হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ইসলাম



ফজল হাসান

  • Font increase
  • Font Decrease

এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যর্থ নায়ক হিটলার। ভাগ্যিস, হিটলার ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং তিনি অভিসন্ধি কামাল করতে পারেননি। নইলে তামাম দুনিয়ায় ইহুদি নিধনের পরে মুসলমানদের যে কী হতো, তা বলা মুশকিল। তবে মন্দ হওয়ার আশঙ্কাই ছিল বেশি। সে বিষয়ে আলোচনার আগে ইসলাম এবং মুসলমান সম্পর্কে হিটলারের মনোভাব এবং অভিসন্ধি কী ও কেমন ছিল, তা নিয়ে খানিকটা উল্লেখ করা প্রয়োজন।

শুরুতেই ইসলাম এবং মুসলমান সম্পর্কে হিটলারের একটা প্রচলিত মন্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখ করছি। তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র ধর্ম হিসাবে আমি ইসলামকে সম্মান করি। একমাত্র পয়গম্বর যাকে আমি শ্রদ্ধা করি এবং যার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করি, তিনি নবী মোহাম্মদ’ (সাঃ)। হিটলারের এই মন্তব্যের আড়ালে তিনটি প্রশ্ন নিহিত আছে। প্রথমত হিটলারের উপরোক্ত মন্তব্য কি সত্যি? দ্বিতীয়ত তিনি যা বলেছেন (আদৌ যদি বলে থকেন), তা কি আসলেই বিশ্বাস করতেন? এবং তৃতীয়ত যুদ্ধের কৌশল এবং অধ্যুষিত দেশ থেকে, বিশেষ করে তুরস্ক, সৈন্যবাহিনীর সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়ার গোপন চক্রান্ত ছিল? তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই হিটলার এবং ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে একটা প্রশ্ন চাউর হয়ে আছে। তা হলো—হিটলার কি ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি তার মনোভাব কেমন ছিল? মুসলমানদের সঙ্গে হিটলারের আঁতাত এবং হিটলারের সঙ্গে মুসলমানদের সহযোগিতার মূল কারণ জানতে হলে এক ধাপ পেছনে ফিরে যেতে হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/05/1533471381786.png
১৩তম এসএস ডিভিশনের এক সৈন্য ইসলাম ও ইহুদিবাদ বিষয়ক পুস্তিকা হাতে

নাৎসি বাহিনীর ‘ব্যাপক গণহত্যা’ (হল্যাকাস্ট) এবং ইসলাম ও মুসলমান প্রসঙ্গে দুটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথমত ‘ব্যাপক গণহত্যা’ চলার সময় মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, এবং দ্বিতীয়ত যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, এমনকি বর্তমান সময় পর্যন্ত, ‘ব্যাপক গণহত্যা’ সম্পর্কে মুসলমানদের ধারণা কী এবং কেমন আছে।

