মধ্যপ্রদেশের পাথুরে দুর্গ নগরী 'মান্ডু'

, শিল্প-সাহিত্য

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:04:29

রূপমতী-বাজ বাহাদুরের প্রেমোপাখ্যান ভারতের মধ্যপ্রদেশের পাথুরে দুর্গবেষ্টিত অধুনা লুপ্ত 'মান্ডু' নগরের ধ্বনি মেখে নিত্য প্রতিধ্বনি করে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। মান্ডু বা মান্ডবগড় ধর জেলার মান্ডব নগর পঞ্চায়েতে অবস্থিত এক প্রাচীন জনপদের ধ্বংসাবশেষ। এটি ভারতবর্ষের পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ অন্তর্ভুক্ত মালয়া অঞ্চলের ধর শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। একাদশ শতাব্দীতে মান্ডু তরঙ্গগড় বা তরঙ্গ রাজত্বের অংশ ছিল। ঐতিহাসিকভাবেই

শৌর্য, প্রেম, আধ্যাত্মিকতা এবং নানা ধর্মমতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মান্ডু।

মধ্য প্রদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ইন্দোর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পাথুরে দুর্গ নগরী অসাধারণ স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। একটি শিলালিপি তালানপুর (ধরজেলায় অবস্থিত) থেকে আবিষ্কৃত হয়, যার থেকে জানা যায় যে, একজন বণিক যার নাম চন্দ্র সিমহা, তিনি একটি মূর্তি মান্ডভ দুর্গে অবস্থিত একটি পার্শ্বনাথ মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। এটিও বিশ্বাস করা হয় যে, প্রাকৃত ভাষার 'মান্ডভ দুর্গা' শব্দের অপভ্রংশ থেকে 'মান্ডু' শব্দের উৎপত্তি। শিলালিপিতে যে তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা ইঙ্গিত করে, মান্ডু ষষ্ঠ শতকের একটি উদীয়মান শহর ছিল। দশম ও একদশ শতকে পরমারস্ রাজবংশের অধীনে মান্ডুর লক্ষণীয় উন্নতি সাধন হয়।


মান্ডু শহরটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৬৩৩ মিটার (২০৭৯ ফুট) উপরে এবং বিন্ধ্য পর্বতমালার ১৩ কিলোমিটার (৮.১ মাইল) বর্ধিতাংশের মালওয়া মালভূমির উত্তরে অবস্থিত এবং নর্মদা নদীর দক্ষিণ উপত্যকা পরমারস্ রাজবংশের রাজধানীর প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করত, যা বর্তমানে অতীত-ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময়তায় সবাইকে আকৃষ্ট করছে।

মান্ডু ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হলো শরতকাল, যখন প্রকৃতি থাকে ঝকঝকে আর আকাশ সাদা মেঘের পাড় বসানো নীল শাড়িতে বিম্বিত। চারপাশের বাতাসে থাকে শিউলির সুগন্ধ আর মান্ডুর সমৃদ্ধ ইতিহাসের সৌরভযুক্ত প্রত্নঐতিহ্যের ধূসরিত মুগ্ধতা।

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল হয়ে বাণিজ্যনগরী ইন্দোর দিয়ে মান্ডু পৌঁছানো সহজতর। ইন্দোর থেকে ভারতের ৫৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সোজা বেতমা, ঘাটবিলোড়, ধার হয়ে মান্ডু চলে যাওয়া যায়। পথ পেরিয়ে মান্ডুর কাছাকাছি আসতেই প্রকৃতির রূপ বদলের অপরূপ ছবি দৃশ্যমান হয়। আধুনিক নগরের স্থলে তখন চোখের সামনে এসে দাঁড়ায় দিগন্তবিস্তৃত মালভূমি, পাহাড় এবং জঙ্গলাকীর্ণ সবুজ উপত্যকা। দূরে দেখা যায় সবুজ মোড়কে আচ্ছাদিত দুর্গ ও প্রত্নঐতিহ্যের মান্ডুকে।


