গণ-ইফতার আয়োজনের সওয়াব



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গ্রামাঞ্চলের একটি গণ-ইফতার আয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

গ্রামাঞ্চলের একটি গণ-ইফতার আয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রোজা আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। রোজা রেখে বান্দা প্রকাশ করে যে আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির জন্য বান্দা পানাহারের মতো মৌলিক প্রয়োজনও পরিহার করে। রোজার সূচনা হয় সুবহে সাদিক হওয়ার সময় এবং শেষ হয় সূর্যাস্তের সময়।

রোজার শুরুভাগে সাহরি খাওয়া সুন্নত। যেন রোজা রাখা সহজ হয়। শেষভাগে ইফতার করা ওয়াজিব। বিলম্বে ইফতার করা মাকরুহ।

যদি সারা দিন ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করা ইবাদত হয়, তবে সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতার করাও ইবাদত। কেননা উভয়টি আল্লাহর নির্দেশ। দ্রুত ইফতার করার অর্থ হলো আল্লাহর সামনে এ কথা প্রকাশ করা যে আমরা আপনার রিজিক থেকে অমুখাপেক্ষী নই, বরং আমরা খাবারের একেকটি দানা ও পানির প্রতিটি ফোঁটার প্রতি মুখাপেক্ষী। যখন আপনি থামতে বলেছেন, তখন থেমে গেছি।

আর যখনই অনুমতি পেয়েছি আপনার নিয়ামতের প্রতি ঝুঁকেছি। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে দ্রুত ইফতারকারী আমার কাছে অধিক প্রিয়।’ -সুনানে তিরমিজি : ৭০০

যেহেতু ইফতারের মাধ্যমে রোজা পূর্ণতা পায়, তাই ইফতারও ইবাদত। ইফতার ইবাদত বলেই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং তার শিষ্টাচার বর্ণনা করেছেন। যেমন- ইফতারের আগে দোয়া পাঠ করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারের আগে দোয়া করতেন, ‘জাহাবাল জামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু, ওয়া সাবাতাল আজরু, ইনশাআল্লাহু।’ র্থ : পিপাসা দূর হয়েছে, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং প্রতিদানও নির্ধারিত হয়েছে, ইনশাআল্লাহ!’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৭

একইভাবে কোনো জিনিস দ্বারা ইফতার করা হবে তার বর্ণনাও হাদিসে এসেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ রোজা রাখলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। আর খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা পানি পবিত্র। -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৫

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর কিছু না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৪

ইবাদতে সাহায্য করা পুণ্যের কাজ এবং তা মুসলমানের কাছে প্রত্যাশিত। তাই অন্যকে ইফতার করালে সওয়াব মেলে। নবী কারিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় সে রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব পায়। রোজাদারের সওয়াব থেকে কোনো কিছু হ্রাস করা হয় না। -সুনানে আবু দাউদ : ৮০৭

অন্যকে ইফতার করানোয় বিশেষ সওয়াব থাকায় মুসলিম সমাজে ইফতার মাহফিল ও গণ-ইফতারের প্রচলন রয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। তবে ইফতার ইবাদত হওয়ায় এর আয়োজনে কিছু বিষয় লক্ষ রাখা আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, ইফতার করা ও করানো ইবাদত। আর ইবাদতের যোগ্য ব্যক্তি কেবল মুসলমান। তাই ইফতার আয়োজনে মুসলমানদের প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যক।

সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি, দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া এবং বিভ্রান্তি দূর করতে অমুসলিমদেরও ইফতার আয়োজনে দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে, এতে দোষের কিছু নেই। কেননা ইসলামের প্রাথমিক যুগে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি হাশিমের লোকদের আমন্ত্রণ করে খাওয়ান এবং তাদের সামনে ইসলামের বাণী তুলে ধরেন। তবে অমুসলিম নেতাদের ইফতার মাহফিলে নিয়ে আসা এবং সব মনোযোগ তার প্রতি আবদ্ধ রাখা ইফতারের ধর্মীয় গাম্ভীর্য ও মর্যাদার পরিপন্থী। মূলত এমন আয়োজনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বাইরে কোনো ধর্মীয় তাৎপর্য থাকে না।