দু’খণ্ডে প্রকাশিত হিটলারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ Mein Kampf পড়লে বোঝা যায় যে, আসলে শুরু থেকেই ইসলাম এবং মুসলমানের প্রতি তাঁর মনের ভেতর অন্যরকম অভিসন্ধি ছিল। যেমন (১) হিটলারের প্রয়োজন ছিল অটোম্যান (তুর্কি) শাসকের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা এবং তাদের কুখ্যাত সাঁজোয়া বাহিনীর সাহায্য, (২) হিটলার দুটি বিশেষ কারণে সৌদি রাজতন্ত্রকে প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করতেন। এগুলো ছিল—মিত্র বাহিনীর দেশগুলো সমস্ত তেল নিত সৌদি আরব থেকে এবং সৌদি আরব ছিল মিত্র বাহিনীর হাতের পুতুল, অর্থাৎ ‘পাপেট’। এছাড়া ইসলামের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে সৌদি আরব স্বীকৃত, (৩) ইরাকের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। তার প্রধান কারণ ছিল রাশিয়ার কাছাকাছি ইরাকি সীমান্তে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করা, (৪) হিটলার বিশ্বাস করতেন তিনি আর্য (ইন্দো-ইউরোপিয়ান) জাতির উত্তরসূরী, এবং (৫) হিটলারের শত্রু ছিল ইহুদি, যারা মুসলমানদেরও শত্রু। তাই এসব কারণে হয়তো তিনি তেল উৎপাদনকারী মুসলমান রাষ্ট্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। হিটলারের এসব অভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য নাৎসি বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কর্মসূচি নিয়েছিল। এখানে কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে হিটলার তার সেনাপতিদের বলেছিলেন, ‘আমরা দূর-প্রাচ্যে (ফার ইস্ট) এবং আরবে গণ্ডগোল বাঁধিয়ে রাখব। আমরা নিজেদের মানুষ ভাবব এবং ওদেরকে মনে করব অর্ধেক উল্লুক (হাফ এপস্), যারা চাবুকের আঘাত পাওয়ার যোগ্য।’ হিটলারের এই মন্তব্যের পেছনে তাঁর নাক-উঁচু ভাব কাজ করেছে। তিনি এবং নাৎসি বাহিনীর সামরিক বাহিনীর সকল উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা মনে করতেন জার্মান হলো মানব বিবর্তনের শ্রেষ্ঠ জাতি। তাই তাদের নৈতিক কর্তব্য দুনিয়া থেকে অন্য ধর্মাম্বলীদের সমূলে নির্মূল করা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/05/1533471588322.jpg
মুফতি হাজি মোহাম্মেদ আল-হোসেইনি (বামে)

সন্দেহ নেই, সমগ্র মুসলিম জাহানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাব পড়েছিল। জাপানি সৈন্যদের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা, বলকান এলাকা এবং ক্রিমিয়া ও ককেশাস অঞ্চলে ইতালিয়ান ও জার্মান সামরিক বাহিনীর আগ্রাসী আক্রমণের জন্য মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলো প্রথম সারির যুদ্ধ-এলাকায় পরিণত হয়েছিল। এছাড়া একই সময়ে ব্রিটিশ, ফরাসি এবং ডাচ সাম্রাজ্য অথবা সোভিয়েত শাসিত দেশগুলোতে অগণিত মুসলমান যুদ্ধের আওতায় পড়ে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে বার্লিনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সামরিক বাহিনীর প্রধানরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তাদের জন্য রাজনৈতিক এবং কৌশলগত কারণে ইসলাম, তথা মুসলমানের সাহায্য এবং সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে নাৎসি বাহিনী ব্রিটিশ রাজতন্ত্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য মুসলমান অধ্যুষিত দেশের সঙ্গে আঁতাত করে। এছাড়া মুসলমানদের মন জয় করার জন্য নাৎসি জার্মানরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন এবং কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। সেগুলোর মধ্যে বার্লিন থেকে শর্ট ওয়েভ রেডিওতে আরবি এবং ফারসি ভাষায় বিভিন্ন প্রচারণামূলক অনু্ষ্ঠান সম্প্রসারণ ছিল অন্যতম। তবে নাৎসি বাহিনীর প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থনের চেয়ে অধিকাংশ মুসলমানের ভেতর গড়ে উঠেছিল মূলত ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব। যাহোক, মুসলমানদের সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করে নাৎসি বাহিনী দুটি আলাদা ডিভিশন তৈরি করেছিল। এগুলো ছিল আলবেনিয়ার মুসলমানদের নিয়ে স্ক্যান্ডারবার্গ ডিভিশন এবং বসনিয়ার মুসলমানদের নিয়ে হ্যানশার ডিভিশন। তবে চেচনিয়া থেকে উজবেকিস্তান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মুসলমান সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করেছিল। এসব মুসলমান সৈন্যরা স্তালিনগ্রাদ, ওয়ারশ, মিলান এবং বার্লিন রক্ষার জন্য নিয়োজিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নাৎসি বাহিনী অনুধাবন করতে পেরেছিল যে, সোভিয়েত এবং বলকান এলাকার মুসলমান সৈন্যরা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহী ছিল না। পরে নাৎসি বাহিনী হ্যানশার ডিভিশন বিলুপ্ত করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/05/1533470053684.png
নাৎসি মুসলমানদের নিয়ে গঠিত হ্যানশার ডিভিশন প্রদর্শনকালে মুফতি আল-হোসেইনি