বিন্ধ্য পর্বতের পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে ২,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দুর্গনগরী মান্ডু। মান্ডু বিখ্যাত তার শৌর্য ও স্থাপত্যকীর্তির জন্য। ইতিহাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয় ঘটেছে মান্ডুতে। ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মান্ডুর ইতিহাস বৈচিত্রপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে পালাবদল ঘটেছে একাধিক বার। ৪৫ কিমি প্রাচীরবেষ্টিত ১২টি ‘দরওয়াজা’-বিশিষ্ট একদা জমজমাট শহর মান্ডু এখন এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ ছাড়া আর কিছুই নয়। তথাপি ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে ভগ্নপ্রায় সৌধ, দুর্গ আর দরওয়াজা।

দুর্গনগরী মান্ডু মূলত ছিল মালবের পারমার রাজাদের রাজধানী। পরে মান্ডুকে স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন আফগান শাসক দিলাওয়ার খান। এই সময় থেকেই মান্ডুর সৌধে লাগে আফগান স্থাপত্যের ছোঁয়া। তার পুত্র হোশঙ্গ শাহের সময়কালে একের পর এক শিল্পস্থাপত্যের পত্তন হয় মান্ডুতে। ১৫৫৪ সালে ক্ষমতায় বসেন সুজাত খানের পুত্র সঙ্গীতজ্ঞ বায়াজিদ বাজ বাহাদুর। তিনি ছিলেন অন্যন্যসাধারণ রবাব-বাদক। তার রবাবের সুরে মুগ্ধ হয়ে যেত অগণিত শ্রোতা। এই সঙ্গীতপ্রিয় বাজ বাহাদুরের সঙ্গে তার রূপসী পত্নী রূপমতীর প্রেমোপাখ্যান ও ট্র্যাজেডি মান্ডুর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ ও করুণ আখ্যান।


মান্ডুর 'ট্র্যাজিডি ভবন' রূপে প্রসিদ্ধ রূপমতী প্যালেসের দোরগোড়ায় সব সময়ই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। জনপ্রতি পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পাহাড়ের অপর দিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় প্যালেসে। রাজবংশের শুরুতে মান্ডুর রূপমতী প্যালেসের স্থানটি রাজসেনাদের ওয়াচটাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হত। পরবর্তী কালে রূপমতীর নর্মদা দর্শনের সুবিধার জন্য এখানে প্রাসাদ তৈরি করা হয়। এখান থেকে রোদ-ঝলমলে দিনে নর্মদাকে ভালভাবে দর্শন করা যায়। প্রাসাদের ছাদ থেকে পার্বত্য পটভূমিতে নর্মদা দর্শনের অনিন্দিত সৌন্দর্য তুলনাহীন। একই সঙ্গে অবলোকন করা যায় নীচের সবুজে মোড়া নিমার উপত্যকাকেও।

রূপমতী প্যালেস থেকে নীচে 'রেওয়া রূপকুণ্ড', যে-কুণ্ডের জলকে রূপমতী নর্মদার সমতুল্য হিসাবে গণ্য করতেন। কুণ্ডের লাগোয়া ঘরগুলো আগে ভোজনশালা হিসেবে ব্যবহৃত হত। কালের বিবর্তনে বর্তমানে সেগুলো শ্মশানযাত্রীদের আশ্রয়স্থল। কারণ এখন রেওয়া কুণ্ডকে ঘিরে রয়েছে শ্মশান। কুণ্ডের পিছনে বাজ বাহাদুর প্যালেস। কুণ্ড থেকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি সিঁড়ি উঠে গেছে প্যালেসের অন্দরে।

