বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা, মিথ্যা অভিযোগে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে ব্যাপক দায়মুক্তির কড়া সমালোচনা করেছে দেশটি।

জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি এমন অজুহাতে মিথ্যা অভিযোগসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে এসব কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এবং শ্রমের সিনিয়র ব্যুরো অফিসার রবার্ট গিলক্রিস্ট মানবাধিকার অনুশীলনের ৪৮তম বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন এবং মুখপাত্র ম্যাট মিলার।

রবার্ট গিলক্রিস্ট বলেন, মানবাধিকার রিপোর্ট নামে পরিচিত এই কংগ্রেসের নির্দেশিত প্রতিবেদনটি ১৯৯৭ সাল থেকে ডিআরএল ব্যুরোর একটি প্রধান প্রচেষ্টা। মানবাধিকার প্রত্যেকের জন্য; এই প্রতিবেদনটি এই সর্বজনীন অধিকারের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করার একটি উপায়।

যদিও মানবাধিকার সর্বজনীন তবুও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষাকারীরা এবং সুশীল সমাজের নেতারা প্রায়ই সকলের জীবন উন্নত করার জন্য বড় ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। বিশেষত যারা নারী ও শিশুর সুরক্ষা, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকার, এলজিবিটিকিউ প্লাস এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিয়ে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য চাপ দেয়ায় প্রায়শই হুমকি এবং হয়রানি, গ্রেফতার এবং সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হয়৷ বিশ্বজুড়ে সাহসী ব্যক্তিরা যারা অন্যদের মানবাধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তাদের নিজের জীবন এবং স্বাধীনতাকে ঝুঁকিপূর্ণ করেন তাদের গভীর ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তারা বলেছেন, বাংলাদেশে সরকারের মারাত্মক দুর্নীতি আছে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা রয়েছে। দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর ওপর আছে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ অথবা হয়রানি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, নিষ্ঠুর নির্যাতন, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তি দেওয়া হয়। রয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বন্দি ও আটকের অভিযান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই বছরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসনকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বাংলাদেশের হাসপাতালে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে ২০০৮ সালের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে তাকে জেলখানা থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালে সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করে গৃহবন্দি করা হয়। রাজনৈতিক বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও দেশের ভিতরকার আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার তথ্য প্রমাণে ঘাটতি আছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, তাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক ছক সাজানো হয়েছে। পক্ষান্তরে প্রসিকিউটররা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করেছেন।

এই রিপোর্টে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার দিকেও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংবিধান সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়ার সদস্যসহ সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু সরকার এই অধিকারে ঘন ঘন হস্তক্ষেপ করেছে। এক্ষত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারের হয়রানি অথবা প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্র মিডিয়ার সদস্যরা ও ব্লগাররা নিজেরাই সেন্সর করেছেন। এতে তুলে ধরা হয়েছে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র, বিচারের ক্ষেত্রে হয়রানি, খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারসহ নানা রকম নিষ্পেষণের কথা। উল্লেখ্য, প্রতি বছর সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সময় গত রাতে এই রিপোর্ট প্রকাশ হয়। তাতে বাংলাদেশ অধ্যায়ে আরও বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মিডিয়ার স্বাধীনতায় মারাত্মক বিধিনিষেধ আছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে আছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অথবা সহিংসতার হুমকি। সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয় ও সেন্সরশিপ করা হয়। ইন্টারনেট স্বাধীনতায় আছে মারাত্মক বিধিনিষেধ। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অথবা স্বাধীন সমাবেশের ক্ষেত্রেও আছে বড় রকমের হস্তক্ষেপ। আছে সংগঠন, অর্থায়ন ও বেসরকারি এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আছে নিবর্তনমূলক আইন। মুক্তভাবে চলাচলে আছে বিধিনিষেধ।

রিপোর্টে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সদস্যদের শনাক্তে বা শাস্তি দিতে সরকার বিশ্বাসযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। 

এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেসব যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে তার বিচার করার জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেই আদালত শাস্তি দিয়েই যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে মৃত্যুদণ্ড। অনেক পর্যবেক্ষক এই প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দেখেন। কারণ, আদালত বিশেষত বাছাই করে অভিযুক্ত করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের। এতে খেয়ালখুশিমতো ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তার তদন্ত নিজেরাই করেছে। তারা এমন সব ঘটনা ঘটিয়েছে যেখানে তাদের শারীরিক মারাত্মক প্রহারে মানুষ আহত হয়েছে অথবা মারা গেছেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে কতজন মানুষ মারা গেছেন তার মোট কোনো সংখ্যা সরকার প্রকাশ করেনি। এমনকি এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তও করেনি। এই তদন্ত যারা করেছেন তাদের স্বাধীনতা ও পেশাগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। 

রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা বছরেই আইন প্রয়োগকারীরা সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে তল্লাশি বা রেইড দিয়েছে। কোনো কোনো ঘেরাওয়ের কালে, গ্রেফতারকালে সন্দেজজনক কিছু মৃত্যু ঘটেছে। একই ঘটনা ঘটেছে অন্য আইন প্রয়োগকারীদের অপারেশনেও। রিপোর্টে আরও বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে যায় গত বছর।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও শালিশ কেন্দ্র রিপোর্ট করেছে যে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ড, অথবা হেফাজতে থাকা অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে দুজন আইন প্রয়োগকারী এজেন্সির গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনজন নিহত হয়েছেন নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার আগে বা হেফাজতে নেয়ার পর শারীরিক নির্যাতনে। ২৬শে মার্চ সুলতানা জেসমিন র‌্যাবের হেফাজতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি আটক অবস্থায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা এটাকে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

র‌্যাবের ইউনিটের কমান্ড কর্মকর্তারা মিডিয়াকে বলেছেন, জেসমিন আর্থিক প্রতারণায় জড়িত থাকার জন্য তাকে তুলে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা আছে। ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশিতদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি একটি রিপোর্ট জমা দেয় আগস্টে। কিন্তু সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। অক্টোবরে হাইকোর্টের দু’জন বিচারক বলেন, এই রিপোর্ট অস্পষ্ট। গ্রেফতার ও আটকের বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা নেই এতে। এমন মন্তব্যের সময়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। 

১৮ই মার্চ সাদা পোশাকে র‌্যাব কর্মকর্তারা এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। এতে আহত হন একজন। ওই রিপোর্টে বলা হয়, মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ এবং মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হচ্ছে গুম এবং অপহরণ অব্যাহত আছে। অভিযোগ আছে এসব করছে নিরাপত্তা সার্ভিসের লোকজন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন রিপোর্ট করেছে যে, এ সময়ে ৩২ জনকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে, তদন্তে বা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে সীমিত উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো রিপোর্ট করেছে যে, জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন যারা তারা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী। গুমের অভিযোগের পর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা কোনো রকম অভিযোগ ছাড়া কিছু মানুষকে ছেড়ে দিয়েছে। গ্রেপ্তার করেছে অন্যদের।

ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২৩ কান্ট্রি রিপোর্টে’ উল্লেখ করেছে যে, নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্সিগুলো জোরপূর্বক গুম, গোপন জেলখানার ব্যবহার, খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতার ও নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বছরজুড়ে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দিতে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অপহরণে জড়িত তাদের বিচারের। ভিকটিমের পরিবারগুলোর সংগঠন মায়ের ডাক র‌্যালি করে বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কোনো সদস্য আইনগতভাবে প্রশাসনিক, বিচারিক কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। মায়ের ডাক ও স্থানীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকারকে হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠিও লিখেছেন। একই সঙ্গে জাতিসংঘের কাছে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ার কারণে নাগরিক সমাজের সংগঠনের সমালোচনা করেন।

প্রতিবেদনে মিডিয়ার স্বাধীনতা অংশে বলা হয়, আইনে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্যকে সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিরুদ্ধে কথা বলাকে সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে বলেই মনে হয়। সাংবিধানিক কোনো পরিষদের সমালোচনাকে আইনে ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে স্বাধীনতা যুদ্ধ, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার  বিরুদ্ধে প্রাপাগাণ্ডা ছড়ানোর কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। সরকারের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে সারাবছরই সরকার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আইনমন্ত্রী রিপোর্ট করেছেন যে, সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে ৭০০০ মামলা মুলতবি আছে। আগস্টে সরকার ঘোষণা দেয়, তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে পরিণত করবে। পার্লামেন্ট এই আইন পাস করেছে সেপ্টেম্বর মাসে।

আইন ও সালিস কেন্দ্র রিপোর্ট করেছে যে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১১৯টি ঘটনায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে। আরেকটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন বলেছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর ৩০৯টি হামলা বা হয়রানির ঘটনা ঘটছে। আহত হয়েছেন ১৩৮ জন সাংবাদিক। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সুনাম নষ্ট করার জন্য প্রিন্ট, অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহারের অভিযোগে প্রথম আলোর সম্পাদক ও একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আওয়ামী লীগপন্থি একজন আইনজীবী। এ অভিযোগে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আটক করে পুলিশ। এতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। এই আইনকে সংশোধন বা বাতিলের দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের সংগঠন, সম্পাদক পরিষদ ও রাজনৈতিক দলগুলো।