রোজাদারকে ইফতার করানো ইবাদত। এর কারণ হিসেবে প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, এর দ্বারা মানুষের প্রয়োজন পূরণ হয় এবং ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি পায়। তাই ইফতার আয়োজনে অসহায় ও স্বল্প সামর্থ্যের মানুষদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অন্তত এমন যেন না হয়, সেখানে সাধারণ রোজাদারের কোনো সুযোগ নেই। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন ওলিমার খাবারকে নিকৃষ্টতর বলেছেন, যেখানে দরিদ্র লোকদের পরিবর্তে শুধু ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয়। -সহিহ বোখারি : ৫১৭৭

ইসলাম চায় গরিব ও অসহায় মানুষ সামাজিক আয়োজনগুলোতে অংশ নিক। এ জন্য ঈদুল ফিতরের সঙ্গে সঙ্গে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে, ঈদুল আজহার সময় কোরবানির গোশত বিতরণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। মূলত কথা হলো, গণইফতারের আয়োজন এমনভাবে ও এমন স্থানে করা উচিত, যাতে অধিকসংখ্যক অসহায় মানুষ তাতে অংশ নিতে পারে। কোরবানির গোশতের সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, তাদের অংশ যেন এক-তৃতীয়াংশের কম না হয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সর্বাবস্থায় ইফতার আয়োজনে ইবাদতের আবহ রক্ষা করা। যেমন- ইফতারের কিছু সময় আগে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে তাসবিহ ও জিকিরে মশগুল থাকবে, গুরুত্বের সঙ্গে দরুদ পাঠ করবে, কোরআন তেলাওয়াত করবে অথবা সেখানে ধর্মীয় আলোচনা হবে, বিশেষত ইফতারের আগে যেন দোয়া করা হয়। কেননা ইফতারের সময় দোয়া কবুল করা হয়। সর্বোপরি সব মনোযোগ থাকবে মহান আল্লাহর প্রতি। যেন ইফতার আয়োজন পরকালীন মুক্তির উসিলা হয়।

   

হজ পালন না করেও সেরা হাজি



মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ আল্লাহতায়ালার খুব বড় একটি হুকুম। ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি। যার পক্ষে সম্ভব জীবনে একবার হজ করা ফরজ। এরপর নফল হজ আরও করা যায়। উমরা করা যায়। রমজানে উমরা করা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজ করার সমান। কিন্তু এ হজ ও উমরা সচেতনভাবে বুঝে শুনে ক’জন করতে পারে?

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, তাদের মধ্যে যাদের পক্ষে সম্ভব তারা যেন আমার ঘরে আসে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, কবুল হজ মানুষকে এমন করে দেয়, যেমন সে মায়ের পেট থেকে নিষ্পাপ হয়ে জন্মেছিল। তিনি আরও বলেন, এক উমরা থেকে আরেক উমরা এর মধ্যবর্তী গোনাহের কাফফারাস্বরূপ। অপর হাদিসে তিনি এও বলেছেন, সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ করল না, সে ইহুদি হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক (এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই)।

নিষ্পাপ নবজাতকের মতো হওয়ার জন্য ইসলাম বহু পথ খোলা রেখেছে। সবসময় তওবা-ইস্তেগফার করা, এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী গোনাহের কাফফারাস্বরূপ, রমজানের রোজা ও তারাবি, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ইত্যাদিও গোনাহ মুক্তির পথ। একজন রোগী দেখতে গেলে দু’টি হজ, দু’টি উমরা ও একজন কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাওয়া যায়। এটি হাদিস শরিফের কথা, সুবহানাল্লাহ।

