জেলেদের জন্য আরও ২৪ হাজার মে. টন চাল বরাদ্দ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের ২০ জেলার জাটকা সম্পৃক্ত ৯৬ উপজেলায় জেলেদের জন্য আরও ২৪ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ করেছে সরকার।

জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে জাটকা আহরণে বিরত থাকা ৩ লাখ ১ হাজার ২৮৮টি জেলে পরিবারের জন্য এই চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে এ সংক্রান্ত মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া হয়েছে।

ভিজিএফ চাল মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে যথানিয়মে উত্তোলন ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আওতায় এপ্রিল-মে দুই মাসে প্রতিটি নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি হারে চাল দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ দুই মাস একই উপজেলাসমূহে ২,৮০,৯৬৩টি জেলে পরিবারকে ২২ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল দেওয়া হয়। চাল বিতরণের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে খাদ্য সহায়তা না পাওয়া জেলেদের অগ্রাধিকার দিতে নতুন মঞ্জুরি আদেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বরাদ্দপ্রাপ্ত উপজেলাগুলো হলো— ঢাকা জেলার দোহার, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর, রাজবাড়ী জেলার সদর, পাংশা, কালুখালী ও গোয়ালন্দ, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া ও গোসাইরহাট, মাদারীপুর জেলার সদর, কালকিনি ও শিবচর, ফরিদপুর জেলার সদর, মধুখালী, সদরপুর ও চরভদ্রাসন, মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর, শ্রীনগর, লৌহজং, টংগিবাড়ী ও গজারিয়া, ভোলা জেলার সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন ও মনপুরা, পটুয়াখালী জেলার সদর, কলাপাড়া, বাউফল, গলাচিপা, দুমকি, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ ও রাঙাবালি, বরিশাল জেলার সদর, মুলাদী, হিজলা, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী, পিরোজপুর জেলার সদর, মঠবাড়ীয়া, ভান্ডারিয়া, ইন্দুরকানী, নেছারাবাদ, কাউখালী ও নাজিরপুর, বরগুনা জেলার সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, বামনা, বেতাগী ও তালতলি।

এছাড়াও ঝালকাঠি জেলার সদর, রাজাপুর, নলছিটি ও কাঠালিয়া, চাঁদপুর জেলার সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুর, ফেনী জেলার সোনাগাজী, নোয়াখালী জেলার সদর, হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ, চট্টগ্রাম জেলার সদর, বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা ও মীরসরাই, বাগেরহাট জেলার সদর, মোরেলগঞ্জ, ফকিরহাট, মোংলা, কচুয়া, শরণখোলা ও রামপাল এবং সিরাজগঞ্জ জেলার সদর, কাজীপুর, চৌহালি, বেলকুচি ও শাহজাদপুর।

উল্লেখ্য, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ০১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জাটকা আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এছাড়া প্রতিবছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দেশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাস সরকার মৎস্যজীবীদের মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে।

   

মানিকছড়ি মং রাজবাড়িতে



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুর। বার্তা২৪.কম

রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুর। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) থেকে ফিরে: শুক্রবার (১০ মে) সকাল। তীব্র গরম উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম শহর থেকে উত্তরের পাহাড়মুখী পথে যানবাহনের উল্লেখযোগ্য ভিড়। গ্রীষ্মের দাবদাহ এড়িয়ে কিছুটা শীতল পরশের জন্য সবাই ছুটছেন অরণ্যঘেরা পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে।

শহরের উত্তর পয়েন্ট অক্সিজেন মোড় পেরিয়ে হাটহাজারি উপজেলা সদরের তিন মাথা। ডান দিকের পূর্বমুখী পথ চলেছে রাঙামাটির দিকে। আমরা চলেছি উত্তর দিকে। উত্তরের পথ ফটিকছড়ি উপজেলা হয়ে পার্বত্য পথে মানিকছড়ি ছুঁয়ে যাবে জালিয়াপাড়া। জালিয়াপাড়া থেকে সোজা উত্তরে খাগড়াছড়ি সদর। ডানের পূর্বমুখী পথ দীঘিনালা/মহালছড়ি আর বামে পশ্চিম দিকে রামগড় হয়ে বারৈয়ারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

