বৃষ্টি-বন্যার আগেই ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক



আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, মানুষ যখন একটু স্বস্তি পেতে বৃষ্টির জন্য হাহুতাশ করছে, দেশজুড়ে চলছে ইসতিসকার নামাজ আদায়। তবুও এই মুহূর্তে বৃষ্টি চান না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড় এলাকার কৃষকরা।

মাঠে সোনালি ধান, হাওর ও বিল থেকে কেটে ঘরে তোলার পর বৃষ্টি এলেই ভালো হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। তাদের মতে আরো ৭ থেকে ১০দিন বৃষ্টি না আসলে তারা জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তবে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কৃষকদের জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।


জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ১১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৯১ হেক্টর বেশী। আর এই জমি থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৩ মেট্টিক টন ।চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরা। তবে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। জেলার বিভিন্ন হাওড়াঞ্চলসহ উজানে থাকা জমিতে গিয়ে দেখা যায়- তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আর কিষাণীরা ব্যস্ত কেটে আনা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। ঘাম ঝড়িয়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে না হয় আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবুও এই সময়ে বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি কিংবা বন্যার মত কোন দূর্যোগ চান না তারা।

নাসিরনগরের মেন্দি হাওড়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। এমন অবস্থায় বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি কিংবা বন্যা হলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়াও বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল এলে হাওড়াঞ্চলের নিচু এলাকার জমি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ফসল তুলতে না পারা কৃষকরা বিপাকে পড়বেন। তাই সব মিলিয়ে রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই খুশি তারা।

নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিভিন্ন এলাকার হাওরের ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। উজানের কিছু ধানি জমি আছে এগুলো কাটতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময়টাতে বৃষ্টি না হলে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তিনি। যদি এর মধ্যে বৃষ্টি হয় তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।


উপজেলার দাতমন্ডল গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়ারিশ বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি মওসুমে পাঁচ কানি জমিতে নতুন জাতের বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভাল। প্রতি কানি জমিতে ২১ মণ ধান হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কষ্টের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তিনি আরো বলেন, বৃষ্টি সবাই চাচ্ছে কিন্তু আরো কয়েকদিন পরে হলে আমাদের জন্য ভাল হয়। এমন রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ কয়েকটা দিন থাকলে নিরাপদে ফষলগুলো ঘরে তুলতে পারতাম। তাহলে আমাদের ফসল ঘরে তুলতে পারব। তীব্র গরমে ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায়না। যাদের পাচ্ছি তাদেরকে প্রতিদিন ৭শ টাকা করে দিয়ে ধান কাটাচ্ছি। কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে সামনে ঝড় বৃষ্টি আসতে পারে। তাই পাকা ধান দ্রুত কাটতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি মওসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকের কষ্টের ফসল যাতে কোন ঝামেলা ছাড়াই যাতে ঘরে তুলতে পারেন এই জন্য জেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সাথে উপজেলা কৃষি অফিসার, মাঠকর্মীসহ বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও প্রচারণার মাধ্যমে ৮০ ভাগ ধান পেকেছে এমন ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে হাওড়াঞ্চলের ৯১ ভাগ ধান কাটা শেষ আশা করছি ৯ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। এছাড়াও উজানে যেসব জমি রয়েছে এরমধ্যে ৫১ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সেগুলো চলতি মে মাসের মধ্যেই কাটা শেষ হবে।

   

দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি যেনো এখন ভূতের বাড়ি!



রেদ্ওয়ান আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে ১২৫ শতক জায়গার ওপর নির্মিত দেশের একমাত্র ’জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর’। রক্ষণাবেক্ষণ, প্রচার-প্রচারণা ও দেখভালের অভাবে আজ এটির বেহালদশা। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা ভবনটির ভিতর থেকে দেখলে এটিকে ভূতের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বোঝার উপায় নেই, পুরো এশিয়া মহাদেশের দুইটি জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের মধ্যে এটি অন্যতম আন্তর্জাতিক চাহিদা সম্পন্ন একটি জাদুঘর। অথচ, এখানে রয়েছে চারটি বিদেশি জাতিগোষ্ঠীসহ ২৯টি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনধারা, ইতিহাস এবং জীবনযাত্রার উপকরণ প্রদর্শনী। রয়েছে বার্লিন প্রাচীরের কয়েকটি ভাঙা টুকরা, একটি গ্রন্থাগার ও চিত্রশালা।

