ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্প্রতি উদ্ভাবন করেছে উচ্চ ফলনশীল, জিংক ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ব্রি-১০২ জাতের ধান। নরসিংদীতে পরীক্ষামূলক এই ধান চাষে মিলেছে সফলতা। পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প খরচে ধান উৎপাদনে ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষক।
জানা যায়, পুষ্টি সমৃদ্ধ ব্রি-১০২ জাতের ধান অন্যান্য ধানের চেয়ে ফলনে বেশি, দেখতে লম্বা ও চিকন, ভাত ঝরঝরে, খেতে সুস্বাধু, পুষ্টিগুণ বেশি ও জিংক সমৃদ্ধ। রোগ বালাই কম। এ ধান হেক্টরে ৮ থেকে সাড়ে ৯ টন পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। তাই এ জাতের ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাগিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। পরীক্ষামূলকভাবে এবছর পলাশ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৫ জন কৃষকের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে প্রথমবারের মতো এর আবাদ করা হয়। প্রথমবারেই সর্বোচ্চ ফলন পেয়ে খুশি কৃষকরা। এটি এখন কৃষি ও কৃষকের জন্য সুসংবাদ।
অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন বেশি হওয়ায় পুরোনো জাত বাদ দিয়ে নতুন জাতের ধান ব্রি-১০২ চাষ করতে মাঠ দিবসের মাধ্যমে কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের সদস্যরা। বঙ্গবন্ধু-১০০ এবং ব্রি-১০২ জাতের জিংক সমৃদ্ধ, শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। এগুলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান হওয়ায় বাজারমূল্যও অন্য ধানের তুলনায় বেশি বলে দাবি কৃষক ও কৃষি বিভাগের।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ধানের চাল খেলে শরীরে পুষ্টি ও জিংকের চাহিদা পূরণ করবে। তাই সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
পলাশ উপজেলার জয়পুরা এলাকার কৃষক মো: হেকিম মিয়া জানান, তিনি আগে বি ২৮ ও ব্রি ২৯ ধান করতেন। এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে নতুন ব্রি ১০২ জাতের ধানের চাষ করেছেন। বীজ ও সব ধরনের সার কৃষি অফিস থেকেই দিয়েছেন এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত তদারকি করেছেন। যার ফলে এবছর আগের তুলনায় ধান বেশি পেয়েছেন এবং অন্যান্য কৃষকের আগেই ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন।
তার কথার সুরে সুর মিলিয়ে একই এলাকার কাদির সরকারও জানিয়েছেন একই কথা। তিনি বলেন, এই ধানে রোগ বালাই হয়না বললেই চলে। এছাড়া বাতাসে সহজে নুয়ে পরে না। ধানটি লম্বা ও চিকন। তাই মানুষের মুখে এখন আগামী দিনে এই ধান চাষের আগ্রহের কথা উঠে এসেছে।
পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার জানান, মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কাজই হচ্ছে কৃষকদের নতুন নতুন তথ্য দেয়া। এরজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত মাঠ দিবস করা হয়ে থাকে। এই মাঠ দিবসের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের নতুন নতুন তথ্য দেয়া এবং সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়।
গাজীপুর ধান গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাবিবুর রহমান মুকুল বলেন, আধুনিক জাতের ধানের মধ্যে সব বৈশিষ্ট্য এই জাতের মধ্যে বিদ্যমান। এই ধানের গাছ বেশি বড় না হওয়ায় বাতাসে সহজেই নুয়ে পরে না। এই জাতের ধানে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তাই শরীরের জন্য উপকারে আসে।
গাজীপুর ধান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (গবেষক) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, সরকার উচ্চফলনশীল জাতের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে বিশেষ নজর দিয়েছে। বাংলাদেশর মানুষ ভাত খেতে অভ্যস্ত। তাই ভাতের মধ্যে পুষ্টিগুণ থাকলে সহজেই মানুষ পুষ্টি পাবে। এই ধানের চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
ব্রি উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ ও ব্রি ধান-১০২ জাতের ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে ধান গবেষণা কেন্দ্র। এতে একদিকে যেমন কৃষক অধিক ফলনে লাভবান হবেন অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে। এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।