করোনা ধ্বংসে সঠিকভাবে জীবাণুনাশক ব্লিচ দ্রবণ তৈরি জরুরি



ড. মো. আজিজুর রহমান
ড. মো. আজিজুর রহমান

ড. মো. আজিজুর রহমান

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের দেশে জীবাণুনাশক হিসেবে ক্লোরহেক্সিডিন গ্লুকোনেট (স্যাভলন অ্যান্টিসেপটিক/ডিসইনফেক্ট্যান্ট সল্যুশনের মূল উপাদান), বেঞ্জালকোনিয়াম ক্লোরাইড (লাইজল এবং ডেটল ডিসইনফেক্ট্যান্ট সল্যুশনের মূল উপদান) এবং ক্লোরজাইলেনল (ডেটল অ্যান্টিসেপটিক সল্যুশনের মূল উপাদান) খুব পরিচিত হলেও, ব্লিচ দ্রবণ খুব একটা পরিচিত নয়।

ক্লোরহেক্সিডিন গ্লুকোনেট, বেঞ্জালকোনিয়াম ক্লোরাইড এবং ক্লোরজাইলেনলের মতোই ব্লিচ অত্যন্ত কার্যকরী পৃষ্ঠ জীবাণুনাশক (disinfectant)। ভাইরাসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান সিডিসি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্লিচ দ্রবণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।

কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে কীভাবে ১ : ১০ এবং ১ : ১০০ মাত্রার জীবাণুনাশক দ্রবণ বানানোর যে পদ্ধতি প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়। এসব প্রতিবেদনে কার্যকরী ব্লিচ দ্রবণ বানাতে যে পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত পরিমাণের সাথে মেলে না বরং সেটা ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের পাউডার বা হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইটের সাথে মিলে যায়।

উল্লেখ্য, তিন ধরনের উপদান দিয়ে জীবাণুনাশক ব্লিচ দ্রবণ তৈরি করা যায়- তরল ব্লিচ, ব্লিচিং পাউডার এবং ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের সাদা পাউডার বা হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইট। কার্যকরী জীবাণুনাশক ব্লিচ দ্রবণ তৈরিতে এ তিনটির যে কোনো একটি ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এদের একেকটিতে ক্লোরিনের ভাগ একেক রকম এবং এরা রাসায়নিকভাবেও আলাদা। তাই জীবাণুনাশক ব্লিচ দ্রবণ তৈরিতে এদের ব্যবহার্য পরিমাণ অনেক কমবেশি হয়। আর, কার্যকরী জীবাণুনাশক ব্লিচ দ্রবণের ঘনমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার লেখার উদ্দেশ্য এই ব্যাপারটি খোলাসা করা।

তরল ব্লিচ হলো সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের (রাসায়নিক সংকেত NaClO) একটি জলীয় দ্রবণ। এটি সাধারণত ৫-৬% জলীয় দ্রবণ আকারে বাজারজাত করা হয়। আমাদের দেশে লিকুইড ব্লিচের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। দারাজ, চালডাল.কম, মিনাবাজার ইত্যাদি অনলাইন শপে এটি ক্লোরক্স (clorox) নামে কিনতে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, ব্লিচিং পাউডার (বা ক্লোরিনেটেড লাইম) হলো সাদা রঙের এক ধরনের পাউডার যা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Ca(OH)2], ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড [CaCl2] এবং ক্যালসিয়াম হাইপোক্লরাইটের [Ca(ClO)2] মিশ্রণ। ব্লিচিং পাউডার থেকে ২০-৩৫% ক্লোরিন পাওয়া যায়। লিকুইড ব্লিচের মতো ব্লিচিং পাউডারও জীবাণুমুক্ত করতে বাথরুমে, ড্রেনে, সুইমিং পুলে, পানিতে গুলিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে তৈরিতে, খাবার পানি জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। ব্লিচিং পাউডারের ক্যালসিয়াম হাইপোক্লরাইট মূলত জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।

ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের সাদা পাউডার বা হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইট অন্যান্য সহযোগী উপাদান থাকে না। এটি থেকে প্রায় ৭০% ক্লোরিন পাওয়া যায়। তাই, জীবাণুনাশক হিসেবে সাধারণ ব্লিচিং পাউডারের তুলনায় ক্যালসিয়াম হাইপোক্লরাইটের পাউডার বা হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইটের অনেক বেশি শক্তিশালী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, তরল ব্লিচ, সাধারণ ব্লিচিং পাউডার এবং হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইট পাউডার দিয়ে বিভিন্ন ঘনমাত্রার ব্লিচ জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরির সঠিক পদ্ধতি এবং সেগুলোর সঠিক ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হলো।

ক) তরল ব্লিচ বা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের জলীয় দ্রবণ দিয়ে জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরির পদ্ধতি:

তরল ব্লিচ দিয়ে জীবাণুনাশক দ্রবণ বানাতে অবশ্যই ব্লিচের বোতলের গায়ে লেবেল দেখে নিতে হবে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট কত ভাগ (%) রয়েছে। সাধারণত তরল ব্লিচে ৫-৬% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট থাকে। এর কমও থাকতে পারে। তাই নিশ্চিত হয়ে নিন এবং নিচের তালিকা অনুযায়ী তরল ব্লিচের সাথে পানি মিশিয়ে নিন।

I. ১ : ১০ ব্লিচ দ্রবণ (খুবই শক্তিশালী) তৈরি করতে ৯.৯ লিটার পানিতে ১০০ মিলি লিটার তরল ব্লিচ (যাতে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের মাত্রা প্রায় ৫%) মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে বালতি বা যে পাত্রে বানানো হচ্ছে তা বন্ধ করে দিতে হয়। কিছুক্ষণ পর উপর থেকে পরিষ্কার দ্রবণটি ঢেলে নিতে হয়। কারণ, নিচে অদ্রবণীয় সহযোগী পদার্থগুলোর তলানি পড়ে, যা সরিয়ে ফেলা বাঞ্ছনীয়। 

এ দ্রবণটি যেসব কাজে ব্যবহার করা যাবে তা হলো: মলমূত্র, লালা, কফ, বমি, গাড়ির টায়ার ইত্যাদি যেসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকতে পারে, সেসব জীবাণুমুক্ত করতে। এটি মূলত হাসপাতালে ব্যাবহার করা হয়।

II. ১ : ৫০ ব্লিচ দ্রবণ (মধ্যম শক্তিশালী) ব্লিচ দ্রবণ বানাতে ২০ মিলি লিটার তরল ব্লিচ ৯৮০ মিলিলিটার পানির সাথে মেশাতে হয়। এ দ্রবণটির ব্যবহার ১ : ১০ ব্লিচ দ্রবণের মতো।

III. ১ : ১০০ ব্লিচ দ্রবণ (কম শক্তিশালী) বানাতে ১০ মিলি লিটার তরল ব্লিচ ৯৯০ মিলিলিটার পানির সাথে মেশাতে হয়। এ দ্রবণটি বাসায় ঘরের মেঝে এবং রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত করা, বাচ্চাদের প্লাস্টিক খেলনা জীবাণুমুক্ত করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। হাসপাতালে এটি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, রোগীর ব্যবহৃত বিছানা, ডাক্তারদের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য অ্যাপ্রন, গ্লাভস, জুতা ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা যায়।

খ) ব্লিচিং পাউডার পাউডার দিয়ে জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরির পদ্ধতি:
ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করতে প্যাকেটের বা কন্টেইনারের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ে নিতে হবে। এটি সাধারণ ব্লিচিং পাউডার না ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের পাউডার, তা নিশ্চিত হয়ে এক লিটার পানিতে ১ : ১০ এবং ১ : ১০০ মাত্রার দ্রবণ তৈরিতে কতোটুকু পাউডার মেশাতে হবে তা বের করতে হবে।

I. ১: ১০ মাত্রার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরির জন্য এক লিটার পানির সঙ্গে ১৬ গ্রাম (এক টেবিল চামচ) ব্লিচিং পাউডার যোগ করতে হবে। এরপর পানির সঙ্গে মেশার জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। কিছুক্ষণ পর উপর থেকে পরিষ্কার দ্রবণটি ঢেলে নিতে হবে।