শুক্রবার (১৭ মে) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে রয়েছে বিদেশের চারটি জাতিগোষ্ঠীসহ বর্তমানে ২৯টি বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠীর জীবনধারা, ইতিহাস এবং জীবনযাত্রার উপকরণ প্রদর্শনী। চারটি গ্যালারিতে বিভক্ত জাদুঘরটির ১১টি কক্ষে এগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।

জাদুঘরে প্রবেশ করতেই প্রথমেই চোখে পড়বে হলঘর। হলঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রথম গ্যালারির প্রথম কক্ষটি বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ ও আলোকচিত্রের সাহায্যে সাজানো হয়েছে। কক্ষটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীর আলোকচিত্রসহ জাতীয় ফুল, ফল ও পশু-পাখির প্রতিকৃতি তৈরি করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় কক্ষে ৪টি বিদেশি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। এই কক্ষে চোখে পড়বে, মাঝখানে বাটিযুক্ত বড় আকৃতির কাঠের থালা, সহজে দুই ভাঁজ করা যায় এমন কাঠের নকশা খচিত জায়নামাজ, নকশাযুক্ত কাঠের সিন্দুক ও জানালা। এ কক্ষে আরও আছে পাঠানদের ব্যবহৃত তরবারি, বর্শা, তীর ও ধনুক। এছাড়া বাকি ৯টি কক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পরিধেয় অলংকার প্রদর্শিত হচ্ছে।

নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনধারা

দুই নম্বর গ্যালারির ক কক্ষে প্রবেশ করলে একজন দর্শনার্থী দেখতে পাবেন, পাঙান, মণিপুরী, ওঁরাও জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার আলোকচিত্র, মান্দাই জনগোষ্ঠীর বাসগৃহ ও তাদের হস্তশিল্পজাত উপকরণ। খ নম্বর কক্ষে সাঁওতাল আর পলিয়া জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ ও ঘরোয়া জীবনের প্রতিকৃতি দেখা যাবে। তাদের ব্যবহৃত গৃহস্থালী জিনিসপত্রও রয়েছে সেখানে।

তিন নম্বর গ্যালারির ক নম্বর কক্ষে মুরংদের গ্রাম্য জীবন এবং ব্যবহারের জন্য নিজেদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। খ এবং গ নম্বর কক্ষে ত্রিপুরাদের জীবন ধারার আলোকচিত্র রয়েছে। তাদের ব্যবহৃত টুপি, ঝুড়ি, কাপড়-চোপড়, বম জনগোষ্ঠীর চরকা, কম্বল, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর কাপড়-চোপড়, ত্রিপুরাদের বাজার ব্যবস্থার আলোকচিত্র দেখা যাবে।

চার নম্বর গ্যালারির ক নম্বর কক্ষে খুমিদের জীবন ধারা, চাকমাদের ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, শিকারের অস্ত্র-শস্ত্র, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পোশাকপরিচ্ছদ দেখা যাবে। খ নম্বর কক্ষে আছে মারমাদের ঘরোয়া জীবনের আলোকচিত্র এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

তবে, এসব প্রদর্শনীর মাঝে-মাঝেই দেখা মিলেছে জাদুঘর ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থা। ছাদ চুইয়ে, দেয়াল বেয়ে গ্যালারিতে পানি পড়ছে। তাই সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করে রাখা বাক্সগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে, অযত্ন-অবহেলায় বিবর্ণ হয়ে পড়েছে জাদুঘরে সংরক্ষিত সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলো। খসে পড়ছে জাদুঘর ভবনটির দেয়ালের পলেস্তারা। দেখভালের জন্য নেই পর্যাপ্ত লোকবলও।

ছুটিরদিন হওয়া সত্ত্বেও দর্শনার্থী খরা দেখা গেছে দেশের পূর্বকোণে অবস্তিত এই জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরে। এদিন বিকেলে জাদুঘরের ১১টি কক্ষে দর্শনার্থী দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকজন।

উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া তিন বান্ধবী আরজু, সিনথিয়া ও জোনাকি হালিশহর থেকে ঘুরতে এসেছে বাংলাদেশের একমাত্র জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরে। তিন বান্ধবী মিলে নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবনাচার ও বিভিন্ন নিদর্শনগুলো এক এক করে দেখছে। এসময় তাদের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের এই প্রতিনিধির।

তারা বলে, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে এসে জানতে পারছি, বাংলাদেশের নৃতাত্ত্বিক ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা। প্রকৃতির সাথে সমন্বয় করে তারা কীভাবে এখনো টিকে আছে, তার নিদর্শন এখানে রয়েছে। এরমধ্যে আমাদের চোখ যাচ্ছে বারবার মনিপুরী, গারো, সাওতালদের বিভিন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ-অলংকারে। কেননা, তারা খুব সুন্দর সুন্দর পোশাক-অলংকার পরে।

জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সোম থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে, রোববার বন্ধ থাকে জাদুঘর। আর অন্যান্য দিন দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি থাকে। এখানে স্কুলশিক্ষার্থীরা জনপ্রতি ১০ টাকা, সাধারণ দর্শনার্থী ৩০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থী ২০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের দর্শনার্থীরা ৪০০ টাকা করে প্রবেশমূল্য দিয়ে পরিদর্শন করতে পারেন।

খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা

পাশে থাকা দোতলা বিশিষ্ট পুরোনো অফিস ভবনটিও বেহালদশা। ওই ভবনের ওপরতলার এক কোণে থাকা গ্রন্থাগারের অবস্থা আরও নাজুক। কক্ষটিতে কয়েকটি কাঠের ও স্টিলের আলমারিতে কিছু বই থাকলেও বসে পড়ার মতো ভালো পরিবেশ নেই। তাছাড়া, জাদুঘরে জায়গা স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত অধিকাংশ নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে, প্রায় তিন হাজার নিদর্শন গ্রন্থাগারের পাশের স্টোরে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু সেখানেও যথেষ্ট অবহেলার ছাপ দেখা গেছে। ধুলাবালি জমে নষ্ট হওয়ার পথে এসব নিদর্শন।

জাদুঘরের প্রশাসনিক দফতর জানিয়েছে, গত মাসে (এপ্রিল) ১ হাজার ২৯৩ জন দর্শনার্থী পরিদর্শনে এসেছেন। বিদেশি ৯ জন এবং সার্কভুক্ত দেশের আরও ২ জন দর্শনার্থী এখানে এসেছেন। এতে এপ্রিল মাসে টিকেট বিক্রি হয়েছে ৪৪ হাজার ১৩০ টাকা। তবে, এই জাদুঘরের পেছনে সব মিলিয়ে প্রতিমাসে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। এতে আয়ের চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় প্রায় কয়েকগুণ।

ফারুক আহমেদ নামের আরেকজন দর্শনার্থী বার্তা২৪.কমের কাছে খুলে দেন তার অভিযোগের বাক্স। তিনি বলেন, এখানে যে জাতিগোষ্ঠীর জীবনচরিত্র রয়েছে, তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উচিত রক্ষণাবেক্ষণে আরও যত্নবান হওয়া, সংগ্রহশালা বাড়ানো। তাছাড়া, এখানে দেখছি, এটা-সেটা ভেঙে আছে, ঠিক করা হচ্ছে না। ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন সবকিছু। বৈদ্যুতিক তারের পাইপ পড়ে আছে। এতো গুরুত্বপূর্ণ এই জাদুঘরটিকে এরকম অযত্নে-অবহেলায় রাখলে অচিরেই আমরা জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের ইতিহাস-ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবো। যে নিদর্শনগুলো আছে, তা-ও ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইকবাল হোসেন নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, এখানে মাত্র ২৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ধারণা আছে। অথচ, প্রায় ১০০টির মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে। প্রতিষ্ঠার এতো বছর পরেও সেগুলো এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি যা আছে সেগুলোর সংগ্রহশাল, স্থান, সংগ্রহকারী ইত্যাদির কোন তথ্যও নেই। যার কারণে দর্শনার্থীদের এসে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের নিয়ে জানাশোনার জন্য এটি এশিয়া মহাদেশে অন্যতম। এছাড়া, এই ডিজিটাল যুগে এসেও জাদুঘরের আধুনিকায়ন নেই। পর্যাপ্ত লাইট, ফ্যান বা আলো-বাতাস নেই। নেই আসবাবপত্রে নতুনত্ব।

হলঘরের উপরের দেয়ালে থাকা পাকিস্তান আমলের তৈলচিত্রগুলোর দিকে আঙুল ইশারা করে তিনি বলেন, এগুলো পাকিস্তান সময়ের। পলেস্তরা খসে পড়ায় এগুলো এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু টাকা খরচ করে এগুলো আবার সুন্দর আর্ট করে চকচকা করতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই ছবিগুলো আর পাওয়া যাবে না। নতুন করে তৈরিও সম্ভব না।

এসব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে জাদুঘরের উপ-পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তিনি বলেন, এখানে নিদর্শন সংগ্রহ বাড়ানো ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তেমন কোন বাজেট নাই। টিকিটের টাকাও সরকারের রাজস্ব খাতে চলে যায়। গতবছর দেড় লাখ টাকা বাজেট পেয়েছি মাত্র। এতে কিছুই হয় না। লোকবলেরও সংকট আছে।

