সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি গবেষণা সংস্থা আছে যার প্রধান কাজ হলো দেশের সড়ক ও মহাসড়ক নিয়ে গবেষণা করা। মাটি ও বিটুমিনসহ রাস্তা নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষা করা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে চালু হওয়া এই সংস্থায় কখনোই কোনো গবেষক ছিলেন না এবং এখনও নেই।
প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আহসান হাবীব জানান, প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য গবেষণা করা। কিন্তু গবেষকের অভাবে, তাদের কাজ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি তারা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) এবং দেশ-বিদেশের কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় মোট ছয়টি গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
আহসান হাবীব বলেন, “আমরা এখন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছি। আমাদের এটা করতে হচ্ছে, কারণ হল আমাদের বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে গবেষকের কোনো পদই নেই।”
সড়ক ও জনপথ বিভাগের মতে, বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরি নির্মাণ সামগ্রী এবং রাস্তার নকশার সব দিক নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষা এবং পরামর্শ দেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। যাতে করে সবচেয়ে উপযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনীয় মান নিশ্চিত করা যায়।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মতে, “সার্কেলটি মাটির নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয় এবং নির্মাণ সামগ্রী সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা করে।
এখন মাঠ পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে পদায়ন করা হয় এবং কয়েক বছর পরে তাদের আবার বদলি করা। আর এভাবেই চলছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
জনবল কাঠামোতে কখনো বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বা গবেষকের মতো পদই ছিল না বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। তিনি বলেন, কিছু গবেষকের পদ সৃষ্টির জন্য তারা মন্ত্রণালয়কে দুবার নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু জনবল কাঠামোগুলো র অনুমোদন পাওয়া যায়নি মন্ত্রণালয় থেকে।
আহসান হাবীব জানান, মিরপুর এলাকায় পুরাতন সড়ক ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে নতুন সড়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-২ এর অধীনে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত ভবনটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
“নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে কিন্তু গবেষণা পরিচালনার জন্য আমাদের কাছে কোনো গবেষক পদ নেই। আমাদের নতুন গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্যও গবেষকের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমাদের এখনও কোনো গবেষক নেই,” বলেন আহসান হাবীব।
দেশের রাস্তা নির্মানের জন্য গবেষণা খুব দরকারি উল্লেখ করে, আহসান হাবীব বলেন, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হলে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
আহসান হাবীব বলেন, ‘দেশের সড়ক-মহাসড়কে গবেষণা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও উপকরণ ব্যবহার না করলে বিশ্ব এগিয়ে যাবে কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়বো।
তিনি বলেন, বর্তমানে তারা আর্লিংটনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে একটি গবেষণা করছেন। রাস্তা নির্মাণে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে হচ্ছে সেই গবেষণা। গবেষণার অংশ হিসেবে নগরীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাধে প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তার কিছু অংশ নির্মাণ করেছেন তারা।
আহসান হাবীব বলেন, গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক হলে তারা পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করবে।
এখন গবেষণা ও ল্যাবরেটরির কাজগুলো মাটি পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিটুমিনসহ সড়ক নির্মাণের উপকরণ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, যে কোনো উন্নত দেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের জন্য আলাদা গবেষণা শাখা থাকে। গবেষণার মূল প্রয়োজন হলো বিনিয়োগকে টেকসই করা। ফলস্বরূপ উন্নত দেশগুলো প্রতিনিয়ত গবেষণা কাজ পরিচালনা করে। কারণ নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপকরণ আসছে।
“বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরিটিও এই ধরণের চিন্তাভাবনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু, বছরের পর বছর ধরে এর সক্ষমতা বাড়ানো যায়নি,” বলেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, উইংকে গবেষণা সহকারী মতো পদ তৈরি করতে হবে। সরকারকে গবেষকদের নিয়োগ দিতে হবে। দেশের সড়ক-মহাসড়ককে টেকসই করতে গবেষণা করাই হবে তাদের একমাত্র কাজ।
“তারা স্বল্প বিনিয়োগে কিভাবে টেকসই সড়ক তৈরি করা যায় তা নিয়ে তারা গবেষণা করবে এবং রাস্তা নির্মাণে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করবে," বলেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এখনই ব্যাপক গবেষণা চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
“আমরা যদি বিনিয়োগকে টেকসই করতে চাই তবে আমাদের গবেষণা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই,” অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, তারা একটি নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করছেন, যাতে গবেষকদের পদ রাখা হচ্ছে।
এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘আমরা অর্গানোগ্রামটি অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। অর্গানোগ্রামটি অনুমোদন হলে আমারা গবেষক পদে নিযোগ দিতে পারবো।’