এবার আমন ধান কেনার ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে খাদ্য অধিদফতর। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৬টি জেলার ১৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে।
বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আমন ধান সংগ্রহ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এসব তথ্য জানান। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ টন আমন ধান, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৮ টন সিদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করব। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমরা তালিকা সংগ্রহ করে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, আমাদের উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের অধীনে ২৫টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয় মাঠ পর্যায়ের কাজ তদারকি করার জন্য। ছোটখাট বিচ্যুতি ছাড়া সর্বপ্রথম কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সবসময় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কাজ করেছে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্যই আমাদের এ প্রয়াস। আমরা ধানের লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া সিদ্ধ চাল সংগ্রহে ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও আতপ চাল সংগ্রহে ৯৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ সফলতা অর্জন করেছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমনে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন ধান, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৭ টন সিদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদফতর। ধান কেনার ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৬টি জেলার ১৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে। আমরা আস্তে আস্তে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার উদ্দেশে কাজ করছি।
এছাড়া আগামী বোরো মৌসুমে অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ৬৪ জেলার একটি করে উপজেলায় ধান ও ১৬ উপজেলায় মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় আমনে অ্যাপসের মাধ্যমে ১৬টি উপজেলার ধান কেনায় সফলতা আসায় আগামী বোরো মৌসুম থেকে আরো বড় পরিসরে এ উদ্যোগ নেয়া হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফসল উৎপাদন করে কৃষক যদি লাভ করতে না পারে, তাহলে তার জীবনের প্রয়োজনগুলো কীভাবে মেটাবে? গত বোরোতে কৃষক দাম পায়নি। তখন থেকেই আমরা গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম কীভাবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসারি ধান কিনে কিছুটা বেনিফিট তাদের দেয়া যায়। গত বছর বোরো ধান কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা করতে সময় লেগেছিল, তারপরও ভালো সংগ্রহ হয়েছিল। এবার আমনের আগে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যে কোনো মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে।
অত্যন্ত আনন্দের কথা যে গত আড়াই-তিন মাস ধরে আমন ধান সংগ্রহ হচ্ছে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন। আমি আশাবাদী, আগামী বোরোতেও সফলভাবে ধান সংগ্রহ করতে পারব, যোগ করেন তিনি।
খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমনে পরীক্ষামূলকভাবে ১৬টি জেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ৩০ হাজার ১৭০ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে ২৯ হাজার ৭০১ টন ধান কেনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সরোয়ার মাহমুদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।