চলমান তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাতেও। এই পরিস্থিতিতে গ্রীষ্মকালীন ফল-ফসল উৎপাদনে করণীয় জানা অতিব প্রয়োজন। দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে কৃষিতে ১০টি করণীয় এখানে তুলে ধরা হলো। আশাকরছি, কৃষি সংশ্লিষ্টদের এই পরামর্শ সহায়ক হবে।
এক. ধানের জমিতে কমপক্ষে ২-৩ ইঞ্চি পানি ধরে রাখবেন। ধানে ফুল আসা অবস্থায় পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির ঘাটতি হলে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে।
দুই. হাওড় এলাকায় সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ধান পেকে গেলে দ্রুত কেটে জমি থেকে ঘরে তুলবেন।
তিন. ধানে এ সময় ব্লাস্ট রোগের সংক্রমন শুরু হতে পারে তাই নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষন করুন। এবং সম্ভব হলে উপযুক্ত ছত্রাকনাশক দিয়ে একটি স্প্রে করুন।
চার. ফলগাছের গোড়ায় বেসিন আকারে নালা করে সর্বদা পানি দিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে গাছে পানি স্প্রে করুন। মনে রাখবেন এ সময় পানির ঘাটতি হলে গাছে ফল ধারন কম হবে এবং ফল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশী হবে।
পাঁচ. ফল বাগানে সপ্তাহে একবার প্লাবন সেচও দেয়া যেতে পারে। গাছের গোড়ায় খড়-কুটো বা কচুরীপানা দিয়ে মালচিং করে দিলে মাটির আদ্রতা রক্ষা পাবে।
ছয়. শাকসবজি চাষের ক্ষেত্রে মাটি বেশী করে জৈবসার দিন। এতে পুষ্টির পাশাপাশি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে।
সাত. হিট শক থেকে বাচতে গবাদিপশু ও পোল্ট্রি সেড বা ঘর শীতল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে টিনের সেডের নীচে ইনসুলেটর দেয়া, টিনের চালে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা, সেডের ভিতর ফ্যান লাগানো বা পানি স্প্রে করে শীতল রাখতে হবে।
আট. গবাদিপশু ও পোল্ট্রি সেডের ভিতর পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য চারপাশে চট/ বস্তা এগুলো অপসারণ করে শুধু নেট দিয়ে রাখতে হবে। গবাদিপশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
নয়. গবাদিপশু ও পোল্ট্রির জন্য স্যলাইন পানি সরবারহ করতে হবে। এছাড়াও পরিষ্কার পানির সাথে লবন, ভিটামিন সি ও গ্লুকোজ মিশিয়ে খেতে দিতে হবে।
দশ. মাছের ক্ষেত্রে পানির গভীরতা কমপক্ষে পাঁচ ফুট হতে হবে। পুকুরের কিছু অংশে কচুরিপানা দেয়া যেতে পারে। পানিতে লবন দেয়া এবং খাবারের সাথে ভিটামিন সি দিতে হবে। পুকুরে যাতে অক্সিজেনের ঘাটতি না হয় সেদিতে খেয়াল রাখতে হবে।
সর্বোপরি কৃষক ভাই-বোনরা এ সময় খুব সর্তক থাকবেন। আপনারা সুস্থ্য থাকলে আমাদের কৃষি সুস্থ্য থাকবে। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে খুব সকালে এবং বিকেলে জমিতে কাজ করুন। বেশী করে স্যলাইন পানি খাবেন। জমিতে মাথাল বা ক্যাপ পরে কাজ করবেন, খালি গায়ে থাকবেন না। কিছুক্ষণ পর পর মুখে পানির ঝাপটা দিন। দিনে ১-২ বার গোসল করুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করুন। অসুস্থ্য বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
কৃষি পরামর্শ পেতে প্রয়োজনে যোগায়োগ করতে পারেন; ইমেইল: nomanfarook@yahoo.com, nomanfarooksau@gmail.com
সেল: ০১৮১৯৮২৩০৩০