ফরজ হজের পর নফল হজ ও উমরা যদিও সওয়াবের কাজ, কিন্তু এসবের তুলনায় আরও বেশি সওয়াবের কাজ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু নিয়ত যদি সহিহ না হয়, লোক দেখানো উদ্দেশ্য থাকে, যাকে শরিয়তে বলা হয় ‘রিয়া।’ এটি মহাপাপ। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, রিয়া হচ্ছে গোপন শিরক। নাউজুবিল্লাহ। আমাদের দেশে প্রচারের জন্য কিছু লোক নফল হজ-উমরা করে। নির্বাচনের জন্য করে। গল্প আছে, এক নেতা আলেমদের দাওয়াত করে বাসায় নিয়েছেন, নামাজের সময় হলে ঘরেই জামাত পড়ার ইচ্ছা করলেন আলেমরা। বললেন, একটি জায়নামাজ ও দু’টি পবিত্র বেডশিট হলেই চলবে। তখন নেতা বললেন, বেডশিট কেন? আমার বাসায় জায়নামাজই আছে। কাজের লোকেরা জায়নামাজ আনলে তিনি বলতে থাকেন, এটা তো তিন বছর আগের, গতবার যেগুলো আনলাম সেগুলো কই। এর আগের বারেরগুলো কই। আল্লাহর রহমতে এ পর্যন্ত ১১ বার হজ-উমরা করেছি। আলেমদের মতে, এটিও এক ধরনের প্রচার ও রিয়া। এখানে বলা হচ্ছে, হালাল উপার্জন দ্বারা নফল হজ উমরার কথা। হারাম টাকার কথা তো আলাদা। এর দ্বারা হজ-উমরা করে সওয়াবের আশা করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা কিতাবেই লেখা আছে। যেমন, সুদ ও হারাম টাকা দান করে সওয়াবের আশা করা ঈমান নষ্টের কারণ।


এক ধরনের অজ্ঞ-আবেগি লোক আছে, যারা টাকা হাতে এলেই নফল হজ ও উমরায় ছুটে যায়। তারা ভাবে না যে, সওয়াবের আশায় সেখানে গিয়ে তারা ফরজ হজ উমরাকারীদের কোটা নষ্ট করছে। টিকিট, থাকা, খাওয়া, ট্রান্সপোর্ট, হজ সম্পাদন ইত্যাদি সর্বত্র চাপ সৃষ্টি করছে। বাড়তি ভিড় তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। সহনীয় পর্যায়ে এমন নফল হজ ও উমরার অনুমোদন শরিয়তে রয়েছে বটে, তবে এমন বিত্তশালী মানুষের আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব এবং অধিক সওয়াব অর্জনের ব্যবস্থা আল্লাহ করে রেখেছেন।


দরিদ্র আত্মীয়দের সাহায্য করা, মরণব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য, গরিবদের বিয়েতে সাহায্য, অসহায় পরিবারের কাউকে বিদেশ প্রেরণ, অসচ্ছল ব্যক্তিকে উপার্জনের পথ বের করে দেওয়াসহ বহু ফরজ-ওয়াজিব দানের দুয়ার খোলা আছে। যেসব না করলে প্রকৃত মুমিন হওয়াও সম্ভব নয়। এসব বাদ দিয়ে শুধু ঘনঘন নফল হজ-উমরা অনেকের মাথায় ঢুকে গেছে। এসবই সমন্বিত ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব। ইতিহাসে এ বিষয়ে একটি ঘটনা স্মরণযোগ্য।

একবার বাগদাদের এক দরিদ্র ব্যবসায়ী বহু কষ্টে হজে যাওয়ার অর্থ জোগাড় করল। সে ছিল একজন বড় শায়খের ভক্ত ও মুরিদ। শায়খের সঙ্গে যারা সে বছর হজে যাবে, তাদের মাঝে তার নামও ছিল। রওয়ানার দিন লোকটি কাফেলার সঙ্গে যেতে পারেনি। তাকে রেখেই শায়খের কাফেলা হজে চলে যায়। লোকটির না যাওয়ার কারণটি ছিল বড়ই অদ্ভুত। হজের রওয়ানার পূর্ব মুহূর্তে সে যখন খানা খেতে বসল তখন শুকনো রুটি ও আচার ছাড়া তার ঘরে কিছু ছিল না। পাশের বাড়ি থেকে তখন গোশত রান্নার ঘ্রাণ আসছিল। লোকটি তার স্ত্রীকে বলে পাঠাল, আমার স্বামী হজে রওয়ানা হচ্ছেন। ঘরে খাবার তেমন কিছু নেই। তোমরা যদি আমাদের সামান্য তরকারি দিতে। তখন প্রতিবেশী গৃহিণী কেঁদে ফেলল। বলল, এ তারকারি ভাইকে দেওয়া যাবে না। লোকটির স্ত্রী জানতে চাইল, কেন? গৃহিণী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, সেটাও বলা যাবে না। তখন অনেক পীড়াপীড়ি করে যা জানা গেল, তা ছিল খুবই দুঃখজনক। গৃহিণী বলল, আমি ও আমার এতিম বাচ্চারা গত তিন দিন ধরে উপোস করছি। আজ অপারগ হয়ে ছেলেরা ভাগাড় থেকে মৃত পশুর কিছু গোশত এনে জীবন রক্ষার্থে একটু তরকারি পাকাচ্ছে। এটি কোনোরকম ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য আমাদের বেলায় জায়েজ হতে পারে। কিন্তু তোমাদের জন্য বিশেষ করে ভাইয়ের জন্য এ তরকারি হালাল নয়। শত ইচ্ছা থাকলেও আমরা তাকে তা দিতে পারি না।