আপাতত আমাদের গন্তব্য মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি। গাড়ি ফটিকছড়ি ছাড়িয়ে যেতেই ঘন বন-বনানীতে ছাওয়া পাহাড়ের শুরু। রাস্তাও পাকদণ্ডি পেরিয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠছে। মানিকছড়ি সদর থেকে সামনেই আমতল। বায়ের পথ হাসপাতালের সামনে দিয়ে বাজারে। বাজারের পাশে সুবিশাল রাজবাড়ি।

রাজবাড়িতে খেলায় মগ্ন দর্শনার্থী পরিবারের শিশুরা। বার্তা২৪.কম

রাজকুমার সুই চিং প্রু নিজেই অভ্যর্থনা জানালেন সদর ফটকে। প্রাচীর ঘেরা বাড়ির ভেতরে বসত ঘর। অফিস। প্রার্থনাস্থল। স্থানে স্থানে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি ছোট ছোট বসার জায়গা। সোফা সেট। চেয়ার সাজানো। আশেপাশে কয়েকটি দোলনা। সবগুলো স্থাপনাতেই নান্দনিক চিত্রকলার সংযোজন পুরো পরিবেশকেই শৈল্পিক আবহ দিয়েছে। রাজকুমারের দুইকন্যা ডালিয়া ও ডিম্পেল আদিবাসী মোটিফে মনের মতো করে সাজিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী পুরনো রাজবাড়িকে।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন তিন জেলায় বিভক্ত। উত্তরে খাগড়াছড়ি। মাঝখানে রাঙামাটি। দক্ষিণে বান্দরবান।  ১৭৬০ সালে মুঘলদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায় চট্টগ্রাম এলাকা  সমেত পার্বত্য জনপদের কর্তৃত্ব। ১৮৬০ সালে পার্বত্য অঞ্চলকে জেলা চট্টগ্রাম থেকে প্রশাসনিকভাবে  পৃথক করা হয়। পাহাড়ি এলাকাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাম দিয়ে সদর দপ্তর চন্দ্রঘোনায় স্থাপন করা হয়। ১৮৬৮ সালে চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙামাটিতে জেলা সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয়। ১৯০০ সালে পার্বত্য অঞ্চলকে চাকমা, বোমাং ও মং সার্কেলে বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটি সার্কেলের চিফ নিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে রাঙামাটি জেলার বৃহত্তর অংশ ও খাগড়াছড়ি জেলার কিছু অংশ নিয়ে চাকমা সার্কেল, খাগড়াছড়ি জেলার বৃহত্তর অংশ নিয়ে মং সার্কেল এবং বান্দরবান জেলার বৃহত্তর অংশ ও রাঙামাটি জেলার কিছু অংশ নিয়ে বোমাং সার্কেল ।

মং সার্কেল  বর্তমান বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি বংশগত চিফডোমগুলোর মধ্যে একটি।  মং চিফডমের সদস্যরা মারমা বংশোদ্ভূত এবং ফালানস নামে পরিচিত। মং সার্কেলের বেশিরভাগ বাসিন্দা ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে ম্রাক ইউ ( মায়ানমারের আধুনিক আরাকান রাজ্য বর্তমানে যার নাম দেওয়া হয়েছে রাখাইন রাজ্য ) থেকে অভিবাসনের সময় উত্তর-পশ্চিমে বসতি স্থাপন করেছিলেন, অন্য মারমা চিফডোমের বাসিন্দা যারা দক্ষিণ এর বোমাং সার্কেল বসতি স্থাপন করেছিল, তারা রাগ্রাইসা হিসাবে পরিচিত।

রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুর আমাদের সুদৃশ্য অফিসকক্ষে বসালেন। বংশের অতীত ইতিহাসের পাশাপাশি জানালেন বর্তমান পরিস্থিতির নানা কথা। আমরা বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলাম মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের অবদান সম্পর্কে জানতে। কারণ, অন্য দুই রাজা, বিশেষত চাকমারাজ পাকিস্তানের সমর্থন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশ পরিত্যাগ করে চলে গেলেও একমাত্র মং রাজা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে।

সস্ত্রীক মং রাজকুমার। বার্তা২৪.কম

মং সার্কেল রাজা বীর মুক্তিযোদ্ধা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ১৯৭১ সালের বৈপ্লবিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আন্দোলনকে আন্তরিকভাবে অনুধাবণ করেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বর্তমান রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুরের মাতামহ হলেন মং সার্কেল রাজা বীর মুক্তিযোদ্ধা মংপ্রু সাইন বাহাদুর। রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুর ১৯৭১ সালে রামগড় দিয়ে ভারতের সাব্রুমে তাঁদের বংশের লোকজনের চলে যাওয়া ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। মং সার্কেলভুক্ত বাসিন্দাদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে রাজপরিবারের অবদান ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।

রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা মনে-প্রাণে ধারণ করি এবং সর্বদাই লালন-পালন করি। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা মং সার্কেল রাজা বীর মুক্তিযোদ্ধা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ফাউন্ডেশন গঠন করে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করছি। পাশের কর্নেল বাগান এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে এই ফাউন্ডেশনের সূচনা ঘটে। ২০১০ সাল থেকে পুরোদমে কাজ করছে ফাউন্ডেশন।‘

মং সার্কেল রাজা বীর মুক্তিযোদ্ধা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ফাউন্ডেশন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবসেবায় অধিক মনোযোগী। পার্বত্য ঐতিহ্য সংরক্ষণেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। মং গোষ্ঠীর ভাষা, সঙ্গীত, শিল্প ও সাহিত্যের গৌরবময় উপাদান যাতে হারিয়ে না যায় এবং আরো বিকাশ লাভ করে, সেটাই তাদের আকাঙ্ক্ষা।

আলাপের পর আমরা ঘুরে দেখি রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশ। একস্থানে চলছিল পাহাড়ি ও বাঙালি শিশু-কিশোরদের গান শেখানো মিলিত আয়োজন। আরেক দিকে চিত্রাঙ্কন ক্লাস। বাড়ির বিভিন্ন  খোলা স্থানে ঝুলন্ত দোলনায় খেলা করছিল দর্শনার্থী পরিবারের শিশুরা। পাহাড়ের মাথায় বড় পরিসরের জায়গা নিয়ে সাজানো-গোছানো রাজবাড়ি যেন নগন যন্ত্রনা, কোলাহল ও দূষণের বাইরের একখণ্ড সবুজ মরুদ্যান।

কিছুক্ষণ পর আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন রাজকুমার সুই চিং প্রু বাহাদুরের পত্নী। তিনিও ধর্মকর্ম  এবং সমাজসেবায় ব্রতী। তাদের আপ্যায়ন ও আন্তরিকতা ছিল মনে রাখার মতো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এই রাজপরিবার বৃহত্তর পার্বত্য জনপদে বাতিঘর স্বরূপ। শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের প্রত্যয়ে কাজ করছে মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি।

রাজবাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরের শান্ত হাটবাজারের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে মোটেও টের পাওয়া যায় না যে, কয়েক মাস আগেই পাহাড়ের আরেক প্রান্তের বান্দরবানে কুকি-চিন গোষ্ঠীর সশস্ত্র হামলায় সাধারণ জনজীবন তটস্থ হয়েছিল। সেখানে এখনো ভীতির আবহ বিরাজমান। কিন্তু এদিকের অবস্থা একেবারেই বিপরীত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্পষ্ট ছাপ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাংশে। মানিকছড়ির কাছেই রামগড়ে চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। তুলনায় পাহাড়ের দক্ষিণাংশ, বিশেষত মিয়ানমার সীমানা সংলগ্ন বান্দরবান অপেক্ষাকৃত উতপ্ত। একদা শান্তিবাহিনীর আমলে যে উত্তরাঞ্চল ছিল সন্ত্রাস কবলিত, তা এখন শান্ত ও উন্নয়নমুখী। আর তখন যে দক্ষিণাঞ্চল ছিল শান্ত, সেটা বরং চাপা উত্তেজনায় টগবগ করছে।