ষোলো শতকে নির্মিত বাজ বাহাদুর প্রাসাদ এখন ভগ্নপ্রায়। বড় বড় হলঘর আর মাঝে ফাঁকা উঠোন ছাড়া কিছুই নেই। অনেকের মতে, পারমার রাজাদের হাতে গড়া প্রাসাদই পরবর্তী কালে বাজ বাহাদুর সংস্কার করেছিলেন মাত্র। এখানেই সঙ্গীতমহলে রূপমতী ও বাজ বাহাদুরের গানের মজলিশ বসত। অতিথি শিল্পী হিসেবে তানসেনও নাকি এখানে গান গাইতে আসতেন। সঙ্গীতমহলের ভিতরে তৎকালীন সময়ে শব্দ প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা এতই উন্নত ছিল যে পরস্পর-বিপরীত দুটো ঘরের যে-কোনও একটিতে স্বাভাবিক গলায় গান গাইলেও, তা শোনা যেত অন্য প্রান্তের ঘর থেকে।  নিজে গান গেয়ে শব্দ প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা এখন পরখ করতে পারেন ভ্রমণকারীগণ।

সঙ্গীতমহলের পিছনের দিকে আরও একটি ঐতিহাসিক জায়গা রয়েছে। সে অংশে আছে বাজ বাহাদুরের শয়নকক্ষ, শৌচালয়, শিকারে যাওয়ার দরওয়াজা ইত্যাদি। রূপমতী ও বাজ বাহাদুরের বহু স্মৃতি ও কাহিনীর মতোই চারপাশে মিশে আছে করুণ আখ্যান। এখানেই তাদের প্রেমকাহিনির বিয়োগান্তক যবনিকাপাত ঘটে।

কথিত আছে যে, রূপমতীর রূপ দিল্লির মুঘল সম্রাট আকবরকে প্রলুব্ধ করে। আকবর নাকি রূপমতী সম্বন্ধে অবগত হয়ে অস্থিরমতি হয়েছিলেন। তার আদেশে সেনাপতি আদম খান রূপমতীকে দিল্লিতে নিয়ে যেতে আসেন। রাজপ্রাসাদ মুঘলদের দ্বারা অবরূদ্ধ, এই খবর জানতে পেরে রূপমতী বিষপানে আত্মহত্যা করেন। আনন্দময় প্রেমনগরীতে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। কিছু দিন পর বাজ বাহাদুরের বন্দিদশায় মৃত্যু হয়।

লোকবিশ্বাস যে, এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকার অশরীরী আত্মার নীরব উপস্থিতি আজও নাকি অনুভব করা যায়। তাদের অতৃপ্ত আত্মা নাকি গুমরে মরে প্রাসাদের কোণায় কোণায়, অলিন্দে ও চত্বরে। জ্যোৎস্নারাতে এখানে আজও সেই সুরের ঝঙ্কার শোনা যায়, যে জলসায় একদা গাইতেন রূপমতী আর বাজ বাহাদুর।

মান্ডু এলাকা মুঘল সম্রাট আকবরের অধীনে আসার পর এখানে জলমহল গড়ে তোলা হয়েছিল মূলত তার হিন্দু মহিষীদের ব্যবহারের জন্য। পেশোয়া প্রথম বাজিরাওয়ের আমলে এখানে 'নীলকণ্ঠ শিবমন্দির' প্রতিষ্ঠিত হয়। সিঁড়ি দিয়ে অনেকটা নেমে তবে বিগ্রহ দর্শন করা যায়। জায়গাটা খুবই পিচ্ছিল। কারণ, অপর দিকের কুণ্ড থেকে অবিরাম জল ঝরে পড়েছে। বিগ্রহকে সিক্ত করে আবার পাহাড়ের ফাটল দিয়ে আরও নীচে ঝরে পড়ছে ছোট-ছোট ঝোরার মতো করে। মূল বিগ্রহ ছাড়াও চত্বরের এ-দিক ও-দিক গণেশ, হনুমান, বিষ্ণুর বিগ্রহও রয়েছে। জলের অবিরাম ঝরে পড়া, গাছপালায় ঘেরা পোড়োবাড়ির মধ্যে এমন দেবালয় বিরল আবহ নির্মাণ করে।