ব্যবসায়ীর স্ত্রী খালি হাতে ঘরে ফিরে এলে স্বামী তার কাছ থেকে প্রতিবেশীর পূর্ণ অবস্থা জেনে যায়। নিজে আলেম বা মুফতি না হওয়া সত্ত্বেও সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, এবার সে হজে যাবে না। প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে হজের টাকা থেকে তাদের চলার মতো অর্থ দান করে দেয়। ছেলেদের নিজের ব্যবসায় লাগিয়ে দেয়। ছোটদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে। দীর্ঘ দিনের আশা ও কষ্ট করে জমানো অর্থ অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ায় এবং হজ করতে না পারায় তার মনে দুঃখ ছিল বটে, তবে সে মনে মনে বিশাল স্বস্তিও অনুভব করছিল। এভাবেই হজ শেষ হলো।

তার শায়খ ফিরে এলেন। তিনি মদিনা শরিফে থাকতেই স্বপ্নে দেখেছিলেন, কেউ যেন তার এই ব্যবসায়ী ব্যক্তিটিকে দেখিয়ে তাকে বলছে, এবার এই ব্যক্তিটির কারণেই সব হজযাত্রীর হজ কবুল হয়েছে। শায়খ খুব খুশি হয়ে অন্যদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের এই ব্যবসায়ী বন্ধুটিকে কি কেউ কোথাও দেখেছ? আমাদের কাফেলায় তো আসেনি। বাগদাদে ফিরে শায়খ লোকটির খোঁজ নিলেন। তার সঙ্গে দেখা করে তাকে এই মোবারক স্বপ্নের কথা বললেন এবং তাকে অভিনন্দন জানালেন। শায়খের কথা শুনে লোকটি কাঁদতে লাগল। বলল, হুজুর আমি তো এবার হজেই যাইনি। শায়খের কাছে সে না যাওয়ার কারণটিও খুলে বলল। শায়খও তখন কাঁদতে লাগলেন। বললেন, সত্যিই তুমি হজের চেয়েও বড় দায়িত্ব পালন করেছ। হাদিসে আছে, সে মুমিন নয়, যার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে আর সে নিজে পেট পুরে খায়। এতিম বিধবা প্রতিবেশীকে এ অবস্থায় রেখে তুমি হজে গেলে আল্লাহ তা পছন্দ করতেন না। হয়তো তোমার হজও কবুল হতো না। কিন্তু ঈমানের দাবি পূরণ করায়, মানবতার অমোঘ আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় হজ না করেও তুমি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হজপালনের মর্তবা লাভ করেছ। আধ্যাত্মিক জগতে তোমাকে হাজি হিসাবেই আল্লাহ স্থান দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তোমার নিয়ত নিষ্ঠা ত্যাগ ও মানবতার পরাকাষ্ঠায় তোমার উসিলায় এবারকার সব হাজির হজই কবুল করে নিয়েছেন।

লোকটি ছিল একজন সাধারণ চর্মকার। চামড়াজাত দ্রব্য প্রস্তুত ও বিক্রয়কারী। শায়খ তখন তাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে দ্রুতই সশরীরে হজে যাওয়ার তওফিক দেবেন। আমার কাছেও তোমার মর্যাদা এখন থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের স্পষ্ট বার্তা গ্রহণ করতে হবে। আমরা কি ঐচ্ছিক হজ ও উমরায় বেশি বাড়াবাড়ি করছি কি না। আমাদের চারপাশ, দেশ-সমাজ, পরিজন, প্রতিবেশী কেমন আছে, কী খাচ্ছে, কীসব সমস্যায় ভুগছে, কতরকম চাহিদা ও অভাবে ধুকছে। এসব আমাদের জানা ফরজ, ওয়াজিব থেকে কম নয়। এসব না জানলে, এসবের দাবি পূরণ না করলে আমরা ঈমানদারই হতে পারব না। হজ ওমরা কবুল হওয়া তো দূরের কথা। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

