উড়ছে রঙিন ঘুড়ি
চাঁদনী রাতে চারপাশ থেকে ভেসে আসে বাঁশির শব্দ। বৈশাখী রাতের বাতাস আর এ-শব্দ মিলেমিশে মুগ্ধ করে মনকে। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যাবেলা। আকাশে দেখা মিলছে ঘুড়ির। বিশেষ করে বিকালের নীল আকাশে যেন ঘুড়ির রাজত্ব। রাতে মনে হয় আকাশে যেন বিমান খেলা করছে। নিভু-নিভু আলো জ্বলে আকাশে। কখনো মনে হবে বড় সাপ, চিল, ঈগল, ঘর উড়ছে ওখানে। কখনো মনে হবে দৈত্য-দানব আকাশে উড়ছে! আসলে এগুলো বিভিন্ন ডিজাইনের ঘুড়ি।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের অংশ এই ঘুড়ির দেখা মেলে এখনো কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায়। প্রতিদিন আকাশে দিনেরাতে দেখা যায় হরেক রকমের ঘুড়ি৷। উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এমনি দৃশ্য দেখা যায়৷
বাংলার সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যেতে চলা ঘুড়ি উৎসবে সববয়সী মানুষ মেতেছেন। বিভিন্ন পাড়া, মহল্লার আকাশে এখন রঙবেরঙের ঘুড়ি। শিশু-তরুণ-যুবক এমনকি মাঝ বয়সীরাও স্বাদ নিচ্ছে ঘুড়ি উড়ানোর। শুধু দিনেই নয়, রাতের আকাশেও দেখা মিলছে ঝলমলে ঘুড়ির।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে উপজেলায় ঘুড়ি বানানোর ধুম পড়েছে। আকাশে চোখ মেললেই ঘুড়ির লড়াইয়ের দৃশ্য, চলছে কাটাকাটির খেলা। ঘুড়ির মধ্যে লাইটিং করা হচ্ছে। রাতের আকাশে অনেক রকমের আলো ঝলমল করছে। কটিয়াদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত ছোট-বড় নানাবয়সী ঘুড়িপ্রেমী মেতেছেন এই ঘুড়ি উৎসবে। বর্তমানে চাহিদা বাড়ায় প্রকারভেদে দুইশ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব ঘুড়ি। প্রতিদিন আকাশে দিন-রাত্রি উড়তে দেখা যাচ্ছে- চিল, কয়রা, ঢোল, পতিঙ্গা, পাখি, পরি, বাচ, ফুল, প্রজাপতি, মানুষ ঘুড়ি, সাপাসহ রংবেরঙের ঘুড়ি।
মসুয়া ইউনিয়নের বৈরাগিচর এলাকার ঘুড়িপ্রেমী ইদ্রিস বলেন, গ্রামে ঘুড়ি তৈরিতে যুবকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। সাধারণত যেকোনো ডিজাইনের একটি ঘুড়ির দাম একশ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত। বাঁশ, বেত এবং বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিক-কাগজের মোড়কে ঘুড়ি বানানো হয়। আবার কেউ ঘুড়িতে বাতি লাগিয়ে নিয়ে রাতের আকাশে উড়াচ্ছেন।
জনশ্রুতি আছে, ব্রিটিশ আমলে অভিজাত লোকদের বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়ানোর আয়োজন করা হতো। ১৭৪০-এর দশকে নায়েব-এ-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানো উৎসব একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়। তখন থেকেই কিশোরগঞ্জের খোলা আকাশে অনেক ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়।