মান্ডুর আরেক দর্শনীয় স্থান 'জাহাজ মহল', সেখানে প্রবেশমূল্য পাঁচ টাকা। মঞ্জু তালাও এবং কাপুর তালাওয়ের মাঝে ইন্দো-পারসিক স্থাপত্যরীতিতে এক আশ্চর্য কীর্তি এই জাহাজ মহল। সম্ভবত গিয়াসউদ্দিন খিলজির হাত ধরেই এই স্থাপত্যের বাস্তুবায়ন হয়েছিল বলে প্রত্নগবেষকদের ধারণা। তবে ভিন্ন মতে, মালোয়ারাজ মঞ্জুদেবই ছিলেন এর প্রকৃত রূপকার। তার গ্রীষ্মাবাস হিসেবে এই প্যালেস ব্যবহৃত বলে মনে করা হয়। বর্ষার দু’টি তালাও জলে পরিপূর্ণ হলে এই প্রাসাদকে ভাসমান জাহাজ বলে মনে হয়। এর আকর্ষণেই অনেকে বর্ষায় মান্ডু আসেন। পাশেই বেলেপাথরে নির্মিত হিন্দোলা মহল। মহলটি দেখতে একটি দোলনার মতো, যা চারদিক থেকে প্রেক্ষাগৃহের রূপ লাভ করে। হিন্দোলা মহলের ভিতরেই হেরেম ও হামাম। যেখানে অত্যাধুনিক যুগের মতো ঠান্ডা ও গরম জলের জোগানের পাশাপাশি স্টিম বাথের ব্যবস্থাও ছিল। এখানে দুটি তালাওয়ের জলকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ওপরে তুলে প্রতি ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা দেখলে সত্যিই বিস্ময়ে অবাক হতে হয়।

মঞ্জু তালাওয়ের অপর পাড়ে বিধ্বস্ত নাহার ঝরোখা আর জলমহলের খন্ডহরের দিকে তাকালে যেকোনো দর্শনার্থীর ঘোর লেগে যায়। সেই ৬০০ বছরের ইতিহাসের ঘোর থেকে কিছুতেই বেরোতে পারেনা একালের মানুষও। আধুনিককালের মানুষেরা পরম বিস্ময় ও আবেগে শিহরিত হয় অতীতের অতল স্পর্শে।

মান্ডুর মূল বাজারের সামনে রয়েছে ভগ্নপ্রায় একটি জেলখানা, যা ‘চোর কুঠরি’ নামে পরিচিত। বাজারের সামনেই সেন্ট্রাল গ্রুপের মসজিদসমূহ। এই গ্রুপের সৌধে আছে জামে মসজিদ, হোশঙ্গ শাহের সমাধি এবং আশরফি মহল। প্রবেশমূল্য পাঁচ টাকা। চারপাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে হাট। প্রতি শনিবারের সাপ্তাহিক হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হয়। দূর দূর গ্রাম থেকে মানুষ আসে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী নিয়ে। পুরুষদের মাথায় মধ্যপ্রদেশের ঐতিহ্যের বিভিন্ন রঙের পাগড়ির বাহার।

মান্ডুর জামে মসজিদ অনেক ছোট ছোট গম্বুজের সমন্বয়ে গঠিত আর মসজিদের পুরোটাই গোলাপিরঙা বেলেপাথরে নির্মিত। এই মসজিদকে দামাস্কাসের উমাইয়াদ মসজিদের রেপ্লিকা বলা যায়। সুলতান হোশঙ্গ শাহ এর প্রতিষ্ঠাতা। জামে মসজিদের পিছনের দিকে আছে হোশঙ্গ শাহের সমাধি। শুধু হোশঙ্গ শাহ নয়, রাজপরিবারের অন্যদেরও সমাধি আছে সেখানে। হোশঙ্গ শাহের সমাধি ভারতের সর্বপ্রথম মার্বল পাথরের তৈরি স্থাপত্য। এমনকি, মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরির আগে চার জন স্থপতিকে পাঠান এই সৌধের নির্মাণশৈলী পর্যবেক্ষণের জন্য।