;

মক্কা-মদিনায় হারিয়ে গেলে যা করবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ও উমরার সময় বয়স্ক হাজিদের নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়, ছবি: সংগৃহীত

হজ ও উমরার সময় বয়স্ক হাজিদের নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতি বছর হজ মৌসুমে সৌদি আরবে একত্রিত হন প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া পুরো বছর পবিত্র উমরাপালনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবে যান লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম। হজ কিংবা উমরাপালন করতে গিয়ে অনেকে নিজের সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেন। এতে করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আবার অপরিচিত দেশ, অপরিচিত জায়গায় হারিয়ে গেলে এক ধরনের ভয়ও কাজ করে ভেতরে।

মক্কায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে অভিজ্ঞদের পরামর্শ হলো, বর্তমানে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকাংশেই কমে গেছে। এরপরও কেউ কখনো হারিয়ে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

যা করবেন
হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে মক্কায় যাওয়ার আগেই মানুষ কী কী কারণে হারিয়ে যায়, তা চিহ্নিত করুন। তাহলে হারিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না।

>> মসজিদে হারাম বিশাল এলাকাজুড়ে। প্রায় ১০০টি প্রবেশপথ রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদে হারাম সম্প্রসারণের জন্য ভেতরে-বাইরে নির্মাণকাজ চলছে। প্রবেশপথগুলো দেখতে একই রকম হলেও নাম ও গেট নম্বর ভিন্ন। প্রবেশপথগুলোর নাম ও নম্বর মুখস্ত করে নিন।

>> ভিড়ের কারণে তাওয়াফ, সাঈ করতে গিয়ে হজ ও উমরাযাত্রী বেশি হারান, তাই সঙ্গীর সঙ্গে আগেই কথা বলে নিন হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করতে হবে। যেমন, তাওয়াফ শেষ করে কোথায় নামাজ আদায় করবেন, তা চিনিয়ে দিন। আবার সাঈ করতে গিয়ে সাফা বা মারওয়া পাহাড়ে অপেক্ষা করতে পারেন।

>> মনে রাখতে হবে, মসজিদে হারামের ৭৯ নম্বর বাদশাহ ফাহাদ প্রবেশ গেটে সব সময় ভিড় বেশি থাকে। সুতরাং এ গেটে ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য গেটগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

>> হোটেলের ঠিকানা বা হোটেলের কার্ড কাছে রাখুন।

>> সঙ্গী বা গ্রুপ লিডার বা মোয়াল্লেমের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রাখুন।

>> মনে রাখতে হবে, হারিয়ে যাওয়া হজযাত্রীদের পথ চিনিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মক্কা-মদিনার সবাই হেল্পফুল, মক্কায় অবস্থানকারী স্থানীয় প্রবাসী, সৌদি নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তা নিতে পারেন। যে কাউকে বললেই পথ চিনিয়ে দেবে।

আর কিছু বলতে না পারলেও শুধু বাংলাদেশ বাংলাদেশ বললেও তাকে মক্কার ইব্রাহিম খলিল রোডে বাংলাদেশ হজ অফিস কিংবা মদিনার কিং ফাহাদ ২১ নম্বর গেইটের কাছে বাংলাদেশের হজ অফিসে পৌঁছে দেওয়ার লোকের অভাব হবে না। সেখানে গেলে অফিসের আইটি বিভাগ তার পরিচয় বের করে ঠিকানা মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

>> এছাড়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করুন।

;

ইতালির যে শহরে কোনো মসজিদ নেই



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মনফালকনের মুসলমানরা পার্কিংয়ের জায়গায় নামাজ আদায় করেন, ছবি: সংগৃহীত

মনফালকনের মুসলমানরা পার্কিংয়ের জায়গায় নামাজ আদায় করেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জুমার দিন। ইতালির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর মনফালকনের একটি পার্কিং লটে শত শত মুসল্লি জড়ো হয়েছেন জুমার নামাজ পড়তে। এই শত শত মুসল্লি শহরটিতে বসবাসরত মুসলিম জনসংখ্যার একটি অংশ মাত্র। গত নভেম্বরে শহরটির কট্টরপন্থি মেয়র মুসলিম কালচারাল সেন্টারের ভেতরে নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

