মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোর একটি ঈদ-উল-আযহা। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য এ বছর রাজশাহী অঞ্চল থেকে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ অঞ্চলের গরু ও ছাগল পালনকারীরা জানিয়েছেন, এ বছর তাদের পশু সংখ্যা চাহিদার চেয়েও বেশি হয়েছে। এসব পশু রাজশাহীর পাশাপাশি অন্যান্য জেলাগুলির চাহিদাও মেটাতে পারে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রচার ও গরমের প্রকোপে জনজীবন কষ্ট পাচ্ছে, যার প্রভাবে পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কম হচ্ছে। এ বছর রাজশাহীর কৃষকরা বিশেষ যত্ন নিয়ে পশুগুলোকে লালন-পালন করেছেন।
জানা গেছে, কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশুর মালিক, ব্যবসায়ী ও কোরবানি দাতাদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একটু কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই পশুর বায়না করে রাখছেন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি-পশু খাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে গরুর হাটে।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল রয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।
খামারিরা জানান, তারা নিয়মিত ভেটেরিনারি পরিষেবা, সঠিক খাদ্য ও যত্নের মাধ্যমে পশুগুলিকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করেছেন। এই উদ্যোগ কোরবানির পশুর মান উন্নত করতে এবং ক্রেতাদের মন জয় করতে সাহায্য করেছে।
নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম প্রতিবছর নিজ বাড়িতে দুই থেকে তিনটি ষাঁড় পালন করের ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য। তিনি জানান, এবার দুটি ষাঁড় পালন করেছেন। দুই বছর আগে দেড় লাখ টাকায় গরু দুটি কিনেছিলেন। গত ঈদে বিক্রি না করে এবার বিক্রি করার অপেক্ষায় আছেন। একেকটা ষাড়ের দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে হতে। এখনো বাজার জমে না ওঠায় বিক্রির জন্য নেয়া হয়নি হাটে।
রাজশাহী সপুরা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, গবাদি পশুর খাবারের দাম প্রতি মাসেই বাড়ছে। বাড়তি খরচে কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে আবহাওয়া এবং বাজারের অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন অনেকেই। মানুষ দেশি পশু কোরবানি করতে পছন্দ করেন। কোরবানিযোগ্য পশুও পর্যাপ্ত। তাই বাইরে থেকে গরু আমদানি না করা হলে খামারিরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তবে আমার গরু এবার আগেই বিক্রি হয়ে গেছে ৭০টা। আর ২০টা মত আছে, এগুলোও হয়ে যাবে। দামাদামি চলছে দু’একদিনে হয়ে যাবে। এবার ভালোই দাম পেয়েছি, দেরি হলে চিন্তা বাড়ে, তাই আগেই বিক্রি করে দিয়েছে। হয়তো আর কিছুদিন থাকলে আর একটু দাম পেতাম, তবে খারাপ দাম পাইনি। গরুর দাম অনেক বাড়তি।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, সপ্তাহে রোববার ও বুধবার সিটি হাট বসে। কোরবানির হাট শুরু হতে দেরি আছে। তবে কোরবানির পশু কেমন হাটে উঠছে বলা সম্ভব নয়। কোরবানির যে গরু আসার কথা তা এখনো আসেনি। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের ৭ থেকে ১০ দিন আগে জমে উঠবে এই বাজার।
প্রাণী স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিয়ে, রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি বিভাগ এবং পশু সম্পদ বিভাগ সক্রিয়ভাবে পশুর খামারগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করেছে। তারা খামারি ও পশুপালকদের সচেতন করেছেন যেন তারা অবৈধ ঔষধ বা স্টেরয়েডের ব্যবহার এড়িয়ে চলেন।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গতবারের তুলনায় কোরবানির পশুর চাহিদা বাড়েনি। কিন্তু বাড়তি প্রায় ৭০ হাজার বেশি পশু লালন-পালন হয়েছে। কোরবানির আগে এই সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। তবে এবার উৎপাদন খরচ বেশি, তাই দামও কিছুটা বেশি হবে।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেন, পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদে গবাদিপশু পালনকারী খামারি ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে। কৃষক ও খামারিরা যেন কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে গবাদিপশু দেশে প্রবেশ রোধে বিশেষ নজর দিতে বিজিবির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।