বগুড়া সদর উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়নের ভাণ্ডার পাইকা গ্রামের একজন প্রান্তিক কৃষক রঞ্জু মিয়া। নিজের বাড়ির ভিটে ছাড়া রয়েছে এক বিঘা আবাদি জমি। গত বছর সেই জমিতে আলু চাষ করে ব্যাপক ফলনের পাশাপাশি ভাল দামও পেয়েছিলেন। আর এ কারণে এবারও তিনি নিজের এক বিঘা জমি ছাড়াও আরও ১২ শতাংশ জমি সন পত্তন নিয়ে আলু চাষ করেছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই ১২ শতাংশ জমিতে ২৫ মন আলু ফলনের আশা করছেন তিনি। একই গ্রামের আবু তালেব ১৬ শতাংশ জমি সন পত্তন নিয়ে চাষ করেছেন আলু। কৃষক রঞ্জু মিয়া এবং আবু তালেবের মত শেখের কোলা, শাখারিয়া, মহিষবাথান, তেলিহারা গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সার, বীজ, কীটনাশক ছাড়াও অন্যান্য উপকরণের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় আলু চাষ তাদেরকে আগ্রহী করে তুলেছে।
এ অঞ্চলে ধানের পরেই গুরুত্বপূর্ণ ফসল আলু। ফলন এবং দাম দুটোই ভাল হওয়ায় এ অঞ্চলে আলু চাষির সংখ্যা প্রতি মৌসুমেই বাড়ছে। ইতিমধ্যে বাজারে নতুন আলু উঠলেও তার পরিমাণ খুব কম। দামও প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে পুরোদমে নতুন আলু উঠতে শুরু করবে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কেউ আলুর জমি নিড়ানি দিচ্ছেন আবার কেউ দিচ্ছেন সেচ। আবার অনেকে ধান কাটার পর জমি ফেলে না রেখে আলু চাষের জন্য জমি তৈরির কাজে ব্যস্ত। কৃষকদের থেকে জানা যায় ১৫-২০ দিন চলবে আলু বীজ বপনের কাজ। জেলার উত্তর ও পূর্ব এলাকায় আলু বীজ বপনের কাজ শেষ হলেও জেলার দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলে ধান কাটার পর পুরোদমে চলছে আলু বীজ বপনের কাজ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় জমির পরিমাণ তিন হাজার হেক্টর বেশী। গত ০৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়েছে।
গত বছর আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৯ মেট্রিকটন। আর এবছর ১৩ লাখ ১২হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে আলু বীজ বপনের কাজ। বগুড়া অঞ্চলে এ্যাটারিকা, ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, রোমান এবং এ্যালভারী জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে বেশী।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাবলু সুত্রধর জানান, গত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছিল। এ কারণে এবার আলু চাষে কৃষকের আগ্রহ গত মৌসুমের চেয়ে বেশী। তিনি বলেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাগন সময় মত কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। সে কারণে এখন পর্যন্ত কোন রোগব্যাধি দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এবারও আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।