যুদ্ধকালীন জার্মান সরকার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় বিপুল সংখ্যক মসজিদ এবং মাদ্রাসা পুনরায় নির্মাণের আদেশ জারি করে, যা সোভিয়েত সৈন্য বাহিনী ভেঙে ফেলেছিল। সেইসব এলাকার অনেক মুসলমানকে জার্মান সৈন্য বাহিনী নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এছাড়া মুসলমানেরা যাতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে, তার জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা, যেমন হালাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা, সৃষ্টি করেছিল। কোরানশরিফ এবং ইসলামের অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ‘জিহাদ’ হিসাবে ব্যবহার করে। এসব সুযোগ দেওয়ার যুক্তি হিসাবে নাৎসি বাহিনীর জেনারেল হাইনরিখ হিমলার বলেছিল, ‘ইসলামের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তাদেরকে সহজে বেহেশতে পাওয়ার উপায় হিসাবে আমার দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। মুসলমান সৈনিকদের জন্য এটাই হলো বাস্তব এবং উত্তম পন্থা।’ এছাড়া ১৯৪২ সালে উত্তর আফ্রিকার মরুভূমিতে লিফলেট বিতরণ করে। সেখানে লেখা ছিল, ‘ইসলামের প্রধান শত্রু ইংরেজ, আমেরিকাবাসি, ইহুদি এবং তাদের মিত্ররা। যুদ্ধে জার্মান জিতবে, ইনশাআল্লাহ্।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/05/1533469901177.jpg
হিটলারের সাথে নাৎসি বাহিনীর জেনারেল হাইনরিখ হিমলার (ডানে)

নাৎসি বাহিনীর আরেক পন্থা ছিল হিটলারের সঙ্গে জেরুজালেমের (আল কুদস্) তৎকালীন মুফতি হাজি মোহাম্মেদ আল-হোসেইনির মধ্য সরাসরি সাক্ষাৎ এবং আলোচনার ব্যবস্থা করা, যা ১৯৪১ সালের ২১ নভেম্বর ঘটেছিল [প্রচ্ছদ ছবিতে সেদিনের মিটিং]। সেই আলোচনার পরে মুফতি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, সমগ্র আরব জাতি জার্মানির বন্ধু। বিনিময়ে হিটলার অভয় দিয়েছিলেন, জার্মান সৈনিকেরা যখন ককেশাসের দক্ষিণাঞ্চল দখল করবে, তখন ব্রিটিশদের কবল থেকে আরবরা স্বাধীনতা অর্জন করবে। উল্লেখ্য, বসনিয়ার মুসলমানদের নিয়ে গঠিত সৈন্য বাহিনী গড়ার পেছনে মুফতি আল-হোসেইনির ভূমিকা ছিল সর্বাগ্রে। তবে মুফতির প্রধান কাজ ছিল নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে সোভিয়েত এবং বলকান এলাকায় আরব মুসলমানদের সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। এসব প্রচারণার জন্য তিনি নাৎসি বাহিনীর রেডিও স্টেশন ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছিলেন। মুফতি আল-হোসেইনি ছাড়াও আরেকজন আরব রাজনীতিবিদ নাৎসি বাহিনীর মদদ যুগিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অ্যাঙ্গলো-ইরাকি যুদ্ধের অন্যতম সমর নায়ক এবং পরবর্তীতে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী রশীদ আলী আল-গিলানী। তিনি ব্রিটিশ-সমর্থিত আবদুল্লাহকে সেনা বিদ্রোহের মধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা লাভ করেন। হিটলারকে পূর্ণ সমর্থন করে তিনি ১৯৪১ সালের ২৩ মে এক বিবৃতি প্রদান করেন এবং সেখনে তিনি বলেছেন, ‘ইংরেজদের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে আরব স্বাধীনতা সংগ্রাম আমাদের স্বাভাবিক মৈত্রীবন্ধন।’ এসব ক্ষমতাসীন মুসলমান নেতারা নাৎসি বাহিনীর দর্শন ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের ওপর ভরসা করে নিজেরা অলৌকিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন। ‘বাথ পার্টি’ (কঠিনভাবে সেক্যুলার, কিন্তু উৎপত্তি হয়েছিল মুসলমান অধ্যুষিত পরিবেশে) উজ্জ্বল উদাহরণ। নাৎসিদের প্ররোচনায় এই ‘বাথ পার্টি’ আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং কট্টর ইসলামিক মিলিট্যান্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/05/1533470343029.png
হিটলারের সাথে রশীদ আলী আল-গিলানী (ডানে)