II. ১: ১০০ মাত্রার জীবাণুনাশক তৈরির ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানির সঙ্গে ১৬ গ্রাম (এক টেবিল চামচ) ব্লিচিং পাউডার যোগ করতে হবে। পানিতে ব্লিচিং পাউডার যাতে ভালোভাবে মিশতে পারে, সে জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। কিছুক্ষণ পর উপর থেকে পরিষ্কার দ্রবণটি ঢেলে নিতে হবে।

গ) ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের পাউডার বা হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইট দিয়ে জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরির পদ্ধতি:

ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের পাউডার বা হাই টেস্ট হাইপোক্লোরাইটে প্রায় ৭০% ক্লোরিন পাওয়া যায়, তাই ১ : ১০ এবং ১ : ১০০ দ্রবণ তৈরিতে এর পরিমাণ সাধারণ ব্লিচিং পাউডারের তুলনায় অনেক কম লাগে।

I. ১: ১০ মাত্রার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরির জন্য এক লিটার পানির সঙ্গে ৭ গ্রাম (১/২ টেবিল চামচ) ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের পাউডার যোগ করতে হবে। এরপর পানির সঙ্গে মেশার জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

II. ১: ১০০ মাত্রার জীবাণুনাশক তৈরির ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানির সঙ্গে ৭ গ্রাম (১/২ টেবিল চামচ) ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটের পাউডার যোগ করতে হবে। পানিতে পাউডার যাতে ভালোভাবে মিশতে পারে, সে জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

তবে, জীবাণুনাশক ব্লিচ দ্রবণ তৈরি এবং ব্যবহারের আগে তিনটি পয়েন্ট অবশ্যই মনে রাখতে হবে:

১। ব্লিচ দ্রবণ শুধুমাত্র কোনো প্রাণহীন/জড় বস্তুকে (যেমন- আক্রান্ত রোগীর বিছানা, কাপড়চোপড় ইত্যাদি) বা জড় বস্তুর পৃষ্ঠকে (ঘরের মেঝে, রান্নাঘর, হাসপাতালের মেঝে, যন্ত্রপাতি, দরজার হাতল, যানবাহন, সিঁড়ির রেইলিং ইত্যাদি) জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিকল্প নয়। মানুষের ত্বকের জন্য ব্লিচ মারাত্মক ক্ষতিকারক।

২। সব ব্লিচ দ্রবণই সব সময় ফ্রেশ বানানো ভালো, কারণ সময়ের সাথে সাথে এর কার্যক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করা উত্তম।

৩। স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করলে খুব সাবধান হতে হবে, যাতে এটি নাকে এবং চোখে প্রবেশ না করে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আসুন সবাই সচেতন হই। সরকারের নির্দেশনা মেনে চলি।

ড. মো. আজিজুর রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ([email protected])

   

কষ্টিপাথর কিনে প্রতারিত হয়ে প্রতারকের ভায়রাকে অপহরণ, গ্রেফতার ৭



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝালকাঠির বাসিন্দা মোস্তফা হাওলাদার। পেশায় অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করে বিক্রি করা। অপর দিকে ঢাকার বাসিন্দা খোকন হাজী। তিনিও ঠিকাদার পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা কিনে পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে পাচার করে আসছিলেন। সম্প্রতি মোস্তফার কাছ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ টাকায় মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা কিনে প্রতারিত হন খোকন।

অপর দিকে নকল মূর্তি ও মুদ্রা বিক্রি করে আত্মগোপনে চলে যান মোস্তফা। ফলে খোকন প্রতারতি হয়ে মোস্তফাকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তার কোনো হদিস না পেয়ে এক সহযোগীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাকা আদায় করতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে আনোয়ারের হোসেন খান (৪৪)কে অপহরণ করে খোকন হাজী ও তার চক্রের সদস্যরা। টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া মোস্তফার ভায়রা ভাই অপহৃত আনোয়ার।

অভিযোগ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা খোকন হাজীসহ সাত জনকে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)। এ সময় অপহৃত আনোয়ারকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলো- মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০), ও মো. স্বাধীন (৫২)।

এসময় তাদের কাছ থেকে রিভলবার, ৮ রাউন্ড গুলি ও শটগান উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান।


লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর বলেন, গত ১ মে রাত ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র দোকান কর্মচারী আনোয়ারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের আটকে রাখে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা আনোয়ারের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছে ৯৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আনোয়ারের জীবন বাঁচাতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্রের দেওয়া একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে পাঠায়। সাড়ে ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার পরেও আরও টাকার দাবিতে নির্যাতন চালাতে থাকে। এমনকি অপহরণকারীরা টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অপহরণকারী চক্র ও অপহৃতের অবস্থান শনাক্ত করে। খোকনের অফিসে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের ৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামি খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিল। তার এ অপকর্মের সহযোগী ছিল ভারতীয় এক নাগরিক যার নাম মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। খোকন হাজী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেন। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার(৫০) ও রবি নামের কয়েকজন সহযোগী বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করতো। বিনিময়ে তাদের মাসে ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিত খোকন।

তিনি আরও জানান, গত ১ মে মোস্তফা হাওলাদার ও নাঈমের একজন সহযোগী মোবাইল ফোনে খোকন হাজীকে বলেন, মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রা-ভাই ভিকটিম আনোয়ার ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। তাকে ধরতে পারলে মোস্তফা হাওলাদারের সন্ধান পাওয়া যাবে। এই তথ্য পেয়ে খোকন হাজী তার সহযোগীদের নিয়ে আনোয়ারকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খোকন হাজীর নেতৃত্বে একটি সাদা মাইক্রো বাসে করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আনোয়ারকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি করে।

র‍্যাব-৩ এর সিও আরও জানান, খোকন হাজী একজন ঠিকাদার। মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খোকন হাজী ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ঠিকাদারী ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিল। এই অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার সহযোগীরাও অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের জড়িত। ভিকটিমকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।

;

গাজীপুরে রেল দুর্ঘটনা: ৩ ঘণ্টা পর এক লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের কাজীবাড়ি এলাকায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর পাশের এক লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা ত্যাগ করে জয়দেবপুর জংশনে যাত্রাবিরতি দিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই আন্ত:নগর আরও একটি ট্রেন ছেড়ে গেছে।

শুক্রআর (৩ মে) জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাজীবাড়ি এলাকায় একটি তেলবাহী ট্রেনের সাথে টাঙ্গাইল কমিউটারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে জয়দেবপুর থেকে ঢাকামুখী আউটার সিংগন্যাল বন্ধ হয়। তবে দুর্ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর দুটি ট্রেন পাশের এক লাইন দিয়ে পারাপার হয়েছে। রেল লাইনে থাকা যাত্রীবাহী ট্রেনের বগি এবং তেলবাহী ট্রেনের বগি সরানোর জন্য ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসছে।

এর আগে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে জেলার জয়দেবপুর জংশনের পাশেই কাজীপাড়া এলাকায় থেমে থাকা তেলবাহী ট্রেনের সাথে টাঙ্গাইল কমিউটারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পর গাজীপুর জেলা প্রশাসক পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, কেন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, এসব বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

;

গাজীপুরে ট্রেন সংঘর্ষ, ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাজীপাড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উদ্ধার সহায়তায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি সদর দপ্তর।

শুক্রবার (৩ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের কারণ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি জয়দেবপুর রেল স্টেশন পার হলে কাজীপাড়ায় আউটার সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয়। 

এতে ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া যাত্রঅবাহী ট্রেনটির ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুরু করছে। আহতদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষের এই ঘটনায় উদ্ধার সহায়তা নিশ্চিত করতে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

;

বৃষ্টির পরও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা তীব্র দাবদাহের পর রাজধানীতে বৃষ্টির পরও বাতাসের মান 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটে ১৫৮ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ।

১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে বাতাসের মান 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর', ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়।

২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়, ৩০১+ একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

ভারতের দিল্লি, নেপালের কাঠমান্ডু ও পাকিস্তানের লাহোর যথাক্রমে ৩১৮, ১৯৭ ও ১৯৩ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম তিনটি স্থান দখল করেছে।

বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের ৫টি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।

দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বায়ু দূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।

;