তিনি জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কেয়ার টেকারসহ ৩০ জনের পদ থাকলেও আছে কেবল ১৭ জন। যে টাকা বরাদ্দ আসে চাইলেই একজনকে রাখা যায় না। জাদুঘরের অনেক কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন। সেজন্য দরকার পর্যাপ্ত অর্থ। কিন্তু ঢাকা থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না। এসব বিষয়ে আমি মহাপরিচালককে কয়েকবার বলেছি। কিন্তু, সাড়া নেই। তবুও আমরা সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করছি।

;

বেনাপোলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকসহ আটক ৪



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরের বেনাপোল সীমান্ত পথে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মিয়ানমারের এক নাগরিকসহ ৪ বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিজিবি।

শনিবার (১৮ মে) সকাল ৯টায় বেনাপোল সীমান্তের ঘিবা মাঠ থেকে তাদের আটক করে বিজিবি।

আটককৃতরা হলেন, ঢাকার খিলগাও জুরবিটা এলাকার ধুপিচাদ মন্ডলের ছেলে কৃষ্ট ধর মন্ডল (৫০), মুন্সিগঞ্জ সদরের সন্দুয়া গ্রামের শ্রী সুধীর চন্দ্র বৈরাগীর মেয়ে আশা রানী বাছার (৪০), নড়াইলের পেড়লি গ্রামের খোকা শেখের মেয়ে মোছা. শিউলী খাতুন ও মিয়ানমার নাগরিক মো. হোসেন।

ঘিবা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার আব্দুস সামাদ জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছিলেন এবং মিয়ানমার নাগরিক ভারতে ভাল কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

;

সুযোগ পেলেই ওরা সাপের মত ছোবল মারতে চায়: রাষ্ট্রপতি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো সক্রিয় বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সুযোগ পেলেই ওরা সাপের মত ছোবল মারতে চায়। একাত্তরের পরাজিত ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ৭২'র সংবিধানে ফিরে যেতে সরকার ওয়াকিবহাল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংবিধানকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে চেয়েছিলেন সেটি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধরে রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।

স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে ধ্বংস করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এখনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা আছে বলেই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রয়োজন রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী ফাঁসি দিয়েছিল এই সংগঠন।

স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা উঠলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমারা কি আর জীবিত থাকি প্রশ্ন রেখে রাষ্ট্রপতি বলেন, এখনো ওরা (স্বাধীনতা বিরোধী) স্লোগান দেয় পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো সক্রিয়। তাই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রয়োজন রয়েছে। ওরা সুযোগ পেলেই সাপের মত ছোবল মারতে চায়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে সরকার। ওই কমিশনের আমি প্রধান ছিলাম। এই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৃপণতার সঙ্গে মাত্র ৫০ কপি প্রকাশ করেছিল। একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল। সংগঠনটির নাম বলতে চাই না। তাদের মূল এজেন্ডা ছিল আমার প্রতিবেদন। তারা বলেছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। হয়তো তারা আমাকে ফাঁসি দিতে পারবে না। সেই সুযোগটা তারা পাবে না। কারণ আজকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যেভাবে জেগে উঠেছে তারা আর আমাকে ফাঁসি দিতে পারবে না।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে নিজেদের অবস্থানে থেকেছেন। নিজেদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। এজন্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে অভিবাদন জানাই।

এ সম্মেলনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মানবাধিকার নেতা নির্মল রোজারিও, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সভাপতি অধ্যাপক যোগেন্দ্রনাথ সরেনসহ প্রমুখ।

;

নোয়াখালীতে পাওয়ার ট্রিলারের চাপায় শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, নোয়াখালী
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় পাওয়ার টিলারে চাপায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরপরই ঘাতক চালক পলাতক রয়েছে।  

নিহত মো.রিফাত (৬) উপজেলার চর জুবলি ইউনিয়নের পূর্ব চরজব্বর গ্রামের রেজোয়ানুর রহমানের ছেলে। সে স্থানীয় পূর্ব চরজব্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

শনিবার (১৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এলাকার বাঁধের হাট বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাউছার আলম ভূঁইয়া।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাঁধের হাট এলাকা থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছিলো পাওয়ার টিলার । এ সময় রাস্তায় শিশুটি চলন্ত পাওয়ার টিলারে উঠতে চেষ্টা করে। ওই সময় পাওয়ার টিলারের নিচে শিশুটি চাপা পড়ে মাথা থেতলে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে।  

ওসি কাউছার আলম ভূঁইয়া আরও বলেন,নিহতের পরিবার এখনো কোনো অভিযোগ করেনি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাওয়ার ট্রিলারটি জব্দ করে। পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

;