উল্টোদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উত্তর আফ্রিকা, ভারত এবং অখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অনেক মুসলমান সৈনিক মিত্র শক্তির পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা বিভিন্ন রণক্ষেত্রে, বিশেষ করে এল-আলামিন, মন্টে ক্যাসিনো, ফ্রান্সের প্রভেন্স উপকূল এলাকা এবং স্তালিনগ্রাদে, অংশগ্রহণ করে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছিলেন। এছাড়া মুসলমানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অনেক মুসলমান নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইহুদিদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। মিত্র বাহিনীকে সাহায্য এবং সহযোগিতা করার প্রসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুপ্তচর রানী হিসাবে সমগ্র বিশ্বে পরিচিত নূর ইনায়েত খানের কথা উল্লেখ না করলেই নয় । তিনি (মৃত্যু ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪) ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং টিপু সুলতানের বংশধর। নূর ইনায়েত খান ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে অধিকৃত ফ্রান্সে রেডিও অপারেটর হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। একসময় জার্মান গেস্টাপো তাঁকে অনুসরণ করে। সেই সময় ফরাসি সেনা কর্মকর্তারা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। অবশেষে গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে তিনি নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরবর্তীতে তাঁর ফাঁসি হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/05/1533470548273.jpeg
টিপু সুলতানের বংশধর নূর ইনায়েত খানকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলায় নাৎসি বাহিনী

যদিও নাৎসি জার্মানির শাসনামলে (১৯৩৩-১৯৪৫) আরব বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে নাৎসিদের সম্পর্ক ছিল অবজ্ঞা, অপপ্রচার, সহযোগিতা এবং অনেক সময় আরবদের তুলনায় নিজেদের উপরে তোলার প্রবণতা, কিন্তু এসব অম্ল-মধুর সম্পর্ক থাকার পরেও দুই মেরুর মধ্যে রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।  তবে অনেক পণ্ডিত এবং ইতিহাসবিদ মনে করেন, হিটলার ইসলাম ও মুসলমানদের তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। আবার অন্যদিকে অনেকে আরেক ধাপ এগিয়ে আছে। তারা মনে করে, হিটলার পরাজিত না হলে ইহুদিদের খতম করে মুসলমানদের ধরতেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার পরাজিত না হলে কী হতো, এখন তা এখন হলফ করে বলা মুশকিল। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে মোটামুটি অনুমান করা যেতে পারে। হিটলারের অভিসন্ধির সত্যিটা কখনোই থলের বিড়াল হয়ে বেরিয়ে আসবে না। বরং অধরাই থেকে যাবে।

[লেখকঅস্ট্রেলিয়ার অভিবাসি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা]

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;