শান্তিচুক্তির আওতায় উন্নয়ন, সম্প্রীতি ও শান্তির পথে চলমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বর্তমানে ভূরাজনৈতিক ও অভ্যন্তরণী কিছু কারণে আবার সমস্যার মুখোমুথি হচ্ছে।  রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্যোগে এসব সমস্যা কাটিয়ে শান্তির সুবাতাস ও উন্নয়নের মসৃণ ধারা চালু হলে বদলে যাবে সমগ্র পাহাড়ের চেহারা। অন্ধকার ও পিছিয়ে থাকা পাহাড় পরিণত হবে দেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভ্যানগার্ডে।     

;

আবারও দেশসেরা নরসিংদীর এনকেএম হাই স্কুল এন্ড হোমস



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে নরসিংদীর এনকেএম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস। রোববার (১২ মে) এসএসসি পরিক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে সাফল্য উদযাপন করেছেন। ধারাবাহিক এই সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদির মোল্লা ও নাসিমা মোল্লা।

ঢাকা বোর্ডে এবারো স্কুলটি সবাইকে চমকে দিয়েছে। সারাদেশের মধ্যে এবারো স্কুলটি ১ম স্থান অধিকার করেছে বলে জানা যায়। এই অর্জনের সংবাদে উচ্ছ্বসিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

কঠোর শৃঙ্খলা, শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান, নিয়মিত পরীক্ষাসহ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে তদারকি করার কারণেই মফস্বলের এই বিদ্যালয়টি বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে বলে মনে করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা।

এনকেএম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে টানা শতভাগ পাসসহ ফলাফলের ভিত্তিতে প্রায় প্রতিবছরই বোর্ডে স্থান করে নিয়েছে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৯৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। বাকি এক জন ৪.৯৪ পেয়েছে। এ বছর বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল।

;

চট্টগ্রামে রাস্তা ও ফুটপাতে মালামাল রাখায় ১০ জনকে জরিমানা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর পোস্তারপাড় এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে মালামাল রাখার অপরাধে ১০ জনকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

রোববার (১২ মে) চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

অভিযানে আদালত পোস্তারপাড় এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে গাড়ির ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন মালামাল রেখে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজুপূর্বক ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। আদালত পরিচালনাকালে ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করেন সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

;

গবেষক ছাড়াই চলছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান



আরিফুল ইসলাম মিঠু, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ইনফোগ্রাফিক্স: মামুনুর রশীদ, বার্তা২৪.কম

ইনফোগ্রাফিক্স: মামুনুর রশীদ, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি গবেষণা সংস্থা আছে যার প্রধান কাজ হলো দেশের সড়ক ও মহাসড়ক নিয়ে গবেষণা করা। মাটি ও বিটুমিনসহ রাস্তা নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষা করা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে চালু হওয়া এই সংস্থায় কখনোই কোনো গবেষক ছিলেন না এবং এখনও নেই।

প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আহসান হাবীব জানান, প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য গবেষণা করা। কিন্তু গবেষকের অভাবে, তাদের কাজ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি তারা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) এবং দেশ-বিদেশের কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় মোট ছয়টি গবেষণা পরিচালনা করেছেন।

আহসান হাবীব বলেন, “আমরা এখন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছি। আমাদের এটা করতে হচ্ছে, কারণ হল আমাদের বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে গবেষকের কোনো পদই নেই।”

