পারলে, আমাদের জন্য কেন নয়?’
মিলান শহর থেকে ৪শ’ কিলোমিটার দূরের মনফালকন শহর। মনফালকনের ৩০ হাজার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ প্রবাসী। যার বেশিরভাগই মুসলিম বাংলাদেশি।
নামাজের বিষয়ে এমন কড়াকড়ি প্রসঙ্গে শহরের মেয়র অ্যানা সিসিন্ট বলেন, নামাজের নিষেধাজ্ঞা বৈষম্যমূলক নয়, বরং শহরের পরিকল্পনা ও প্রবিধানগুলো কঠোরভাবে উপাসনালয় স্থাপনে সীমাবদ্ধ। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে উপাসনার স্থান প্রদান করা তাদের কাজ নয়। আর মেয়র হিসেবে, আমি কারও বিরুদ্ধে নই, আমি বিরোধিতায় আমার সময় নষ্ট করতে পারি না, আমি এখানে আইন প্রয়োগ করতে এসেছি।
নগর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ নামাজের জায়গার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে। উদারপন্থি একটি এলাকার মেয়র হিসেবে এর ব্যবস্থা করা তার দায়িত্ব নয় বলেও জানান অ্যানা।
তিনি মনে করেন, এমনিতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা এবং উচ্চ জন্মহারের কারণে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। যা মনফালকনের জন্য অনেক বেশি।
ইতালির অন্যতম প্রধান মুসলিম সংগঠন ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটির প্রধান ইয়াহিয়া জানান, মেয়রের যুক্তির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এর মাঝে শারীরিক প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি হলেও দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা ৩০ লাখের মতো। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাদের ৯৮ শতাংশ কোনো না কোনো সময় বৈষম্যমূলক আচরণ ও নানাবিধ নিগ্রহের শিকার হন। বাংলাদেশের ভিক্ষুকদের বড় একটি অংশ প্রতিবন্ধী। সমাজের অনেকেই প্রতিবন্ধীদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষের সহনশীল মনোভাব গড়ে ওঠেনি। সমাজের মূল স্রোতে সেভাবে তাদের অংশগ্রহণ এখনও দেখা যায় না।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অন্ধ ও বধিরদের জন্য বিশেষায়িত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেভাবে ইসলাম শেখানো কিংবা পবিত্র কোরআন শেখানোর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অথচ যথাযথ উদ্যোগ নিলে তারা ইসলাম শেখার পাশাপাশি কোরআনের হাফেজ ও আলেম হয়ে সমাজে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অন্যের বোঝা না হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখবে।
এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে এগিয়ে আসেন মুফতি বখতিয়ার হোসাইন সরদার। তিনি মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম। রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদার বাড়িতে বাবা-চাচাদের দেওয়া ওয়াকফ জায়গায় তিনি ১৯৯৭ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন সেখানে ৬ তলা ভবন হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি বেড়েছে। মক্তব থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত পাঠদানসহ আরও কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। এই মাদরাসায় ২০০৮ সালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগে ব্রেইল পদ্ধতিতে মক্তব, নাজেরা, হেফজ ও কিতাব বিভাগের মেশকাত জামাত পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠদান করা হয়।
বর্তমান অন্ধ ছাত্রসংখ্যা ১০০, তাদের আবাসন, খাবার, পোশাক ও চিকিৎসা মাদরাসার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। খরচ বহন করেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এখান থেকে হিফজ শেষ করে ৭০ জন অন্ধ হাফেজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতা করছেন। হাফেজ হওয়ার পাশাপাশি অন্ধদের জন্য দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পড়ারও সুযোগ রয়েছে এখানে। কিতাবগুলোও ব্রেইল পদ্ধতির। ২০২৫ সালে দুইজন অন্ধ ছাত্র আলেম হবেন বলে জানালেন প্রিন্সিপাল মুফতি বখতিয়ার।
তিনি জানান, ‘পুরো পৃথিবীতে এই দুইজন হবেন ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা প্রথম আলেম।’ মাদরাসাতুর রহমানে অন্ধ শিক্ষক আছেন ৭ জন, তাদের সহযোগী শিক্ষক আছেন আরও ৫ জন। অন্ধরা ২-৩ বছরের মধ্যে হাফেজ হতে পারে। ‘আমরা অন্ধদের সর্বোচ্চ সম্মান দিই। এতে অন্ধরা খুশি হয়। ফলে এখান থেকে কেউ সহজে যেতে চায় না’- বললেন মুফতি বখতিয়ার।