জামে মসজিদের বাইরে রাস্তার বিপরীতে আশরফি মহল, যা মুসলিম শাসনকালে সমৃদ্ধ মাদ্রাসা রূপে পরিচিত ছিল। বর্তমানে ভগ্নপ্রায় আশরফি মহলে ভাঙা দেয়াল, সিঁড়ি ছাড়া আর প্রায় নেই। এই মহল নিয়ে রয়েছে এক মজার গল্প শুনলাম। মাহমুদ শাহ খিলজি তার অসংখ্য বেগমের মধ্যে স্থুলকায়াদের মেদবর্জনের জন্য এক অভিনব পন্থা বার করেছিলেন। আশরফি মহলের দীর্ঘ সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ চড়ার জন্য তিনি সেই বেগমদের প্রত্যেককে একটি করে আশরফি (মোহর) দিতেন। পরে বেগমদের অর্জিত সেই সব আশরফি গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হত।

আরও কথিত আছে যে, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির নাকি নূরজাহানকে আশরফি মহলের সিঁড়ি ভাঙিয়ে আশরফি দিয়েছিলেন। তাই আশরফি মহলের ইংরেজি নাম ‘গোল্ড কয়েন প্যালেস’। অনতিদূরে রয়েছে মেওয়ারের রাজা কুম্ভের সঙ্গে যুদ্ধ জেতার গর্বে মাহমুদ শাহ খিলজি নির্মিত সাত তলা বিজয়স্তম্ভ, যার কয়েকটি তলা ভেঙে পড়েছে। এখন সেই বিজয়স্তম্ভের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে একটা মাত্র তলা।

মান্ডুতে রয়েছে চমৎকার সানসেট পয়েন্ট, যা আসলে পাহাড়ের ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার দারুণ ব্যবস্থা। নীচে সবুজ গাছপালা, পাহাড়ি খাদ আর ছোট-বড় পাহাড় নিয়ে এক দুর্দান্ত ভিউপয়েন্ট। আকাশের চওড়া বুকে ক্লান্ত সূর্য যখন দূরের পাহাড় আর অরণ্যের আড়ালে নেমে যায়, তখন সামনে থেকে বয়ে আসা বাতাসের ঠান্ডার আমেজ মনে জাগায় এক স্বর্গীয় অনুভূতি।

মান্ডুর পাহাড়ে প্রদোষের প্রাক্কালে দুর্গ ও প্রত্ন ঐতিহ্যের পটভূমিতে দেখা যায় আবছা অরণ্য, জঙ্গলের রাস্তা। দেখা যায় একদল জংলি টিয়া কিংবা নামনাজানা পাখির ঝাঁক ডাকতে ডাকতে বাসায় ফিরছে। রাতের পদধ্বনিতে ঝাপসা হয়ে আসে প্রকৃতি। মনে হয় জীবনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে 'ম্যাজিক মুহূর্ত', 'অদ্ভুত নিস্তব্ধতা'।

অরণ্যে, পাহাড়ে, প্রত্নস্থলে নীরবতা ভাঙে দূরের আজানের ধ্বনিতে। অন্ধকার জমাট বাঁধার আগে সরব হয় জৈন ধর্মশালা বর্ধমান মহাবীরের সন্ধ্যারতিতে। শঙ্খ ও ঘণ্টাধ্বনি-সহ মন্ত্রপাঠ কানে আসে রামমন্দির থেকে। সম্প্রীতি ও সমন্বয়ের স্নিগ্ধ একটা অনুভূতি আবিষ্ট করে প্রেম ও প্রত্ননগরী মান্ডুকে।

[মান্ডুতে আহার ও আবাসের জন্য রয়েছে অনেক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট।  যার মধ্যে এমটিডিসি পরিচালিত মালওয়া রিসোর্ট উল্লেখ্যযোগ্য।]

এ সম্পর্কিত আরও খবর