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মতে, বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরি নির্মাণ সামগ্রী এবং রাস্তার নকশার সব দিক নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষা এবং পরামর্শ দেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। যাতে করে সবচেয়ে উপযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনীয় মান নিশ্চিত করা যায়।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মতে, “সার্কেলটি মাটির নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয় এবং নির্মাণ সামগ্রী সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা করে।

এখন মাঠ পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে পদায়ন করা হয় এবং কয়েক বছর পরে তাদের আবার বদলি করা। আর এভাবেই চলছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

 জনবল কাঠামোতে কখনো বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বা গবেষকের মতো পদই ছিল না বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। তিনি বলেন, কিছু গবেষকের পদ সৃষ্টির জন্য তারা মন্ত্রণালয়কে দুবার নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু জনবল কাঠামোগুলো র অনুমোদন পাওয়া যায়নি মন্ত্রণালয় থেকে।

 আহসান হাবীব জানান, মিরপুর এলাকায় পুরাতন সড়ক ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে নতুন সড়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-২ এর অধীনে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত ভবনটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

“নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে কিন্তু গবেষণা পরিচালনার জন্য আমাদের কাছে কোনো গবেষক পদ নেই। আমাদের নতুন গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্যও গবেষকের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আমাদের এখনও কোনো গবেষক নেই,” বলেন আহসান হাবীব।

 দেশের রাস্তা নির্মানের জন্য গবেষণা খুব দরকারি উল্লেখ করে, আহসান হাবীব বলেন, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হলে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

 আহসান হাবীব বলেন, ‘দেশের সড়ক-মহাসড়কে গবেষণা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও উপকরণ ব্যবহার না করলে বিশ্ব এগিয়ে যাবে কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়বো।

 তিনি বলেন, বর্তমানে তারা আর্লিংটনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে একটি গবেষণা করছেন। রাস্তা নির্মাণে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে হচ্ছে সেই গবেষণা। গবেষণার অংশ হিসেবে নগরীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাধে প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তার কিছু অংশ নির্মাণ করেছেন তারা।

 আহসান হাবীব বলেন, গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক হলে তারা পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করবে।

এখন গবেষণা ও ল্যাবরেটরির কাজগুলো মাটি পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিটুমিনসহ সড়ক নির্মাণের উপকরণ।

 বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, যে কোনো উন্নত দেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের জন্য আলাদা গবেষণা শাখা থাকে। গবেষণার মূল প্রয়োজন হলো বিনিয়োগকে টেকসই করা। ফলস্বরূপ উন্নত দেশগুলো প্রতিনিয়ত গবেষণা কাজ পরিচালনা করে। কারণ নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপকরণ আসছে।

 “বাংলাদেশ রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরিটিও এই ধরণের চিন্তাভাবনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু, বছরের পর বছর ধরে এর সক্ষমতা বাড়ানো যায়নি,” বলেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, উইংকে গবেষণা সহকারী মতো পদ তৈরি করতে হবে। সরকারকে গবেষকদের নিয়োগ দিতে হবে। দেশের সড়ক-মহাসড়ককে টেকসই করতে গবেষণা করাই হবে তাদের একমাত্র কাজ।

 “তারা স্বল্প বিনিয়োগে কিভাবে টেকসই সড়ক তৈরি করা যায় তা নিয়ে তারা গবেষণা করবে এবং রাস্তা নির্মাণে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করবে," বলেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

 অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এখনই ব্যাপক গবেষণা চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

“আমরা যদি বিনিয়োগকে টেকসই করতে চাই তবে আমাদের গবেষণা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই,” অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, তারা একটি নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করছেন, যাতে গবেষকদের পদ রাখা হচ্ছে।

 এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘আমরা অর্গানোগ্রামটি অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। অর্গানোগ্রামটি অনুমোদন হলে আমারা গবেষক পদে নিযোগ দিতে পারবো।’

;