ডাল্টন সৌভাত হীরার গুচ্ছকবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

ডাল্টন সৌভাত হীরা | 2023-09-01 19:21:31

ডাল্টনের প্রতি

ডাল্টন, ভালোবাসি আপনাকে খুব
সুইসাইড করবেন না প্লিজ
অন্তত সুর্য্যমুখী যতক্ষণ ফোটে
সবুজ বিয়ারের ক্যান নাচছে।
ততক্ষণ বাঁচুন মাই লাভ প্লিজ।

এত অক্ষর আর ঘূর্ণন থামান
ভায়োলেট ব্লুজ, আক্রান্ত হন কবি।
লেখা থামান প্লিজ, পরে লিখবেন।
আপনার দ্রুতলম্বিত কবিতারা
পরেও পড়বে ম্যাজেন্টার বৃত্তান্ত।
এত এত লিখে লিখে তো মরবেন!
মাদকের চেয়েও তীক্ষ্ণ মিথ-বিষ
শিরাতে বিঁধেছে,মুক্ত হন দ্রুত।

ডাল্টন, ভালোবাসি, আপনাকে খুব
কিছুদিন, ক্লাউনই সেজে সার্কাসে
ঘুরে বেড়ালে ক্ষতি কী আর বলুন!
এত অক্ষর আর ঘূর্ণন থামান—
লেখা থামান প্লিজ, পরে লিখবেন।

বিনয় মজুমদারের মাছ!

বিনয় মজুমদার রেঙ্গুন থেকে নামলেন বোলতলি ঘাটে। সেখানে আমার পিতৃব্য বাড়ি। ডান হাতে সুটকেস, সেখানে ক্ষয়মান টিন আর ডানহাতে খা’য়েজ বিড়ি। শুনেছি তার বাড়ি যেখানে, মানে যেখানে শিমুলতলী স্টেশন, তার পাশে এক আদিম আলোর নগ্ন পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতেন বিনয়। অথচ বৌলতলি এসে বললেন, ‘ডাল্টন চিন্তার কিছু নাই, এইসব আদিম আলোক শুধু গায়ত্রীযোগে আসে। অবশ্য বাকিটা সময় আমি ভুট্টোর খই ভানি... কবিতা করি।

আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, বিনয়, লবণ কেমন আছে? সে কি গায়ত্রীর মতো হয়েচে? ছোট ছোট করে কাটা চুল, তারপর ধরো খেস্তান হয়েচে। আর আমি তুমি হয়ে গেছি আরো গেঁয়ো ধানী নমশূদ্র!

উহু সে বৈষ্ণব হতে চেয়েছিল। সে স্পিভাক ম্যাডামের মতো আমিষী গোত্রীয় না, বোকা সোকা সরল মানুষ। তীব্র শোক, আমাকে দিতে সে ব্যর্থ। ছোট খাট যা দিয়েছে, কবিতার কাঁচামাল হিসেবে বড়ই অপ্রতুল। মধুমতী পাড়ের কাশের এই এক সমস্যা। তারা পর্যাপ্ত শোকদানে অক্ষম পলি।

বিনয় ফ্যাস্ফ্যাস করে হাসলেন।

তাহলে মাস্টারপিসের আশা ছাড়ো। এমনিতে আমি ভুট্টোর দারুণ নাড়াচড়া আর স্বাদ জেনেছি। তুমি তো ব্রহ্মচারী আবার, ভুট্টোর ক্ষেতে অপর্যাপ্ত চাষা।

তোমার কবি হওয়া হচ্ছে না ডাল্টন। রেঙ্গুন যাও। রেঙ্গুন যাও। একযুগ পরে চল্লিশের মন্বন্তর হবে.. ফিরে এসো সেসময়। ফোর্টিজের মন্বন্তরে ভাতে লবণের বদলে সবাই যখন খাবে স্বাদু গুড়.... তখন লবণের চালান নিও।

কবিতা লেখা তোমার কম্ম নয় ডাল্টন। লবণ চোরাচালানি হতে পারো বরং অনর্থে!