তিনি জানালেন, অন্ধ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। গত রমজানে আন্তঃমাদ্রাসা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) নিয়ে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার অধিকাংশ বিজয়ীই ছিল মাদরাসাতুর রহমানের ছাত্র। বিজয়ীদেরকে শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল (এসসিআই) বাংলাদেশ অফিস পবিত্র উমরাপালনের ব্যবস্থা করে।
ছেলেদের পাশাপাশি ১৫ জন অন্ধ মেয়ে পড়েন এখানে। তাদের জন্য আলাদা ভবন রয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছেন মুফতি বখতিয়ার। কম্পিউটার ল্যাব, ব্রেইল পদ্ধতির কিতাবাদি প্রিন্টের জন্য আলাদা প্রিন্টার, প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র ও কাপড় ধোয়ার মেশিনও রয়েছে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিভাগের পর মাদরাসাতুর রহমানে ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে বাকপ্রতিবন্ধী বিভাগ চালু করা হয়। বর্তমানে ৮ জন ছাত্র এই বিভাগে পড়াশোনা করছে। দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার উদ্যোগে একজন শিক্ষককে সৌদি আরবের তায়েফ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে।
বোবাদের আরবি শিক্ষক মুফতি রেদওয়ান রাশেদি জানান, ‘ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা বা ইংরেজি Sign language বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নাড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। মুখের ভাষায় যোগাযোগ করা অসম্ভব বা অযাচিত হলে এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত মুখের ভাষার আগেই ইশারা ভাষার উদ্ভব ঘটে। মুখের বিশেষ ভঙ্গিমা, কাঁধের ওঠানামা কিংবা আঙুল তাক করাকে এক ধরনের মোটাদাগের ইশারা ভাষা হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে প্রকৃত ইশারা ভাষাতে হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সূক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টি ব্যবহৃত হয় এবং এর সঙ্গে সাধারণত মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তিও যুক্ত করা হয়। বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষার ব্যবহার করে থাকেন। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়, তার পরও আমরা চেষ্টা করছি।
মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়ায় ভাইস-প্রিন্সিপাল ও এয়ারপোর্ট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের অন্তর চক্ষু খুলে দেওয়ার মেহনতের সঙ্গে যুক্ত আছি। আমাদের এই কাজকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন। আল্লাহতায়ালা তাদের এই মহৎ কাজকে কবুল করুন, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্ধ ও বোবা ছাত্ররা প্রায়ই অসহায় ও গরিব ঘরের হয়। তাদের কাছ থেকে টাকা নিলে পড়তে চাইবে না। আমরা চাই, তারা দ্বীন শিখুক, ভালো মানুষ হোক। ভালোবাসা আর মায়া দিয়ে তাদের পড়াই।’
সৌদি আরবের রিফাদ তাওয়াফা কোম্পানির অধীনে সেবাগ্রহণকারী এজেন্সির ২৮ হাজার ৩৩ জন হজযাত্রীর মুজদালিফায় উন্মুক্ত মাঠে অবস্থানের অনিশ্চয়তা কেটেছে। সৌদি সরকারের নতুন নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে এসব হাজিদের হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান মুজদালিফায় অবস্থানের বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়েছিল।
সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এবং রিফাদ তাওয়াফা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের হজ অফিস এ বিষয়টির সুরাহা করেছে। গত ৪ মে বাংলাদেশ হজ অফিসে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ২৮ হাজার ৩৩ জন হজযাত্রীর মুজদালিফায় উন্মুক্ত মাঠে অবস্থানের অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার কথা জানানো হয়। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
হজের সবচেয়ে বড় দিন বলা হয় চতুর্থ দিনকে। এদিন মুজদালিফায় সারা রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে হয়। সেখানে সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকা সুন্নত। আর সুবহে-সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো এক মুহূর্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার কিছু সময় আগে মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া। মুজদালিফায় অবস্থানের সময় মিনায় শয়তানকে মারার জন্য রাতে কিংবা সকালে পাথরের টুকরা সংগ্রহ করা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সনের হজে বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী হজপালন করবেন। আগামী ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানায়, মিনা-আরাফাত-মুজদালিফায় সেবা প্রদানকারী তাওয়াফা কোম্পানি রিফাদের অধীন ২৮ হাজার ৩৩ জন হাজির মিনা ও আরাফাতের তাঁবুতে অবস্থান এবং মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস জানিয়েছে, এবার হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব পর্বের কার্যক্রমের মধ্যে অনেকগুলো কার্যক্রমে নতুন পদ্ধতির অবতারণা ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে খরচের অর্থ প্রেরণ ব্যবস্থাপনা এবং মিনায় তাঁবু নির্ধারণ ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য। বিগত বছরগুলোতে মিনা ও আরাফাতের তাঁবু তাওয়াফা কোম্পানিগুলো হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় থেকে বুঝে নিয়ে হাজি সংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন দেশের মিশন বরাবরে বা এজেন্সি বরাবরে বরাদ্দ প্রদান করত। সেই মোতাবেক অন্যান্য সেবা প্রদান করত। কিন্তু এ বছর হজ মিশনসমূহ বা এজেন্সিসমূহ সরাসরি অথবা মিশনের মাধ্যমে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁবু গ্রহণ করে তাওয়াফা কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেবে। তাওয়াফা কোম্পানি তাঁবুতে বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে।
সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাওয়াফা কোম্পানি নির্বাচন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত থাকায় এ বছর এজেন্সিগুলো বিভিন্ন সংখ্যায় বিভক্ত হয়ে ছয়টি তাওয়াফা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির মধ্যে হাজি সংখ্যা অনুযায়ী রিফাদ তাওয়াফা কোম্পানি দ্বিতীয়। কোম্পানিটির অধীনে প্রায় ২৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বেসরকারি মাধ্যমের হাজি চুক্তিবদ্ধ রয়েছে।
রিফাদের আওতাধীন হাজিদের জন্য মিনার তাঁবু গ্রহণের সময় জানা যায় যে, তাওয়াফা কোম্পানি রিফাদ বাংলাদেশি হাজিদের জন্য মাশায়ের এলাকায় তারাদ্দুদিয়া (সার্কুলার সার্ভিস) নামক পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করবে। এরূপ নতুন পরিবহন পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষ এলাকার তাঁবু গ্রহণের ক্ষেত্রে সবাই একমত কি না তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলে উপস্থিত সবাই একমত হয়ে জানান যে, রিফাদের অধীন সব এজেন্সি তাদের হাজিদের জন্য তারাদ্দুদিয়া পরিবহন ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট মিনা তাঁবু গ্রহণে আগ্রহী। তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক তাঁবু রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁবুর রিকুয়েস্ট অনুমোদন না করে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানায় বলে জানায় হজ অফিস।
সাক্ষাতে জানানো হয়, রিফাদ কোম্পানির কোনো তারাদ্দুদিয়া পরিবহন সংশ্লিষ্ট মিনা তাঁবু নেই। তারাদ্দুদিয়া সংশ্লিষ্ট তাঁবু বরাদ্দের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হলে তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়- রিফাদের কোনো তারাদ্দুদিয়া তাঁবু নেই। তবে শর্তসমেত প্রায় অর্ধেক সংখ্যক হাজির জন্য তারাদ্দুদিয়া সংশ্লিষ্ট তাঁবু গ্রহণ করা যাবে মর্মে জানান। শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট তাঁবুতে অবস্থান করা হলে সেসব হাজি মুজদালিফার খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করতে পারবে না। আরাফাতের ময়দান হতে সরাসরি মিনার এই তাঁবুতে এসে রাত্রিযাপন করতে হবে।
‘একই সঙ্গে তাঁবুতে অবস্থান করতে হলে হজ অফিসকে ‘কোনোরূপ সমস্যা হবে না’ বলে অঙ্গীকারনামা দাখিলেরও শর্ত আরোপ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তাওয়াফা কোম্পানি এজেন্সি এবং হজযাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।’
হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এবং রিফাদ কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে একাধিকার সভা করে সব দুরাশাকে দূর করে রিফাদের অধীন ২৮ হাজার ৩৩ হজযাত্রীর তারাদ্দুদিয়া পরিবহন সিস্টেমের বাহিরে বাস ও ট্রেন যোগাযোগের সুবিধাসম্পন্ন মিনা তাঁবু, আরাফাতের তাঁবু এবং মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁবু গ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানায় জেদ্দা হজ অফিস।
এখন সব এজেন্সিকে জরুরি ভিত্তিতে ভিসা ইস্যু সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে হজ অফিস।