মনফালকনে বসবাসরত মুসলিমরা কোথায় নামাজের অনুমতি পাবেন, তা নির্ধারিত হবে এ মাসের শেষে আদালতে।

এখন তারা যে জায়গাটিতে নামাজ পড়ছেন তার মালিক প্রবাসী বাংলাদেশি রেজাউল হক। অন্যান্য মুসলিমদের মতো তিনিও নামাজ পড়ায় অসুবিধার বিষয়টিকে তিনি দেখেন কর্তৃপক্ষের হয়রানি হিসেবে।

২০০৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পাড়ি জমিয়ে তিনি পেয়েছেন ইতালিয়ান নাগরিকত্ব। রেজাউল বলেন, ‘বলুন, আমার কোথায় যাওয়া উচিত? আমাকে কেন (নামাজ পড়তে) মনফালকনের বাইরে যেতে হবে? আমি এখানে থাকি, এখানে ট্যাক্স দিই!’

তার ক্ষোভ, ‘ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট, ইহুদি সবার জন্য প্রার্থনালয় থাকতে পারলে, আমাদের জন্য কেন নয়?’

মিলান শহর থেকে ৪শ’ কিলোমিটার দূরের মনফালকন শহর। মনফালকনের ৩০ হাজার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ প্রবাসী। যার বেশিরভাগই মুসলিম বাংলাদেশি।

নামাজের বিষয়ে এমন কড়াকড়ি প্রসঙ্গে শহরের মেয়র অ্যানা সিসিন্ট বলেন, নামাজের নিষেধাজ্ঞা বৈষম্যমূলক নয়, বরং শহরের পরিকল্পনা ও প্রবিধানগুলো কঠোরভাবে উপাসনালয় স্থাপনে সীমাবদ্ধ। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে উপাসনার স্থান প্রদান করা তাদের কাজ নয়। আর মেয়র হিসেবে, আমি কারও বিরুদ্ধে নই, আমি বিরোধিতায় আমার সময় নষ্ট করতে পারি না, আমি এখানে আইন প্রয়োগ করতে এসেছি।

নগর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ নামাজের জায়গার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে। উদারপন্থি একটি এলাকার মেয়র হিসেবে এর ব্যবস্থা করা তার দায়িত্ব নয় বলেও জানান অ্যানা।

তিনি মনে করেন, এমনিতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা এবং উচ্চ জন্মহারের কারণে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। যা মনফালকনের জন্য অনেক বেশি।

ইতালির অন্যতম প্রধান মুসলিম সংগঠন ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটির প্রধান ইয়াহিয়া জানান, মেয়রের যুক্তির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

;

মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া

অন্ধ ও বধিররা যেখানে কোরআন শিখছেন



মুফতি এনায়েতুল্লাহ
মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা, ছবি: বার্তা২৪.কম

মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এর মাঝে শারীরিক প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি হলেও দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা ৩০ লাখের মতো। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাদের ৯৮ শতাংশ কোনো না কোনো সময় বৈষম্যমূলক আচরণ ও নানাবিধ নিগ্রহের শিকার হন। বাংলাদেশের ভিক্ষুকদের বড় একটি অংশ প্রতিবন্ধী। সমাজের অনেকেই প্রতিবন্ধীদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষের সহনশীল মনোভাব গড়ে ওঠেনি। সমাজের মূল স্রোতে সেভাবে তাদের অংশগ্রহণ এখনও দেখা যায় না।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অন্ধ ও বধিরদের জন্য বিশেষায়িত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেভাবে ইসলাম শেখানো কিংবা পবিত্র কোরআন শেখানোর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অথচ যথাযথ উদ্যোগ নিলে তারা ইসলাম শেখার পাশাপাশি কোরআনের হাফেজ ও আলেম হয়ে সমাজে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অন্যের বোঝা না হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখবে।

এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে এগিয়ে আসেন মুফতি বখতিয়ার হোসাইন সরদার। তিনি মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম। রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদার বাড়িতে বাবা-চাচাদের দেওয়া ওয়াকফ জায়গায় তিনি ১৯৯৭ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন সেখানে ৬ তলা ভবন হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি বেড়েছে। মক্তব থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত পাঠদানসহ আরও কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। এই মাদরাসায় ২০০৮ সালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগে ব্রেইল পদ্ধতিতে মক্তব, নাজেরা, হেফজ ও কিতাব বিভাগের মেশকাত জামাত পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠদান করা হয়।

মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা, ছবি: বার্তা২৪.কম


বর্তমান অন্ধ ছাত্রসংখ্যা ১০০, তাদের আবাসন, খাবার, পোশাক ও চিকিৎসা মাদরাসার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। খরচ বহন করেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এখান থেকে হিফজ শেষ করে ৭০ জন অন্ধ হাফেজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতা করছেন। হাফেজ হওয়ার পাশাপাশি অন্ধদের জন্য দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পড়ারও সুযোগ রয়েছে এখানে। কিতাবগুলোও ব্রেইল পদ্ধতির। ২০২৫ সালে দুইজন অন্ধ ছাত্র আলেম হবেন বলে জানালেন প্রিন্সিপাল মুফতি বখতিয়ার।

তিনি জানান, ‘পুরো পৃথিবীতে এই দুইজন হবেন ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা প্রথম আলেম।’ মাদরাসাতুর রহমানে অন্ধ শিক্ষক আছেন ৭ জন, তাদের সহযোগী শিক্ষক আছেন আরও ৫ জন। অন্ধরা ২-৩ বছরের মধ্যে হাফেজ হতে পারে। ‘আমরা অন্ধদের সর্বোচ্চ সম্মান দিই। এতে অন্ধরা খুশি হয়। ফলে এখান থেকে কেউ সহজে যেতে চায় না’- বললেন মুফতি বখতিয়ার।

তিনি জানালেন, অন্ধ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। গত রমজানে আন্তঃমাদ্রাসা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) নিয়ে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার অধিকাংশ বিজয়ীই ছিল মাদরাসাতুর রহমানের ছাত্র। বিজয়ীদেরকে শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল (এসসিআই) বাংলাদেশ অফিস পবিত্র উমরাপালনের ব্যবস্থা করে।

ছেলেদের পাশাপাশি ১৫ জন অন্ধ মেয়ে পড়েন এখানে। তাদের জন্য আলাদা ভবন রয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছেন মুফতি বখতিয়ার। কম্পিউটার ল্যাব, ব্রেইল পদ্ধতির কিতাবাদি প্রিন্টের জন্য আলাদা প্রিন্টার, প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র ও কাপড় ধোয়ার মেশিনও রয়েছে।

বধির ছাত্ররা পড়াশোনা করছেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিভাগের পর মাদরাসাতুর রহমানে ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে বাকপ্রতিবন্ধী বিভাগ চালু করা হয়। বর্তমানে ৮ জন ছাত্র এই বিভাগে পড়াশোনা করছে। দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার উদ্যোগে একজন শিক্ষককে সৌদি আরবের তায়েফ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে।

বোবাদের আরবি শিক্ষক মুফতি রেদওয়ান রাশেদি জানান, ‘ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা বা ইংরেজি Sign language বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নাড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। মুখের ভাষায় যোগাযোগ করা অসম্ভব বা অযাচিত হলে এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত মুখের ভাষার আগেই ইশারা ভাষার উদ্ভব ঘটে। মুখের বিশেষ ভঙ্গিমা, কাঁধের ওঠানামা কিংবা আঙুল তাক করাকে এক ধরনের মোটাদাগের ইশারা ভাষা হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে প্রকৃত ইশারা ভাষাতে হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সূক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টি ব্যবহৃত হয় এবং এর সঙ্গে সাধারণত মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তিও যুক্ত করা হয়। বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষার ব্যবহার করে থাকেন। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়, তার পরও আমরা চেষ্টা করছি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিভাগ, ছবি: বার্তা২৪.কম

মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়ায় ভাইস-প্রিন্সিপাল ও এয়ারপোর্ট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের অন্তর চক্ষু খুলে দেওয়ার মেহনতের সঙ্গে যুক্ত আছি। আমাদের এই কাজকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন। আল্লাহতায়ালা তাদের এই মহৎ কাজকে কবুল করুন, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্ধ ও বোবা ছাত্ররা প্রায়ই অসহায় ও গরিব ঘরের হয়। তাদের কাছ থেকে টাকা নিলে পড়তে চাইবে না। আমরা চাই, তারা দ্বীন শিখুক, ভালো মানুষ হোক। ভালোবাসা আর মায়া দিয়ে তাদের পড়াই।’

;