জেরুসালেম

বড় ভয়ে ভয়ে শহরের দিকে হাঁটি। অনেক সুদূর থেকে দীর্ঘ ধ্রুতির পায়ে চলেছে এ জেরুসালেম। যেন এক জিউ বুড়ো; স্বর্বস্ব খুয়ে খুয়ে পেয়েছে কোনো প্রাচীর শহর... এই তাদের সফলতা। হায়! আমি এক ঈষদুষ্ণ ব্যাঙ; বড়জোর অলি চিনি, গলি জানি, আর চিনি নূহের মতো প্লাবনের আগমন ধ্বনি। আর কিছু চিনি না কসম, কনুয়ের গুঁতো খাওয়া মানুষের এত রেণু, পরাবত চিনে শুনে কি হবে এখন?

অঙ্গার

ঠিক তার কিছু দিন পর
কঙ্কাল এসে ডাক দ্যায়
ডাক দ্যায় এত ডাক দ্যায়, কিচ্ছার মতো গীত গায়।

আর তার কিছু রাত পর
যার কাছ থেকে রাত চোর
ব্রাহ্মণ; পরে বক্কল; সজ্জ্বায় গিয়ে শুচ্ছিলো...

তার গায়
য্যানো
তার গায়
অগ্নির মতো জ্বলছিলো। বহ্ণির মতো জ্বলছিলো।

জ্বর-জ্বর এত কম্পন
হুটহাট অনু-কম্পায়
ঠোঁট-ঠোঁট শুধু চুম্বন

হয়তোই মূঢ় লুটেরার
দুই চোখ ভেজা কান্নায়

সেই
ঠিক
শুষে
চুম্বন

সেই ঠিক বুঝে কান্না

অঙ্গার হয়ে ডাকছিলো। কঙ্কাল হয়ে ডাক দিল।

এই উইকেন্ডে

এই উইকেন্ডে হাইকিংয়ে যাব আমরা দুজন
সাথে কয়েক বন্ধুকে নেব—
বিপ্লবী, পরিবেশবাদী ফটোগ্রাফার
এ সংক্রান্ত হলে ভালো—
তারা সাথে করে নিয়ে যাবে বিপ্লব আর
সস্তা মদ-দাহ্য দেহ এইসব।
আর তাদের আরবান ডিভোর্সি আত্মাদের ফেলে
আসার জন্য পর্যাপ্ত স্লিপিং ব্যাগ।

তাদের নিয়া যাব লবণ, আর যাব আমরা দুইজন
যাবতীয় গ্রহাণুর মতো বাড়ন্ত ওয়ার্কিং ডে
সেইখানে রেখে আসব লজ্জাবতী বানরের দেহে—
উঁচা উঁচা পাহাড়ে হবে আমাদের ভ্রমণ
তোমার ও আমার বিপ্লবী বন্ধুরা থাকবে সমতলে
আমরা অগ্রীম মেঘদের বড় বড় মিছিলের কাছাকাছি—
যেয়ে ছুঁয়ে দেব তাদের। তারপর দেখব জলকামান
মারতেছে স্বৈর পুলিশ—আমরা ভিজে গেছি গুল্ম লতায়।

এইভাবে দেখবা শেষ হইছে আমাদের উইকেন্ডও
তারপর আরো বিস্তারিত কার্যদিবস। কিন্তু...
আমি আর তুমি বইসাই আছি; এর মধ্যে অগণন
বর্ষণে শানু পৃথিবী;

টাকা ফুরাইতেছে

দম ফুরাইতেছে

আমি আর তুমি সর্বশান্ত হয়ে বসেই আছি।

তোমার বিপ্লবী বন্ধুরাও ফিরছে ঢাকা।
জ্যাম মাড়ায়া মাড়ায়া তারা আপিস করতেছে।
আমি আর তুমি শুধু আটকে গেছি উইকেন্ডে।
বৈষ্ণব মন্দিরে বসে দ্বেষহীন মন্ত্র জপতেছি আমি
আর...তোমার আলু থালু চুল, দিগ-হংস সাজে, ঈর্ষা করে
পরস্পর।

অথচ আমি ও তুমি উঠতেছি নামতেছি পাহাড় বেয়ে।
আমাদের হাতে অখণ্ড উইকেন্ড আর নিরামিষ আহার।
আমরা প্রতীক্ষা করতেছি কার্যদিবসের। তোমাকে, আমাকে আপিসগামী করবে তারা

এ সম্পর্কিত আরও খবর