   

মুন্সিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। শুক্রবার (৩ মে) মধ্যরাতে উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার কাদরা গ্রামের হোসেন আলী বেপারীর ছেলে আলমগীর হোসেন (৫৮), তার ছোট ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৭), তার মামী রাহেলা বেগম (৫৫)। আহতরা হলেন, আলমগীর হোসেনের বড় ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০) ও প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিম খলিল সুজন (৩৩)।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আলমগীর হোসেন সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। শুক্রবার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় কাদরা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বেড়ানো শেষ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মামী রাহেলা বেগমকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে ঢাকাতে নিয়ে আসছিলেন তিনি।

পথে রাত দেড়টার দিকে তাদের প্রাইভেটকারটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া মানাবে ওয়াটার পার্কের সামনে আসলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীসহ প্রাইভেটকারটি রাস্তার পাশের খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান আলমগীর হোসেনসহ মোট তিনজন। চালকসহ আহত দুইজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রিফাত মল্লিক বলেন, ‘রাত ১টা ৫০ মিনিটে আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই। খবর পাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। হতাহত সবাইকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।’

গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাদিয়া আফরিন বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে আমাদের হাসপাতালে ৫ জন রোগী নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করি। আহত নজরুল ও সুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মরদেহগুলো বর্তমানে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। ঘাতক কাভার্ডভ্যানটিকে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

;

গাজীপুরে পিকআপ-ট্রাক সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রাক ও পিকআপের সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই পিকআপে থাকা আরও ১১ জন নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়েছেন।

শনিবার (৪ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাসেল মিয়া (২৫) ও তার জামাতা আবু সুফিয়ান (২৫)।

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বেলাল আহমেদ বলেন, একটি পিকআপে চড়ে মিক্সার মেশিন নিয়ে ১৩ জন শ্রমিক ঢালাইয়ের কাজে শ্রীপুর থেকে মাওনা অভিমুখে যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী পিকআপটি শ্রীপুর-মাওনা আঞ্চলিক সড়কের ভাংনাহাটি কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে পৌঁছানো মাত্রই পেছন থেকে একটি ড্রাম্প ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে পিকআপ উল্টে শ্রমিকরা মিক্সার মেশিনের নিচে চাপা পড়েন। এর ফলে ঘটনাস্থলেই রাসেল মিয়া নিহত হন। ১২ জনকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সুফিয়ানকেও মৃত ঘোষণা করেন। 

শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কুদ্দুস বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাকটি জব্দ করা গেলেও চালক পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



;

হাতীবান্ধায় দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত-১০



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর সমর্থকদের হামলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহানা ফেরদৌসী সীমাসহ তার পক্ষের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

শুক্রবার (০৩ মে) মধ্যরাতে উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

শাহানা ফেরদৌসী সীমার অভিযোগ, গণসংযোগ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মেডিকেল মোড় এলাকায় তার নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় লিয়াকত হোসেন ও তার লোকজন। এতে তিনিসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ সময় তাদের হামলায় দৈনিক কালের কণ্ঠের হাতীবান্ধা প্রতিনিধি হাসান মাহমুদও আহত হয়। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লিয়াকত হোসেন বাচ্চু।

হাতীবান্ধা থানার ওসি (তদন্ত) নির্মল চন্দ্র মোহন্ত বার্তা২৪.কম-কে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। 

;

ঝালকাঠিতে বড় ভাইকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছোট ভাই আটক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঝালকাঠি
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝালকাঠিতে পারিবারিক বিরোধের জেরে বড় ভাই সুজন তালুকদার (৩৫) কে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছোট ভাইকে স্বপন তালুকদার (৩০) কে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৮)।

শুক্রবার (০৩ মে) দুপুরে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। রাতে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর উপ-পরিচালক লে. কমান্ডার মুহতাসিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ৩০ এপ্রিল ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নের গোবিন্দধবল গ্রামে পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিলে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে ভর্তি না করে রিলিজ দিয়ে দেয়। পরে ওই দিন রাতেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সুজনের স্ত্রী রিয়া বেগম গত মে ঝালকাঠি থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলা হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেছে র‌্যাব-৮।

;