সোমবার (৬ মে) ফেনীর আকাশে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের ভোগান্তি কাটেনি সাধারণ মানুষের। কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা পড়ে বন্ধ থাকে মহাসড়কের যান চলাচল। ভেঙে যায় বহু এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তায় পড়ে যায় বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার ফলে নুইয়ে পড়ে ফসলী জমির ধান। জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ চলাচল স্বাভাবিক হলেও ৪ দিন পর কিছু কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হয়নি।
ঝড়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলাপ্রশাসন। অন্যান্য ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেও ফলস নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা। ঝড়ের প্রভাবে ফেনীর বেশ কয়েকটি এলাকায় নুয়ে পড়েছে কৃষকের পাকা বোরো ধান। কিছু কিছু স্থানে ধান ডুবে আছে পানিতে। এতে ধানে চিটার পরিমাণ বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা কৃষকের।
জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঝড়ের প্রভাবে জেলায় প্রায় ১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ৪ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি আনুমানিক ১৫০০ হেক্টর জমি এবং ২৫ কিলোমিটার রাস্তার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
তবে ফেনী কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ ধান পেকেছে, সেক্ষেত্রে চিটার আশঙ্কা নেই। তবে ঝড় বৃষ্টি পরবর্তী এ সময়ে ফসল ঘরে তোলার খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। এ বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও মাঠ পর্যায়ে ধান দ্রুত তুলে নিতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ মৌসুমে ফেনীতে ৩০ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্জন হয়েছে ৩১ হাজার ২৭৭ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ২০ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন।
খবর নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের কবলে পড়ে জেলার ফেনী সদর,সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম ও দাগনভূঁঞার আরও বিভিন্ন এলাকায় নুয়ে পড়েছে পাকা বোরো ধান। মাঠের ধান নিয়ে দিশেহারা কৃষকরা।
ফেনীর সদর উপজেলার কৃষক গোলাম রাব্বানী বলেন, '৮০ শতক জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছি। সবমিলিয়ে খরচ পড়েছে ৫০ হাজারের মতো। কালবৈশাখী ঝড় ও তুমুল বৃষ্টিতে সকল জমির ধান নুয়ে পড়েছে।'
পঞ্চাশোর্ধ এ কৃষক আশা করেছিলেন পাকা ধান ঘরে তুলে তৃপ্তির হাসি হাসবেন। কিন্তু তা আর হলো না।এখন অর্ধেক ধানও ঘরে তুলতে পারেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।
পরশুরাম উপজেলার কৃষক রবিউল হক বলেন, 'মাঠের বোরো ধান ঘরে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে এমন বৃষ্টি চিন্তায় ফেলেছে। ভালো ফলন হলেও ফসল বাড়ি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে এখনও জমিতে পানি জমে আছে। বাতাস হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।'
সিরাজুল হক নামে ছাগলনাইয়া উপজেলার এক কৃষক বলেন, '১২০ শতক জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলাম। ধান পুরোপুরি পাকেনি। বৃষ্টির কারণে ধান নুয়ে পড়েছে। ৪০ শতাংশ ধানও তুলতে পারব কিনা শঙ্কায় রয়েছি।'
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, 'আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। নিরাপদে মাঠ থেকে ধান তুলে নেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, 'চলতি মৌসুমে ফেনীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। মাঠে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি ধান পেকে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে ফসল রক্ষায় জমির ধান ৮৫ শতাংশ পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাতাস ও বৃষ্টি স্থায়ী না হলে আশা করি কৃষকের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। পাশাপাশি পানি অপসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে বলে জানান তিনি।'